ফিরে ফিরে আসি
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
এঁকেবেঁকে একটা সরূ পথ টিলাটাকে জড়িয়ে উঠে গ্যাছে উপরে। আশেপাশে আরো কয়েকটা উঁচু নীচু টিলা। পথটা গিয়ে শেষ হয়েছে টিলাটার প্রায় সমতল শীর্ষে। নীচের দিকটা প্রায় সমান্তরাল হলেও উপরের দিকটা তীর্যক। পথটা ওখানে অনেকটা সিঁড়ির ধাপের মত। উপরে উঠেই এক চিলতে সমতল জায়গা। বুনো গাছে প্রায় জঙ্গল আশপাশটা। নাম না জানা বুনো ফুলের সুবাস আর একটা জংলা গন্ধ মিলেমিশে জায়গাটাকে অদ্ভুত মাদকতাময় করে রেখেছে। ভালোবাসার নিজস্ব কোন গন্ধ আছে কি? থাকলে তা বোধহয় এমনই হতো। সমতল জায়গাটা আস্তে আস্তে ঢালু হয়ে বেশ অনেকখানি গিয়ে মিশেছে পঞ্চমীর চাঁদের আকৃতির জলাভূমিতে। জলাভূমির ওপাশটায় কয়েক সারি মাঝারি আকৃতির টিলা নিশ্চল দাঁড়িয়ে। দূর থেকে দেখে মনে হয় ভাবনায় মগ্ন কোন প্রাচীন পুরূষ। ওপাশের টিলা গুলোতে বড় গাছের প্রাধান্য। দিগন্ত ফুঁড়ে মাথা উঁচিয়ে থাকে গাছগুলো। জলাভূমির এ প্রান্তে ঘন সবুজ ঘাসের আস্তরণ। ডাঙ্গার প্রান্তে গাছের গুঁড়ির খুঁটির উপর গড়া ছোট্ট একটা মাচা। কাঠের পাটাতন। উপরে ছোট্ট দোচালা। খুঁটিগুলোর কোনোটা ডাঙ্গায়, কোনোটা জলের মাঝে। ছোট্ট একটা সিঁড়ি টিলা থেকে একটু উঁচু হয়ে মাচাটায় গিয়ে মিশেছে।
হাত ধরাধরি করে সরূ পথটা বেয়ে উঠে যায় পরী আর আকাশ। শেষের ধাপগুলোতে সাবধানী পা ফ্যালে পরী। একটু হাঁপিয়ে ওঠে। নাকের নীচে জমে ক্ষুদে স্বেদবিন্দু। আকাশের হাতে চাপ বাড়ে। উপরে উঠে বড় শ্বাস নিয়ে শ্বাস পশ্বাস টা স্বাভাবিক করে নেয়। তারপর দু’জনে এগিয়ে যায় ওদের মাচাটার দিকে। শুধু ওদের দু’জনের মাচা, পুরোটাই স্বপ্ন আর কল্পনার। অনেক দিন ধরে তিল তিল ক’রে কল্পনায় ওরা গড়েছে ওই মাচা আর আশেপাশের প্রকৃতি। এখন যেনো দু’জনেই চোখ বুজলেই দেখতে পায় ওদের সবচেয়ে প্রিয় জায়গাটা। ওদের ভালোবাসার কতোটা সময় কেটেছে ওই মাচাটায়। কখনো দু’জনে, কখনো বা একা। কখনো আকন্ঠ ভালোবাসায় ডুবে দু’জনে হাত ধরাধরি করে বসে থাকে ওখানে, কখনো গভীর বিষাদ আর অভিমানে একা একা।
মাচাটার শেষ প্রান্তে পা ঝুলিয়ে ব’সে নীচে তাকালে স্থির পানিতে দেখা যায় যুগল ছায়া। হঠাৎ জোরালো হাওয়ায় ছোট ঢেউ উঠলে ছায়াদু’টো ভেঙ্গেচুরে যায়, আবার স্থির হয়। কখনো দূরে হঠাৎ চোখে পড়ে জলে ভেসে যাওয়া পাতার মত ছোট্ট ডিঙ্গি। ওখানে গেলে কথার চেয়ে নীরবতাই যেনো বেশী কাম্য। মাঝে মাঝে টুক্রো টুক্রো কথা, বাকীটা সময় দূরে তাকিয়ে থাকা। কখনো দৃষ্টি দিয়ে ভালোবাসার মানুষটাকে ছুঁয়ে দেওয়া। পূর্ণীমায় জলাশয়টা যেনো একটা তরল রূপোর আধার। তাছাড়া বাকী সব যেনো এক রহস্যময়তার আলোয় মোড়া।
এবারের New Year এ আকাশে থাকবে এক ফালি সরূ চাঁদ। ঘন কুয়াশার চাদরে হয়তো তা মুখ লুকিয়ে রাখবে সারাক্ষণ। তবুও নিশ্চিত ভাবেই ওরা সেই রাতে যাবে ওদের মাচাটায়। রহস্যময় প্রকৃতি চারদিকটা বিস্তার করে থাকবে আর বিচ্ছিন্ন ক’রে রাখবে প্রচন্ড ভালোবাসায় আক্রান্ত দু’টো মানুষকে বিশ্ব চরাচর থেকে। দুজনার ভালোবাসায় মগ্ন হয়ে থাকবে ওরা। নতুন বছরের নতুন দিনে একটাই চাওয়া ওদের। ওদের ভালোবাসা যেনো বদলে না যায়, সব নতুনের জোয়ারে ওদের তিল তিল করে গড়া ভালোবাসা যেনো ভেসে না যায়, আজীবন যেনো বেঁচে থাকে ওদের ভালোবাসা আর মাচাটা যেনো ওদের ভালোবাসার সময়গুলো নিজেতে ধারণ ক’রে আগলে রাখে ওদের। বাকীটা জীবন যেনো ফিরে ফিরে আসে দু’জনেই ওদের প্রিয় মাচাটায়।
The Introduction
More about Pori & Akash
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?
আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
গরমান্ত দুপুরের আলাপ
মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজীব নূর কোথায়?
আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=
©কাজী ফাতেমা ছবি
মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।
হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।
ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন