somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছু প্রিয় বইয়ের রিভিউ ০৮ঃ উভচর মানুষ

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বইয়ের নাম: উভচর মানুষ
লেখক: আলেক্সান্দর বেলায়েভ
প্রকাশনী: বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র

রাত নামলে আগুন জ্বেলে চারপাশে গোল হয়ে বসে তার গল্প করে বুড়ো জেলেরা । গল্প ... ইকথিয়ান্ডরের গল্প । ইকথিয়ান্ডরকে কেউ স্পষ্ট করে দেখে নি, দূর থেকে ঝাপসাভাবে দেখেছে হয়তো কিংবা কেউ শুনেছে ঢেউয়ের পাহাড়ে চেপে তার শাঁখ বাজানোর শব্দ । এমনকি জেলেরা তার আসল নামটাও জানে না, ডাকে ' দরিয়ার দানো '।

ডলফিনের ঝাঁকের সাথে এক সমুদ্র থেকে আরেক সমুদ্রে ঘুরে বেড়ায় জলমানব ইকথিয়ান্ডর, সাঁতার কাটে পাল্লা দিয়ে । কখনো বা গভীর সমুদ্রের কোন দ্বীপের পাথরের উপর বসে বিষন্ন মনে বাজায় শাঁখ । অন্য রকম তার শরীর - জল আর ডাঙ্গায় দু’জায়গাতেই তার বিচরণ । ডাঙ্গায় সে নিঃশ্বাস নেয় মানুষেরই মতো করে, আর নোনা জলে ডুব দেয়ার পর শরীরে জেগে ওঠে মাছের মতো কানকো । সে উভচর; মানুষ হয়েও মাছ, মাছ হয়েও মানুষ । অদ্ভুত এক নিঃসঙ্গতায় ভরা তার জীবন । কারণ মাছেদের রাজত্বে সে প্রথম মানুষ, আর মানুষের রাজত্বে সে প্রথম মাছ । বাসিন্দা সে দু'জগতেরই, আবার দু'জগতেই সে আগন্তুক ।

তবে নিজের জীবনকে সে তার মতো করে ভালোও বাসতে শিখেছে । গভীর সমুদ্রে ডুব দিয়ে সে তুলে আনে মুক্তো, বিপন্ন জেলেদের উদ্ধার করে পৌছে দেয় তীরে, ঝড়ের সময় উত্তাল সমুদ্রে ঢেউয়ের সাথে লড়ে যায় সমানতালে, আবার কখনো বা শান্ত সমুদ্রের তলদেশের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে একা একা ভাসতে ভাসতে চলে যায় বহু দূর ।

প্রবাল দ্বীপের নির্মলতায় বড় হয়েছে বলে ডাঙ্গায় সে বেশীক্ষণ থাকতে পারে না, দূষিত বাতাসে তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায় । কিন্তু ইকথিয়ান্ডরের ভালো লাগে মাটির উপর থাকা গুত্তিয়েরেকে যে জলমানবী নয় । ইকথিয়ান্ডর জানে তারা কখনো থাকতে পারবে না একসাথে, তবুও কত তীব্রভাবেই না সে ভালোবাসে গুত্তিয়েরেকে! ... মুখ খুলে তা প্রকাশের সুযোগ সে পায় না, করে না । কেবল চুপিচুপি সৈকতের পাথরের আড়াল থেকে তৃষিতের মতো তাকিয়ে থাকে তার দিকে, কখনো কখনো দূর থেকে পিছু নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে যায় লোকালয়ে । তারপর যখন বাতাসের সীসা, ধোঁয়ায় জ্বলতে শুরু করে বুক, সে ছুটে এসে ঝাপিয়ে পড়ে নীল সমুদ্রে, এক ডুবে চলে যায় নিঃস্তব্ধ নীলের গভীরে ।

সেখানে তার আরেক জগত - নিজস্ব, নিঃসঙ্গ । সময়ও কেটে যায় অবলীলায়, আবার যেন থেমেও থাকে স্থবিরতায় ।

পরিবার বলতে আছেন কেবল ডাক্তার সালভাতর, ইকথিইয়ান্ডর যাকে বাবা বলে ডাকে । কিন্তু তিনি ইকথিয়ান্ডরের বাবা নন । কেউ জানে না কে ইকথিয়ান্ডরের বাবা, কিভাবে তার জন্ম, কোথা থেকে এসেছে সে ।

কিন্তু ইকথিয়ান্ডর কে তার মতো থাকতে দেওয়া হলো না । লোভী মুক্তো ব্যবসায়ীরা একসময় হন্যে হয়ে উঠলো তাকে পাওয়ার জন্য । গুতিয়েরের বিয়ে হয়ে গেলো ‘ জেলি ফিশ ‘ জাহাজের মালিক পেদ্রো জুরিতার সাথে । পেদ্রো জুরিতা উভচর মানব কে বন্দি করতে তারের জাল পাতলো বিস্তৃত সমুদ্রে । একদিন ধরেও ফেলল তাকে ।

তারপর? গল্প শেষ ?? মোটেও না, বলতে গেলে শুরু কেবল ।

চিরায়ত রুশ সাহিত্য নিয়ে আসলে কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না । আর প্রগতি, রাদুর্গা প্রকাশনীগুলো মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্যর ঐ অমূল্য রত্ন – ভাণ্ডারের যতটুকু পাওয়ার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছে তার অন্যতম সেরা প্রাপ্তি এই পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় এ কল্পবিজ্ঞান “ উভচর মানুষ “ ।

বইটা আমি প্রথম পড়েছিলাম ক্লাস সেভেনে থাকতে, স্কুলের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বই পাঠ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে । এ বইয়ের আগে আমি মানুষের ভালোবাসার আবেগ থাকা কোন বই পড়ি নি । ছোট মানুষ আমি এতোটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম তখন যে ঠিক করেছিলাম আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ কেউ হলে তাকে আমি এই বইটা উপহার দেবো । বাচ্চা বয়সের ফ্যান্টাসি, বুঝতেই পারছেন । জীবনে প্রথম যে বার বই মেলায় যাই, ক্লাস এইটে থাকতে সম্ভবত, মেলায় ঢুকে আমি প্রথম যে বইটা সংগ্রহ করেছিলাম তা হচ্ছে এই বই ..... বইটা আমার শেলফ থেকে দুইবার হারিয়েছে, আমি তিনবার কিনেছি । কারণ অল্প বয়সের সে মুগ্ধতা এবং ইচ্ছে এখনও পুরোপুরিই টিকে আছে ।

হ্যাপি রিডিং ! :)

রেটিং: .... নিজের ইচ্ছে মতো রুপে পৃথিবীতে একবার জন্মানো গেলে আমি ইকথিয়ান্ডর হতেম ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫১
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×