somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেই মেয়েটি এর চেয়ে নিকটতর হ'ল না

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'' সেই মেয়েটি এর চেয়ে নিকটতর হ'ল না
কারণ আমাদের জীবন পাখিদের মতো নয় "


কোন মেয়েটি এর চেয়ে নিকটতর হলো না?... আমাদের জীবন পাখিদের জীবনের মতো হলেই বা কি হতো? মেয়েটি কি আরো নিকটতর হতো?

যখনই জীবনান্দ দাশ নিয়ে ভাবি, এক অদ্ভুত নির্জনতা আর নিস্তব্ধতা এসে ভর করে শরীর ও মনে। জীবনানন্দ দাশ নিয়ে, মানে তার কবিতা নিয়ে যতবারই ভাবতে বসবেন ততোবারই শিহরিত হবেন। আপ্লুত হবেন। আবেগতাড়িত হবেন। এবং উপলব্ধি করবেন সত্যিই তো এর চেয়ে সত্য বুঝি আর নেই। বলছিলাম তার অগ্রন্থিত একটি কবিতার কথা। কবিতার নাম 'হাজার বর্ষ আগে'। আসুন দেখি কি বলছেন কবি এখানে...

সেই মেয়েটি এর থেকে নিকটতর হ'লো নাঃ
কেবল সে দূরের থেকে আমার দিকে একবার তাকালো


অর্থাৎ যে মেয়েটি দূরের থেকে কবির দিকে একবার তাকালো, সেই মেয়েটি 'এই তাকানো দূরত্বটুকু' অতিক্রম করে এর চেয়ে নিকটতর হলো না। হতে পারলো না। কিন্তু একবার তাকিয়ে কি এমন বোঝা যায়? কবিই বা এই এক দর্শনে কি এমন বুঝলেন?

আমি বুঝলাম
চকিত হয়ে মাথা নোয়ালো সে
কিন্তু তবুও তার তাকাবার প্রয়োজন__ সপ্রতিভ হয়ে


একবার তাকিয়েই মাথা নামিয়ে নিলো সে। আর কবি বুঝলেন 'তবুও তার তাকাবার প্রয়োজন__সপ্রতিভ হয়ে'। অর্থাৎ শুধু এই একবার আকস্মিক লজ্জাবনত দৃষ্টি বিনিময় কিছু নয়, এতে কিছুই বোঝা যায় না বরং সকল জড়তার উর্ধে উঠে সাবলীল ও অসংকুচিত হয়ে, সপ্রতিভ হয়ে কবির দিকে মেয়েটির তাকাবার প্রয়োজন।

সাত-দিন আট-দিন ন-দিন দশ-দিন
সপ্রতিভ হয়ে__ সপ্রতিভ হয়ে
সমস্ত চোখ দিয়ে আমাকে নির্দিষ্ট করে
অপেক্ষা করে__অপেক্ষা ক'রে


অপেক্ষা করে , সময় নিয়ে গভীর দৃষ্টিতে কবিকে দেখবার প্রয়োজন। অর্থাৎ কবি চাইছেন মেয়েটির দৃষ্টি যা কবিকে মুহুর্তেই এক অতল ভাবনার সাগরে নিমজ্জিত করেছে। তাকে স্পর্শ করেছে। কিন্তু তা তো হলো না। মেয়েটি তার লজ্জাবনত দৃষ্টি একবার কবির দিকে নিক্ষেপ করেই মাথা নোয়ালো। সে এর চেয়ে আর নিকটতর হলো না। কিন্তু কেন?

সেই মেয়েটি এর চেয়ে নিকটতর হ'ল না
কারণ,আমাদের জীবন পাখিদের মতো নয়


কারণ আমাদের জীবন পাখিদের মতো নয়। আমাদের জীবন যদি পাখিদের মতো হতো তাহলে কি হতো? পাখিদের মতো জীবন হলে কি হয় ? সেই জীবন নিয়ে কি করতেন কবি? এসব প্রশ্ন মনকে ছেয়ে ফেলে, আমরা ভাবনাতাড়িত হই কবির মতোই। আহা, যদি পাখিদের মতো জীবন হ'তো !

যদি হ'ত
সেই মাঘের নীল আকাশে
(আমি তাকে নিয়ে) একবার ধবলাটের সমুদ্রের দিকে চলতাম
গাঙশালিখের মতো আমরা দু'টিতে


এই হলো কবির চাওয়া। তিনি বেশি কিছু চান না। তিনি শুধু গাঙশালিখের মতো ধবলাটের সমুদ্রের দিকে সেই মেয়েটিকে নিয়ে উড়ে যেতে চান। তিনি গাঙশালিখের মতো স্বাধীন জীবন চান। উন্মুক্ত বাতাস আর সমুদ্রের বিশালতায় তার 'সেই মেয়েটি'কে নিয়ে উন্মুক্ত হতে চান। এবং যদিও মেয়েটি একবারই মাত্র কবির চোখে চোখ রেখেছে তবুও তিনি জানেন সেই মেয়েটিও এটাই চাইছে...অপেক্ষা করছে...

আমি কোন এক পাখির জীবনের জন্য অপেক্ষা করছি
তুমি কোন এক পাখির জীবনের জন্য অপেক্ষা করছো


এবং এই অপেক্ষার শেষ কখন হবে তা কবি সঠিকভাবে জানেন না। তবে অপেক্ষার হয়তো শেষ হবে , হয়তো হাজার হাজার বছর পরে। তখন তার এই ইচ্ছা পূরন হবে আর তিনি মাঘের নীল আকাশে সমুদ্রের দিকে সেই মেয়েটিকে নিয়ে উড়ে যাবেন। তখন তাদের মনে হবে হাজার হাজার বছর আগে তারা তো এমনটিই চেয়েছিলেন। এমনিভাবেই মাঘের নীল আকাশে সমুদ্রের দিকে ডানা মেলতে চেয়েছিলেন।

হয়তো হাজার হাজার বছর পরে
মাঘের নীল আকাশে
সমুদ্রের দিকে যখন উড়ে যাবো
আমাদের মনে হবে
হাজার হাজার বছর আগে আমরা এমন উড়ে যেতে চেয়েছিলাম।


এই শেষে এসেই কবিতাটি ভীষণভাবে ছুঁয়ে যায়। আমরা সবাই তো উড়ে যেতে চাই আমাদের প্রিয়জনকে সঙ্গী করে। যেখানে আমরা আরো একটু স্বাধীন হবো। আরো একটু আনন্দময় জীবন পাবো। আমরা কেউই তো জীবনের অনাকাঙ্ক্ষিত বাঁকে নিষ্ঠুরতম সংগ্রামের মুখোমুখি হয়ে নিশ্চল পড়ে থাকতে চাই না। আমরা তো গাঙশালিখের মতো স্বাধীন, স্বতঃস্ফুর্ত জীবন প্রত্যাশা করি। আর তাই যখনই জীবনানন্দ দাশ পড়বেন তখনই এক অদ্ভুত নির্জনতা আর নিস্তব্ধতা এসে ভর করবে শরীর ও মনে। ভাববেন, সত্যিই তো আমরা তো এমনটিই চেয়েছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×