সরকারের শেষ সময়ে মহাজোট থেকে বের হয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের নতুন জোট গঠনের ঘোষণা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা পেয়েছে। এরশাদ সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেলে মানুষ বলবে দুর্নীতিবাজ ও অত্যাচারী আওয়ামী লীগকে আবারও ক্ষমতায় বসানোর জন্য এরশাদ নির্বাচন করছে। তারা তখন আমাকে বেঈমান বলবে। দালাল হিসেবে বিবেচিত হবো। তিনি বলেন, আমি বেঈমান হয়ে মরতে চাই না। নির্বাচনের মাধ্যমে এই দুর্নীতিপরায়ণ হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার ইচ্ছা পোষণ করেন তিনি।
নতুন জোট গঠনের বিষয়ে ইতিমধ্যে বিকল্প ধারার বি চৌধুরী, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কাদের সিদ্দিকী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) আসম আব্দুর রব ও এলডিপির কর্নেল অলি আহমদকে নিয়ে নতুন জোট গড়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে রোববার সকালে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতের আমির মাওলানা আহমদ শফির সঙ্গে এরশাদের বৈঠকে হেফাজতকে জোটে ভিড়ানোর প্রচেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। তবে এরশাদ দাবি করছেন মাওলানা শফির কাছ থেকে দোয়া নেয়ার উদ্দেশ্যে তিনি তার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। এসময় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও হাটহজারীর সাংসদ ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও অপর শীর্ষ নেতা জিয়াউদ্দিন বাবলু উপস্থিত ছিলেন।
গুঞ্জন রয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সর্বদলীয় সরকারে মহাজোটের বাইরে থাকা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, সিপিবি-বাসদ, গণফোরামকে যেমন টানার চেষ্টা চলছে তেমন ১৮ দলীয় জোট থেকেও উদার পন্থী, প্রগতিশীল ধারার দলগুলোকে টানার চেষ্টা অব্যহতে রেখেছেন জাতীয় পার্টি।
এরশাদ ক’দিন আগে সাংবাদিকদের বলেন, ‘একদল তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়, অন্যদল বলে তত্ত্বাবধায়ক দেব না। তাদের ক্ষমতায় যাওয়াই একমাত্র উদ্দেশ্য। তারা কেউ জনগণের কথা ভাবে না। এখন সুযোগ এসেছে, এই সুযোগকে আমরা কাজে লাগাব। জাতীয় পার্টি আর কোনো দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে বিবেচিত হবে না। সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচনে যাব না। অশুভ চক্র ভেঙে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে জয়লাভ করবে।’
এদিকে পার্টির চেয়ারম্যান সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাত্কারে বলেছেন 'প্রয়োজনে জেলে যাবো, তবু কোনো পাতানো নির্বাচনে যাবো না, গেলে মানুষ আমাকে থুথু দেবে।' গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি বলছেন 'আর কোনো জোট নয়, জাপা এককভাবেই নির্বাচন করবে'। সেই এরশাদ বৃহস্পতিবার বলেছেন, 'শিগগিরই আমরা নতুন জোটের ঘোষণা দেব। অশুভ চক্র ভেঙ্গে জাপা নির্বাচনে জয়লাভ করবে। আমাদের জোট জয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে।'
তবে দলের শীর্ষ সারির কিছ মহাজোট ছাড়তে নারাজ বলে জানা গেছে। তারা মনে করছেন, মহাজোট থেকে এরশাদ বেরিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথে দল আরেক দফা ভাঙ্গনের মুখে পড়বে । দলের আওয়ামীপন্থি হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েজজন প্রেসিডিয়াম সদস্য মহাজোট ছাড়তে নারাজ । এছাড়াও সম্ভাব্য নতুন জোটের নেতৃত্ব নিয়েও দোলাচলে আছেন নেতারা। এরশাদ ও বি চৌধুরী দুই জনই সাবেক রাষ্ট্রপতি । কে কার নেতৃত্ব মানবে । আবার কাদের সিদ্দিকী কিংবা মাহমুদুর রহমান মান্নার কি অবস্থা থাকবে তা নিয়ে দলগুলো মধ্যে কোন সমঝোতা এখনো হয়নি বলেও জোরগুঞ্জন রয়েছে।
এদিকে জাতীয় পার্টির মহাজোট ছাড়ার প্রধান কারণ হিসেবে জানা গেছে, গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে জোটগতভাবে ৬০টি আসন দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সে কথা রাখেনি আওয়ামী লীগ। আসন দিয়েছে ৪৬টি। এছাড়া সেখানেও আবার ১৭টি আসনে আওয়ামী লীগে প্রার্থী বহাল রাখল। বাকি ২৯টি আসনে মহাজোটগতভাবে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করে জাতীয় পার্টি। বিজয়ী হয় ২৭ আসনে। কিন্তু জাতীয় পার্টি জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়ে ৬০ আসন বাদে সারা দেশে পার্টির প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়। নির্বাচনে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সর্বোচ্চ তিনটি আসনে বিজয়ী হন। নিয়ম অনুযায়ী দুটি আসন ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে কুড়িগ্রামের আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে নেয়। একইভাবে সুনামগঞ্জে পার্টির সংসদ সদস্য মৃত্যুবরণ করলে আওয়ামী লীগ বিজয় ছিনিয়ে নেয়। এসব কারণে সরকারের শুরু থেকেই জোটপ্রধান আওয়ামী লীগের ওপর চরমভাবে ক্ষুব্ধ জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ের নেতারা।
এছাড়া আরও কথা ছিল পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে রাষ্ট্রপতি করা হবে। আনুপাতিক হারে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হবে। হয়নি। একমাত্র জি এম কাদেরকে মন্ত্রী করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, জি এম কাদেরও ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার করতে পারেন না। সারা দেশে রাজনৈতিকভাবে জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হলো। কোথাও জায়গা হয়নি জাতীয় পার্টির। বিচারক নিয়োগের সময় পার্টির চেয়ারম্যান একজন বিচারক তার দলের পক্ষ থেকে করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। জায়গা হয়নি। দেড় হাজার সরকারি পদে লোক নিয়োগ হয়। স্থান পেয়েছেন মাত্র দুজন। এরা হলেন সোলায়মান আলম শেঠ ও বাদল খন্দকার।
উল্লেখ্য, পদত্যাগী মন্ত্রীদের নিয়ে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে যোগ দেননি বাণিজ্যমন্ত্রী জিএম কাদের। তিনি পদত্যাগ পত্র জমা দেয়ার পরদিন থেকে দাপ্তারিক কাজ করছেন না বলেও জানা গেছে।
সুত্র : http://khaskhabor.com/details.php?id=1051