সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরের মধ্যে এবারই রোজার বাজারে চিনি, খেজুর, ছোলা, পেঁয়াজ ও অ্যাংকর ডালের দাম সবচেয়ে বেশি। এ বছর চিনির কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। ছোলার দাম এ বছর বেড়ে হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। বেসনের দামও বেড়েছে। বর্তমানে কেজিপ্রতি বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। খেজুরের দাম কেজিপ্রতি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা।
নিম্নবিত্তদের কথা ছেড়েই দিলাম, মধ্যবিত্তরাও কি রোজায় এই নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে পারছে ? আমরা কেউই সেটা জানি না। যারা টেবিল ভর্তি আইটেম দিয়ে ইফতারীর টেবিল সাজায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে আমরা কেবল তাদের কথাই জানি। যাদের ইফতারে সামান্য খেজুর , পেয়াজু, ছোলা আর বেগুনি পাতে উঠে না , তাদের কথা আমরা জানি না। নিজের অক্ষমতার কথা কেউই জানায় না। আসলে এই অক্ষমতা মানুষের নয় , এই অক্ষমতা রাস্ট্রের।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশলোতে কয়েকশ পন্যের দাম কমানো হয়েছে রমজান উপলক্ষ্যে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা সৌদি শেখদের টেবিল উপচে পড়া খাবার দাবারের ছবি ভাইরাল করে ধুমায়ে তাদের সমালোচনা করি। কিন্ত শেখরা যেমনই হোক , বাস্তবতা হচ্ছে তাদের দেশে কোন অনাহারী মানুষ নাই। আসুন এবার দেখি ননমুসলিম দেশগুলো কি করছে রোজদারদের জন্য। আমি যে দেশে থাকি সেখানে মুসলিমরা মাইনরিটি। আমার এখানে পুরো রমজান মাস ধরে শহরের সব মসজিদে ইফতারীর ব্যবস্থা করা হয়। মাগরিবের সময়ে মসজিদে ঢুকে যে কেউ ইফতারীতে অংশগ্রহন করতে পারে। সিঙ্গাপুরের ননমুসলিম পিএম রমজান মাসে বিভিন্ন মসজিদের ইফতার মাহফিলে নিয়মিত সামিল হন। উপড়ের ছবিদুটোতে সিঙ্গাপুরের Prime minister Lee Hsien Loong স্থানীয় মসজিদের ইফতার মাহফিলে। এখানে সব মসজিদেই মহিলাদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকে। তাই পরিবারের সবাই মিলে মসজিদের ইফতারীতে অংশগ্রহন করা যায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ( Racial Harmony) যে কত সুন্দর একটা বন্ধন তা বিভিন্ন জাতির সমন্বয়ে গঠিত cosmopolitan এই শহরে না এলে জানা হত না।
আমরা বাঙ্গালীদের ছোলা , পেয়াজু, বেগুনি না হলে ইফতারী জমে না। তাই মসজিদে নিয়মিত যাওয়া হয় না। তবে মাঝে মাঝে বিভিন্ন দেশের মুসলিমদের সাথে একসাথে বসে ইফতারী করার অভিপ্রায়ে মসজিদে যাই। আত্মীয় স্বজনবীহিন বিদেশ বিভুয়ে মসজিদে রোজার এই আমেজ বড় ভাল লাগে। চেনা নেই , জানা নেই তারপরেও কত আপন মনে হয় সবাইকে।
আসুন এই রমজানে আমরা সবাই সামর্থ অনুসারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেই। টেবিল ভর্তি আইটেম দিয়ে ইফতারী না সাজিয়ে চারপাশের মানুষের কথাও একটু ভাবি। নিজের গ্রামের বা এলাকার দরিদ্রদের মাঝে রোজার নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিতরন করি ও অন্যদেরও উৎসাহিত করি। প্রথমআলোর এক ভিডিওতে দেখলাম জনৈক খামারি তার দুধের খামারে রমজান মাসে দুধের দাম নির্ধারন করেছে সের প্রতি ১০টাকা । দুধ নিতে আসা সাধারন মানুষের চোখে মুখে খুশি উপচে পড়েছে। এই আনন্দের কোন তুলনা হয় না।
তথ্যসুত্র ঃ প্রথমআলো
ছবি ঃ অনলাইন
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৫৬