গত শুক্রবার সকালে সুযোগ হয়েছিল শাহ আবদুল হান্নানের বাসায় যাবার। তখন সকল আটটা বেজে ২৫ মিনিট। চট্টগ্রাম থেকে একজন প্রবাসী এসেছেন তার সাথে দেখা করতে। ভদ্রলোকের পরদিনই ফ্লাইট। কয়েকদিনের জন্য দেশে এসেছেন। নাইট কোচে ঢাকা এসেছেন শুধু তার অতি প্রিয় এই মানুষটির সাথে কিছু সময় কাটানোর জন্য।
শাহ আব্দুল হান্নান তার ভাড়া বাসার স্টাডী কাম বেড রুমে ছিলেন প্রবাসী মেহমানের সাথে। আমাকেও সেখানে ডেকে নিলেন। একজন সাবেক সচিবের বাসা, দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না। ১০০-১২০ স্কয়ার ফিটের একটা রুম। চৌকি কিংবা খাটের এক পাশে মশাড়ী ঝুলছে। খাটের পাশে কম্পিউটারের টেবিল। একটা কাছের চেয়ার। মেঝেতে গাদাগাদি বই। একটা ছোট সোফা। একপাশে ছিড়ে গেছে। অর্ধেকটা বই এর স্তুপে দখল করে নিয়েছে। আর অর্ধেকটাতে মেহমান দুজন চাপাচাপি করে বসে আছেন। তার মা একনও বেচে আছেন। তিনি বলেছিলেন, তার ছেলে একটা দরবেশ। দুটো শার্ট থাকলে একটা কাউকে দিয়ে দেয়।
আমাকে তিনি খাটে বসতে বললেন। তার পাশে। যতবার তার কাছে যাই, মনে হয় আমার নিজের বাবার কাছে এসেছি। এ কথা শুনে আব্বা খুব দুঃখ পান। কিন্তু, আমি জানি, আমার মত তার অসংখ্য চিন্তাগত ছেলে-মেয়ে আছে যারা তার কাছে গেলে পিতার স্নেহ পায়।
সেদিন সকালে যে এডিটোরিয়ালটি তিনি লিখেছিলেন একটি ইংরাজী দৈনিকের জন্য সেটি পড়ে শোনাচ্ছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সংক্ষিপ্ত লেখা। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাগুলো আশু সমাধানের জন্য এবং উপজাতীয়দের প্রতি সকল সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য তিনি সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিলেন লেখটিতে। তিনি বললেন, ইসলামে তাওহীদের পরই জাস্টিস। কোরাআনের উদ্ধিৃতি দিয়ে তিনি বুঝালেন, কোন অজুহাতেই অবিচার আল্লাহ পছন্দ করেন না।
ড্রয়িং রুমে তার ছাত্রেরা অপেক্ষা করছিল। দরবেশের ড্রইং রুম আর কেমন হবে। তার বেড কাম স্টাডি থেকেও ছোট। কম দামী পুরানো সোফা। ছাত্রদের সকলকে সোফায় ধরেনি, মেঝেতে বসেছে। আমি ও তাদের সাথে মেঝেতে বসলাম।
তার ছাত্র-ছাত্রীদের তিনি ইসলামের বিভিন্ন বিষয় পড়ান। তার এই ছাত্র-ছাত্রীরা ইসলামপন্থীদেরকে গোড়ামী মুক্ত করতে সাহায্য করছে। আমরা যখন সেখানে গেলাম, তখন ছাত্রদের কেউ একজন বলছিল আমাদের প্রতি ইন্ডিয়ার আগ্রাসী আচরণের কথা। তিনি বললেন, আমরা যেন কোন দেশ সম্পর্কে এমন কিছু না বলি বা কোন দেশের এমন কিছু না চাই যা আমরা নিজের দেশের ক্ষেত্রে চাই না। তিনি আবারও বললেন, সব ক্ষেত্রেই জাস্টিস করতে হবে।
বেশীক্ষণ থাকতে পারলাম না। চলে আসতে হলো। তখন কাটায় কাটায় নটা বাজে।
আমার দুর্ভাগ্য যে, তার ক্লাসে থাকতে পারি না, তার সাথে দেখাও হয় কালে ভদ্রে। যখনই তার কাছে যাই, তখনই তার আলোর ভান্ডার থেকে এমন সব আলোর টুকরো নিয়ে ফিরি যা আগে কখনো দেখিনি।
শাহ আবদুল হান্নানের সাথে ৩৫ মিনিট
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১০৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর
পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন
আলোচিত ব্লগ
মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন
পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়
আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন
নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন
দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।