আমাদের সময়ে গায়েহলুদ অনুষ্ঠানটা ছিল আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব সবার অংশগ্রহনে দারুন আনন্দদায়ক এক অনুষ্ঠান। হলুদের স্টেজ সাজানো, বর কনের বাড়িতে পাঠানো হলুদের সামগ্রী কেনাকাটা প্যকিং, খাবার তৈরী সব কিছুতেই থাকতো সবার সমান অংশগ্রহন।চাচী, খালা, মামা থেকে শুরু করে কাজিনরা এবং বর কনের বন্ধু বান্ধবী সবাই সম্মিলিতভাবে হলুদের আনন্দে সামিল হত।
আমাদের সময়ে বর কনের হলুদ অনুষ্ঠান আলদাভাবে অনুষ্ঠিত হত। দুটো হলুদ অনুষ্ঠানই ছিল সে সময়ে যে কোন বিয়ের প্রধান আকর্ষন। সাধারনত বাসার ছাদে বা কারপার্কে প্যন্ডেল খাটিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হত। সবাই একই রং এর শারী/ পাঞ্জাবী পড়ে হলুদের অনুষ্ঠানে আনন্দে মেতে উঠত। বর বা কনেকে হলুদ লাগানোর পর্ব শেষ হলে শুরু হত গান বাজনার অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানের পারফর্মাররা ছিল নিজেদেরই লোকজন। হারমোনিয়াম, তবলা, ঢোল বাজিয়ে বসত গানের আসর। তখন হলুদের অনুষ্ঠানে আজকের মত এত খাবার দাবারের আয়োজনও থাকতো না। পরোটা মাংশ বা শুধুই বিরানি এবং মিষ্টি। কিন্ত সাদামাটা সেই হলুদ অনুষ্ঠানে ছিল প্রানের ছোয়া, ছিল নির্ভেজাল আনন্দ। গত বিশ বছরে আমুল বদলে গেছে হলুদ এর প্রোগ্রাম। এখন আর বাসা বাড়িতে হলুদ হয় না। বিয়ের মত হলুদও হয় কমিউনিটি সেন্টারে। বর কনের হলুদ প্রোগ্রামও হয় যৌথ।
দেশের বাইরে থাকায় এখন গায়ে হলুদ, বিয়ের অনুষ্ঠান ফেসবুকেই বেশী দেখতে হয়। দেশে বেড়াতে গিয়ে এক গায়ে হলুদের প্রোগ্রামে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। সেই প্রোগ্রামে যেয়ে মোটামোটি ভিমরি খাবার দশা। নারী পুরুষ সবাই চোখ ধাধানো সাজগোজ করে অনুষ্ঠানে এসেছে। মনে হচ্ছিল চোখের সামনে শাহ্রুখ খান, ক্যট্রিনা কাইফরা ঘুরে বেড়াচ্ছে! বিয়ে বাড়ীর স্টাইলে বিপুল খাওয়া দাওয়ার আয়োজন । হলুদ লাগানোর পর্ব শেষ হলে শুরু হয় ডিজে পার্টি। অবাক হয়ে দেখলাম যে স্টেজে অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা হিন্দি সিনেমার স্টাইলে নাচগান করছে। আরো অবাক হয়ে দেখলাম যে বর কনেও তাঁদের সাথে যোগ দিয়ে একসাথে নাচগান করছে। হঠাৎ মনে হোল যেন সিনেমা হলে বসে হিন্দি মুভি দেখছি!!
ইদানিং কালে নাকি সবাই শুধু নতুনত্ব খোজে। কার অনুষ্ঠান কত ইউনিক তার নাকি এখন তীব্র প্রতিযোগিতা। আর তাইতো কোভিড সংক্রমনে যখন সারা বিশ্বে সকল প্রকার সামাজিক অনুষ্ঠান বর্জন করা হচ্ছে , তখন আমাদের দেশে এক কনে জাকজমকপুর্ন এক হলুদই শুধু আয়োজন করেনি, হলুদের দিনে তিনি তার বন্ধুদের নিয়ে বাইকের শোভাযাত্রা করেছেন!!
এই প্রজন্মে হলুদ অনুষ্ঠানের নামে নিল্লজ্জতা, বেলেল্লাপনা ও ভীনদেশী বিকৃত সংস্কৃতি অনুকরনের এক ট্রেন্ড চালু হয়েছে যা কোনভাবেই আমাদের দেশের সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জষ্যপূর্ন নয়। এই ধারা অব্যহত থাকলে এক সময় হারিয়ে যাবে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি, স্বকীয়তা ও কৃ্ষ্টি।আগের প্রজন্মের ব্লগারদের কাছে অনুরোধ রইল সেই সময়ের হলুদ অনুষ্ঠানের কিছু স্মৃতিচারনের যা হয়ত এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের অনেকেরই অজানা।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:০৫