ভিসার জন্য লম্বা লাইন এ দাঁড়িয়ে আছে পরী। সেই কোন কাক ডাকা অন্ধকার ভোরে বাবার সাথে এসেছে। তারপরেও এম্ব্যাসির গেটটা মনে হচ্ছে যেনো আচেনা কোনো দূরদেশ, ধরাছোঁয়ার বাইরে। আস্তে আস্তে রোদটা চড়ছে। আশেপাশে ধূলো আর ডাস্টবিনের উৎকট দুর্গন্ধ। লাইনটা বিশাল এক সরিসৃপ এর মত ধীর গতিতে নড়ে চড়ে উঠছে মাঝে মাঝে। আরও কতোক্ষণ লাগবে কে জানে। অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয় না। চাকুরিটা ছেড়ে দেবার পর অনেকটাই ঘরবন্দী। টুকটাক কাজ আর কেনাকাটার জন্য বাইরে আর মাঝে মাঝে বিকেলে ইচ্ছে হলে ছাদে খানিক হাঁটাহাঁটি। শীত প্রায় পড়ে যাওয়ায় ছাদেও আজকাল তেমন যাওয়া হয় না। সবকিছু মিলিয়ে মামা মামীর সঙ্গে বাইরে ঘুরতে যাবার প্রস্তাবটা একেবারে উড়িয়ে না দিয়ে ভাবনা চিন্তা চল্লো কিছুদিন। আকাশের সাথেও কথা হলো এ ব্যপারে। সবশেষে পনেরো দিনের জন্য যাওয়ার ই সিদ্ধান্ত পাকাপাকি।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মন খারাপ আকাশের। জানে, পরী ভিসার জন্য লাইন এ দাঁড়িয়ে আছে। কথা হলো কয়েকবার ছাড়া ছাড়া ভাবে। পরী বললো... ১২ টার মধ্যে না হলে আজ আর হবে না, আর আজ না হলে ও আর দাঁড়াবেই না ভিসার জন্য। আকাশ মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকে... ভিসার জন্য দীর্ঘ লাইন টা যেনো একচুল ও না এগিয়ে নিথর হয়ে থাকে। আকাশের সব প্রার্থনা বিফল করে একসময় পরী হাতে পেয়ে যায় পরবাসের অনুমতিপত্র। ফোন করে বলে... হয়ে গ্যাছে, বাড়ী ফিরছি।
ভালোবাসার শুরূ থেকেই কখনো ওরা কাছ ছাড়া করেনি একে অন্যকে। একবার শুধু পরী ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয়ার সাথে গিয়েছিলো দাদুবাড়ী। তিনটা মাত্র দিন। তাতেই মনে হচ্ছিলো যেনো যুগান্তরের বিরহ। সেবার কি নিয়ে যেনো দু’জনের মান অভিমানও হয়েছিলো। সারাক্ষণ আত্মীয় পরিবেষ্টিত পরীর সাথে কথা বলার সুযোগ ই পাচ্ছিলো না আকাশ। তাতে যেনো দূরত্বটা আরো বাড়ছিলো দু’জনের। পরীর অনুযোগ... কথা নাহয় হচ্ছেনা, এস এম এস করো না কেনো? আকাশের জবাব... এস এম এস আমার ভালো লাগে না। ওই দুই লাইনে আমি কি লিখবো আর তুমি ই বা কি বুঝবে? এভাবে পাওয়া যেনো না পাওয়ার মতোই। কি অসহনীয় ছিলো সেই তিনটা দিন।
এবারের কথা ভাবতেই কষ্টে আর হতাশায় ডুবে যাচ্ছে আকাশ। দু’টো সপ্তাহ কিভাবে থাকবে ও পরীকে ছাড়া? ইচ্ছে করে চিৎকার করে পরীকে বলে যেওনা তুমি, পারবো না আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে। বলতে পারে না, বলা যায় না। জানে, ওর মত পরী ও কষ্টে থাকবে, সবকিছুর মাঝেও সারাক্ষণই ডুবে থাকবে আকাশেরই ভাবনায়। জানে, অনেক কষ্টে হলেও কেটে যাবে বেদনায় নীলরং ক’টা দিন। পরীর অবর্তমানে হয়তো অষ্টপ্রহর শুধু চেপে থাকবে এক বুক হাহাকার। নিজের কষ্টগুলো নিজের হাতে নেড়ে চেড়ে দেখবে, জমাট কান্নার শীতল পিন্ডগুলো নিয়ে নিজের মনেই ছোঁড়াছুঁড়ি করবে। এভাবেই আসবে মিলনের ক্ষণ। ভালোবাসায় সিক্ত দু’টো মন আবারো খুঁজে নেবে একে অপরকে অনেক প্রতীক্ষার পর।
এতোকিছুর পরেও নিজেকে ছেড়ে নিজের বউটার জন্য মাঝে মাঝে মনটা খারাপ হয়ে যেতে থাকে আকাশের। ওই ক’টা দিন ওই বেচারীও কষ্টে থাকবে। আকাশের জীবনটাই এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, পরীর সাথে যখন সব ঠিক, তখন আকাশের পৃথিবীটাও চলে সব নিয়ম মেনে, আর পরীর সাথে যখন সব এলোমেলো, তখন আকাশের পৃথিবীটাও দুলে ওঠে। শুরূ হয় মহাপ্রলয়। আশেপাশের মানুষগুলো শুধু ভাবে, হলো কি লোকটার? সেই হাসিখুশি চমৎকার মানুষটার এই রূপ কেনো? অবুঝ বউটা অবাক হয়। মনে মনে ভাবে, সারাক্ষণ উপচে পড়া ভালোবাসায় আগ্লে রাখে যে লোকটা, একটু মন খারাপ দেখলেই উতলা হয়ে ওঠে, কেনো সেই লোকটাই মাঝে মাঝে এমন নির্লিপ্ত হয়ে যায়? কেনো মাঝে মাঝে তার সহজ বর টা দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে?
The Introduction
More about Pori & Akash

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




