somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আত্বহত্যা যখন করবেন তখন ভালো করেই করেননা !

২৯ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বারে আনমনে বসে আছে লোকটি । এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হাতে রাখা মদের গ্লাসটির দিকে ।
তা দেখে পাশে থাকা কাস্টমারটি হাসতে লাগলো । ছো মেরে ঐ এক গ্লাস মদ আচমকা কেড়ে নিয়ে ঢোকঢোক করে গিলে ফেললো সে ।
সাথে সাথেই আনমনে বসে থাকা লোকটি কান্না জুড়ে দিলো ।
- আরে ভাই কাঁদেনা , আমিতো মজা করছি মাত্র । আচ্ছা , আমি তোমাকে এক বোতল কিনে দিচ্ছি ।
- না ভাই , তা লাগবেনা । আসলে আমার কপালটাই পোড়া । আজকে দেরিতে ঘুম থেকে উঠায় অফিস যাইতে পারিনাই ঠিকসময়ে । বসের ঝাড়ি খাইয়া যখন নিচে আসলাম তখন দেখি আমার গাড়িটাও নাই । পুলিশরে বললাম , জানালো তারা কিছু করতে পারবেনা । তারপর ট্যাক্সি করে বাড়ি এসে দেখি আমার মানিব্যাগ, ক্রেডিট কার্ডও পকেট থেকে পড়ে গেছে কোথায় যেন । বাসায় ঢুকে দেখি মালির লগে বৌ শুইয়া আছে । সব ছাইড়া ছুইড়া এই বারে আইলাম । সিদ্ধান্ত নিলাম এই জীবন রাখবোনা , তাই মদের মধ্যে বিষ মিশাইলাম আর ওমনি আপনে এসে তাও খায়া ফেললেন !

এটা একটা পুরাতন কৌতুক ।
সেদিন ওয়ার্ডে বিষ খাওয়া রোগীর ম্যানেজমেন্ট কিভাবে করতে হয় তা দেখছিলাম ।
দেখছিলাম স্যার কি নির্দয় ভাবে স্টোমাক টিউবটা বিষ খাওয়া ছেলেটার পেটে ঢুকাচ্ছে আর বের করছে । যেন পেটের ভিতর ছয়শ ফিট গভীর নলকুপ বসানো হচ্ছে । ছেলেটা যে ওদিকে বাপ-মায়ের নামে জিকির করতেছে তাতে স্যারের যেন একটুও বিকার নেই ।
আমার হৃদয়টা আবার অতি নরম , একেবারে গলে যাওয়া সাপোজিটরের মতন । সইতে না পাইরা তাই স্যারকে বলিলাম , "স্যার , ব্যাথা পাচ্ছেতো ।"
স্যার কইলো , "ব্যাথা পাওয়ার জন্যইতো দিচ্ছি । জীবনে যেন মরনের নাম না লয় । নামই যদি নেয় তবে যেন বেঁচে না যায় এমনভাবে মরুক ।"

পরে চিন্তা কইরা দেখলাম , কথা সত্য ।
জীবনের ব্যার্থতা ঢাকতে যদি মরতেই চান তবে আত্বহত্যায় ব্যর্থ হওয়াটা কিন্তু জীবনে বেঁচে থাকবার জন্যই চুড়ান্ত মাত্রার অবমাননাকর । তাই আত্বহত্যা যখন করবেন তখন সিরিয়াসলি করবেন । যেন তা সিগারেট ছেড়ে দেয়ার মতন বছরে ৩৬৫ বার ছাড়া না হয় ।
আর বিষ বা ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়া আত্বহত্যার রিস্কে যাইয়েননা কখনো , বেঁচে যেতে পারেন । কারন ঘুমের ট্যাবলেট খাইতে খাইতে কখন যে আপনার সেন্স চলে যাবে তা আপনে টেরও পাইবেননা , পরে নিজেরে আবিষ্কার করবেন হসপিটালের বেডে । আপনেরে দেখতে আসা সবার মুখে থাকবে তখন অট্টহাসির ঝিলিক ।
বাপে কইবো , "মরার যোগ্যতাটাও নাই তোমার পোলার ।"
মায়ে পান চিবাইতে চিবাইতে কইবো , "এত বইকেননা তো । একদিন দেখবেন ঠিকই মরতে পারবো !"
পানের পিক ফালায়া মা এরপরে আপনের দিক ফিরব । কইবো , "কি বাবা , পারবিনা ?"
গার্লফ্রেন্ড কইবো , "হুহ ! কেমন আমার মরদরে । মরতেও পারেনা ।"
বন্ধুরা কইবো , "ঐ যে ঐ ছাগলাটা ? মরতে পারেনা যে ও ?"

বুঝেন , কি নির্মম অবস্থা । সব শুনে যদি এরপর ঘুমের ট্যাবলেট রাইখা ফাঁসির এটেম্পট নেন তবেও কিন্তু ঝামেলা আছে । দেখা গেছে ফাঁসির দড়ি ঝুলাইতে গিয়া হাত-পা ভেঙে ফেলছেন । অথবা ওড়না বাঁধা ফ্যানটা ছিটকে এসে পড়ে যেতে পারে মাথায় , হারায়া ফেললেন জ্ঞান , ফলাফল আবারও সেই হাসপাতালের বেড ।
এরপর যদি ধরেন ট্রেনে গলা কাইটা মরার চিন্তা করলেন তবে দেখা গেলো আপনে শুইয়া আছেন কিন্তু ট্রেন আসেনা । মশার কামড় খাইয়া পা ফুইলা গেছে তবু ট্রেন আসেনা । গোবরের গন্ধে বিরক্ত হইয়া যখন কইলেন "ধুর ছাই ! এত কস্টের থেইকা বাইচা থাকাই ভালো ।" তখন দেখা গেল পাশে থাকা গরুটা ঘাস খাওন বাদ দিয়া দাঁত কেলায়া আছে আপনের দিকে ।

তাই আবারও বলছি , একদমই রিস্ক নেয়া যাবেনা কিন্তু । মরনের শতভাগ নিশ্চয়তা পাইলেই কেবল আত্বহত্যার এটেম্পট নিবেন । নিশচয়তা না পাইলে কস্ট কইরা হলেও বাইচা থাকেন ।
মনে রাখবেন , “But in the end one needs more courage to live than to kill himself.” – Albert Camus !
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:০৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×