somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিপিএল-এ কোন বলিউড গান্ধা দেখতে চাই না

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাকিস্তান যে পথে হেটেছিল, ভারতও সে পথে হাটছে। পাকিস্তানীরা যেমন উর্দু চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল, ভারতও তেমন হিন্দি চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। তবে কৌশলে। সাথে একটু আধটু জোরও আছে।

আমরা জানি যে আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে ভারতের কোন রাষ্ট্রভাষা নাই। এর বদলে ভারতের দুইটি দাপ্তরিক ভাষা আছে, হিন্দি আর ইংরেজী।

কেন? কারণ ভারত বহুজাতিক দেশ। সেখানে অনেক জাতীগোষ্ঠী বাস করে। এদের অনেকেরই হাজার বছরের নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভাষা আছে। তাদের এই ঐতিহ্য, ভাষা ও সংস্কৃতি হিন্দিভাষীদের থেকে আলাদা। পাকিস্তানীদের সাথে আমাদের ধর্ম এক হলেও যেমন ভাষা ও সংস্কৃতি এক হয় নাই, তেমনি ভারতের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ধর্ম একই হিন্দুধর্ম হলেও ভাষা ও সংস্কৃতি ভিন্ন। আর এখানেই ভেজাল।

ভারত বহুবার চেষ্টা করেছে হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু দক্ষিণ ভারতের তামিল ও অন্যান্য জনগোষ্ঠী বরাবরই এক্ষেত্রে রুখে দাড়িয়েছে। তারা কিছুতেই হিন্দিকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মানতে রাজী নয়। তাই ভারত চেষ্টা করেও পিছু হঠে এসেছে। এমনকি এখনো হিন্দি যে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত, সেটাও তারা এখনও মেনে নিতে চায় না। দক্ষিণ ভারতে হিন্দি একপ্রকার নিষিদ্ধ।

তাহলে ভারতের হিন্দির কি হবে? জোর করে তো হিন্দিকে প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। অতএব কৌশলের আশ্রয় নাও। হিন্দিকে অন্যভাবে প্রতিষ্ঠা কর। এজন্য ভারত সরকার হিন্দি প্রচারণার জন্য আলাদা একটা অফিসই রেখেছে যেখানে বছরে ৪০ কোটি রুপি বাজেট, যা কিনা অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরের বাজেটের থেকেও বেশী। ভারত বহির্বিশ্বে ভারতের ভাষা হিসেবে হিন্দিকে পরিচিত করছে। বলিউড হচ্ছে তারই একটা অংশ।

বলিউড একটা খাচরা, নিম্নমানের, শিল্পবর্জিত, নোংরা, অশ্লীল, যৌনউদ্দীপক ইন্ডাষ্ট্রী, যাদের মূল পুজি হচ্ছে অসম্মানজনকভাবে নারীদেহ উপস্থাপন করা। এর কোন নিজস্ব সত্তা বা মেধা নাই। এর সব চলচ্চিত্রই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র থেকে কাহিনী, সুর চুরি করে বানানো। কিন্তু এর একটা গুণ আছে। এটা হচ্ছে এর যৌনউদ্দীপনা। মানুষ যেমন বেশ্যাপাড়ার প্রতি বরাবরি আগ্রহ বোধ করে, তেমন বলিউডের প্রতিও আগ্রহ বোধ করে। বলিউড হচ্ছে বেশ্যাপাড়ার ফিল্মী উপস্থাপন। এই বলিউড বেশ্যালয়ের ভাষা হচ্ছে হিন্দি। মানুষ যদি দীর্ঘদিন বেশ্যাপাড়ায় যাতায়াত করে, তখন সে সেই পাড়ার ভাষা রপ্ত করে ফেলে। বেশ্যাপাড়ার ভাষা যদি আইরিশ হয় তবে সে দীর্ঘদিন আইরিশ ভাষার সাথে থাকার কারণে আইরিশ শিখে ফেলবে। এক্ষেত্রে ভাষাটা হচ্ছে হিন্দি।

বলিউড বেশ্যা হৃত্বিকের যৌনউদ্দীপক দেহের প্রতি মেয়েরা আকর্ষিত হয়, হৃত্বিক তার সুন্দর শরীরটা খোলামেলা ভাবে দেখিয়ে আকর্ষণ করে নারীদের। বলিউড বেশ্যা ঐশ্বরিয়া তার শরীর দেখিয়ে আকর্ষন করে পুরুষদের। নারী পুরুষ নির্বিশেষে এই বলিউড বেশ্যাদের কবলে পড়ে হিন্দি শিখে ফেলছে। বিদেশীরাও শিখছে। তারা জানছে ভারতের ভাষা হিন্দি। ভারত মানে হিন্দি।

অথচ কি তাই? ভারতের প্রধান জাতীয় সংগীত বাংলায় লিখা, একজন বাঙ্গালির লিখা। ভারতের বন্দে মাতরম নামে আরেকটা জাতীয় গান ঐটাও বাংলায় আরেক বাঙ্গালির লিখা। ভারতের অস্কার পাওয়া চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিত আরেক বাঙালি। ভারতের স্লামডগ মিলিয়নার এর সুরকার এ আর রহমান একজন তামিল। ভারতের নোবেল পুরষ্কার পাওয়া বিজ্ঞানী কেউই হিন্দিভাষী নন, বরং তামিল ও পাঞ্জাবি ভাষা তাদের মাতৃভাষা। তাই ভারতের অনান্য জাতিগোষ্ঠী যেখানে সংখ্যায় কম হলেও ভাষা, শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে উন্নত, সেখানে সংখ্যাগুরু হিন্দিভাষীরা অশিক্ষিত, অনুন্নত ও ভারতের জন্য কম গৌরব ও অবদান রেখেছে। কাকের সংখ্যা বেশী বলে যদি কাককে জাতীয় পাখি হিসেবে ঘোষনা দিতে হয় তাহলে তো বড় সমস্যা।

এখন কাককে জাতীয় পাখি বানাতে গেলে একটাই উপায়, অন্য পাখিদের গুরুত্ব কমিয়ে দাও, বিদেশীদের কাছে বল যে ভারতে কাক ছাড়া আর কোন পাখি নাই।

ভারত তাই এই বলিউডই বিদেশে রপ্তানী করে। এর পেছনে অর্থ যোগান দেয়, একে সাহায্য করে বিদেশে ভারতের সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু বলিউড তো আসলে ভারতের সংস্কৃতি নয়। ভারতের সংস্কৃতি নিহিত আছে ভারতের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মাঝে। উন্নত সেই সব সংস্কৃতি। কিন্তু সে সব সংস্কৃতি আমাদের কাছে বা বিদেশে প্রচার পায় না। সত্যি কথা বলতে যদি আমাদের দেশে হিন্দি সিরিয়ালের বদলে সে সব জিনিস প্রচার হত, তাহলে আমাদের বাংলাদেশের জন্য বরং ভালই হত, কারণ আমরা অনেক কিছু শিখতে পারতাম, যা পরে আমরা আমাদের নিজদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির জন্য প্রয়োগ করতে পারতাম। একজন ফরাসি বিজ্ঞানী যদি একটি রুশ ভাষায় লিখিত বিজ্ঞানের বই পড়ে তাহলে ফ্রান্সের ক্ষতি নয় বরং উপকারই হয়। কারণ তখন সেই ফরাসি বিজ্ঞানী তার অর্জিত জ্ঞান ফরাসি ভাষায় বিজ্ঞান উন্নয়নে কাজে লাগায়। কিন্তু একজন ফরাসি বিজ্ঞানী যদি রুশ ভাষায় চটি পড়ে তাহলে সে কিছু অশ্লীল জিনিস দ্বারা উজ্জীবিত হয়, হয়তোবা হস্তমৈথুন করে এবং ফাকতল দিয়ে রুশ ভাষাটা আরেকটু ভালভাবে জানে।

ভারতের এইসব বলিউড ও হিন্দি সিরিয়াল হচ্ছে তাদের হিন্দি প্রচার ও শক্তিশালীকরনের পিছনে কে মাষ্টারপ্লান। ভারত নিজের দেশেই দক্ষিন ভারতীয়দের কাছে হিন্দি পৌছাতে পারছে না। তাই বাইরে থেকে হিন্দিকে শক্তিশালী করে নিয়ে এসে বিদেশ ও স্বদেশের একযোগে আক্রমনের মাধ্যমে দক্ষিণ ভারতীয়দের পরাস্ত করবে।

গুপ্তচরবৃত্তির এক অনন্য অংশ সুন্দরী নারীর মাধ্যমে কাজ উদ্ধার। ভারতও সুন্দরী নায়িকাদের দিয়ে হিন্দি ভাষার কাজ উদ্ধার করছে।

আমাদের বাংলাদেশের মত ভারতেরও রয়েছে অনেক সুন্দর সংস্কৃতি। কিন্তু ভারত সেসব কখনও দেখাবে না বলিউডের মাধ্যমে। কারণ ভদ্রমহিলাদের ভাষা শিক্ষার ক্লাসে ছাত্ররা ঘুমায় আর বেশ্যার বিছানায় লোকজন খুব আগ্রহ নিয়ে বেশ্যার কথা শোনে।

আমি আমাদের দেশে কোন নিম্নরুচির, নষ্ট, জঘণ্য সংস্কৃতি দেখতে চাই না। অন্য সংস্কৃতি যদি আনতেই হয় তাহলে ভাল সংস্কৃতি আন। ভারত নট্যমের বিরোধীতা আমি করব না, ব্যালে ড্যান্সের বিরোধীতা আমি করব না, বিতোফেনের কন্সার্টের বিরোধীতা আমি করব না। কারণ ওসব চর্চা করলে আমার কোন ক্ষতি নাই, বরং লাভ। অন্যের জ্ঞান যদি আমি নিতে পারি তাহলে আমার জ্ঞান বাড়ে। আর অন্যের বেশ্যা যদি আমি নিই তাহলে আমি যৌনরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি, এবং এইডস হলে আমার মৃত্যু ছাড়া আর কোন গতি নাই।

বলিউড বেশ্যা হৃত্বিককে আমরা বিপিএল-এ দেখতে চাই না। যেখানে দক্ষিন ভারতীয়রা বলিউডের বেশ্যাগুলোকে সহ্য করে না, সেখানে অন্য দেশের অধিবাসী হয়ে আপনি কিভাবে সহ্য করেন?
৯টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৌলবাদ: ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যর্থ প্রযুক্তি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫১




মজার বিষয়—

আজকের মৌলবাদীরা রোকেয়া বেগমকে মুরতাদ ঘোষণা করে বুক ফুলিয়ে হাঁটে, অথচ নিজেদের অস্তিত্ব টিকেই আছে যাদের ঘৃণা করে— সেই “কাফেরদের” বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে। ইতিহাস পড়লে এদের বুকফুলা হাওয়া বের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতী এখন পুরোপুরিভাবে নেতৃত্বহীন ও বিশৃংখল।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩



শেরে বাংলার নিজস্ব দল ছিলো, কৃষক প্রজা পার্টি; তিনি সেই দলের নেতা ছিলেন। একই সময়ে, তিনি পুরো বাংগালী জাতির নেতা ছিলেন, সব দলের মানুষ উনাকে সন্মান করতেন। মওলানাও জাতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট

লিখেছেন আরোগ্য, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৬



ওসমান হাদী অন্যতম জুলাই যোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, স্পষ্টবাদী কণ্ঠ, প্রতিবাদী চেতনা লালনকারী, ঢাকা ৮ নং আসনের নির্বাচন প্রার্থী আজ জুমুআর নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর গুলিবিদ্ধ হয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×