somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

No Means No, Yes Means Yes

২৪ শে আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন দেখলাম শাহবাগী নারীগুলো "No Means No, Yes Means Yes" স্লোগান দিচ্ছে।
এই স্লোগানের মানে কি?
কেন দিচ্ছে?
এটার উৎপত্তি কোথেকে?
নিচের লেখাটা পড়ুন।
"সবারই মনে থাকার কথা, কিছুদিন আগে বাংলাদেশে ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ নামে একটা স্লোগান তুলেছিল এই তথাকথিত নারীবাদীরা। বড়ো কোনো কাজ করার আগে ছোটোছোটো ওই ধাঁচের কাজ করে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হয়।
বাংলাদেশের নারীবাদীরাও এখন ঠিক সেই একই প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিজেদের দক্ষ করে তুলছে ছোটোছোটো প্রতিবাদ করার মাধ্যমে। কারণ, আগামী দিনগুলোতে তাদের আরও বড়ো কোনো অধিকারের দাবিতে রাস্তায় নামতে হবে। এখন যেমন তারা বলছে ‘গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না’ আগামীতে বলতে হবে, ‘ধর্ষণের বিচার চাই।’
দ্বিতীয় স্লোগানটা আমার বানানো নয়। সমগ্র পশ্চিমের নারীবাদীরা এখন দ্বিতীয় স্লোগানটি নিয়ে রাস্তায় নামে। কারণ, তারা এখন ধর্ষণের বিচার পায় না। একসময় পশ্চিমা নারীবাদীরাও বাংলাদেশের নারীবাদীদের মতো প্রথম স্লোগানটি নিয়ে রাস্তায় নামত।
দিন বদলাতে বদলাতে আজকে পশ্চিমের নারীবাদীরা ‘Slut Walk’ বা ‘বেশ্যার হাঁটা' নামে সভা-সমাবেশ করে। যারা সভা-সমাবেশ করে তারা কিন্তু সবাই বেশ্যা না। ধর্ষিত হওয়ার পর বিচার চেয়েও বিচার পায়নি ওরা। শেষে নিজেদের নাম দিয়েছে Slut বা বেশ্যা।
তাদের Slut Walk বা বেশ্যার হাঁটার একটা স্লোগান হচ্ছে–‘No Means No’ পুরো স্লোগানটি হলো–‘Whatever We Wear, Wherever We Go, Yes Means Yes, No Means No’ (আমরা যা-ই পরিধান করি, আমরা যেখানেই যাই, হ্যাঁ মানে হ্যাঁ, না মানে না)।
এই স্লোগানের উদ্দেশ্য হলো–ধর্ষণ থেকে ওরা বাঁচতে চায়। মানে কোনো মেয়ে যদি ‘না’ বলে, তাহলে যেন তাকে জোর করে যৌন সম্পর্ক না করা হয়। আর ধর্ষণের কারণ হিসেবে যেন উলটো মেয়েদের পোশাককে দায়ী করা না হয়। ব্যাপারটা মনে হয় বোঝাতে পারিনি।
বুঝিয়ে বলছি শুনুন। পশ্চিমা ছেলেমেয়েরা খুব সহজেই একে অপরের সাথে বার বা ক্লাবে গিয়ে মদপান করতে পারে। রাতে এক সাথে আড্ডা দিতে পারে। মদ্যপ হয়ে মেয়েরা ছেলেদের গা ঘেঁষে নাচতে পারে। মাতাল অবস্থায় ছেলেটি বেশি কিছু করে ফেলতে চাইলে মেয়েটির অনিচ্ছা থাকলেও বাধা দেওয়ার শক্তি থাকে না। কারণ, মেয়েদের শক্তি এমনিতেই কম; তার ওপরে আবার মেয়েটি মাতাল। আর এমন পরিবেশে গিয়ে ধর্ষিত হওয়ার পর পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে পুলিশ সেটা গ্রহণ করে না। তখন উলটো মেয়েটিকে বলা হয়–তুমি সেচ্ছায় ছেলের সাথে ক্লাবে বা বারে গিয়ে মদপান করেছ, তুমি অশালীন পোশাক পরেছ ইত্যাদি।
এই জন্যই তাদের স্লোগান হলো–‘আমরা যা-ই পরিধান করি, আমরা যেখানেই যাই, হ্যাঁ বললে হ্যাঁ, না বললে না।’ তাই বিচার না পেয়ে পশ্চিমা নারীবাদীরা এখন বলছে, সমগ্র পশ্চিমা সমাজজুড়ে এখন Rape Culture বা ধর্ষণের সংস্কৃতি চলছে। মানে তারা বলতে চাইছে, যেহেতু তারা যেখানে-সেখানে যখন-তখন ধর্ষণের শিকার হয়ে ধর্ষণের বিচার পাচ্ছে না; উলটো নিজেরাই দোষী হয়ে যাচ্ছে, সুতরাং ধর্ষণ করাটা পশ্চিমা সমাজের সংস্কৃতি। একটু ভাবতে পারেন চাকচিক্যময় ওই সমাজে নারীদের অবস্থান আজকে কোথায় নেমে এসেছে!
বাংলাদেশের কথা বলতে গিয়ে এতক্ষণ যাবৎ বললাম পশ্চিমাদের কথা। কেন জানেন? কারণ, বাংলাদেশসহ অন্যান্য মুসলিম দেশের নারীবাদীরাও ওই একই পথে হাঁটছে। তারা সব ক্ষেত্রেই পাশ্চাত্যের অনুকরণ ও অনুসরণ করে। নতুন নতুন আধুনিকতার ছোঁয়া পেলে যে কেউ-ই বাঁধনহারা হবে–এখন সেটা ছেলেই হোক অথবা মেয়েই হোক। কিন্তু আদৌ কি তারা আধুনিক হতে পেরেছে কি না সেটা একটু ভেবে দেখতে হবে আমাকে। তারা যেটাকে আধুনিকতা বলে, সেটাই যদি প্রকৃত আধুনিকতা হয়, তাহলে আমাকে নতুন করে আধুনিকতার সংজ্ঞাটা শিখতে হবে আবার।
আধুনিকতার সংজ্ঞা যদি তাদেরটাই সঠিক হয়, তবে বাংলাদেশি নারীবাদীরা পশ্চিমা নারীবাদীদের থেকে অনেক সেকেলে। কেন বললাম? কারণ, সর্বপ্রথম কানাডাতে এই ‘Slut Walk’ বা ‘বেশ্যার হাটা' প্রচারণা শুরু হয় ২০১১ সালে। পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমা বিশ্বের বেশ কয়েকটি উন্নত দেশে এই প্রচারণা ছড়িয়ে পড়ে। এর মানে ধরে নিন, আরও প্রায় ২০ বছর আগে থেকে পশ্চিমা দেশেগুলোতে Rape Culture বা ধর্ষণ সংস্কৃতি চলছে। বিচার না পেয়েই ওরা রাস্তায় নেমেছে শেষমেশ। এদিক থেকে পশ্চিমা নারীবাদীদের সাথে তুলনা করলে বাংলাদেশের নারীবাদীরা নির্যাতিত হওয়া এবং বিচার না পাওয়ার দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে। (মানে এখনও বাংলাদেশের নারীবাদীরা পশ্চিমা নারীবাদীদের পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি।) বাংলাদেশের নারীবাদীরা মাত্র ‘গা ঘেঁষা' বিষয় নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। অন্যদিকে পশ্চিমা নারীবাদীরা তাদের থেকে কয়েকধাপ এগিয়ে ধর্ষিত হয়ে বিচার না পেয়ে ‘Slut Walk’ বা ‘বেশ্যার হাটা’ প্রচারণা করছে।
সমস্যা নেই, দিনশেষে এসব পথিকদের গন্তব্য একই হয়–ধর্ষিত হবে, এরপর বিচার চেয়ে বঞ্চিত হবে, এরপর Slut Walk করবে, এরপর ‘No Means No’ স্লোগান দেবে, এরপর বলবে– আমাদের সমাজে Rape Culture চলছে।"
[লেখাটা 'নারীবাদী বনাম নারীবাঁদি' বই থেকে নেওয়া।]
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আসেন জুলাই/ আগস্টের মিনি পোস্ট মোর্টেম করি।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:২৪





গল্প শুনেন বলি-

আমরা পড়ালেখা গুছগাছ কইরে চাকরীতে ঢুকছি।হঠাৎ বন্ধু গো ইমেইলের গ্রুপে মেসেজ (নাম ধরেন রফিক), রফিক যে পাড়ায় (রেড লাইট এরিয়া) যাইতো সেখানের একজন সার্ভিস প্রোভাইডাররে বিয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

কবিতাঃ হে বলবান

লিখেছেন ইসিয়াক, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪০

কে আছিস বলবান!
হ্ আগুয়ান।
দে সাড়া দে ত্বরা।
ধরতে হবে হাল,বাইতে হবে তরী, অবস্থা বেসামাল।

জ্বলছে দেখ প্রাণের স্বদেশ
বিপর্যস্ত আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
মানবিকতা, মূল্যবোধ, কৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতির বাতিঘর।
সর্বত্র আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুলাইয়ের তথাকথিত আন্দোলন পুরোটা ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:১৬

জুলাইয়ের তথাকথিত আন্দোলনের পুরোটা ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন

লালবদর নীলা ইস্রাফিল এখন বলছেন ও স্বীকার করছেন যে—
জুলাইয়ের সবকিছুই ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন।
মুগ্ধের হত্যাও সেই ডিজাইনের অংশ।

অভিনন্দন।
এই বোধোদয় পেতে দেড় বছর লাগলো?

আমরা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক ৩০০০ কোটী টাকার লোভেই দেশে ফিরেছে

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১০



তারেক এসেছে, বলেছে, I have a plan; তারেকের প্ল্যানটা কি? এই মহুর্তে তার প্ল্যান হতে পারে, নমিনেশন বাণিজ্য করে কমপক্ষে ৩০০০ কোটি টাকা আয়। ৩০০ সীটে গড়ে ১০... ...বাকিটুকু পড়ুন

বই : টক অব দ্য টাউন

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৮

বই : টক অব দ্য টাউন



একটি বই হঠাৎ করে এতটা আলোচনায় আসবে আমরা কি ভাবতে পেরেছি ?
বাংলাদেশের মানুষ অতি আবেগপ্রবন , বর্তমান রাজনৈতিক অস্হিরতার মধ্যে ও
বাঙালীর স্বভাবসুলভ অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×