১.
বয়স আর কত হবে ছেলেটার, বড় জোর পাঁচ! তার বাশী নয় মোটেই। পরনে গেন্জি কাপড়ের বিবর্ণ এক হাফ প্যান্ট আর বোতাম ছাড়া হাফ শার্ট। সারা শরীরে ধুলো আর হাতে প্লাস্টিকের ছোট গামলায় কয়েকটা চকলেট। আপনারা যারা ঢা.বি'র টি.এস.সি এলাকায় নিয়মিত বা মাঝে মাঝেই যান তাদের জন্য এটি অতি পরিচিত এক দৃশ্য। প্রথমদিকে সবার মনই সহানুভূতিতে আর্দ্র হয় ওদের জন্য। কিন্তু নিয়মিত একই দৃশ্য আমাদের অনুভূতিকেও হয়ত ভোতা করে দেয়। ফলে ওর মত অসংখ্য শিশু আমাদের বিরক্তিটা চরমে পৌছে দেয়।
২.
অনেকদিন পর আজ আবার টি.এস.সি-তে বসেছিলাম। রিয়াদ ওর সার্টিফিকেট উঠালো,তাই যাওয়া। আমি এখনো বেকার। রিয়াদ চাকরিতে ঢুকলেও জব স্যাটিসফেকশান নেই। তাই ছেড়ে দেয়ার চিন্তা করছে। আমি করছি বি.সি.এস-এর চিন্তা (সবাই দোয়া কইরেন)! কিন্তু বেকার বসে প্রস্তুতি নিলেযে অনিশ্চয়তার কারনে হতাশাও গুণানুপাতিক হারে বাড়ে তা জানা ছিলনা! ফলে দুই বন্ধু হতাশার সাতকাহন খুলে বসেছিলাম একটু মানসিক প্রশান্তির আশায়। ফ্রেন্ডশীপ মানেইতো শেয়ারিং, কায়ারিং আরও কি কি যেন, তাইনা?!
৩.
প্রসংগে আসাযাক।
আমাদের দীর্ঘশ্বাসে যখন টি.এস.সি'র বাতাস ভারী হবার যোগাড়, তখনই কথিত ছেলেটি আমাদের সামনে এল। যথারীতি এক হাতে গামলা। অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, ওর ডান হাতে চকলেটের গামলা আর বাম হাতে একটা লিফলেট। সে বাম হাত দিয়েই রিয়াদের পায়ে নাড়া দিয়ে কি যেন বলছে! গলার স্বর এত নিচু যে আমি বুঝতেই পারছিলামনা সে কি বলছে। জানতে চাইলে বললো: নৌকা বানায়া দিবেন?!
রিয়াদ বললো: আমিতো বানাবার পাইনা।
সে তখন আমার দিকে তাকালো। কি যে মায়া সে চোখে! আচ্ছা, সব শিশুর চোখই কি এমন হয়?!
আমি কাগজটি নিয়ে বললাম: নৌকাতো বানাবার পাইনা। বিমান বানাইয়া দেই?
:কি, পিলেন?
আমি হেসে বললাম: হ, পিলেন।
:দেন তাইলে।
কাজ শুরু করলাম। সে মনযোগী দর্শক।
:আমিযে পিলেন বানাইয়া দিতাছি, আমারে কি দিবা?
:ট্যাকা দিমু।
:কয় ট্যাকা?
:দুই ট্যাকা।
:পিলেন দিয়া কই যাবা?
:বাড়ী যামু।
:বাড়ী কৈ?
:ভৈরব।
এরকম আলাপচারিতায় প্লেন বানানো শেষে পাইলটকে চালানোর কায়দা কানুন শিখিয়ে দিলাম। হাতে নিয়ে ছোট্ট হাতে প্রথম নিক্ষেপ। কিছুদুর উড়ে মাটিতে পড়ল। ততক্ষনে পিচ্চি ওটার পেছনে দে ছুট! আমরা তখন হাসছি। মাটি থেকে কুড়িয়ে দ্বিতীয়বার ছুড়ে মারার আগে ঘাড়টা ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে যে হাসিটা আমায় উপহার দিয়ে গেল, পাঠক, মনেহল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহারটি এইমাত্র আমি পেলাম, ঐ পথ শিশুটির কাছ থেকে!!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ৯:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




