somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোহিঙ্গা পুরাণ

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভিকারুন্নেসা স্কুলের ছাত্রী 'হয়রানীর' ঘটনায় মুহাম্মদ জাফর ইকবাল কেন কিছুই বলছেন না?
কেন লিখছেন না? আপনার সেই কষ্টের কথাগুলো মনে আছে? দেশের মানুষ যখন এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে
মুহ্যমান, তখন পরিমল জয়ধরকে নিন্দা জানিয়ে, বা আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে অনেকেই
কিছু বলেন নি। আমি তাদের কথা বলছি, যাদের কথার দাম আছে বলে মনে হয়। যাদেরকে এই খারাপ সময়েও মানুষ সম্মান করতে চায়।
কিন্তু ওনারা কেন কিছু বলেন নি? আমরা অনেক সময় মানুষের উপর অতি-মানবিকতা চাপিয়ে দেই।
আমরা যাদের কাছ থেকে কিছু আশার বানী শুনতে চাই, ভুলে যাই তাদেরও এজেন্ডা আছে। এই পোরা বাংলার মাটির
এমনই দোষ। দোষটা শুধু কি বাংলার, মনে হচ্ছে অঞ্চলের। আর আমাদের চারিপাশে এত দু:খ এত
বেদনা প্রতিনিয়ত ঘটে যে, প্রতিটা বিষয়ে একজনের পক্ষে কথা বলা সম্ভব নয়, সমীচীনও নয়।
তবে প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষেত্রে সব কিছুকে পাশ কাটিয়ে আমাদের দেশের তথাকথিত বিবেকবানের
কাছে প্রধান বিবেচ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে 'চেতনা' ব্যবসা। দারিদ্রপিড়িত দেশে দু'টি করে খাওয়া আর কি।
চেতনা ব্যবসায় সবসময় একটি প্রোপাগান্ডার পক্ষ নিয়ে কথা বলতে হয়, যারা শিক্ষিত তারা কিছুটা
ভ্রান্ত নিরপেক্ষতার আড়াল নিয়ে কথা বলেন। এতে কিছু পয়সা কড়ি মেলে,
সরকারি টাকায় বিদেশ ভ্রমণ, আর বৃত্তি মেলে। মেলে আরও নানা সুযোগ সুবিধা। এর একটি বড় সমস্যাও
আছে। একবার এই ব্যবসায় নাম লেখালে ফেরার রাস্তাও নেই। ফিরতে চাইলেই নানা ঝামেলায় জড়িয়ে যেতে হয়।


আমার বালক, কিংবা তরুণ বয়সে যখন
তথাকথিত শান্তির দূত সুচির কারাবন্দীর খবর শুনতাম, আমাদের বসার ঘরে এলাকার ভদ্রজন বসে
যখন তাবৎ দুনিয়ার রাজনীতি উদ্ধারে ব্যস্ত থাকতেন, আমার মনে হত, ওনার উপর এত ভাল মানুষী
চাপানোর কি আছে? উনি নিজেই তো দেশের রাজনীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল না। পরবর্তীতে বেলজিয়ামের
রাজধানী ব্রাসেলসের ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের গায়ে বিশাল, প্রায় পাঁচ তালা উঁচু সুচির পোষ্টার দেখে
মনে হয়েছিল, আসলেই কি তিনি এত বড়? এখন অনেকেরই ভুলটা ভাংছে, তিনি আসলে যত না বড়,
তার চে' অনেক বেশি বড় তাকে করা হয়েছে। বড়; মূলত অস্ত্র ব্যবসার জন্য মায়ানমার একটা বড় বাজার।
"সব দেশেই" সেনা বাহিনীর জন্য ক্রয় একটা বড় ব্যবসা। এর একটা ভাল দিক হল, এতে জবাবদিহিতা
প্রায় বলতে গেলে প্রায় নেই। মায়ানমার এর সেনা বাহিনীও এর বাইরে নয়। মায়ানমারের সৈন্যরা যে অস্ত্র ব্যবহার করে
তা প্রস্তুত করেছে সুইডেন। ভারতের মাধ্যমে দালালি করে তা মায়ানমারে পৌঁছায়। এতে ভারতেরও লাভ,
সুইডেনও তার হাত 'পরিষ্কার' রাখল।

তথাকথিত শান্তির দূত সুচির একরোখা আচরণ তাকে দুর্ঘটনা ক্রমে বিশ্ব বরেণ্য করে দিয়েছে। আজ
সেই একরোখা ও অসংবেদনশিলতার জন্যই সে ঘৃণিত। আজ সুচি যেন আধুনিক-নাৎসি। সুচি তার
এজেন্ডা নিয়ে এগিয়েছে। বাড়তি হিসাবে পেয়েছে মেডেল। নির্বাচনে জেতার পরে, একে একে
তার ক্ষমতার লোভ আর দম্ভের বহি:প্রকাশ ঘটেছে। সেই সাথে একটা নীতি হীন সেনা বাহিনীর সাথে
তাল মিলিয়ে চলাও সহজ নয়। তাই মানবতার প্রয়োজনে এখন প্রয়োজন বাইরের শক্তির এগিয়ে আসা।


আজকে ভারত যদি তাদের ব্যবসায়ীক, গোত্রীয় ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে মায়ানমারকে সমর্থন দেয়,
তাহলে আমাদের দেশের চেতনা-কর্মীদের আসলে কিছু করার থাকে না। চেতনা শিবিরের স্বপক্ক শক্তিতে
নিজে থেকে সিদ্ধান্ত দেয়ার মত মেরুদণ্ড যুক্ত একটি প্রাণীও আর অবশিষ্ট নেই। দিনের পর দিন মধ্যম ও
নিম্ন মেধার মানুষগুলোকে ক্রমাগত ভাবে প্রণোদনা দেয়ার কারণে সৃষ্ট সঙ্কটের ফল আমরা ইতিমধ্যে
দেখতে পারছি। এরা বিদেশে গিয়ে যে চুক্তি সাক্ষর
করে, সেই চুক্তিটিও বিদেশিরা লিখে দেয়। ক'দিন আগেই দেখেছেন আমারদের পররাষ্ট্র বিষয়ক এক
জন কর্মকর্তা চুক্তি সাক্ষর করে বলেছেন, তিনি ৩২ কি ৩৪ টি সাক্ষর করেছেন। ক'টি চুক্তি করেছেন সেটি
জানারও প্রয়োজন মনে করেন নি। এমন মেধার লোকজন এখন দেশ চালাচ্ছেন।


আজ আপনি ভাবছেন, দেশের পাশে এত নিরীহ মানুষের জীবন বিপন্ন, মানুষের কারণেই বিপন্ন, অথচ
অনেকেই কেন এগিয়ে আসছেন না। এমনি মানবিক সমর্থনটুকুও দিচ্ছেন না। ঠিক ধরেছেন, ঐ মেরুদণ্ডহীন
মানুষগুলোরও এজেন্ডা আছে। চেতনা শিবিরের এজেন্ডা হলো প্রোপাগান্ডা নির্ভর। আমরা হলাম আয়োডিন
খাওয়া জাতি। ভেজালের ভিড়ে আয়োডিন আর দেয়া হয় না। তাই গতকাল কি ঘটেছে, তা এক কাপ চা,
আর একটা 'টোস্ট বিস্কুট' খেলে ভুলে যাবে না, এমন বাঙালী হাজারেও একটা মেলে না।

মাত্র ক'দিন আগে আমরা লাখে, লাখে শরণার্থী হয়েছিলাম। ভারতে। সে কথা ভুলে গেলেন? অনেকে
বলছেন, বাংলাদেশের এত মানুষের পরে, শরণার্থীদের খাওয়ানো একটা বোঝা। একটা কটু সত্য কথা
জানা দরকার। মানাও দরকার। শরণার্থীদের সহায়তা করা মানবিক প্রথমত দায়িত্ব। আর দ্বিতীয়ত হলো
ভয়ানক অমানবিক, যা সকলের না জানলেও চলবে, না জানাই শোভন ছিল। শরণার্থীদের কোন দেশ একা
খাওয়ায় না। ভারতও আমাদের একা খাওয়ায় নাই। এক বাংলাদেশির মুখের সামনে একথাল ভাত আসার
আগে ভারত তার জনগণকে ৬৫ থালা ভাত খাইয়ে নিছে আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে। তবে সে কথা
না বলাই শ্রেয়। ঐ যে বললাম, সব কথা সুশোভন নয়। আমি ভারতের প্রাথমিক দায়িত্ব পালনের কৃতিত্ব বরাবর দিয়ে আসছি, দেব।


আমাদের চেতনা শিবিরের একজন নেতা বলেছেন, রোহিঙ্গারা অস্ত্র বা মাদক নিয়ে আসবে। জেনে
আসলেই আতংকিত না হয়ে পারছি না, কেননা তাহলে তো চেতনা শিবিরের ইয়াবার ব্যবসায় বড় ধরনের
ধস নামবে। খবরে দেখলাম, রোহিঙ্গাদের জন্য পাঠানো ত্রাণ নেতারা নিজেদের মানুষের মাঝে বিতরণ করছে।
এ লজ্জা কোথায় রাখি! দেখলাম তুরস্কের পক্ষ হতে রোহিঙ্গাদের পক্ষে নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলছে।
ত্রাণ পাঠিয়েছে। কিন্তু চেতনা শিবির তাদের এই মানবিক পদক্ষেপকেও তাদের শকুনের থাবার হাত হতে
মুক্ত হতে দেয় নি। সর্বশেষ আজ একজন সৈনিকের কথা শুনলাম, রোহিঙ্গাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ফেরত
পাঠাতে হবে। একদিন বাংলাদেশও প্রশিক্ষণ নিয়ে ফিরে এসেছিল বলেই আজ বাংলায় একথা গুলো
লিখতে পারছি স্বাধীন বাতাসে নি:শ্বাস নিতে পারছি। নিপীড়িতর কষ্টে যদি আমরা না বুঝি, পৃথিবীর
আর কে বুঝবে। যদি ধর্মের কথা বলি, বলব, শেষ বিচারের দিনে আপনি কি জবাব দিবেন? আর
যারা শেষ বিচারের কথা ভাবেন না, তারা পরবর্তী প্রজন্মকে কি বলবেন?


৬.
বাংলাদেশের চলমান চিন্তাধারায় নেতৃত্ব এমন সফল যে, চেতনা-কর্মিরা নিজে থেকে কেউ কিছু বলবে না,
পাছে সুরুয়ায় টান পড়ে। আশার কথা হল এই যে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই সরকারের উচ্চ পর্যায় হতে চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় কিছু নির্দেশনা আসতে যাচ্ছে। আজ যারা মুখ ফিরিয়ে আছেন, তাদের মুখে তখন মানবতার খৈ ফুটবে। ফুটুক, মন্দ কি? প্রকারান্তরে কিছু মানুষ বাঁচবে। আপনি না হয় তখনই সমর্থন দিলেন?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:৩৫
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×