আতর আলী আতর বেঁচে। তার আসল নাম কি ছিল মানুষ তা ভুলে গেছে,এখন সবাই তাকে ডাকে আতর আলী বলে। ঢাকার রৌদ্রতপ্ত রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আতর আলী পুরনো দিনের কথাগুলি মনে করছিল । সেই কবে মা মরা মেয়েটিকে নিয়ে ঢাকা শহরে এসেছিল তারপর অনেক ঘাটের জল খেয়ে আশ্রয় নেয় এক বস্তিতে আর রপ্ত করে নেয় আতর বেঁচার ব্যবসা। কবে যে সে আতর আলী হয়ে গেল তার নিজেরই তা মনে পরে না।
আতর আলির মাথাটা ঘুরে উঠে। সেই সকাল থেকে রোদের মধ্যে ঘুরছে, বুড়ো বয়সে শরীর এত ধকল সহ্য করতে না পারাটাই স্বাভাবিক। আতর আলী বসার জন্য ছায়া যুক্ত একটা জায়গা খোঁজে। আতরের বাক্সটা মাটিতে রেখে আতর আলী শরীরটা এলিয়ে দেয়। এখন পর্যন্ত এক টাকারও আতর বেঁচতে পারেনি মেয়েটার মুখে আজ কিছু তুলে দিতে পারবেনা, এই চিন্তায় সে দারুন কষ্ট পায়। এখন আর কেউ আতর কিনেনা। আগে মানুষ আতর কিনত। দিন গুজরানোর মত টাকা আতর বেঁচে সে পেয়া যেতো। আর এখন বড় বড় কত দোকান হয়েছে সেখানে কতো সুন্দর সুন্দর সুগন্ধি পাওয়া যায়। মানুষ তার জিনিস কিনবে কেন। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল আতর আলী।
বৃষ্টির ঝাপটায় ঘুম ভেঙ্গে যায় আতর আলীর।সন্ধা প্রায় ঘনিয়া এসেছে। আতর আলী বৃষ্টি উপেক্ষা করে বস্তির দিকে হাঁটা দেয়। মেয়েটা বাড়িতে একা আছে। মেয়েতো সেই ছোট্টটি নেই, অনেক বড় হয়েছে। দিনকাল ভালনা.........এসব ভাবতে ভাবতে আতর আলী কাক-ভেজা হয়ে ঘরে ফেরে।
-আরে বাজান তুমি দেখি এক্কেরে ভিজ্যা গেছ।
-হরে মা,বৃষ্টি আইছিল তুই হারাদিন ভালা ছিলিতো ময়না?
-হ বাজান, তয় এখনকার ভাত হইবনা। কাসেম চাচা বাকিতে চাল দিবার চায়না।
-ও ময়না, ভাতকি একটুকুনও নাই?
-আছে বাজান, একজনের হইব কোনও রকম।
-ময়না তুই তাইলে খাইয়া ল।
-কেন বাজান তুমি খাইবা না,তুমি না খাইলে আমিও খামুনা।
-জিদ করিস না মা, আমার শইলডা কেমন জানি করতাসে, তুই খাইয়া ল।
আতর আলী বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় আতর আলীর। কেমন ঘোরের মতন লাগছে তার। তাকের উপর রাখা আতরের বাক্সটা পারতে গিয়ে ফেলে দেয়। কিছু আতরের শিশি ভেঙ্গে সারা ঘরে সুগন্ধী ছড়িয়ে পড়ে। আতর আলী মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে যায়। সে দেখে তাদের জীবন আতরের গন্ধে ভরে উঠেছে,সুন্দর হয়ে উঠেছে। সে শুনতে পায় আতরের বিচিত্র সব বোতলের টুং টাং শব্দ......।
ময়না স্তম্ভিত হয়ে দেখছে তার বাজান আর নেই। তার চোখ দিয়ে অশ্রুধারা নামে। করিম মোল্লা দাফন কাফনের ব্যবস্থা করে। ময়না করিম মোল্লার চোখে মুখে এক ধূর্ত হাসি দেখতে পায়। সে বুঝতে পারে এখানে থাকা তার চলবেনা। সে তার টিনের থালাটি বুকে চেপে বস্তি থেকে বেরিয়ে আসে। হাঁটতে থাকে তার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




