গল্প নম্বরঃ ১
কতবার পড়া যায় একটি গল্প?
আরে ভাই, অতো সময় কোথায় যে বারবার পড়বো? কোনো রকমে একবার। তারপরই আরেকটা গল্প। তারপর আরেকটা। এভাবেই তো চালিয়ে আসছি।
চালানো বন্ধ করেন। তার চেয়ে আমি আপনাকে একটা গল্পের কথা বলি। শোনেন। যেটা আপনি বারবার পড়তে পারেন। হয়তো প্রত্যেক পাঠে একটি করে নতুন অনুভূতির স্বাদ পাবেন। নতুন করে ভাবতে ভালো লাগবে। মাথায় গেঁথেও যেতে পারে সারাজীবনের জন্য।
তাই? আপনি বলছেন? এমনটা হয়? বলুন দেখি, কি নাম গল্পের?
গল্পের নাম – নিঃশব্দে খুঁজি পুরাণপাখি।
আচ্ছা। তা কাহিনী কি নিয়ে?
কাহিনী শুনবেন? আচ্ছা শুনুন একটুখানি। গল্পের ভাষায়,
রাশেদ প্রথম জন্মদিনের উপহার পেয়েছিল সাত বছর বয়সে।
ওর বাবা রাশভারি মানুষ, কথা খুব কম বলতেন। একটু বোকাটে ছিলেন। সবার বাবা যেমনটা হয় আর কি। সেদিন সকালে বাবা ওর ঘরে এলেন। হাতে একটা কাপড়ে ঢাকা বাক্স। একটু বিব্রত কণ্ঠে তিনি ওকে জাগালেন, তারপর জিজ্ঞেস করলেন, রাশেদ কি বাক্সটা খুলে দেখতে চায়? ইচ্ছে করলে সে খুলে দেখতে পারে। আজ ওর জন্মদিন কিনা, তাই তিনি একটা উপহার কিনে নিয়ে এসেছেন। এই কথায় এক ঝটকায় রাশেদের ঘুমের ঘোর ভেঙে যায়, উৎসাহিত আঙুলে সে বাক্স খুলে ফেলে, তারপর দেখে, 'উপহার'টা আসলে একটা খাঁচার ভেতরে দুটো টুনটুনি পাখি। সে অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকালে তিনি অপরাধী মুখে কৈফিয়ত দেন, রাশেদের বুকের শূন্য খাঁচাটা দেখে উনার অস্বস্তি লাগে। মানুষের বুক তো খালি রাখার মতো জিনিস না। খালি রাখলে শাশ্বত, প্রাচীন নিয়মগুলির অবমাননা করা হয়। তাই উনার ইচ্ছে, সে পাখি দুটোকে তার বুকের খাঁচায় ভরে রাখুক। দেখতে ভাল লাগবে। এই বলে তিনি ওর বুকের খাঁচার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে থাকেন।'
কিংবা ধরুন,
‘বুকের লেটেস্ট অধিবাসী তখন একজোড়া চিল। খোলা মাঠে গিয়ে দুটোর পাখা চেপে ধরে বের করে ফেললে কে আসছে আপত্তি জানাতে?
যেই ভাবা সেই কাজ। পাখি সরাও, বুকটা ধুয়ে ফেল। দুটো কাজ সারতে কতক্ষণই বা লাগে! কিন্তু কাজটা করার ঘন্টাখানেক পর, রাশেদ হঠাৎ অনুভব করল ওর বুকে কেমন চাপ লাগছে। সময় যায়, চাপ আরও বাড়ে। বিরক্ত হয়ে শার্ট উঁচিয়ে ও দেখল, বুকের হাড়গুলো মরা গাছের ডালের মতো কুঁকড়ে বেঁকে যাচ্ছে, যেকোন সময় পটপট করে ভেঙে যাবে একটা একটা। যেন হাড়েরা যুক্তি করেছে, খাঁচার ভেতরে পাখিই যখন থাকবে না, তখন খাঁচার কি দরকার? গুঁড়িয়ে দাও হাড়-কপাট। বাজারে দৌড়ে গিয়ে একজোড়া পায়রা কেনার পর ওর মনে হয়েছিল, পাখিগুলো ওর দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপের হাসি হাসছে। বলছে- কেমন দিলাম, দেখেছ? যতই জ্বালাই, আমাদের পাখির গুষ্ঠি ছাড়া তোমার চলবে না।'
দাঁড়ান, দাঁড়ান এতো রীতিমত উদ্ভট কল্পনা। গল্পেই সম্ভব!
আরে না, মশাই। শুধু গল্পে না, বাস্তবেও। আচ্ছা আপনিই বলুন, আপনার বুকের খাঁচায় যে পাখি বাস করে সে কি আপনার কথা শোনে? কিংবা যে পাখিকে আপনি পোষ মানাতে চেয়েছিলেন – তাকে পোষ মানাতে কি আদৌ পেরেছেন? লালনের গানে শোনেননি,
খাঁচার ভেতর অচিন পাখি
কেমনে আসে যায়
তাহলে মানুষের বুকে পাখির খাঁচা নিয়ে আপত্তি কোথায়?
তা ঠিকই বলেছেন। আচ্ছা, গল্পটা লিখেছে কে?
লিখেছেন ব্লগার প্রোফেসর শঙ্কু। এ তো শুধু একটা গল্প মাত্র নয়। এ একটা জীবন। ছেলেটার নাম রাশেদ। রাশেদের ভেতর শূন্যতাবোধ। বুকের মধ্যে ব্যথা। কেন? কারণ পাখি যে কথা শোনে না। ঠোকরায়। আঘাত করে। তবু চাইলেই যখনতখন বুকের খাঁচা খুলে পাখি বদল করা যায় না। এ খাঁচা বড়ো আজব খাঁচা। একমন না হলে এ খাঁচা খোলে না। বুঝলেন?
বাহ, অদ্ভুত তো গল্পটা।
তাহলে আর বলছি কি। পড়ে নিন আজকেই। ইকো নামের একটা মেয়েও আছে গল্পে। মেয়ে রূপ আশ্রয়।
কিন্তু আশ্রয় কি সত্যিই মেলে? নাকি শুধুই কল্পনা?
পড়ুন গল্পটা নিজেই বুঝবেন। আমাকে আর বলে দিতে হবে না যে, এটা প্রত্যেকেরই গল্প। প্রত্যেকের বুকেই যে শূন্য খাঁচা। যা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভরে না কিন্তু মৃত্যুর পরপরই খাঁচা শূন্য হয়ে যায়- সেই অদ্ভুত খাঁচা আর পাখির গল্প এটা। এ এক অদ্ভুত হেঁয়ালি। অনবদ্য শব্দচয়নের এমন মিষ্টি জীবনঘনিষ্ঠ এবং বেদনাবিধুর গল্প খুব বেশি আসেনি এ মাসে।
পড়ুন। একবার... দুইবার... তিনবার... যতোবার ইচ্ছে।
গল্পের লিঙ্কঃ নিঃশব্দে খুঁজি পুরাণপাখি
গল্প নম্বরঃ ২
প্রতিদিন খুব ভোরে সিটি কর্পোরেশনের ময়লা ফেলার গাড়ি গুলো আসার আগে জামাল আর মন্টু এসে হাজির হয়ে যায়। দশ বছর বয়সের জামাল আর ওর চেয়ে এক বছরের বড় মন্টু। আবর্জনা ফেলে ট্রাক গুলো চলে গেলে শুরু হয়ে যায় ওদের কাজ।
এভাবেই শুরু হয়েছে গল্পটা। আচ্ছা, আপনার কি মনে হয় না এটা শুধু গল্প নয় বরং প্রতিবাদও?
হতে পারে। এসব নিয়ে তো লোকজন কথাই বলতে চায় না।
কি করে বলবে বলুন? নানান অজুহাত দেখিয়ে একটা অন্যায় কাজকে সমর্থন দেওয়াই তো আমাদের কাজ।
সেটা ঠিকই বলেছেন তবে গল্পটা কিন্তু ভয়াবহ। পড়ে একেবারে ‘থ’ মেরে বসেছিলাম কিছুক্ষণ। এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।
হুম, আপনি ঠিকই বলেছেন। মানুষের জীবনের তো একটা মূল্য আছে। গল্পটার ওই যায়গাটা খেয়াল করেছেন যেখানে লেখক বলছেন,
কিন্তু জামালের ফেরা হয়না। টোকাইরা ভাগাড়ের আবর্জনা থেকে খুঁজে খুঁজে পলিথিন, টিন, লোহা, কাঠ ইত্যাদি বের করে নিজ নিজ বস্তায় ভরছে। নেড়ি কুত্তাগুলো খাবারের খোঁজে হন্যে হয়ে ছোটাছুটি করছে। মন্টু পলিথিন খুঁজতে খুঁজতে চলে গেছে জামালের দৃষ্টিসীমার বাইরে। হঠাৎ জামালের চোখে পড়লো দুই কুত্তার কামড়াকামড়ি। ‘জাইরা পোলার’ রক্তাক্ত মৃতদেহটা কামড়ে ধরে টানাটানি করছে কুকুর দুটো।
আহা! আমিও ভেবেছি। এমন স্পর্শকাতর একটা বিষয় অথচ দেখুন আমরা এটাকে কতোভাবেই না স্বাভাবিক করে নিয়েছি। নিজেদের মানুষ ভাবতেই মাঝে মাঝে লজ্জা হয়।
আর জামালের জীবনটাই দেখুন,
এক মাস আগে এতিমখানা থেকে পালিয়ে এসেছে সে। সেখানে খাওয়ার খুব কষ্ট। সারাদিন হাড় ভাঙ্গা খাটুনী। ভারি কুড়াল দিয়ে লাকড়ি ফাঁড়ার কাজ করতে করতে দম বেরিয়ে আসে ওর। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এতিমখানাই ভালো ছিল ওর জন্য। এতিমখানার চার দেয়ালের বাইরে এই দুনিয়াটা আরও ভয়ংকর। সারাদিন নোংরা আবর্জনা ঘেঁটে দু’বেলা পেট পুরে খাবার জোটে না। ওর সারা গায়ে খোস পাঁচড়া। সারাদিন চুলকায়। চুলকাতে চুলকাতে অস্থির হয়ে যায় সে। সব কষ্টের একটা ভালো ওষুধ অবশ্য ওর কাছে সব সময় থাকে। জুতার আঠা। পেটে না খেলেও এই আঠা ওকে কিনে রাখতে হয়। আঠা পুড়িয়ে ধোঁয়া টেনে নেশা করলে ক্ষিধে, ভয়, চুলকানি কিছুই থাকে না। দশ টাকার আঠায় পাঁচ দিন নেশা করা যায়। নেশা হলে জামাল স্টেশনের প্লাটফরমে গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকে। ট্রেন চলে যায়, যাত্রীরা চলে যায়, দিন রাত সবই চলে যায়। রেল পুলিশের লোকেরা ওকে লাথি মেরে চলে যায়। জামাল চোখ বুঁজে নিঃশব্দে পড়ে থাকে।
সত্যিই গল্পকার বাস্তব জীবনের ভীষণ করুণ একটি দিককে তুলে ধরেছেন। যেদিকে চোখ পড়লে আমরা চোখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকাই।
হ্যাঁ ভাই। আসলেই তাই। তবে যাই বলেন। এটা কিন্তু গল্পের আদলে প্রতিবাদ। ব্লগার আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম কিন্তু সেটা সফলভাবেই করতে পেরেছেন।
হ্যাঁ। প্রতিবাদ মানেই তো হাতে লাঠি নিয়ে রাস্তায় নামা নয়। এমন চুপচাপ ঠাণ্ডা মেজাজের একটা গল্পেও যে প্রতিবাদের সুর সফলভাবেই ফুটিয়ে তোলা যায় ‘ আধখানা মানুষ’ গল্পটা আসলেই তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। শেষটায় যেমন লিখেছেন,
হঠাৎ দপ করে নিভে গেল চারদিকের আলো। নিকষ কালো অন্ধকারের পর্দায় ঢাকা পড়ে গেল সব। শব্দ, বর্ণ, গন্ধ, রূপ, রসময় স্বর্গের দ্যুতি নিমেষে হারিয়ে গেল এক এতিম মানব শিশুর চোখের সামনে থেকে।
গল্পের লিঙ্কঃ আধখানা মানুষ
গল্প নম্বরঃ ৩
অনেকদিন আমার মনে হয়েছিলো মাহ্নবিকে নিয়ে তো একটা গল্প লেখা যায়। কিন্তু গল্পের শেষটা নিয়ে তেমন ভাবতে পারিনি। তাই লেখা হয়ে উঠেনি। কিন্তু গত শনিবারে অকস্মাৎ তার সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো আমার। প্রায় সতেরো বছর পর। দেখেই ধাক্কা খেলাম প্রথমে। তারপর মনে হলো এইতো হতে পারে গল্পের শেষ।
আজকে লিখতে বসে মনে হলো মাহ্নবিকে নিয়ে আসলে গল্প লেখার দরকার নেই। তার জীবনের সত্য কাহিনি বললেই তো একটা গল্পের দ্যোতনা তৈরি হয়। তাই ভাবলাম আপনাদের কাছে তার সত্য কাহিনিগুলিই একটানে বলে ফেলি। ঠিক আছে!
তো তিনি গল্পটি শুরু করলেন এভাবে। তিনি মানে ব্লগার নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। গল্প: মাহ্নবির লাল বিকেল। এক কথায় বলতে গেলে একটি চুম্বকীয় গল্প। শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে টেনে ধরে রাখবে। আর শেষ হওয়ার পর আপনি ভাববেন, এমন কেন হলো?
গল্পের পরতে পরতে বাঁক। আপনি দ্বিধান্বিত হবেন। অদ্ভুতও মনে হতে পারে। তবে জানবেন, মনোমুগ্ধকর গল্প বলতে যা বোঝায় এটা তাই। যেমন এক জায়গায় লেখক বলছেন,
গত শনিবার বিকেলবেলা অকস্মাৎ রাস্তায় মাহ্নবির সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো আমার। প্রায় সতেরোবছর পর। দেখেই ধাক্কা খেলাম। তার পরনে একটা সুতাও নাই। মাথা কামানো, শুধু একগোছা টিকি ঝুলছে পিঠ পর্যন্ত। মনে হয় যে নাপিত তার চুল কামিয়েছে সেই মজা করে একটা টিকি রেখে দিয়েছে। মাহ্নবির শিশ্নস্থানে চোখ পড়লে দেখলাম সেখানে তেমন কিছু নেই, কালো কুচকানো একদলা মাংস মনে হলো। গলায় একটা হাড় ঝুলানো। ছাগলের মনে হয়। আমাকে তার সামনে দাঁড়ানো দেখে হাত পাতলো। কিন্তু চিনতে পারলো না। আমি জাকেরের কাছে ফোন দিলাম। ওর বাড়ি মাহ্নবির বাড়ির পাশেই। কাহিনি শোনার পর কেন জানি অবাক হলাম না।
যাহোক আর না বলি। আপনি নিজেই বরং ঘুরে আসুন এই ঘোরলাগা গল্পটি থেকে। জেনে নিন কিভাবে মাহ্নবির বিকেলটা লাল হয়ে গিয়েছিল।
গল্পের লিঙ্কঃ মাহ্নবির লাল বিকেল
গল্প নম্বরঃ ৪
আচ্ছা ভাই, আপনার কি মনে হয় আমাদের সমাজ থেকে হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি দূর করা সম্ভব?
হ্যাঁ খুব সম্ভব। পারস্পরিক সহাবস্থান এমন আহামরি কিছু তো নয়।
ধুর, আমার কিন্তু তা মনে হয় না। মানুষ চিরকালই প্রতিহিংসাপরায়ণ। অন্যের ভালো সে দেখতে পারে না।
আরে মশাই। একেবারে সবকিছু ঠিকঠাক করা সম্ভব না হলেও তো মোটামুটি সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায় সবকিছু। দরকার ভালোবাসা। বুঝলেন।
তা ঠিক।
এবার বলি শোনেন, গতমাসে এমন একটা গল্পও কিন্তু এসেছে। খেয়াল করেছেন?
তাই নাকি? কার লেখা?
লিখেছেন ব্লগার খেয়া ঘাট। অবশ্য গল্পটা নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই। পড়লেই বুঝবেন। যেমন গল্পের একটা জায়গায়,
সাধক দেখেন- খুবই সুসজ্জিত অপরুপ সুন্দর একটা ঘর। ঘরের ভিতর বিশাল সুপ্রশস্ত একটা খাবার টেবিল। গোল টেবিলের একবারে মাঝখানে বসানো খাবারের পাত্র। সুগন্ধেই বুঝা যায়-এ এক অতি উপাদেয় খাবার। টেবিলের চারপাশে আরামদায়ক চেয়ারে হাতে খাবারের চামচ নিয়ে কিছু মানুষ বসে আছে। চামচগুলো খুবই লম্বা। যাতে বিশাল টেবিলের মাঝখানে খাবারের পাত্র থেকে অতি উপাদেয় সেই স্যুপ চামচে নিয়ে খাওয়া যায়। কিন্তু কারো মুখে কোনো খাবার নেই। সবার জীর্ণ স্বাস্থ্য। অপুষ্ট শরীর। অনাহারী রোগাগ্রস্থ চেহারা। সবার মাঝে বিষাদের ছায়া।
সাধু ওদেরদিকে চেয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বুঝলেন চামচগুলো বেশী লম্বা হওয়ার ফলে খাবার চামচ থেকে নিজেদের মুখে দিতে খুব কষ্ট হচ্ছে, এমনকি সম্ভব হচ্ছেনা। সাধক এবার আরেকটি ঘরে আসলেন। খাবার, খাবার টেবিল, চামচ, পাত্র, মানুষগুলো সবকিছুই অবিকল আগের ঘরটির মতো। তবে পার্থক্য একটা। এরা খুবই আমোদে সময় পার করছে। সবার চেহারা উজ্জ্বল। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। গল্পে, আনন্দে মেতে আছে।
অদ্ভুত তো? একই রকম সবকিছু অথচ একঘরের লোকেরা অনাহারী আর অন্যঘরে সুখের ছোঁয়া!
সেজন্যই তো বলছি। গল্পটা পড়লেই বুঝবেন। আমাদের আসলে ভালো থাকার জন্য, সুন্দর থাকার জন্য কি করা উচিত।
গল্পের লিঙ্কঃ আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন , মানুষ মাত্রই এ গল্পটি আপনার পড়া দরকার।
গল্প নম্বরঃ ৫
দ্বিতীয় সমস্যা- এই যুগে কেউ জীবন-মরণ প্রেম করে না। জীবন-মরণ প্রেমের যুগ শেষ হয়ে গেছে মোবাইল-ইন্টারনেট আবিষ্কার হওয়ার আগের বছর। এই জিনিস এখন আর সলিড খুঁজে পাওয়া যায় না। সবাই সেকেন্ডহ্যান্ড প্রেমে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। নাঈমা সেকেন্ডহ্যান্ড ফালতু প্রেমে পড়তে রাজি না।
দ্বিতীয় সমস্যা? তার মানে এর আগেও 'প্রথম সমস্যা' নামে একটা সমস্যা আছে। কি সেটা?
আরে এতো ব্যস্ত হচ্ছেন কেন? সেটা গল্পটা পড়লেই জানতে পারবেন।
এটা নিশ্চয় প্রেমের গল্প? নিশ্চয় অনেক ন্যাকা ন্যাকা ব্যাপার থাকবে এতে?
না মোটেই না। এটা প্রেম না হওয়ার গল্প। কিংবা বলা যায়, প্রেম হওয়া এবং না হওয়ার মাঝের গল্প। আবার অচরিতার্থ প্রেমের গল্পও বলতে পারেন। লিখেছেন ব্লগার সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর। গল্পের নাম দ্য আর্টিস্ট।
তা এ গল্পটা আপনার এতো ভালো লাগার কারণ কি?
আছে আছে। কারণ আছে। বর্ননাভঙ্গি অসাধরণ। বললাম তো গল্পটা পড়লেই বুঝবেন। তার আগে আপনাকে গল্পটা থেকে একটু শোনাই,
নাঈমার খুব ইচ্ছা সে একটা প্রেম করবে। আবজাব প্রেম না, একেবারে জীবন-মরণ প্রেম। যাকে ভালোবাসবে তার জন্য দুঃসাহসিক সব কাজ করবে। যখন তখন প্রেমিকের সঙ্গে বাইরে বেরিয়ে যাবে। বাড়িতে ফিরে এসে মা’র বকা খাবে। বড়ভাই এবং বাবা কঠিন কঠিন সব কথা বলে তাকে ঘরে বন্দি করে রাখবে। সে বন্দিনী হয়ে একা একা বালিশ ভিজিয়ে কাঁদবে। প্রেমে সুখ পেলেও কাঁদবে, দুঃখ পেলেও কাঁদবে। অনেক কাঁদবে। তার কান্না না হওয়ার রোগ আছে। সে অন্য মেয়েদের মতো অকারণে কাঁদতে পারে না। অনেক চেষ্টা করেও সে চোখে কান্না আনতে পারে না। কিন্তু তার কারো জন্য খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে।
মানুষ হাসতে চায়। আর এই মেয়ে কাঁদতে চাচ্ছে। অদ্ভুত তো!
তাহলে আর বলছি কি। গল্পটার শেষে কি হলো জানেন,
নাঈমার চোখের জলে চিঠি ভিজে যাচ্ছে। কিছুতেই চোখের জল আটকে রাখতে পারছে না। সে কাঁদছে, ভীষণভাবে কাঁদছে। বর্ষার অবিরাম জলধারার মতো অশ্রুতে ভিজে যাচ্ছে তার বাম গালের একাকী তিলটা।
কার চিঠি?
সব তো আমি বলে দেব না। এ চোখের জলের ইতিহাস জানতে আপনাকে ঘুরে আসতে হবে গল্পটা থেকে।
গল্পের লিঙ্কঃ দ্য আর্টিস্ট
(আমার নিজস্ব ভালোলাগার পাঁচটি গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে পোস্টটি। অনেকেই অনেক চমৎকার গল্প লিখছেন। তাদেরকে অভিনন্দন। আরো ভালো লিখে চলুন নিরন্তর। সেই সাথে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি প্রিয় মাহমুদ ভাই ও প্রবাসী পাঠক ভাইকে যারা বিভিন্ন সময় নানারকম তথ্য দিয়ে আমাকে সমৃদ্ধ করেছেন।)
'জুলাই মাসে' আপনার ভালোলাগা গল্পগুলো সম্পর্কে মন্তব্য / আলোচনা করার জন্য সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আলাপে, সংলাপে, আলোচনা, সমালোচনায় মুখরিত হয়ে উঠুক পোস্টটি।
সবাইকে শুভেচ্ছা।
জুন মাসের লিঙ্কঃ জুন মাসের ৬টি মনোমুগ্ধকর গল্প
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৩