একঃ
দু’দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি। একঘেঁয়ে, বিরক্তিকর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ঝরেই চলেছে। তার মধ্যেই আকাশদের ঢাকায় আসা। অফিসের কিছু কাজ, বাবা মা’র সাথে কয়েকটা দিন কাটানো, শপিং আর ঘোরাঘুরি। কিন্তূ হতচ্ছাড়া বৃষ্টিটা সব যেনো পন্ড করে দেবে। কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলে ঘোরাঘুরির বারোটা বাজবে। তাই বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বেরোলো আকাশ বউ বাচ্চাকে নিয়ে। বের হবার আগে পরীর সাথে একবার দায়সারা কথা হয়েছে। পরীও বেরুচ্ছে প্রিয়তম বান্ধবীকে নিয়ে। কিসের যেনো মেলা হচ্ছে সেখানে যাবে। তারপর ঘোরাঘুরি করে, দুপুরে বাইরে খেয়ে বাসায় ফিরবে। শপিং এর ফাঁকে ফাঁকে কয়েকবার পরীকে ফোন করে আকাশ। সদা সন্দেহপ্রবণ বান্ধবীর সামনে আকাশের ফোন ধরেনা পরী। মন খারাপ হয়ে যায় আকাশের। যে আকাশ এতোক্ষণ মেতে ছিলো এতোদিন পর ঢাকায় আসার আনন্দে, বউ বাচ্চার হাত ধরে মনের সুখে চষে বেড়াচ্ছিলো প্রিয় জায়গাগুলো, বেসুরো সুর ভাঁজছিলো এফ এম রেডিওর সাথে তাল মিলিয়ে, সেই আকাশ হঠাৎ গম্ভীর হয়ে যায়। এক অজানা বিষন্নতা আস্তে আস্তে ঘিরে ফেলে ওকে। বুকে চেপে বসে এক দুর্নিবার অভিমান। বৃষ্টি ভেজা আধো অন্ধকার সেই বিষন্ন দিনে ওর কাছে সবকিছুই অর্থহীন মনে হতে থাকে।
প্রিয় রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার সময় আর তারপর বিকেলে বাসায় ফেরার সময়ও আকাশের মুখে বিষাদের ছায়া জমাট বেঁধে থাকে। উতলা বউটা খানিক পর পর ফিরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে... কি হয়েছে তোমার? এড়িয়ে যায় আকাশ। বৃষ্টি ঝরে যায়, প্রিয় ফুল নিয়ে ছোট্ট ফুলওয়ালী হেঁকে হেঁকে বিরক্ত হয়ে মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়, এফ এম রেডিওতে প্রিয় গান বেজে যায়... কোনো কিছুই স্পর্শ করেনা আকাশকে। আকাশ জানে তার এই চিরচেনা অভিমান আজ বৃষ্টিবন্দী হয়ে আরও প্রকট, আরও দুর্ভেদ্য। নিজেকে আর আশেপাশের প্রিয় মানুষগুলোকেও পোড়াবে আজ দীর্ঘক্ষণ।
দুইঃ
সন্ধ্যায় একবার ফোন করে পরী। বুকে চেপে থাকা অভিমানটা সহজ হতে দেয়না ওকে। সন্ধ্যার পর একাই বের হয় আকাশ। নির্জন রাস্তাটার পাশে বিশাল ঘাট বাঁধানো পুকুরটার ধারে ওর প্রিয় জায়গাটায় গাড়ী পার্ক করে ব’সে থাকে। বিকেলের ধরে আসা বৃষ্টিটা তখন আবারো জোর ফিরে পেয়েছে। ফোন করে পরীকে। হঠাৎ করেই বাইরের অবিরাম বর্ষণ, বিদ্যুতের চমক, পরক্ষনেই নিস্তব্ধ অন্ধকার, গাড়ীর জানালার ভেতর দিকে জমা ঘন কুয়াশা, সবকিছু ওর জমাট বাঁধা অভিমান নিমেষে কোথায় উড়িয়ে নিয়ে যায়। হঠাৎ খেই হারিয়ে ওর দ্রবীভূত মনটা যেনো বৃষ্টির সাথে বৃষ্টির মতোই ঝরতে শুরু করে। কথা প্রসঙ্গে জানলো... দুপুরে ওরা খেয়েছে একই রেস্টুরেন্ট এ, একটু আগে আর পরে। শুনেই মনটা হাহাকার করে ওঠে। পরক্ষনেই ভাবে... ভালোই হয়েছে দেখা না হয়ে। বৃষ্টিবন্দী অভিমানে প্রথম দেখা হয়তো হতো ছন্দপতনেরই নামান্তর। থাক না সেই বিশেষ ক্ষণটা ২০২৫ এর জন্যই তোলা।
More about Pori & Akash

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




