বারে আনমনে বসে আছে লোকটি । এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হাতে রাখা মদের গ্লাসটির দিকে ।
তা দেখে পাশে থাকা কাস্টমারটি হাসতে লাগলো । ছো মেরে ঐ এক গ্লাস মদ আচমকা কেড়ে নিয়ে ঢোকঢোক করে গিলে ফেললো সে ।
সাথে সাথেই আনমনে বসে থাকা লোকটি কান্না জুড়ে দিলো ।
- আরে ভাই কাঁদেনা , আমিতো মজা করছি মাত্র । আচ্ছা , আমি তোমাকে এক বোতল কিনে দিচ্ছি ।
- না ভাই , তা লাগবেনা । আসলে আমার কপালটাই পোড়া । আজকে দেরিতে ঘুম থেকে উঠায় অফিস যাইতে পারিনাই ঠিকসময়ে । বসের ঝাড়ি খাইয়া যখন নিচে আসলাম তখন দেখি আমার গাড়িটাও নাই । পুলিশরে বললাম , জানালো তারা কিছু করতে পারবেনা । তারপর ট্যাক্সি করে বাড়ি এসে দেখি আমার মানিব্যাগ, ক্রেডিট কার্ডও পকেট থেকে পড়ে গেছে কোথায় যেন । বাসায় ঢুকে দেখি মালির লগে বৌ শুইয়া আছে । সব ছাইড়া ছুইড়া এই বারে আইলাম । সিদ্ধান্ত নিলাম এই জীবন রাখবোনা , তাই মদের মধ্যে বিষ মিশাইলাম আর ওমনি আপনে এসে তাও খায়া ফেললেন !
এটা একটা পুরাতন কৌতুক ।
সেদিন ওয়ার্ডে বিষ খাওয়া রোগীর ম্যানেজমেন্ট কিভাবে করতে হয় তা দেখছিলাম ।
দেখছিলাম স্যার কি নির্দয় ভাবে স্টোমাক টিউবটা বিষ খাওয়া ছেলেটার পেটে ঢুকাচ্ছে আর বের করছে । যেন পেটের ভিতর ছয়শ ফিট গভীর নলকুপ বসানো হচ্ছে । ছেলেটা যে ওদিকে বাপ-মায়ের নামে জিকির করতেছে তাতে স্যারের যেন একটুও বিকার নেই ।
আমার হৃদয়টা আবার অতি নরম , একেবারে গলে যাওয়া সাপোজিটরের মতন । সইতে না পাইরা তাই স্যারকে বলিলাম , "স্যার , ব্যাথা পাচ্ছেতো ।"
স্যার কইলো , "ব্যাথা পাওয়ার জন্যইতো দিচ্ছি । জীবনে যেন মরনের নাম না লয় । নামই যদি নেয় তবে যেন বেঁচে না যায় এমনভাবে মরুক ।"
পরে চিন্তা কইরা দেখলাম , কথা সত্য ।
জীবনের ব্যার্থতা ঢাকতে যদি মরতেই চান তবে আত্বহত্যায় ব্যর্থ হওয়াটা কিন্তু জীবনে বেঁচে থাকবার জন্যই চুড়ান্ত মাত্রার অবমাননাকর । তাই আত্বহত্যা যখন করবেন তখন সিরিয়াসলি করবেন । যেন তা সিগারেট ছেড়ে দেয়ার মতন বছরে ৩৬৫ বার ছাড়া না হয় ।
আর বিষ বা ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়া আত্বহত্যার রিস্কে যাইয়েননা কখনো , বেঁচে যেতে পারেন । কারন ঘুমের ট্যাবলেট খাইতে খাইতে কখন যে আপনার সেন্স চলে যাবে তা আপনে টেরও পাইবেননা , পরে নিজেরে আবিষ্কার করবেন হসপিটালের বেডে । আপনেরে দেখতে আসা সবার মুখে থাকবে তখন অট্টহাসির ঝিলিক ।
বাপে কইবো , "মরার যোগ্যতাটাও নাই তোমার পোলার ।"
মায়ে পান চিবাইতে চিবাইতে কইবো , "এত বইকেননা তো । একদিন দেখবেন ঠিকই মরতে পারবো !"
পানের পিক ফালায়া মা এরপরে আপনের দিক ফিরব । কইবো , "কি বাবা , পারবিনা ?"
গার্লফ্রেন্ড কইবো , "হুহ ! কেমন আমার মরদরে । মরতেও পারেনা ।"
বন্ধুরা কইবো , "ঐ যে ঐ ছাগলাটা ? মরতে পারেনা যে ও ?"
বুঝেন , কি নির্মম অবস্থা । সব শুনে যদি এরপর ঘুমের ট্যাবলেট রাইখা ফাঁসির এটেম্পট নেন তবেও কিন্তু ঝামেলা আছে । দেখা গেছে ফাঁসির দড়ি ঝুলাইতে গিয়া হাত-পা ভেঙে ফেলছেন । অথবা ওড়না বাঁধা ফ্যানটা ছিটকে এসে পড়ে যেতে পারে মাথায় , হারায়া ফেললেন জ্ঞান , ফলাফল আবারও সেই হাসপাতালের বেড ।
এরপর যদি ধরেন ট্রেনে গলা কাইটা মরার চিন্তা করলেন তবে দেখা গেলো আপনে শুইয়া আছেন কিন্তু ট্রেন আসেনা । মশার কামড় খাইয়া পা ফুইলা গেছে তবু ট্রেন আসেনা । গোবরের গন্ধে বিরক্ত হইয়া যখন কইলেন "ধুর ছাই ! এত কস্টের থেইকা বাইচা থাকাই ভালো ।" তখন দেখা গেল পাশে থাকা গরুটা ঘাস খাওন বাদ দিয়া দাঁত কেলায়া আছে আপনের দিকে ।
তাই আবারও বলছি , একদমই রিস্ক নেয়া যাবেনা কিন্তু । মরনের শতভাগ নিশ্চয়তা পাইলেই কেবল আত্বহত্যার এটেম্পট নিবেন । নিশচয়তা না পাইলে কস্ট কইরা হলেও বাইচা থাকেন ।
মনে রাখবেন , “But in the end one needs more courage to live than to kill himself.” – Albert Camus !
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:০৫