somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

করোনাভাইরাসঃ একটু গভীরে ভাবুন

১৭ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুদিন আগে আমাদের ডিপার্টমেন্টের এক প্রফেসর, থ্রিলার রাইটার ডিন কুন্টজ এর একটা বইয়ের অংশ তুলে সবাইকে ইমেইল করেন। ডিন কুন্টজ এর বইটায় উহান – ৪০০ নামের একটা ভাইরাসের কথা বলা ছিল।যা কিনা কাউকে এটাক করলে এই করোনা ভাইরাসের মত সিম্পটম দেখায়।এখন আমার ডিপার্টমেন্টে ভর্তি চাইনিজ। কেউ কেউ আবার বর্তমান চাইনিজ সরকার কে দেখতে পারেনা। আবার কেউ কেউ খুবই দেশপ্রেমিক তারা আবার পালটা ইমেইল দিল যেটার সারমর্ম এই যে, “ পারলে সহায়তা করেন অন্যান্য আমেরিকান দের মত এসব ছড়ায়েন না” । আমেরিকান প্রফেসর যারা স্মার্ট আছেন তারা বললেন “নিউ ইয়র্ক টাইমসের আর্টিকেল আছে পড়েন যেখানে দেওয়া আছে মানুষ যে দিন দিন গাছ পালা বন বাদাড় কেটে সাফ করে ফেলতেছে সেইখানে থাকা বন্য প্রানীরা মানুষের কাছে চলে আসতেছে। সেই সাথে বন্যপ্রানী দের শরীরে থাকা ভাইরাস,ব্যাক্টেরিয়া গুলো মানুষের কাছে আসতেছে এবং মানুষ কে ইনফেক্ট করা শিখতেছে”।
পরে প্রাইমারিলি মেইল দেওয়া ভদ্রলোক বললেন “উনার স্ত্রী চাইনিজ, সরকার বিরোধী প্রটেস্ট করে পুলিশের মার খেয়ে আমেরিকা চলে আসছেন।উনার স্ত্রী এটা দেখে শেয়ার করছেন। চাইনিজ সরকার এত গোপন রাখে সবকিছু যে চাইনিজ নাগরিক দের চেয়ে আমেরিকান থ্রিলার রাইটার রা বেশী জানে চায়না সম্পর্কে” এই মনোভাব নিয়ে পোস্ট শেয়ার করছেন। যদিও এই লজিক কেউ খায় নাই। দেশী বিদেশী সব স্টুডেন্টরাই সেই আমেরিকান প্রফেসর কে ইন্ডিরেক্টলি কথা শুনায় মেইল দিছে। সবার একই কথা “আতংকের সময় মিথ্যা কাহিনী বলে কেন অযথা প্যানিক এবং উচ্ছৃঙ্খলতা সৃষ্টি করতেছেন”।
এখন এই পোস্ট টা বাংলাদেশে ১০ টা করোনা কেইস পাওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীরা পোস্ট করা শুরু করছে। ভাই-বোনেরা আপনারা কি মাসুদ রানা পড়ে সেটার উপর ভিত্তি করে জীবন এর ডিসিশন নেন? দেখে তো তাই মনে হচ্ছে। রেসিজম মানুষের ভিতর আছে অনেকেরই। হলুদ চামড়া দেখলেই রাস্তায় করোনা করোনা করেন আমি জানি। কিন্তু কেন ? সায়েন্টিফিক ফ্যাক্ট জানতে এত কষ্ট কেন আপনাদের ? গুগোল স্কলার আর সাই হাব তো সবাই এক্সেস করতে পারেন। সায়েন্সের ছাত্র হয়ে এতটুকু না বুঝলে কেমনে? সায়েন্সের ছাত্র হয়ে এসব থ্রিলার বইয়ের কন্সপিরেসি থিওরী আর মিথ শেয়ার করতে লজ্জা হয় না?
মিসকনসেপশন ক্লিয়ার করেনঃ
চায়না তে ইস্যুটা অনেক ডিপ। কম্যুনিস্ট সরকারের উলটাপালটা ডিসিশনের কারনে ফসল যখন নষ্ট হয়ে গেছিল তখন মানুষজন খাবারের অভাবে টিপিকাল মাছ মুরগী গরু বাদ দিয়ে এসব সাপ,বাদূর, পোকা-মাকড়,বানর ইত্যাদি খাওয়া শুরু করে। শুধু চায়না নয়, ভিয়েতনাম,কম্বোডিয়া, সাব সাহারান দেশ গুলোতেও একই অবস্থা । সবার আপনার আমার মতন গোলা ভরা ধান,পুকুর ভরা মাছ ছিলো না। তো এইধরনের অদ্ভুত খাবার খেতে সেটা অভ্যাস এবং ব্যবসা তে পরিনত হয়। চায়নার দুর্দিন কেটে গেলেও এইসব এক্সোটিক প্রানীর ব্যবসা আর কমেনাই। নিষিদ্ধ করেও লাভ হয় নাই। সাধারন মানুষ এখনো প্রটেস্ট করে যাচ্ছে এসব খাওয়ার বিরুদ্ধে,এসব প্রানীকে খাদ্যদ্রব্য হিসেবে ব্যবহার এর ব্যবসার বিরুদ্ধে।
ভাইরাস টা প্রথম দেখা দিছিল একটা চাইনিজ বাদুড়ের পায়খানাতে। সেটা নিয়ে কনফারেন্স পেপার ও বের হুইছিলো। চাইনিজ সরকার কে প্রথমেই এটা নিয়ে সাবধান করা হইছিল। কিন্তু তারা এটা আমলে নেয় নাই।কারন খুব সহজ, অর্থনীতি ভালো থাকলে কেউ সেটা নষ্ট করতে পছন্দ করে না। যেহেতু চায়না কম্যুনিস্ট দেশ সেহেতু খুব বেশী গোপনীয়তা রক্ষা করতে গিয়ে বিপদ শুরু হয়ে গেছিল। পরে তারা খুবই ভালো ট্যাকল দিছে। বিজ্ঞানী দের বারবার জিজ্ঞেস করা হইছে এটা কি ল্যাবে বানাইছে? কিন্তু নাহ বিজ্ঞানীরা সরাসরি বলে দিছেন এত ভালো, এত সফিস্টিকেটেড ভাইরাস বানানো মানুষের পক্ষে অসম্ভব। প্রকৃতি ছাড়া কেউ এটা পারবেনা।ফেসবুকের তালেবুল আলেম রাও কেন দেন এইসব ভুলভাল নিউজ? আল্লাহ যদি মানুষ বানাইতে পারে এরকম ভাইরাস বানাইতে পারবেনা?
গরম এলাকায় এই ভাইরাস টা কিছু করতে পারবেনা।ভুল কথা। ফ্লোরিডা,ইরান,ইটালি, দক্ষিন আমেরিকায় কেইস দেখা গেছে।সবগুলো এলাকা উচ্চ তাপমাত্রার এলাকা এবং ভালোই ছড়াইছে।
জমায়েত না করাই ভালো কেননা এটা ছড়ায় খুব দ্রুত। তাই যত কম মানুষ একত্র হয় তত ভালো। সবাই সাবধানে থাকেন। কিছুদিন বিড়ি সিগারেট অফ রাখেন। কারন জানেন তো, করোনা ভাইরাস আপনার শ্বাস প্রশ্বাসের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। যারা স্মোক করতেন এবং এই রোগে আক্রান্ত হইছেন তারা আগে মারা গেছেন।আপনার ফুসফুস আর শ্বাস প্রশ্বাস এর সিস্টেম দুর্বল থাকলে ভালো মত জেকে ধরে।
আরেকটা ব্যাপার হইলো, ধর্ম ধরে আবোলতাবোল টানাটানি কইরেন না। ইরানের শত শত মানুষ মারা গেছে, ক্যাথলিক খ্রীষ্টান দের ইতালি তে শতশত মৃত্যু । দোয়া করেন সবার জন্য। স্বপ্ন,তাবিজ এইসব বালছাল বাদ দেন। যেকোন তথ্য এক্সপার্ট এবং বিজ্ঞান ভিত্তিক লিটারেচার দিয়ে যাচাই করে নিয়েন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:১৫
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×