somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুঁড়ো দুধের বিকল্প হিসেবে তরল দুধ

০৯ ই নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাছে ভাতে বাঙ্গালী প্রবাদ অনেক যুগ ধরে যেমন প্রচলিত তেমনি দাদা দাদীদের মুখ থেকে শোনা যায় তাদের সময় নাকি তাঁরা কব্জি ডুবিয়ে দুধ ভাত খেতেন। ভাতের সাথে মাছের একটা প্রচলন মোটামুটি থাকলেও কব্জি ডুবিয়ে দুধ ভাত খাওয়ার প্রচলন কেবলই ইতিহাস এখন। আরে ভাই কব্জি ডুবিয়ে দুধ ভাত খাওয়াতো দুরে থাক শিশুদের খাবারের জন্য যে তরল দুধের প্রয়োজন তাঁও রীতিমতো দুষ্কর। ফলে আমাদের মায়েদের নির্ভর করতে হয় গুঁড়ো দুধের উপর। কিন্তু সেই গুঁড়ো দুধে পাওয়া গেছে মেলামাইন। কিছুদিন আগে চায়নাতে গুঁড়ো দুধ খেয়ে বেশ কয়েক শিশুর মৃত্যু হয় এবং অনেক শিশুর কিডনী নষ্ট হয়ে যায়। বাংলাদেশে চায়না থেকে প্রচুর দুধ আমদানি করা হয়। তার মানে আমাদের শিশুদের এতোদিন গুঁড়ো দুধ বলে যেগুলোকে খাওয়ানো হচ্ছিল সেগুলোর বেশিরভাগ দুধ নয় আসলে বিষ! এর সবচেয়ে বড় কারণ আমাদের দেশে গরু/মহিষের দুধের চাহিদা মাফিক উৎপাদনের অপ্রতুলতা। ফলে আমরা বেশি মাত্রায় বিদেশী গুঁড়ো দুধের উপর নির্ভর হয়ে পড়েছি। যদিও শিশুদের জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নেই।

গতিমান ও অতি আধুনিক বিশ্বে ক্রমবর্ধমান পুষ্টির চাহিদা ও মাংসের চাহিদা মেটাতে মানুষ পোলট্রি শিল্পে বিনিয়োগ করতে থাকে। পোলট্রি এক সময় শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও গত বছর এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণে এ শিল্পে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ড়্গতি হয়। কিন্তু তারপরেও এদেশের খামারীরা চেষ্টা করছে মাথা তুলে আবার দাঁড়াতে। পোলট্রি শিল্পের পাশাপাশি বাংলাদেশে ডেইরির শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ মানুষের পুষ্টি চাহিদার অন্যতম উপাদানের যোগান আসে পোলট্রি ও ডেইরি থেকে। দিকে ঝুঁকে পড়ল কিন্তু এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের করাল গ্রাসে এ শিল্পের ধস নামলেও বাঙ্গালীরা কিন্তু একেবারে বসে নেই। অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে ও ক্রমবর্ধমান দুধ ও মাংসের চাহিদা মিটাতে ডেইরি শিল্পকে বাংলাদেশের জন্য সুপ্রতিষ্ঠিত শিল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ভেজাল ও বিষাক্ত মেলামাইন মিশ্রিত বিদেশ থেকে বিভিন্ন ব্রান্ডের আমদানিকৃত গুঁড়ো দুধের জায়গায় স্থান পাবে আমাদের ডেইরি শিল্পের তরল দুধ। আমাদের নতুন পরিচয় ফুটবে দুধে- ভাতে বাঙ্গালী।

নব্বই’ এর দশকে আমাদের দেশে ডেইরি শিল্প বেশ বিকাশমান ছিল। তখন গোখাদ্য ও চারণভূমি যথেষ্ট থাকায় প্রতি গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ছিল গোয়াল ভরা গরম্ন ও বালতি ভরা দুধ। কিন্তু ক্রমাগত মানুষ বৃদ্ধি, চারণভূমি কেটে ধানী জমি সৃষ্টি ও গোখাদ্য কমে যাওয়ায় কিছুদিন পরেই গরম্নর সংখ্যা কমতে কমতে এখন গোয়াল গরম্ন শূন্য। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে আগে যেমন দু’একটি করে হলেও গরম্ন পালন করতো তা আজ কমে গেছে। কিন্তু বেড়েছে দুধের চাহিদা। যে বাড়িতে একটি শিশু ছিল, সেখানে এখন স্থান পেয়েছে পাঁচটি শিশু অথচ যেখানে দুধ উৎপাদন ছিল দশ লিটার, সেখানে এখন এক লিটারও নেই। গ্রামীণ সমাজে দুধের চাহিদা ও শহুরে মানুষের তীব্র সংকটের সুযোগে বিদেশী কিছু নামী কোম্পানি গুঁড়ো দুধ নিয়ে বাংলাদেশের বাজারে হাজির হয়। শত শত কোটি ডলার ব্যয়ে আমদানি করতে হচ্ছে এই গুঁড়ো দুধ। অথচ ভেজাল ও বিষাক্ত মেলামাইন মিশ্রিত এই গুঁড়ো দুধ এতদিন কিভাবে BSTI ও বাংলাদেশের সরকারকে ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করছে তা এখন সবার প্রশ্ন। অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন তাদের কোলের শিশুকে এতদিন যে দামী ব্রান্ডের দুধ খাওয়াচ্ছিলেন তার মধ্যে কত মাত্রার মেলামাইন রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান গুঁড়ো দুধে যে পরিমাণ মেলামাইন পাওয়া যায়, তা শুধু দুধ হিসেবে দীর্ঘদিন খাওয়ালে কিডনীতে পাথর ও ক্যান্সার হতে পারে। তবে, দুধের সাথে অন্য কিছু যোগ করে খাওয়ালে বিষাক্ততার তীব্রতা কিছুটা কমে যায়।

এ অবস্থায় গুঁড়ো দুধের বিকল্প হিসেবে অনেকেই বেছে নিয়েছেন পাস্তুরিত তরল দুধ। বর্তমানে বাংলাদেশে তরল দুধের চাহিদা রয়েছে বছরে ৭ মিলিয়ন মেট্রিকটন (১৫০ মিলি/মানুষ) অথচ যোগান দিতে পারছে মাত্র ২.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন। FAO এর হিসেব মতে বাংলাদেশে দুধের চাহিদা রয়েছে ১৩.৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন। তবে যোগানকৃত দুধের এক-চতুর্থাংশ আসে বাঘাবাড়ি সমবায়কৃত মিল্কভিটা হতে। বাংলাদেশে বর্তমানে ২৪.৫ মিলিয়ন গরম্ন, ৭ মিলিয়ন মহিষ রয়েছে। তবে, আশার কথা, ছোট ছোট ডেইরি শিল্পের দিকে এখন মানুষ ক্রমাগত ঝুঁকে পড়ছে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। বিশেষ করে এদেশের অনেক শিড়্গিত বেকার যুবকেরাও এখন চাকুরীর পেছনে না ছুঁটে এ শিল্পতে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে।

যেখানে ১ লিটার দুধ পেতে গো-খাদ্য খরচ হয় ১৭ টাকা সেখানে এক লিটার দুধ বিক্রি হচ্ছে ন্যূনতম ৪০ টাকায়। তাছাড়া বিদেশী কিছু ব্র্যান্ডের গুঁড়ো দুধে বিষাক্ত মেলামাইন পাওয়ায় রাজধানীতে তরল দুধের দাম লিটারপ্রতি ৭০ টাকায়ও বিক্রির খবর পাওয়া গেছে। এড়্গেত্রে দুধের চাহিদা মেটানোর জন্য বেশী করে বিদেশী সংকর জাতের গরম্ন পালন করলে দুধের চাহিদা মেটানো সম্ভব বলে । কারণ যেখানে দেশী গরম্ন দুধ দেয় ১ লিটার, সে জায়গায় বিদেশী সংকর জাত দুধ দিচ্ছে গড়ে ১০-১২ লিটার। সে হিসেবে, একটি ছোট পরিবারে দুটি বিদেশী সংকর জাতের গাভী পালন করলে এবং গড়ে ২০ লিটার দুধ পেলে খরচ বাদে মুনাফা পাওয়া যাবে প্রতিদিন ৪৪০ টাকা প্রায়। অথচ দুটি গাভী পালনের জন্য খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না।

পাস্তুরিত তরল দুধ উৎপাদন করে বাজারে সরবরাহ করছে মিল্কভিটা, আড়ং, এমা মিল্ক, আফতাব মিল্ক, আরডি মিল্ক, প্রাণ মিল্ক, ফার্ম ফ্রেশ মিল্ক, আল্টা মিল্ক, বিক্রমপুর মিল্ক, স্টার মিল্কসহ ১০ থেকে ১২ টি কোম্পানি। এদের দৈনিক দুধ সংগ্রহের একটি তালিকা এখানে উলেস্নখ করা হলো :
কোম্পানি দৈনিক সংগ্রহ (হাজার লিটার) বাজারে শেয়ার (%)
BMPCUL ২০০ ৫২.০৮
ব্র্যাক ডেইরি ৯০ ২০.৮৩
প্রাণ ডেইরি ৪০ ১০.৪২
এমো মিল্ক ১০ ২.৬০
বিক্রমপুর ডেইরি ১০ ২.৬০
আফতাব ডেইরি ৮ ২.০৮
আল্ট্রা ডেইরি ১০ ২.৬০
টিউলিপ ডেইরি ১ .৭৮
গ্রামীণ ডেইরি ৭ ১.৮২
রংপুর ডেইরি ৮ ২.০৮
সাভার ডেইরি ৩ .৭৮
৩৮৪

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কাজী রফিকুল ইসলাম ও হেলথ অ্যান্ড হোপের চেয়ারম্যান ডা. লেনিন চৌধুরী বলেন, গুঁড়ো দুধ শিশুর জন্য মোটেই প্রয়োজন নেই। বিদেশী কোম্পানির কাছ থেকে মুনাফা ও অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার জন্য কিছু চিকিৎসক বিভিন্ন গুঁড়ো দুধ কোম্পানির দুধ খাওয়ানোর জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। আসলে শিশুদের মায়ের দুধের বিকল্প নেই। শিশুদের গুঁড়ো দুধ খাওয়াতে হবে এমন কোন কথা বিশেষজ্ঞরা বলেননি। দেশে প্রতি বছর গড়ে ৫০ লাখ শিশু জন্মগ্রহণ করে। ফলে ভবিষ্যতে দুধের চাহিদা আরো অনেক বেড়ে যাবে। একটি শিশুকে কমপক্ষে ৬ মাস মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হয়। এর পরে দুধের পাশাপাশি অন্য কিছু খাদ্য হিসেবে দিতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক ড. এম. মোখতারম্নজ্জামান বলেন, গরম্নর দুধের প্রোটিনের পরিমাণ মায়ের দুধের চেয়ে বেশি যা শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। তাছাড়া, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ডি হাড় মজবুত ও সুস্থ শরীর গঠনে সাহায্য করে। প্রতিটি মানুষের দৈনিক ১৫০ মি.লি. দুধ পান করা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশের ক’জন মানুষ তা পান করতে পারে।

বিভিন্ন প্রাণীর দুধের রাসায়নিক কম্পোজিশন নিচে দেয়া হলো :
ক্রমিক নং প্রাণীসমূহ শতকরা হার
পানি ফ্যাট প্রোটিন ল্যাকটোস ত্র্যাস
০১ গরম্ন ৮৭.৩ ৩.৭ ৩.৮ ৪.৫ ০.৭
০২ মহিষ ৮৪.২ ৬.৬ ৩.৯ ৫.২ ০.৮
০৩ ছাগল ৮৬.৫ ৪.৫ ৩.৫ ৪.৭ ০.৮
০৪ মানুষ ৮৭.৭ ৩.৬ ১.৮ ৬.৮ ০.১

এ সম্পর্কে মনত্মব্য করতে গিয়ে বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবাণু ও স্বাস্থ্য বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আলীমুল ইসলাম বলেন, মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুদের খাদ্য ও পুষ্টির জন্য গরম্নর দুধের বিকল্প নেই। শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি, বুদ্ধিমত্তাসাধন ও পুষ্টির প্রধান উৎস দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্য। তিনি জোর দিয়ে বলেন, চাকুরীজীবী মায়েদের মাতৃকালীন ছুটি ৩ মাস, তাছাড়া যাদের যমজ বাচ্চা হয় বা মায়ের শরীরে দুধের স্বল্পতা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে গরম্নর দুধ ছাড়া আর কি হতে পারে। অথচ নিষ্পাপ শিশুরা মেলামাইন গ্রাসে অভ্যসত্ম, আতংকিত অভিভাবক ও সচেতন মহল।

সরকার যেখানে লেড ফ্রি পেট্রোল আমদানি করতে পারছে, ২ স্ট্রোক মেশিনকে ৪ স্ট্রোকে রূপানত্মরিত করার সাহস পেয়েছে। তাহলে কেন মেলামাইন ফ্রি গুঁড়ো দুধ আমদানি করতে পারছেনা। ড. আলীম বলেন, সময় এসেছে বাংলাদেশের ডেইরি শিল্পকে প্রতিষ্ঠিত করার এবং দুধে স্বয়ংস্মূর্ণ হওয়ার।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের সার্জারী ও অবস্ট্রেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর এবং “ফিল্ড র্ফার্টিলিটি ক্লিনিকের” পরিচালক ড. শামছুদ্দিন ফার্মহাউজকে জানান, গুঁড়ো দুধে মেলামাইন পাওয়া যাওয়ায়, শিশু ও অসুস্থ মানুষদের পুষ্টি ও খাদ্য চাহিদা মেটাতে বিকল্প হিসেবে গরম্নর দুধ বেছে নিতে হবে। কারণ গরম্নর দুধে মেলামাইন থাকার কোন সম্ভাবনা নেই। প্রক্রিয়াজাতকরণের ফলে গুঁড়ো দুধে মেলামাইন ছাড়াও অন্যান্য ভেজাল মিশ্রিত থাকতে পারে। তাই এ সময় হতে আমাদের গরম্নর দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশ পশুসম্পদ মন্ত্রণালয় জিডিপি’তে ৩.৫% আবদান রাখলেও বরাদ্দ পায় মাত্র বার্ষিক জাতীয় বাজেটের ০.৩%, অথচ ক্রমবর্ধমান দুধের চাহিদা বাড়ায় গরম্নর দাম ও মাংসের দামও অনেক বেড়ে গেছে। গড়ে প্রতিদিন ৫ লিটার দুধ প্রদানকারী গাভী এখন বিক্রি হয় ৭০০০০ টাকায় কিন্তু কিছুদিন আগে এর দাম ছিল মাত্র ৩৫০০০ টাকা। “ফিল্ড ফার্টিলিটি ক্লিনিকের” সমপ্রসারিত অবকাঠামো স্থাপন করতে পারলে বছরে আয় হবে শতকোটি ডলার। দেশের ৩০টি জেলাতে এই অবকাঠামো প্রয়োগ করতে পারলে ২০২০ সালের মধ্যে দেশ দুধে স্বয়ংস্মপূর্ণ হতে পারবে। খামার সংগঠন, ক্লিনিক সেবা ও দুধ বাজারজাতকরণের মাধ্যমে এই ক্লিনিক কাজ করে। বর্তমানে শতভাগ সফলতায় চারটি জেলায় কাজ করছে।

দেশের ক্রমবর্ধমান মানুষের দুধের চাহিদা মেটাতে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে এ ব্যাপারে আরো এগিয়ে আসতে হবে। দেশের বেকার যুবকদের এগিয়ে আসার জন্য তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে তাদেরকে আর্থিকভাবে ও প্রশিক্ষণ দেয়া যেতে পারে। এছাড়া গ্রামাঞ্চলের মানুষের পাশাপাশি শহরাঞ্চলের মানুষও যাতে এ শিল্পের দিকে আগ্রহী হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদড়্গেপ নেয়া দরকার। এড়্গেত্রে বাংলাদেশ সরকার কিছু কার্যকরী পদক্ষেপের মাধ্যমে গরম্নর দুধ সংকটের সমাধান করতে পারে ।
ক. গ্রামে দরিদ্র খামারীদের সহজ কিসিত্মতে লোন প্রদান করা।
খ. গো-খাদ্যে ভর্তুকি দিয়ে গো-খাদ্যের দাম সহনীয় মাত্রায় রাখা।
গ. ৬০ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত খাদ্য (ভুট্টা) আমদানি করে ন্যায্যমূল্যে খামারীদের নামে বিতরণ করা।
ঘ. উৎপাদনমুখী ভেটেরিনারী সেবা নিশ্চিত করা (উর্বর গাভী নির্বাচন, ম্যাস্টাইটিস রোগ প্রতিরোধ, নিয়মিত কৃমিনাশক ঔষধ প্রদান, ক্ষুরা, তড়কা ও বাদলা রোগের চিকিৎসা নিশ্চিত করা, বাছুরের পুষ্টি নিশ্চিত করা)।
ঙ. দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে দেশে ডেইরি শিল্পকে আধুনিক শিল্প হিসেবে স্থাপন করা।

প্রতিটি মানুষ যেমন নিজে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হলে অন্যের দ্বারস্থ হতে হয় তেমনি একটি দেশ যদি কোন কিছুতে অভাব থাকে তখন অন্য দেশের দ্বারস্থ হতে হয়। আমাদের দেশ যদি দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে তখন আর বিদেশ থেকে ভেজাল মিশ্রিত গুঁড়ো দুধ আমদানি করতে হবে না। আমরা ইচ্ছে করলেই বিদেশী একটা পণ্যকে হঠাৎ করে বর্জন করতে পারি না। কারণ আমাদের দেশে দুধের চাহিদার তুলনায় উৎপাদনের একটা বিরাট ব্যবধান রয়েছে। যখন এদেশে ডেইরি শিল্প বিকাশ ঘটতে থাকবে, যখন আমরা নিজেদের চাহিদা মোতাবেব দুধ নিজেরাই উৎপাদন করতে পারবো তখন আর আমাদেরকে বিদেশী মেলামাইন মিশ্রিত গুঁড়ো দুধ আমদানি করতে হবে না। তা না হলে আমাদের বাধ্য হবে আবারো ভেজাল মিশ্রিত গুঁড়ো দুধ খেতে। কারণ মানুষ আগে ড়্গুদা নিবারন করতে চায় তারপর পুষ্টির দিক বিবেচনা করে। তাই আমাদেরকে আর দেরী না করে সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে কীভাবে দুধের উৎপাদন বাড়ানো, কীভাবে এদেশে ডেইরি শিল্পকে প্রতিষ্ঠিত করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। এদেশ যখন দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে তখন ভেজাল মিশ্রিত বিদেশী গুঁড়ো দুধ আমদানি বা বিক্রি এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। কেবল আইন কানুন করেই এগুলোর স্থায়ী সমাধান করা সম্ভব নয়। আমাদের নীতি নির্ধারকদেরকে দ্রম্নত পদড়্গেপ নিতে হবে ডেইরি শিল্পকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ।তা না হলে ভবিষ্যতে অপেড়্গা করছে আমাদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি। কারণ আজকের শিশুরাই আগামী দিনের দেশ ও জাতির চালক।

সম্ভাবনাময় ডেইরি শিল্পকে সংকটের হাত থেকে উত্তরণ করে গতিময় পথে চলতে দিলে মাত্র ৫ বছরে দেশ এই শিল্পকে আধুনিকতায় স্থাপন করে দেশের জিডিপি’তে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বিদেশে দুধ ও গরম্নর মাংস রপ্তানি করে দেশ শত কোটি ডলার আয় করবে। এই প্রত্যাশায় আসুন আমরা সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে এ শিল্পের উত্তরণে যথাসাধ্য চেষ্টা করি।

৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×