মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উনার বাবাকে এই দেশের লোকেরা হত্যা করেছে। উনার পরিবারকে এমনকি ছোট শিশু রাসেলকেও হত্যা করেছে। বিষয়টা যতই খারাপ শোনাক না কেন এটা সত্যি। উনার পরিবারের সাথে এদেশের মানুষ যে আচরণ করেছে, তাতে এদেশের মানুষের প্রতি উনার কি মনোভাব জানি না, তবে সাধারণ কারও পক্ষে এরকম অবস্থায় এ দেশকে, এ দেশের মানুষকে ভালবাসা সম্ভব না। দয়া করে এখন দেশপ্রেমের আলগা ভারী ভারী বাণী শোনাতে আসবেন না। একটু সুস্থ, সুন্দর জীবনের জন্য, লোডশেডিং, মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য, মাস্তানের, ছিনতাইকারীর হাত থেকে বাচার জন্য, ন্যায়পরায়ন সমাজের জন্য যে দেশের মানুষজন বিদেশী দূতাবাসের সামনে লম্বা লাইন তৈরী করে তারা যদি বলে পিতৃহত্যার পরেও দেশকে দোষারোপ করা যাবে না, দোষারোপ করলে কিছু নির্দিষ্ট লোককে করা যায়, পুরো দেশকে নয়, তাদের গদাম লাথি দিয়ে এই পোষ্ট লিখা শুরু করলাম।
কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে শেখ হাসিনার পরিবারের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে তারপরেও নিজের দেশকে ভালবাসা সম্ভব না। যে কোন স্বাভাবিক মানুষই এরপরেই দেশ ছেড়ে অন্য দেশে স্থায়ী হবে। সেই হিসাবে শেখ হাসিনা যে এখনও পুরো বাংলাদেশকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেন নি, সে জন্য শুকরিয়া আদায় করছি।
শেখ পরিবার তখনকার সময়ে যে ধ্বংসাত্মক ভূমিকা পালন করেছিল, সেটা অনস্বীকার্য। শেখ মুজিবকে আমার দৃষ্টিতে একজন গ্রাম্য মোড়লের মত মনে হয়, যিনি আসর জমিয়ে, চ্যালা-চামচা নিয়ে গ্রাম শাসন করার মত দেশ শাসন করেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি ব্যাক্তিগতভাবে নাক গলিয়েছেন। পেশাদারী মনোভাব নয়, যৌক্তিক মনোভাব নয়, পারিবারিক মনোভাব নিয়ে শাসনক্ষমতায় ছিলেন উনি। তার আরও অনেক অনেক ত্রুটি ধরা যাবে। কিন্তু এত কিছুর পরেও তাকে হত্যা করাটা আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক বিশাল কলংক হিসেবে থাকবে। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, ততদিন এই কলংক আমাদের বয়ে বেড়াতে হবে।
শেখ পরিবারের প্রতি এই আক্রোশ, আক্রমণ থেকে রক্ষা করার মত এই সৌরজগতে কে আছে? শেখ হাসিনাকে যদি এখন সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে হত্যা করতে চায়, কে বাঁচাবে? আমাদের গণতন্ত্র মোটামুটি শুরু হয়েছে ৯১ থেকে। এর আগে ঘুরেফিরে সেই সামরিক বাহিনীই শাসন করেছে দেশ। যত ভালভাবেই দেশ চালাক না কেন মানব ইতিহাসে সামরিক বাহিনী বা অস্ত্রধারী লোকদের শাসনক্ষমতা কোন সভ্য শাসনব্যাবস্থার পরিচায়ক নয়। এটা আদিম ও বর্বর সমাজের পরিচায়ক যেখানে অস্ত্রধারীরা তাদের শারিরীক বল ও অস্ত্রের সাহায্যে সমাজ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। সামরিক বাহিনীতে অস্থিরতা আমাদের দেশে খুবই সাধারন একটা জিনিস এবং আমাদের সামরিক বাহিনীকে এত সাধু ভাবারও কিছু নাই। তাই অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শেখ হাসিনাকে যদি তারা সরিয়ে ফেলতে চায়, তাহলে কে বাচাবে এই মহিলাকে?
ভারত।
পৃথিবীতে এই একটা দেশ ছাড়া আর কোন দেশে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেবার মত কেউ আছে বলে আমার মনে হয় না। বিডিআর বিদ্রোহের সময় ভারত যদি শেখ হাসিনাকে সাপোর্ট না দিত, তাহলে অবস্থা কি হত বলাই বাহুল্য। তাই রক্ষাকর্তা ভারতকে তিস্তা, তিতাস, টিপাইমুখ, ট্রানজিট এ সবই আমাদের বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিনা দ্বিধায় দিয়ে দেবেন, এতে অস্বাভাবিকতার কিছু নাই। আজ বাদে কাল যদি ভারত শেখ হাসিনার পিছন থেকে সরে আসে, আমার মনে হয় না আমাদের সামরিক বাহিনী শেখ হাসিনাকে আস্ত রাখবে। যদিও একটি দেশের সামরিক বাহিনী সেই দেশের শৌর্যবীর্য, গর্ব এবং জাতীগত অহংকারে বিষয় এবং আমি নিজেও আমার সামরিক বাহিনী নিয়ে গর্বিত, তবুও কষ্ট করে আমাকে এ কথাটা বলতে হচ্ছে। একটি দেশের ক্ষত্রিয়রা তাদের দেশবাসীদের হিরো, আইকন। পৃথিবীর সকল শক্তিশালী দেশের নাগরিকরা তাদের ক্ষত্রিয়দের শক্তি, সাহস এসব নিয়ে অন্যদের সাথে জাহির করে, তর্ক করে, ঝগড়া করে। দেশ যদি একটা মানবদেহ হয়, ক্ষত্রিয়রা, সামরিক বাহিনীর সদস্যরা সেই দেহের ডানহাত। কিন্তু সেই ডানহাত যখন নিজের দেহেরই চোখ উপড়ে ফেলে, নিজের দেহে নিজেই ছুরিকাঘাত করে, তখন আত্মহত্যা বা মৃত্যু ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। দুঃখের বিষয়, আমাদের সামরিক বাহিনী নিয়ে আমাদের যেমন গর্ব করা উচিত, আমাদের হিরোদের নিয়ে আমাদের যেমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা উচিত, আমরা তা করতে পারি না।
এই দায়ভার কার?
এ দায়ভার আমাদের প্রথম নেতার। প্রত্যেকটা দেশের সামরিক বাহিনীতে কিছু ঐতিহ্য আছে। ঐতিহ্য এমন একটা জিনিস, যা শুরুতেই গড়ে তুলতে হয়, নতুন করে ঐতিহ্য গড়ে তোলা যায় না। শুধু সামরিক বাহিনী নয়, যে কোন প্রতিষ্ঠানে ঐতিহ্য একটা বিশাল ভূমিকা পালন করে। রাশিয়ান পাইলটরা কি আমেরিকান পাইলটদের মত সুযোগ সুবিধা পায়? কানাকড়িও পায় না। কিন্তু তবুও তারা বিশ্বসেরা। কারণ তারা নিজেদের একটা ঐতিহ্য গড়ে তুলেছে। যে কোন একটা ভাল স্কুলে একটা সাধারণ ছেলেকে ঢুকিয়ে দিন, সে ঠিকই কিছুদিনের মধ্যে ভাল ছাত্র হিসেবে তৈরী হয়ে যাবে। আমাদের প্রথম নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এবং তার আশেপাশের বিজ্ঞজনেরা যে ভয়ংকর অবস্থার মধ্যে আমাদের সামরিক বাহিনীকে রেখেছিলেন, তাতে ঐতিহ্য তৈরী হওয়া তো দুরের কথা, সামরিক বাহিনী পুরোটা যে পাগলাগারদে স্থান নেয় নাই এটাই বেশী। আমরা যদি তখন দুরদৃষ্টির সাথে সামরিক বাহিনীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতাম, তাহলে শেখ মুজিবকেও মরতে হত না, ৯১ সালেও গণতন্ত্র আসতো না। আমাদের সামরিক বাহিনীর শুরুটা হয়েছে খুবই অগোছাল এবং করুণভাবে, বিশৃংখল অবস্থায়। কোন সুস্থ, আধুনিক দুরদৃষ্টি সেখানে ছিল না। রক্ষীবাহিনী তৈরী করে, তাদের ঝকঝকে পোশাক পরিয়ে, সেনা সদস্যদের ছেড়া জুতো আর অফিসারদের তালি মারা ইউনিফর্ম পরিয়ে রাখলে অবস্থা কি হবে বলাই বাহুল্য। জীবন দিয়ে নিজের ভূলের মাশুল গুনতে হয়েছে আমাদের জাতির পিতাকে। আমাদের হিরো, আইকন, ক্ষত্রিয়দের হাতে লেগেছে পিতৃহত্যার রক্ত।
শেখ হাসিনা খুব ভাল করেই এইগুলো বোঝেন। তাই নিজের দেশের জওয়ানদের থেকে ভারতীয় গুর্খাদের কাছে যে তিনি বেশী নিরাপদ সেটাও তিনি জানেন। সবার আগে নিজের জান। নিজে বাচলে বাপের নাম। নিজে বাচার জন্য পুরো দেশকেও বেচে দিতে কেউ কুন্ঠাবোধ করবে না। মহান আত্মত্যাগীদের কথা আলাদা। মহামানব তো আর গন্ডায় গন্ডায় জন্মায় না, বীরশ্রেষ্ঠ সাতজনই হয়। তাই শেখ হাসিনা যদি পুরো বাংলাদেশ বিক্রিও করে দেয় নিজের নিরাপত্তার জন্য, আমি বিন্দুমাত্র অবাক হব না এবং এর জন্য শেখ হাসিনাকে আমি দোষারোপও করব না। আমি আপনি হলেও একই কাজ করতাম। শুধু শুধু ভন্ডের মত বড় বড় বুলি আউড়িয়ে লাভ কী?
-------------------------
ভিডিওটা গত কয়েকদিনেও দেখি নাই। অনেক জঘণ্য ভিডিও দেখছি জীবনে। কিন্তু কেন যেন এই ভিডিওটা আমার দেখতে ইচ্ছে করছিল না। ভিডিওটা চালু করলাম আজ ইউটিউবে। তিরিশ সেকেন্ড পরে আবার পজ করলাম। অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গিয়েছি। ভিডিওটা আমার মোটেও দেখতে ইচ্ছে করছে না। পাকিস্তানে প্যারামিলিটারিদের হাতে যুবকের গুলি খেয়ে রক্তপাতে মৃত্যুর ভিডিওটা আগ্রহ নিয়ে দেখেছি। হয়তো দেখার সময় ভিম ভাজি দিয়ে রুটিও চাবিয়েছি। কিন্তু এই ভিডিও দেখা আমার পক্ষে সম্ভব না। তবুও চেষ্টা করলাম। কিন্তু আমার দেশের লোককে যখন ওরা উলঙ্গ করে ফেলল, আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। মনে হচ্ছিল আমাকে নিজেকেই যেন উলঙ্গ করা হচ্ছে সেখানে। পুরো দেশকেই উলঙ্গ করা হচ্ছে সেখানে। চিন্তা করে দেখুন জনসম্মুখে আপনাকে উলঙ্গ করা হচ্ছে! কতটুকু অপমানজনক বিষয়টা! এর থেকে গুলি করে মেরে ফেললেও ভাল হত! এই জিনিস যারা করতে পারে, তাদের সাথে......... আমি জানি না.........
ইংরেজীতে একটা কথা আছে, নেভার হিট বিলো দ্যা বেল্ট। বেল্টের নীচে কখনও আঘাত করতে হয় না।
ভারত থেকে মানসিংহ এসেছিল বাংলা জয় করতে। ঈসা খাঁ তার সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। ঈসা খাঁ আর মানসিংহ এর মধ্যকার লড়াইয়ের এক পর্যায়ে মানসিংহের হাত থেকে তরবারী পড়ে যায়। ঈসা খাঁ চাইলে তখনই নিরস্ত্র মানসিংহকে আঘাত করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি মানসিংহের হাতে পুনরায় তরবারী তুলে দিয়েছিলেন। মানসিংহ ঈসা খাঁর এমন অদ্ভুত আচরনের কারণ জানতে চাইলে ঈসা খাঁ বলেন, "নিরস্ত্রকে আমি আঘাত করতে পারি না"।
হে ভারত, তোমাদের নিরস্ত্র মানসিংহকে আমাদের সশস্ত্র ঈসা খাঁ আঘাত করে নাই, কারণ আমাদের নীতিবোধ তোমাদের মত নয়। কিন্তু তোমাদের সশস্ত্র বিএসএফ আমাদের নিরীহ গরু ব্যাবসায়ী, নিরস্ত্র মেয়ে ফেলানীর প্রতি যে আচরণ করল, তাতে শুধু একটা জিনিসই বুঝলাম, সম্রাট আলেকজান্ডার ভুল বলেছিলেন তোমাদের পুরু রাজাকে। তোমরা বীরের জাতী নও, তোমরা একটা কাপুরুষ, নিম্নস্তরের নৈতিকতায় বসবাস করা জাতী। তোমাদের রাজা পুরুকে বলবে আলেকজান্ডার সামনে যেয়ে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে বলতে, "হে আলেকজান্ডার, তুমি ভুল বলেছিলে সেদিন, আমরা বীর নই, আমরা কাপুরুষ"।
আমার দেশ বা সরকার ভারতের সাথে যুদ্ধাবস্থায় যাবে না। আমার দেশের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত, সামরিক, অর্থনৈতিক, ভৌগলিক, কোন দিক দিয়েই ভারতের সাথে পাল্লা দেবার মত যথেষ্ঠ নয়। এটা মধ্যযুগও না যে ধারালো তরবারী হাতে বর্ডারে যেয়ে বলব, আমি আমার দেশের সম্মান পুনরুদ্ধার করতে এসেছি, দায়ী বিএসএফদের আমৃত্যু লড়াইয়ে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। তাহলে কি ছেড়ে দেব? মোটেও না। আজ থেকে ভারতের বিরুদ্ধে আমার ব্যাক্তিগত যুদ্ধাবস্থা চালু হল। যখনই সুযোগ পাব, যেভাবেই পারব, আমি ভারতের চুল পরিমান হলেও ক্ষতি করব। ভারতীয় পণ্য আজ থেকে আমার জন্য হারাম। বিন্দুমাত্র ক্ষতি করার সুযোগও যদি পাই ভারতের বিরুদ্ধে, সর্বশক্তি দিয়ে সেই ক্ষতি আমি করব।
আমিই আজ বাংলাদেশ। আজ থেকে বাংলাদেশের সাথে ভারতের যুদ্ধাবস্থা চালু হল!

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




