somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য গল্পঃ বাবু ভাইয়ের বন্ধু সম্রাট অশোক...

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ শুক্রবার। ছুটির দিন। ছুটির দিনে ঘুমাবো সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে উল্টো। আমাদের কোন বন্ধ নাই। বরং শুক্রবারে আমাদের কর্মকাণ্ড বেশি...

সকাল ৯ টা। আমরা সবাই ক্লাবে অপেক্ষা করছি বাবু ভাই আসার। কিন্তু ভাই আসছেন না। যদিও আমরা জানি বাবু ভাই আসবেন সকাল ১০ টায়। বাবু ভাই রুলে চলেন না। উনি নিজেই নিজের রুল তৈরি করেন। আর তা আমাদেরকে দিয়ে প্রয়োগ করান। এখানেও সেম। ক্লাবের সদস্যদের রুল সবাইকে ৭ টায় ক্লাবে উপস্থিত থাকতে হবে। এবং জিম করতে হবে। এক মিনিট তো দূরের কথা, এক সেকেন্ডও দেরি করে আসা যাবে না...
ক্লাবে ঢুকার আগে একটা নষ্ট সিসি টিভি লাগিয়েছেন। যদিও আমরা জানতাম না এইটা যে নষ্ট। পরে যেদিন থেকে জানতে পারি, সেদিন থেকে আমরা ৯ টায় ক্লাবে প্রবেশ করি। বাবু ভাই টের পাননি এখনও...

তো ১০ টা পার হয়ে ১১ টা বাঁজতে লাগলো, ভাই আসার কোন নাম নাই।
এইদিকে ভাই না আসায়, আমরা সবাই টেনশনে...
ভাইয়ের জ্বর হয়নি তো আবার!
আমরা সবাই ভাইয়ের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম...




ভাই তলোয়ার হাতে বসে আছেন। কাঠের তলোয়ার। দেখতে প্রায় বাহুবলি টাইপ তলোয়ার। সিলভার কালারের হওয়ায় চকচক করছে...

আমি ভাইকে বললাম, ভাইয়া ক্লাবে আসলেন না যে!

ভাই বললেন, তুরা কী জানিস আজ আমার বন্ধু অশোকের জন্মদিন?

আমরা বললাম, কোন অশোক? আগে তো আপনার মুখে এই নাম শুনিনি!

ভাই বললেন, ওরে মূর্খের দল, পড়ালেখা ঠিকমত না করলে, এই নাম শুনবি কী করে! তুরা তো আবার ইতিহাসে শূন্য পাওয়া ছাত্র। প্রতিবছর অশোকের সাথে খুবই জাঁকজমক ভাবে তার জন্মদিনের কেক কাটতাম...

আমরা সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম...
কে এই অশোক! যার জন্য আমাদের এত বড় অপমানিত হতে হলো! তাও ইতিহাসে ফেল করার কথা মনে করিয়ে দিলো!
আমরা সবাই মনে মনে অশোককে গালি দিতে লাগলাম...

ভাই বললেন, তুরা সম্রাট অশোকের নাম শুনিসনি? পুরো ভারতবর্ষে রক্তের স্রোতে ভাসালো এই তলোয়ার দিয়ে (কাঠের তলোয়ারটা দেখিয়ে)...
ইতিহাসের পাতায় পাতায় যেই তলোয়ারের কাহিনী লেখা, সেই ইতিহাসের সম্রাট অশোকের নাম শুনিসনি? আমার বন্ধু সম্রাট অশোকের নাম শুনিসনি তুরা! যে প্রায় বাংলাদেশে আক্রমণ করার জন্য দলবল রেডি করে ফেলেছিলো, আমার এক কথায় সবকিছু ক্যানসেল করে দেওয়া, আমার কথার মান রাখা সেই বন্ধুর নাম তুরা শুনিসনি!

আমরা সবাই যেনো আকাশ থেকে পড়লাম!
ভাইয়া বলে কী!
আমি'ই বললাম ভাইয়াকে, ভাইয়া তখন কী আদৌ বাংলাদেশ ছিলো! আর সে কী সত্যিই আপনাকে চিনতো? তাছাড়া এইটা তো মনে হয় তখন মগধ রাজ্য ছিলো!

এইবার বাবু ভাই রেগে গেলেন। খুব কড়া ভাষায় বললেন, ওরে মূর্খের দল এক যোদ্ধায় তো আরেক যোদ্ধাকে চিনবে!
তুরা দেখিসনি, আমি ফ্রী ফায়ারে কত শত খুন করে চিকেন ডিনার সেলিব্রেট করি!

ভাইয়ের কথায় যুক্তি আছে ভেবে আমরা সবাই চুপসে গেলাম...
ঠিকই তো! ভাই তো রোজই কতশত শত্রুকে তলোয়ার দিয়ে, নাহয় বন্দুক দিয়ে হত্যা করে...
না আছে কোন দয়া, না আছে কোন মায়া। প্রাণ ভিক্ষা চাইলেও ছাড় দেন না, সোঁজা মৃত্যু...
সম্রাট অশোকের বন্ধু তো এমনই হওয়ার কথা!




আমরা সবাই নিজ দায়িত্বে নিজেদের টাকা দিয়ে বাবু ভাইয়ের বন্ধু সম্রাট অশোকের জন্মদিনের কেকের ব্যবস্থা করতে লাগলাম...

আর ওইদিকে বাবু ভাই মনে মনে তলোয়ার হাতে ভাবতে লাগলেন, গল্পটা তো ভালোই ফাঁদলাম...
আহা! যদি এইবার কেকটা পুরো পেটে ঢুকাতে পারি! টাকা পয়সার অভাবে অনেকদিন কেক খেতে পারছি না...

গত কয়েকদিন ধরে বাবু ভাই কেক খাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, কিন্তু টাকা পয়সার অভাবে সেটার ঘাটতি পূরণ হচ্ছে না...
এইদিকে আমরা সবাই জন প্রতি ১০০ টাকা দিয়ে, মোট ৫০০ টাকা তুলে এক পাউন্ডের একটা কেক আনার জন্য শুভকে দোকানে পাঠালাম।
শুভ সেই ৫০০ টাকা নিয়ে কোথায় যে হারিয়ে গেলো, সেদিন আর খুঁজে পেলাম না! কেকও আর কাটা হইলো না...
তাই বাবু ভাইয়েরও আর কেক খাওয়ার ইচ্ছা পূরণ হইলো না...

মোটামুটি সবারই মন খারাপ। দ্বিতীয়বার টাকা তুলে আবার কেক কাটবো সেইটারও ব্যবস্থা নাই। কারণ হাই স্কুলের ছাত্র আমরা। টিফিন আওয়ারের টাকা বাঁচিয়েই এই ১০০ টাকা জমালাম। ভাইয়ের বন্ধুর জন্মদিন বলে কথা, পালন করতে না পারলে, ভাইয়ার মন খারাপ হবে ভেবে, আমরা আমাদের কষ্টের টাকা জলাঞ্জলি দিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম...
শুভ এমন কাজ কেন করলো বুঝলাম না!




শনিবার বিকেল ৫ টা। আমরা সবাই স্কুল ছুটিরপর বাবু ভাই আসার অপেক্ষা করছি। শুভও ছিলো। শুভ গতকাল ৫০০ টাকা হারিয়ে ফেলায় ভয়ে এলাকাতেই ছিলো না। বাবু ভাই মারবে ভেবে...
বাবু ভাই আসলেন। চোখ-মুখ দেখে বুঝাই যাচ্ছে, বন্ধুর জন্মদিন সেলিব্রেট করতে না পারায়, ভাইয়ের মন ভীষণ খারাপ...

আমরা ভাইকে শান্তনা দেওয়ার জন্য বললাম, ভাইয়া আগামী বছর অবশ্যই অশোক ভাইয়ার জন্মদিন পালন করবো...
ভাইয়া বললেন, তুরা চাইলে আমার বন্ধু অশোকের জন্মদিন আজকেও পালন করতে পারিস, আজকে যদি তুরা কেকের ব্যবস্থা করতে পারিস, তাহলে কেক খাওয়ার পর আমি তোদের একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস দেখাবো!

আমরা বললাম, কী জিনিস ভাইয়া! কী জিনিস ভাইয়া!

ভাইয়া বললেন, একটা আপেল।

আমরা বললাম, এই আপেল আবার কবে থেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হইলো!

ভাইয়া বললেন, ওরে বোকারা এইটা যেইসেই আপেল নয়রে! এইটা আইজাক নিউটনের সেই আপেল...
যেই আপেল ডানে-বায়ে-উপরে না পড়ে সোঁজা নিচে নিউটনের কোলে পড়েছিলো...

আমরা স্তব্দ হয়ে বললাম, কী! কী! তারপর?

ভাইয়া বললেন, নিউটন তো এই আপেল ডানে-বায়ে-উপরে না পড়ার কারণ খুঁজতে ব্যস্ত, আর আমি ওই ফাঁকে আপেলটা চুরি করে নিয়ে এসে, নিজের কাছে সযত্ন রেখে দিয়েছি। যা আজও ফ্রীজে অক্ষত অবস্থায় রয়েছে...

নয়ন বড়ুয়া
ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১২:০৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×