জঘণ্য ব্ষ্টি ভেজা একটা দিন. রাত থেকে টানা বৃষ্টি , রাস্তাঘাট ভেজা। আই ৩৫ দিয়ে এক্সিট নিয়ে সার্ভিস রোড দিয়ে যাচ্ছি। গন্তব্য কর্মস্থল , বিশাল এক কন্সট্রাকশন সাইটে।
গায়ের কাপড় এ শীত না মানারই কথা. অক্টোবর মাস, মুষলধারে বৃষ্টি, সব কাজের তদারকি করতে হবে বলে পুরানো জিন্স , সস্তা শার্ট আর জ্যাকেট। এই জ্যাকেট আবার পানিতে ভিজে যাবে খুব দ্রুত, আর কাজের সময় মাথায় ছাতা ধরার প্রশ্নই উঠে না, রেইনকোট ও সাথে নেই., এত কিছু চিন্তা করার সময় ও ছিল না সকালে।
সেভেন ইলেভেনের সস্তা হটডগ আর কফি গিলে , স্টিল টো বুট পায়ে গলিয়ে , গরিব গ্র্যাড স্টুডেন্টদেড় জাতীয় গাড়ি খানা হাঁকিয়ে কাজে যাচ্ছি , সময়টাযে "ওইপাশে পুলসিরাত -ওপিটি".
সার্ভিস রোড দিয়ে গাড়ি লটে ঢুকানোর সময়ই ব্যাপারখানা হলো. কন্সট্রাকশন সাইটে জুড়েই কাদা কাদা , বড় ট্রাকের চাকা যাতে আটকে না যায় সেজন্য পাথর আর গ্রাভেল দেয়া ছিল সার্ভিস রোড থেকে লটের মুখে।
পাথর আর গ্রাভেল পার হয়ে আমার সাধের গাড়িখানা সোজা নরম কাদায় চাকসুদ্ধ বসে পড়ল।
সামনে যায় না. পেছনে যায় না. চাক্কা স্পিন করতে থাকে।
তার উপরে মেজাজ খারাপ হলো - পুরা কন্সট্রাকশন সাইট ভুতের মত নীরব। বড় বড় ড্রিল রিগ , আর ইকুইপমেন্ট শুধু পরে আছে. এই জঘন্য টানা ব্ষ্টিতে কোন কাজ করা যাবেনা পিয়ার ড্রিলিং এর, এইটা তো বেসিক কথা !!
আজকের সাইট ক্যানসেল, এইটা কন্ট্রাকটর এর কাছ থেকে আমার চামার রেডনেক বসের জানার কথা , এবং সাতসকালে আমাকে ফোন দিয়ে জানানো গুরুদায়িত্ব, যাতে সাইটে না গিয়ে অফিসে গিয়ে কামলা দেই।
মেজাজ খারাপ হয়ে গেল.
গাড়ি আটকা , বৃষ্টি এর মধ্যে গাড়িতে বসে আছি. ভয়ানক বুক কাঁপানো শব্দে বাজে পড়ছে।
ফ্রিওয়ের দুই পাশে বড় একটা বিলবোড মস্করা করছে যেন।
কলিগ দুই একটা বদমাশ কে ফোন দিলাম, যাদের অফিসের ট্রাক আছে । কার ঠেকা পড়েছে বিপদ থেকে আমাকে উদ্ধার করতে !!!
নিজের গাড়ি নিয়ে অফিসের কাজে এসে বিপদে পরে অফিসকে যে সু করব তার মত ম্যাচিউরিটি বা পরিস্থিতি যে ছিল না. সময়টা যে "ওইপাশে পুলসিরাত -ওপিটি" ছিল.
কিছুক্ষন হয়তঃ স্টিয়ারিং হুইলে থাবরা মারলাম। কিছু চিৎকার আমার ভি-৬ সিলিন্ডারের গাড়ির ভেতরে হারিয়ে গেল।
নাম না জানা কাউকে শাপশাপান্ত করলাম হয়ত , মনে নাই. আইটি লাইনে না গিয়ে কেন নিজের লাইনের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা করলাম হয়ত তাই নিয়ে আফসোস করছিলাম।
গ্রাড স্কুলের সেফটি কুশনে রিসার্চ করে দুনিয়া উল্টায়ে রাজা উজিরনাজির মেরে পাস্ করে এত কিছু দেখতে হবে হয়ত ভাবি নাই তখন.
হয়ত ঘন্টাখানেক পার হয়ে গিয়েছিল। আবেগ আর হাইপার রিয়েলিজম থেকে ভেজিটেটিভ স্টেট্ এর রিয়েলিজম এ ফিরে গিয়েছিলাম।
গুগল করলাম , নরম কাদায় চাকসুদ্ধ বসে পড়লে কি করতে হবে. ট্র্যাকসন কন্ট্রোল অফ করে দিলাম। পাম্প এন্ড ডাম্প স্টাইলে ধীরে ধীরে গ্যাস পেডেলে চাপ দিয়ে দিয়ে , আর আলতো করে স্টিয়ারিং হুইল ঘুরায়ে।
মুভির মত আস্তে আস্তে ফুল থ্রটল ৭০০০আরপিএম এ, পিছনের চাকা দিয়ে নরম মাটিতে ৩৬০ ডিগ্রি কোন ঘুরে ডোনাট রং বানিয়ে নরম মাটি থেকে শক্ত গ্র্যাভেলে কাকা নিয়ে আসলাম।
যুদ্ধ শেষ. আমি জয়ী. মহাবিশ্ব এর এই ক্ষুদ্র মাথায় কোন এক ক্ষুদ্র মানব এর এই অতি তুচ্ছ এক যুদ্ধ জয়।
চুপচাপ গাড়ির বাইরে আসলাম। বৃষ্টি আর নাই. কি অদ্ভুত, সূর্য দেখা যাচ্ছে
-অনেক অনেক দিন আগের কথা /গল্প
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৯ দুপুর ১২:৪২