somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চকচকে ঝকঝকে হিপোক্রিসি

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"একটা ছেলের পাবলিকলি স্মোক করাটা নরমাল কিন্তু একটা মেয়ে করলে সেখানকার এনভায়রন্মেন্ট খারাপ হয়"
এই মুহুর্তের সবচে আলোচিত ডায়ালগ।দুঃখজনক ভাবে অসংখ্য মানুষ বৈষম্য শর্ট ফিল্মের এই লাইনটার সাথে একমত পোষন। পাবলিক প্লেসে থাকলে এই লেখাটা পড়ার সময় ডানে তাকান বামে তাকান। ১০ জনের ভিতর এটলিস্ট ৬ জন এই কথাটা ঠিক মনে করে।
"এনভায়রনমেন্ট যে পুরুষের কামলোলুপতার কারনে হচ্ছে সেটা তারা চিন্তা করতে চায় না।অনেক টা "কাপড় এরকম পড়লে তো রেপ হবেই" যুক্তি।
"যান তো পারলে গেঞ্জি খুলে হাটেন"--আহা,সেক্সিস্ট দের কত্ত কত্ত প্রিয় একটা লজিক। মেয়েদের বুকের সাথে নিজেদের বুকের তাল মিলাচ্ছেন? ভাই দুইটা দুই ধরনের জিনিষ।দুই রকম না হলে আপনি রাস্তাঘাটে,পাবলিক বাসে,পাবলিক প্লেসে মেয়েদের বুক হাতায় দিতেন না :)
এর সাথে একটাই সিমিলারিটিজ এ আসি।আমরা পুরুষ রা নিজেদের পুরুষাংগ ঝুলিয়ে হাটা শুরু করি চলেন।মেয়েরা না, ছেলেরা আপনাকে আক্রমন করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে বরং।তখন "নারী-পুরুষ সমান হবে"।
"দেশটা দুই মহিলা চালাইতেছেন", "মেয়েদের পাবলিক বাসে আলাদা সিট দেওয়া হয়", "কত্ত কত্ত বৃত্তি দেওয়া হয়" --- এগুলা দিয়ে যদি বলি আমরা নারীদের কে অনেক অধিকার দিয়ে ফেলছি তাতে আমরা নিজেদেরকে হাসির পাত্র বানাচ্ছি।আসলে কিছুই বলার নেই শহুরে নাগরিক আলোর অন্ধকারে যারা বেড়ে উঠেই হাতে একটা ডিএসএল আর পেয়ে যায় তারা কি বুঝবে? দেশে ধর্ষনের হার আশংকাজনক,বাল্যবিবাহ এখনো শহরের বাইরে খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার,নারীশিক্ষা এখনো দুঃস্বপ্নের মতনই,নারীর ক্ষমতায়ন দূরাগত স্বপ্নের মতনই।কিন্তু নাহ উনারা দেখতেছেন শহরের প্রাইভেটে পড়া একটা মেয়ে ধানমন্ডি লেকের পারে বসে সিগ্রেট ফুকতেছে তখন উনারা মনে করেন যে নাহ অনেক অধিকার হয়ে গেছে।
এমনকি এটা আধুনিকতাও না। শহুরে মানুষের ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ড ছাড়া আর কিছু না।আরে ভাই বাড়ির পিছে পাতা কুড়াইতে আসা মহিলাগুলা বিড়ি খায়।অনেক কাল ধরেই শহরের বাইরে এই ট্রেন্ড আছে।
নারী প্রধানমন্ত্রীর কথা বলবেন?
উনারা পলিটিকাল সিনারিও তে ঢুকতে পারছেন তাদের স্বামী এবং বাবার জন্য।তাও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের ১৪ গুষ্টিকে মেরে না ফেললে ঘটনা ভিন্ন হইতেই পারতো।বড় পিতৃ-ভাই টাইপ ব্যাকগ্রাউন্ড খুবই কম মেয়ে রাজনীতিতে এত উপরে উঠছে আমাদের দেশে। শিক্ষার কথা বললাম না কিছু। বিশ্ববিদ্যালয় গুলাতে নারী-পুরুষের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের রেশিও দেখেন।তারপর কথা বলেন।মফস্বল এবং ঢাকার বাইরের অনেক মেয়ের এইচ এস সি এর পরে বিয়ে হয়ে যায়।আমরা গালভরে এরেঞ্জ ম্যারেজ বলি কিন্তু গল্পটা আরো অনেক কমপ্লিকেটেড।
ব্যাপারটা এভাবে চিন্তা করেন ।থট এক্সপেরিমেন্ট করি। একটা ছেলেকে এইচ এস সি পাশ করার পর বলল "তুই আর পড়াশোনা করে কি করবি?তোকে পালতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।তোকে আমি একটা গার্মেন্টস এ কাজ করে মেয়ে আছে সুন্দর তার সাথে বিয়ে দিয়ে দেই।ভার্সিটিতে পড়ে কাজ নাই"।
তারপর আপনি পড়ালেখা করে বিদেশে যাবেন উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে কিন্তু নাহ আপনার পরিবার বলল "একা ছেলে দেশের বাইরে যাবি কেন?বিয়ে করে যা" এই সিনারিও তাও দেখা যায়। এদের জিজ্ঞেস করেন কেমন লাগে।
অনেক ভাল্লাগবে তাই না?
আমি ভাবতাম দেশের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো হয়ে যাচ্ছে।সিচুয়েশন বদলাচ্ছে।দিনকাল ভালোর দিকে আগাচ্ছে।দেশে মেয়েদের অবস্থা কিঞ্চিত ভালো হচ্ছে।এই কয়দিন এক সিনিয়র আপু একলাই অস্ট্রেলিয়া পড়তে চলে গেছেন যেটা আমাদের জায়গা থেকে শুনে অবাক ভরা ভালোলাগা গ্রাস করছিলো।কিন্তু Hayat Mahmud Rahat এর মতন ফিল্মমেকার রা বলবে একলা মেয়েরা দেশের বাইরে গেলে পরিবেশ নষ্ট হবে :D
Sabbir arnob এর মত লোকজন বলবে ভিডিও করে রাখতে।
এই ধরনের প্রপাগান্ডা টাইপ ফিল্ম আমাকে পুরা রেসিস্ট-হোয়াইট সুপ্রিমিস্ট(সাদা আমেরিকান দের আফ্রিকান আমেরিকান দের মেরে ফেলতে চায় যারা) ১৯২০-৩০ এর বার্থ অফ এ নেশন এর প্রপাগান্ডার মত লাগে।সেখানে আফ্রিকান আমেরিকান দের মেরে ফেলাটাকে গর্বের কাজ হিসাবে দেখানো হইছিল।দেখার পর যাদের চিন্তা শক্তি কম তাদের এটাকেই সঠিক মনে হবে।মেয়েদের প্রাইভেসি নষ্ট করে ভিডিও করাটা ঠিক মনে হয়। এই ধরনের নরকের কিটরাই সম্পর্ক নষ্ট হলে ঘনিষ্ট মুহুর্তের ভিডিও ছেড়ে রিভেঞ্জ নেওয়াকে জায়েজ মনে করে। আপনারাই দেশরে পিছাই দিতেছেন।

বাহবা দিবো হায়াত মাহমুদ কে দেশের যে মেজরিটি ব্রেইন ডেড পপুলেশন কে কিভাবে এট্রাক্ট করতে হয় সেটা উনারা বুঝছেন।যারা নারীর অপ্রেশন এর শিকার তাদের একটা বড় সংখ্যা এখনো এসব ভিডিওর নাগালের বাইরে।অর্থাৎ হায়াত সাহেবের অডিয়েন্সের বাইরে।তাই এসব নিয়ে চিন্তা করার টাইম নাই।
আমরা বাঙালি জাতি হিসাবে হিপোক্রিট দেখে এটা আমাদের অনেকের কাছে পুরা ভিডিওর মেসেজ টা স্বাভাবিক মনে হয়।এটা নর্মাল না। এরকম সাবস্ট্যান্ডার্ড জিনিষ কে প্রমোট করতে মানা করার কোন মানে নাই।মেয়েদের কে সিগ্রেট খেতে মানা করছে এটাই সত্য আর কিছু না।
সিগ্রেট খাওয়াটাই খারাপ।শেষ কথা।এটা নিয়ে আলাপের কিছু নাই।
মজা লাগে এটা কল্পনা করতে হায়াত সাহেবে তার দল রে বলতেছে আমাদের নেক্সট শর্ট ফিল্ম হবে মেয়েদের পাবলিক প্লেসে সিগ্রেট খাওয়ার বিরোধিতা করে :P
তখন কেউ কি এই হিপোক্রিসি টা নিয়ে ভাবে নাই?যে আমরা ছেলেরাও পাবলিক প্লেসে স্মোক করি।আমরা বরং এন্টি স্মোকিং মেসেজ দেই?ভাবেন নাই।
তা কেন করবেন?
সেটা করতে তো মাথা খাটানো লাগবে কারন নতুন কিছু দেওয়া লাগবে।
আপনাদের মত লোকজন দেশে থাকা মানে দেশের সার্বিক আই কিউ কমে যাওয়া।মানুষ হোন।বাংলাদেশের শর্ট ফিল্ম-ইন্ডি ফিল্ম/নাটক ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছিল আপনারা এগুলাকে টেনে নামাচ্ছেন।রেস্পন্সিবল হোন।এটলিস্ট ভালো-সিরিয়াস টপিক্স বাছুন।ডিএসএলআর এর চকচকে পিছনে ঘোলা ফ্রেমে কিছু দেখালেই তা সত্য হয়ে যায় না :)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:০৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×