"এই সিলিণ্ডারটি এনে তাদের কাছাকাছি খুলে দিতে হবে - এদেরকে দীর্ঘ সময় অচেতন
রাখতে হবে। ওঠ তুমি।"
আমি ওঠার চেষ্টা করে পারলাম না, মনে হলো একটি পাহাড় ধরে চেপে রেখেছে। মনে
হলো সমস্ত শরীর কেউ শিকল দিয়ে মেঝের সাথে বেঁধে রেখেছে। কয়েকবার চেষ্টা করে হাল
ছেড়ে দিয়ে বললাম, "পারছি না আমি মহামান্য রিতুন ক্লিস।"
"না পারলে হবে না ইবান। তোমাকে পারতেই হবে। এই যে দেখ তোমার পাশে কৃত্রিম
শ্বাসপ্রশ্বাসের অক্সিজেন সিলিণ্ডারটি আছে, তুমি এনেছিলে চিকিৎসা কক্ষ থেকে। সেটা নিজের
কাছে টেনে নাও, টিউবটা তোমার নাকে লাগাও, তুমি শরীরে জোর পাবে ইবান।"
আমি অমানুষিক পরিশ্রম করে পাশে পড়ে থাকা সিলিণ্ডারটি নিজের কাছে টেনে আনলাম,
জরুরি অবস্থায় শ্বাস নেবার জন্যে ছোট অক্সিজেন সিলিণ্ডারটির সাথে লাগানো টিউবটি নিজের
নাকে লাগানোর সাথে সাথে মনে হলো বুকের ভেতরে বাতাস এসে আমাকে বাঁচিয়ে তুলছে। বুক
ভরে দুবার নিঃশ্বাস নিতেই মাথার ভেতর দপদপ করতে থাকা ভাবটা একটু কমে এল, আমি
আবার চোখ খুলে তাকালাম।
রিতুন ক্লিস মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন, "চমৎকার ইবান ! চমৎকার। এবারে নিহিলা
গ্যাসের সিলিণ্ডারটি নিয়ে ম্যাঙ্গেল ক্বাসের কাছে যাও। সে এখনো অচেতন হয়ে আছে, তার
নাকের কাছে নিহিলা গ্যাসটি ছেড়ে দিতে হবে, সে যেন আর জ্ঞান ফিরে না পায়।"
"কিন্তু সে অচেতন হয়ে থাকলেও মাথার ভেতরে কপোট্রন রয়েছে।"
"থাকুক। সেটা পরে দেখা যাবে। তুমি এগিয়ে যাও। নিহিলা গ্যাসের সিলিণ্ডারটা নিয়ে
এগিয়ে যাও। দেরি করো না -"
আমি সমস্ত শক্তি ব্যয় করে কোনোভাবে উপুড় হয়ে নিলাম। তারপর নিহিলা গ্যাসের
সিলিণ্ডারটি হাতে নিয়ে সরীসৃপের মতো গড়িয়ে এগিয়ে যেতে থাকি। মেঝের সাথে ঘর্ষণে আমার
মুখের চামড়া উঠে গিয়ে সমস্ত মুখ রক্তাক্ত হয়ে যায়, আমার পোশাক ছিঁড়ে ছিনড়বভিনড়ব হয়ে যায়,
কিন্তু আমি তার মাঝেই নিজেকে টেনে নিতে থাকি। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের এক অংশ থেকে অন্য
অংশে যেতে আমার মনে হলো একযুগ লেগে গেল। প্রথমে ক্লদ এবং তারপর মুশের অচেতন
দেহ পার হয়ে আমি ম্যাঙ্গেল ক্বাসের কাছে এগিয়ে গেলাম। ক্লদ আর মুশ দুজনেই খারাপভাবে
আঘাত পেয়েছে, মহাকাশযানের ভয়ঙ্কর ত্বরণের সাথে অপরিচিত অনভিজ্ঞ দুজন মানুষ প্রথম ধাক্কাতেই ছিটকে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারিয়েছে। মাথার কোথাও আঘাত লেগেছে সেখান থেকে
চুঁইয়ে চুঁইয়ে রক্ত বের হচ্ছে। আমি তাদের মুখের উপর নিহিলা গ্যাসের মাস্কটি কয়েক
সেকেণ্ডের জন্যে লাগিয়ে এসেছি, খুব সহজে এখন তাদের জ্ঞান ফিরে আসবে না।
আমি ম্যাঙ্গেল ক্বাসের কাছে পেঁৗছে খুব কষ্ট করে মাথা তুলে তার দিকে তাকালাম, সে
চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে, নিঃশ্বাসের সাথে সাথে খুব ধীরে ধীরে তার বুক ওঠানামা করছে।
আমি খুব সাবধানে ধীরে ধীরে নিহিলা গ্যাসের মাস্কটি হাতে নিয়ে ম্যাঙ্গেল ক্বাসের মুখে লাগানোর
জন্যে এগিয়ে গেলাম, হঠাৎ করে ম্যাঙ্গেল ক্বাসের চোখ খুলে গেল এবং তার ডানহাতটি খপ
করে আমার হাত ধরে ফেলল। আমি হাতটি ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে পারলাম না, সেটি শক্ত
লোহার মতো আমার হাতকে ধরে রেখেছে। ম্যাঙ্গেল ক্বাস এবার খুব ধীরে ধীরে আমার দিকে
তাকাল, তার চোখে একটি অতিপ্রাকৃত দৃষ্টি, সে বিচিত্র একটি যান্ত্রিক গলায় বলল, "তুমি কে ?
তুমি কী করছ ?"
ম্যাঙ্গেল ক্বাসের মাথায় বসানো কপোট্রনটি কথা বলছে। আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম
সেটি আমাকে চেনে না - সম্ভবত ম্যাঙ্গেল ক্বাস যখন পুরোপুরি অচেতন হয়ে যায় শুধুমাত্র তখনই
সেটি তার শরীরের দায়িত্ব নেয়। সম্ভবত এটি আমার জন্যে একটি সুযোগ। আমি গলার স্বর
অত্যন্ত স্বাভাবিক রেখে বললাম, "আমি ইবান। আমি মহাকাশযান ফোবিয়ানের অধিনায়ক।"
"তুমি নিহিলা গ্যাস মাস্ক নিয়ে কী করছ ?"
"আমি ফোবিয়ানের সকল যাত্রীকে অচেতন করে রাখছি।"
"কেন ?"
"ফোবিয়ানকে রক্ষা করার জন্যে তার গতিবেগকে অত্যন্ত দ্রুত বাড়াতে হবে, তার জন্যে
প্রয়োজনীয় ত্বরণ মানুষের শরীর সহ্য করতে পারে না। যতক্ষণ পর্যন্ত গতিবেগ নিয়ন্ত্রিত না
হচ্ছে ফোবিয়ানের সকল যাত্রীকে অচেতন করে রাখতে হবে।"
"কেন ?"
"এই প্রচণ্ড ত্বরণের মাঝে মানুষ যেন নিজে থেকে কিছু করার চেষ্টা করে শরীরের ক্ষতি না
করে ফেলে সেজন্যে।"
"কিন্তু তুমি তো অচেতন নও।"
আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, "না আমি এখনো অচেতন নই।"
"কেন নও ?"
"আমিও নিজেকে অচেতন করে ফেলব।"
"তাহলে কেন নিজেকে অচেতন করছ না ?"
ম্যাঙ্গেল ক্বাসের মস্তিষ্কে বসানো কপোট্রনটিকে এরকম সম্পূর্ণ একটি সুপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে
এরকম গুরুতর আলোচনা শুরু করতে দেখে আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম। আমার কথা বলতে
কষ্ট হচ্ছিল তবুও জোর করে প্রশেড়বর উত্তর দিয়ে যাচ্ছি। ম্যাঙ্গেল ক্বাসের গলা থেকে আবার
বিচিত্র একটা শব্দ বের হলো, "আমার প্রশেড়বর উত্তর দাও, তুমি কেন নিজেকে অচেতন করছ
না?"
"তুমি কেন এটা জানতে চাইছ ?"
"আমি ম্যাঙ্গেল ক্বাসের মস্তিষ্কের কপোট্রন। যখন প্রভু ম্যাঙ্গেল ক্বাস অচেতন থাকেন তখন
আমি তার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেই। আমাকে জানতে হবে তুমি কী করছ।"
"কেন ?"
"যদি আমার মনে হয় তুমি প্রভুর বিরুদ্ধে কিছু করছ তাহলে আমি তোমাকে হত্যা করব।"
আমি আতঙ্কে শিউরে উঠে দেখলাম ম্যাঙ্গেল ক্বাসের একটি হাত খুব ধীরে ধীরে আমার
মস্তিষ্কের দিকে তাক করে স্থির হলো। আমি জানি তার হাতের আঙ্গুলে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরক
লুকানো রয়েছে, মুহূর্তে সেটি ছুটে এসে আমার মস্তিষ্ককে ছিনড়বভিনড়ব করে দিতে পারে। আমি
বিস্ফারিত চোখে দেখলাম তার আঙ্গুলের ভেতর চামড়ার নিচে দিয়ে কিছু একটা নড়ে গেল,
সম্ভবত বিস্ফোরকটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে স্থির হয়েছে।
ম্যাঙ্গেল ক্বাসের গলা দিয়ে আবার যান্ত্রিক বিচিত্র একটি শব্দ বের হলো, কাটা-কাটা গলায়
বলল, "আমার প্রশেড়বর উত্তর দাও ইবান। তুমি কেন নিজেকে অচেতন করছ না ?"
আমি হতচকিত হয়ে ম্যাঙ্গেল ক্বাসের উদ্ধত হাতের দিকে তাকিয়ে রইলাম, ইতস্তত করে
বললাম, "যারার নিজেদেরকে অচেতন করতে পারছে না আমি শুধু তাদের অচেতন করছি।"
আমি ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলার জন্যে আরো কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলাম, মনে হলো
হঠাৎ করে ম্যাঙ্গেল ক্বাসের ভেতরে কিছু একটা ঘটে গেছে, সে অত্যন্ত বিচিত্র ভঙ্গিতে স্থির হয়ে
রইল। সে কিছু বলল না বা কিছু করল না। তার উদ্যত হাতটি এতটুকু নড়ল না এবং যে হাত
দিয়ে আমাকে শক্ত করে ধরে রেখেছিল, সেই হাতটিও শিথিল হয়ে গেল। কী হয়েছে আমি কিছু বুঝতে পারলাম না কিন্তু আমি বোঝার চেষ্টাও করলাম না। নিহিলা গ্যাসের মাস্কটি ম্যাঙ্গেল
ক্বাসের মুখে চেপে ধরলাম, আমি দেখতে পেলাম ম্যাঙ্গেল ক্বাসের বুক ওঠানামা করছে, এই
গ্যাসটি তার ফুসফুসে রক্তের সাথে মিশে যাচ্ছে। মস্তিষ্কের কপোট্রনের উপর আমার কোনো
নিযন্ত্রণ নেই কিন্তু মানুষ ম্যাঙ্গেল ক্বাস সহজে ঘুম থেকে জেগে উঠবে না।
আমি প্রবল ক্লান্তিতে মেঝেতে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলাম। ঠিক তখন কে যেন আমার
খুব কাছে হেসে উঠল। আমি কষ্ট করে চোখ খুলে তাকালাম, আমার খুব কাছে রিতুন ক্লিস
দাঁড়িয়ে আছেন। হাসতে হাসতে তিনি আমার পাশে বসে পড়লেন, বললেন, "চমৎকার ! ইবান
- চমৎকার।"
"কী হয়েছে ?"
"তুমি দেখছ না কী হয়েছে ?"
"না দেখছি না।" আমি বড় একটা নিঃশ্বাস নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, "কী হয়েছে ?"
"ম্যাঙ্গেল ক্বাসকে তুমি নিহিলা গ্যাস দিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্যে অচেতন করে দিয়েছ। তার
কপোট্রনকেও অচল করে দিয়েছ।"
"আমি কপোট্রনকে অচল করে দিয়েছি ? কখন ? কীভাবে ?"
"তোমার সাথে কথোপকথনের সময় তুমি তাকে কী বলেছ মনে আছে ?"
"না। আমার মনে নেই। অচেতন করা নিয়ে কিছু একটা বলছিল তখন আমিও জানি ভয়
পেয়ে কিছু একটা উত্তর দিয়েছি।"
রিতুন ক্লিস আবার হেসে উঠে বললেন, "তোমার মনে নেই কিন্তু আমার খুব ভালো করে
মনে আছে - কারণ তোমাদের এই কথোপকথন হচ্ছে ঐতিহাসিক একটি ব্যাপার। এরকম
কথোপকথন আগে কখনো হয়েছে বলে আমার জানা নেই, ভবিষ্যতেও কখনো হবে কি না জানি
না। কিন্তু যুক্তি তর্ক বা গণিতের একেবারে প্রাথমিক আলোচনাতেও এই কথোপকথনের
যুক্তিগুলো থাকে।"
আমি অবাক হয়ে বললাম, "আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।"
"আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি।" রিতুন ক্লিস আমার আরো কাছে ঝুঁকে পড়ে বললেন, "ম্যাঙ্গেল
ক্বাসের কপোট্রন তোমাকে জিজ্ঞেস করেছে তুমি কেন নিজেকে অচেতন করছ না ?"
আমি কষ্ট কবরে মাথা নেড়ে বললাম, "হঁ্যা মনে পড়েছে।"
"তুমি বলেছ, যারা নিজেদের অচেতন করতে পারছে না তুমি শুধু তাদের অচেতন করছ।
তাহলে কি তুমি নিজেকে অচেতন করবে ? এই প্রশেড়বর শুধুমাত্র দুটো উত্তর হতে পারে, এক ঃ
নিজেকে অচেতন করবে কিংবা দুই ঃ নিজেকে অচেতন করবে না। ধরা যাক প্রথমটি সত্য,
অর্থাৎ তুমি নিজেকে অচেতন করবে, কিন্তু তুমি বলেছ যারা নিজেকে অচেতন করছে না তুমি
শুধু তাদের অচেতন করছ কাজেই এটা হতে পারে না। তাহলে নিশ্চয়ই দ্বিতীয় উত্তরটি সত্যি,
অর্থাৎ নিজেকে অচেতন করছ না। কিন্তু তুমি বলেছ যারা নিজেকে অচেতন করছে না তুমি শুধু
তাদের অচেতন করছ কাজেই এটাও সত্যি হতে পারে না। এটি একটি অত্যন্ত পুরানো
গানিতিক বিভ্রন্তি, তুমি খুব চমৎকারভাবে এখানে ব্যবহার করেছ। এই কপোট্রনের ক্ষমতা খুব
সীমিত, এই বিভ্রান্তি থেকে সেটি কিছুতেই বের হতে পারছে না।"
আমি মাথা নেড়ে বললাম, "আমি এটা ইচ্ছে করে ব্যবহার করি নি, হঠাৎ করে ঘটে
গেছে।"
"আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি না, এটা নিশ্চয়ই হঠাৎ করে ঘটে নি। কিন্তু সেটা নিয়ে পড়ে
আলোচনা করা যাবে, এখন আরো একটা খুব জরুরি কাজ বাকি রয়েছে।"
"কী কাজ ?"
"ম্যাঙ্গেল ক্বাসের কপোট্রন কতক্ষণ এভাবে থাকবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই; তুমি
এটাকে পুরোপুরি বিকল করে দাও।"
"কীভাবে বিকল করব ?"
"এই দেখো ওর মাথার পিছনে দুটি ইলেকট্রড আছে, এদিক দিয়ে যদি এক মিলিওন
ভোল্টের একটা বিদু্যৎপ্রবাহ দেয়া যায় কপোট্রনটা পাকাপাকিভাবে অচল হয়ে যাবে।"
"এক মিলিওন ভোল্ট ?"
"হঁ্যা, ঝুঁি ক নিয়ে কাজ নেই। কন্ট্রোল প্যানেলেই তুমি পাবে। কমিউনিকেশান্স মডিউলে
বাইপাসে এরকম ভোল্টেড থাকে। তুমি দুটো তার বের করে নাও, নিউরাল নেটওয়ার্ক তোমাকে
ভোল্টেজ প্রস্তুত করে দেবে।"
আমি নিজেকে টেনে নিতে গিয়ে আবার মেঝেতে শুয়ে পড়ে কাতর গলায় বললাম, "আমি
পারছি না মহামান্য রিতুন।"
রিতুন ক্লিস ফিসফিস করে বললেন, "তোমাকে পারতেই হবে ইবান। তুমি যদি না পার
তাহলে যে-কোনো মুহূর্তে ম্যাঙ্গেল ক্বাসের কপোট্রন এই বিভ্রান্তি থেকে বের হয়ে আসবে, তখন
তুমি তার সাথে পারবে না। তোমার জীবন শুধু নয় মিত্তিকার জীবনও শেষ হয়ে যাবে। তুমি
চেষ্টা কর ইবান।"
আমি অক্সিজেন সিলিণ্ডার থেকে বুক ভরে কয়েকবার নিঃশ্বাস নিয়ে আবার গুড়ি মেরে
সরীসৃপের মতো এগুতে থাকি। কন্ট্রোল প্যানেলের নীচে শুয়ে কমিউনিকেশান্স মডিউলের দুটি
তার টেনে খুলে এনে ম্যাঙ্গেল ক্বাসের কাছে এগিয়ে গেলাম। তার মাথার পিছনে দুটি ইলেকট্রড
থাকার কথা, চুলের পিছনে লুকিয়ে আছে। আমি খুঁজে বের করে তার দুটো লাগিয়ে একটু সরে
এসে নিচু গলায় ফোবিকে ডাকলাম, "ফোবি।"
"বলুন মহামান্য ইবান।"
"তুমি এই তার দুটোতে এক মিলিওন ভোল্টের একটা বিদু্যৎপ্রবাহ দাও।"
"দিচ্ছি, আপনি একটু সরে যান।"
"আমি পারছি না ফোবি, তুমি দিয়ে দাও।"
"ম্যাঙ্গেল ক্বাস হঠাৎ একটু নড়ে উঠল, আমি চিৎকার করে উঠলাম, "ফোবি, এক্ষুনি
দাও।"
সাথে সাথে ভয়ঙ্কর বিদু্যৎঝলকে ম্যাঙ্গেল ক্বাসের সমস্ত শরীর কেঁপে উঠল, তার হাত দুটো
হঠাৎ করে প্রায় ছিটকে সোজা হয়ে উঠল এবং আঙ্গুলের ডগা দিয়ে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরক বের হয়ে
আসে, আমি প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেলাম, ফোবিয়ান থরথর করে কেঁপে উঠল, কালো
ধোঁয়ায় পুরো নিয়ন্ত্রণ কক্ষটি অন্ধকার হয়ে আসে।
ম্যাঙ্গেল ক্বাসের শরীরটা বিচিত্রভাবে নড়তে শুরু করে, একটা চোখ হঠাৎ করে খুলে ছিটকে
বের হয়ে আসে, চোখের কালো গর্তের ভেতর দিয়ে সবুজ রঙের ধোঁয়া এবং কিছু ফাইবার বের
হতে শুরু করে। মুখটি হা করে খুলে জিবের নিচে থেকে কিছু জটিল যন্ত্রপাতি বের হয়ে আসে।
যন্ত্রগুলি অনিয়ন্ত্রিতভাবে নড়তে থাকে, একধরনের কালো তেলতেলে জিনিস মুখ থেকে বের
হতে থাকে। কান থেকে সাদা আঠালো একধরনের জিনিস বের হতে শুরু করে।
আমি আতঙ্কে চিৎকার করে পিছনে সরে আসার চেষ্টা করলাম। রিতুন ক্লিস আমার পাশে
বসে শান্ত গলায় বললেন, "ভয় নেই ইবান, কোনো ভয় নেই।"
"কী হয়েছে ? ম্যাঙ্গেল ক্বাসের কী হয়েছে ?"
"ও হাইব্রিড মানুষ। ওর যন্ত্রের অংশটি নষ্ট হয়ে গেছে ইবান। মানুষের অংশটি আছে,
ঘুমুচ্ছে।"
"ঘুমুচ্ছে ?"
"হঁ্যা সহজে ঘুম ভাঙবে না।"
"আমি কী একটু ঘুমুতে পারি রিতুন ক্লিস ?"
রিতুন ক্লিস কী বললেন আমি শুনতে পেলাম না কারণ তার আগেই আমি অচেতন হয়ে
গেলাম। মানুষের শরীর অত্যন্ত বিচিত্র, যে সময়টুকু জেগে না থাকলেই নয় তখন জেগে ছিল
এখন যেহেতু প্রয়োজন মিটেছে আমার শরীর আর একমুহূর্ত জেগে থাকতে রাজি নয়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



