আজ এখানে ঈদ। সিঙ্গাপুরে। যদিও আমি ধর্মীয় ভাবে ঈদ পালন করিনা কিন্তু বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে ঈদ, পুজা দুটোই যেভাবে মিশে আছে তাতে কেউতো এগুলোর আবেদন অস্বীকার করতে পারবেনা। যাই হোক আজকে এই কথাটা খুব বেশি করে মনে পড়ছে যে মানুষ কেন দেশ ছেড়ে বিদেশে থাকে? আমি একজন অমুস্লিম হয়েও দেশে ঈদে যে আনন্দ করেছি এখানে বাঙ্গালি মুসলিমরাও তার ৫ ভাগের এক ভাগ আনন্দ করতে পারছে না। সিঙ্গাপরে বাঙ্গালি ৮০% শ্রমিক। আর বিভিন্ন পেশাজীবি আছে ২০%। তার মধ্যে ৯০% ই থাকে পরিবার ছাড়া। একা। এভাবে কি ঈদ হয়? এবং আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে আজকেও অনেককেই কাজ করতে হচ্ছে ঈদ হওয়া সত্ত্বেও। এটা এখানে আমার তৃতীয় ঈদ। গত বছর দূইটা আর এইবছর একটা। গত বছর একটা পুজা উদযাপন করছি এইবছর করবএকটা। সকাল সাতটায় অফিসে গেছি আসছি সাড়ে আটটার দিকে। তারপর স্নান করে পুজায় গেছি। আহ কি চমৎকার জীবন।
শুরুতে একটা প্রশ্ন করছিলাম না, কেন মানুষ বিদেশে থাকে? মাঝে মাঝে ভাবি টাকা, জীবন যাপনের ধরন, পেশাগত জীবনের সফলতা, উচ্চশিক্ষার সুযোগ এইসব কারনে থাকে। তারপরও মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগে......এই যে বিশেষ করে আজকের মত দিনগুলোতে। আমি শুধু সিঙ্গাপুরের ব্যাপারেই জানি কিন্তু মনে হয় পৃথিবীর সব দেশেই বাঙ্গালী তথা বিশ্বের দরিদ্র জাতিগুলোর মানুষ যারা উন্নত দেশগুলোতে কাজ করতে যায়, তাদেরকে অবহেলা করা হয়। সে যত বড় পদেই থাকুক না কেন তার মর্যাদা সেইভাবে দেওয়া হয়না। পেশাগত স্তরের বিন্যাসটা নির্ভর করে সে কত উন্নত জাত থেকে এসেছে তার উপর। তো সেইরকম অবহেলার শিকার আর সবার মত আমাকেও হতে হয়েছে, এবং মাঝে মাঝেই হতে হয়। তখনো খুব খারাপ লাগে।
এইসব খারাপলাগার বিপরীতে মুদ্রার উলটা পিঠও আছে। এই যে আমি, প্রকৌশলী হিসেবে পাস করার ছয় মাসের মাথায় ব্যাক্তিগত দ্রুতগতির ল্যাপটপের মালিক হয়েছি.........সেটা কি দেশে থাকলে সম্ভব হতো যদি না সরকারি চাকুরি করে ঘুষ না খেতাম,অথবা বাপের অধেল টাকা না থাকতো? কেও ভাববেন না আমি নিজের ফিরিস্তি দিচ্ছি, আমি শুধুই দেশ এবং বিদেশ দুই স্থানে বসবাসের অবস্থানগত তুলনা করতে চাচ্ছি। আমি পাস করছি দেড় বছর হতে চল্লো। দেশে ৫ মাস চাকুরি করে এখানে এসেছি। এখানে এসে আমি যেইসব প্রজেক্ট করছি তা দেশে থাকলে আগামী ১০ বছরে বা আদৌ সম্ভব হতো কিনা তা প্রশ্নসাপেক্ষ। এইসব প্রজেক্ট থেকে অনেক কিছু শিখতে পেরেছি যা প্রচলিত ধ্যানধারনা বা পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানের বাইরে। যথেষ্ট ভাল পরিমান কামাইও হচ্ছে।
তারপরও মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগে। এই যে আজকে ঈদ, তারপর ও সকালের নাস্তা করতে হয়েছে KFCর বার্গার আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই দিয়ে। দুপুরে এখনো রান্না করিনি তাই খাওয়াও হয়নি। হবে কিনা জানিনা। হয়তো সন্ধ্যায় রান্না করে একেবারে রাতে খাবো। আজ দেশে থাকলে আর যাই হোক অন্তত খাবারটা নিয়ে নিশ্চয়ই ভাবতে হতোনা।
একটা ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে থাকছি তাও আবার সেটার ভাড়া দিচ্ছি ৩৭৫০০টাকা মাসে। সবকিছুর এত দাম। অথচ আমাদের সরকার একটু উদ্যোগ নিলে অনেক কিছুই আমাদের দেশ থেকে সস্তায় রপ্তানি করা যেত।
বাংলাদেশের চেয়ে এখানে বেতন অন্তত দশ গুণ বেশি। যে কোনো ক্ষেত্রে। কারন হচ্ছে এখানে বাংলাদেশের চেয়ে অন্তত ১৫ গুণ দ্রুত কাজ করা হয়। আমি পুরকৌশলী হিশেবে নির্মাণশিল্পের ব্যাপারটা নিজের হাতে করছি কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রেও যে ব্যাপারটা একি রকম দ্রুত সেটাও বুঝতে পারি। দেশে সবকিছুই কেন এত দেরিতে হয় জানিনা। এইযে আমরা প্রবাসীরা এত কষ্ট করে টাকা উপার্জন করে দেশে পাঠাচ্ছি অথচ সরকার আমাদের ভোটের অধিকারটাই দিতে পারলোনা। কত টাকা আর খরচ হতো?
তারপরও সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। দুঃখিত মন খারাপ করা একটি লেখার জন্য। মাঝে মাঝে খুব লাগে সেটাই প্রকাশ করলাম। ব্লগ মানেই তো প্রকাশ করা, তাই না?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




