somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মসজিদে

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নামায শুরু হওয়ার কথা আটটায় । দেখতে দেখতে ঘড়ির কাঁটা সাড়ে নয়টায় পৌছে গেলো, কিন্তু নামাজ শুরুর নাম নেই । মুসল্লিরা উসখুশ করলেও মুখ ফুঁটে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না । মাইকে হুজুর, সেক্রেটারি, এলাকার পরিচিত মানুষেরা উদাত্তগলায় ঘোষনা দিয়ে যাচ্ছেন - " দেন ভাই, দেন.... আল্লাহর ঘরে দান বিফলে যাবে না । আল্লাহর ঘরে দান করলে আখিরাতে পাওয়া যায় ... নিজের বাবা - মা আত্নীয় স্বজনের নামে দান করেন । "

কালেকশন চলছে মসজিদে টাইলস বসানোর কাজের জন্যে । ইতোমধ্যেই বেশ মোটা অংকের টাকা উঠে গেছে, জোর চেষ্টা চলছে অংকটা আরও বাড়ানোর যাতে খুব ভালো মানের টাইলস লাগানো যায় । পুরানো ওযুখানাটা দিয়েও আর চলছে না । বাইরের এলাকার মানুষ মসজিদে নামাজ পড়তে আসে, তারা এসে ওযুখানার এমন দীণহীন অবস্থা দেখলে মান - সম্মান কিছু থাকে?

মুসল্লিরা নিজ থেকে দিচ্ছেন না দেখে একটু পর নাম ধরে ধরে ডাকা শুরু হয় ... " নান্নু মুন্সি চাচা কই? কত লিখমু আপনের নামে? দুই?? আরে কি কন... পাঁচ লেখ চাচার নামে ... জজ সাহেব ভাতিজা চুপ কইরা কেন? দশ লিখমু, না বিশ ভাতিজা? " .... তরতর করে সংখ্যা বাড়তে থাকে । মুসল্লিদের দিল নরম করার জন্যে একটু পরপর সমবেত স্বরে দুরুদ শরীফ পাঠ করিয়ে যাওয়া হয় ...

আমি পাশ ফিরে আমার পাশে বসা মানুষগুলোর দিকে তাকাই । মাথার টুপি, পাঞ্জাবি দুটোই বহুল ব্যবহারে জীর্ণ হয়ে গেছে তাদের । তাদের গা, নাকের লতির ভাজের তুলো থেকে আমার নাকে মেশকে আম্বর জাতীয় দামী কোন আতরের ঘ্রাণ ভেসে আসে না, বরং কিছুটা ঠেকে ঘামের দুর্গন্ধ । তারা বসে আছেন নিস্পৃহ চেহারায় । মসজিদ আল্লাহর ঘর । এখানে সবাই সমান । কিন্তু ঐ মানুষগুলো এখানে এসেও যেন কেমন কোনঠাসা হয়ে গেছেন । এতো হাজার - লাখের বড়বড় অংকের ভিড়ে তারা খেই হারিয়ে ফেলছেন বারবার ।

আমার মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে উঠে দাড়িয়ে জিজ্ঞাস করি - " মসজিদে টাইলস লাগানোটা জরুরি, নাকি এলাকার দুস্থ মানুষদের চিকিৎসা, জীবিকার জন্যে কিছু করাটা জরুরি?? মসজিদের জানলায় থাই গ্লাস লাগালে আল্লাহ্ বেশী খুশি হবেন, নাকি বর্ষায় যাদের ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ে, মশারির উপর, মেঝেতে প্লাস্টিকের বাটি পাততে হয়ে ভিজে না যাওয়ার জন্যে - তাদের ঘরের চালটা মেরামত করে দিলে বেশী খুশি হবেন? " .... বলা হয় না । কারণ তাহলে এলাকার মানুষ উষ্মা প্রকাশ করবে - দুই পাতা পড়ে লায়েক হয়ে গেছি, সবার মুখের উপর বেয়াদবি করি .... এমন শতশত মানুষকে আমি কিভাবে বোঝাবো ইসলাম ধর্মে মসজিদকে সুদৃশ্য অট্টালিকা বানাতে বলা হয় নি, আল্লাহ্ অপচয় পছন্দ করেন না । আমাদের মহানবী (স) চাইলে মসজিদে নববী কে প্যালেস বানাতে পারতেন, হযরত উসমান (র) একাই তা করে দিতে পারতেন । তিনি তা করেন নি । কারণ উন্নয়ন হওয়া উচিত মসজিদকে কেন্দ্র করে মানুষের জীবনের, মসজিদের নয় । সারা শরীর অপুষ্ট রেখে কেবল মুখে স্বাস্থের ঝলক আনতে চাওয়া সুবিবেচনা প্রসূত কোন কাজ হতে পারে না.. আর এইসব কথা বলতে গেলে Worst Possible Case এ আমাকে নাস্তিক ( ব্লগে আইডিও আছে... কি বিপদ!) , ইসলাম বিদ্বেষী বলে কোপানো হবে । বেশী কোপানো লাগবে না, ও নেগেটিভ ব্লাডের মানুষ বলে আমাকে দুই - একটা কোপ দিলে রক্তের অভাবেই আমি শেষ ।

তাই আমি চুপ করে থাকি । হুজুরদের সুর করে দুরুদ, বয়ান শুনতে শুনতে এক সময় আমার ঝিঁমুনি চলে আসে । পাশের একজন আলতো করে ধাক্কা দিয়ে সবিৎ ফিরিয়ে আনেন । আল্লাহর ঘরে বসে ইবাদতের বদলে ঝিমানোয় আমি মনে মনে বেশ লজ্জিত হই .... তন্দ্রায় আমার চোখে ভাসে পবিত্র কাবা শরীফ । হায়! সে কাবা শরীফও আরবের আমিরদের কোটি কোটি টাকা খরচের গেলাফ, স্বর্ণ আর নকশায় মুড়িয়ে রাখা । আল্লাহ্ কি কাবাকে এতো মূল্যবাণ ভূষনে সজ্জিত করতে কখনো বলেছেন? কোন নবী কি তা করেছিলেন? নবীদের সময়ের পাথরের কাঠামোতে দাড় করানো চাকচিক্যহীন কাবার পেছনে এতো ব্যয় করার ফলে এর আল্লাহর কাছে এর আবেদন কি বেড়ে গেছে? যার পেটের ভাত নেই, সে নিজের এই পরম আশ্রয়ের জায়গাটাতেও ধনীদের এমন তীব্র উপস্থিতি দেখে কি বিষন্ন হয় না? এই অর্থগুলোতে ইরাকে, চীনের উইঘুরর মুসলিম, আফগানিস্তানে বা মায়ানমারের রোহিঙ্গাদের জন্যে কিছু করলেই আল্লাহ্ খুশি হতেন না??

... রাস্তায় গরুর দাম শুনি আশি হাজার, নব্বই হাজার, দেড় লাখ । এতো টাকা খরচ করেও মানুষ তৃপ্ত মুখে হেঁটে যায় । আচ্ছা, বাংলাদেশের মানুষের যদি কোরবানি করার জন্যে এতো টাকা থাকে তাহলে দেশের মানুষ এতো গরীব কেন?? যারা কোরবানি করার জন্যে লাখ টাকা খরচ করেন, তারা যাকাত ঠিক মতো দেন তো? এতো অগুনিত টাকা - পয়সাওয়ালা মানুষেরা যাকাত ঠিক মতো দিলে তো দেসের রাস্তায় কোন ভিক্ষুক থাকতো না, মানুষ না খেয়ে, বিনা চিকিৎসায় মারা যেতো না .... কোরবানি দেয়া ওয়াজিব, আর যাকাত দেয়া কিন্তু ফরয ।

আমি এসব কিছু বলি না । বললে তোমরাই আঙুল তুলে বলবে আমি নাস্তিক, মুরতাদ, বে-দ্বীন ......

" অনেক সময় কেটে গেলো মা'বুদ মসজিদে, মন্দিরে
এখন সময় এসেছে মা'বুদ তুমি ফিরে এসো অন্তরে । "
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১৫
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×