অকারনেই আকাশের মনটা খারাপ।বাসায় একা। ভালো লাগছে না কিছু। এঘর ওঘর করছে মাঝে মাঝে। বিরক্তিকর আর একঘেঁয়ে টিভি চ্যানেল ওলোট পালট চল্লো খানিকক্ষণ। তারপর রাতের খাবারের প্রস্তুতি। খাওয়াটা যেনো বাহুল্য ওর কাছে। তারপরেও খেতেই হয়। সন্ধ্যা থেকেই পরী খবর নিচ্ছে রাতের খাবারের কি ব্যবস্থা। ওকে খুশী করতেই এলাহী আয়োজন হয়ে যায়। নিজের কিছুই করতে হয়নি। বউটা পছন্দের খাবারগুলো তৈরী করে Frozen করে রেখে গ্যাছে। তারপর আবার এঘর ওঘর। সারাক্ষণ মাথার মধ্যে একটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। পরীর জন্মদিন। যতোই ভাবছে, ততোই নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে। প্রিয় মানুষগুলোকে উপহার দিতে খুবই ভালোবাসে আকাশ। সেই কিনা পরীকে কোনো উপহার দিতে পারছে না। ওরা যে উপহার নেয়া দেয়ার দূরত্বের বলয়ের বাইরে। এই দূরত্বটা যে কখনো ঘুঁচবার নয় সেটাও ওরা ভালো করেই জানে। তাতেই যেনো সদ্য খাঁচায় পোরা বন্য প্রাণীর মত মনটা বিদ্রোহে আরো ফেটে পড়তে চায়।
জন্মদিনে পরী থাকবে ব্যস্ততায় ঘেরা। পরিবার, স্বজন আর প্রিয় বান্ধবীরা আগলে রাখবে ওকে সারাক্ষণ। তাদের প্রাচীর ভেদ করে পরীকে পাওয়া আকাশের জন্য দুঃসাধ্যই বটে। তারা তো আর জানে না... পরীর মনটা বারবার ছুটি নিয়ে যেতে চায় আকাশের পানে। মনকে প্রবোধ দেয় আকাশ। বাকী দিনগুলো পরী তো ওকেই আঁকড়ে রাখে সারাক্ষণ।
বিশেষ সময়গুলোতে খুব পুরনো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে আকাশের। মনে পড়ে পরীর সেই হারিয়ে যাওয়া, একরাশ শূন্যতা। ভাবে, কি সৌভাগ্যে আবার ফিরে পাওয়া পরীকে। তখনো ওরা শুধুই বিচ্ছিন্ন দু’টো মানুষ। শুধু মৃদু একটা ভালোলাগা ঘিরে থাকে অন্যজন পাশে থাকলে। সেই ভালোলাগাটা ধীরে ধীরে গভীর হয়। ভালোবাসার পথে হাত ধরাধরি ক’রে হাঁটা সে তো অনেক কাল পরের আনন্দগাঁথা। অতি ধীরে গভীর ভালোবাসায় নিমজ্জিত হয়েছে বলেই হয়তো ফেরার পথের নিশানা মুছে শুধুই এগিয়ে গিয়েছে ওরা। খুব মনে পড়ে অভিমানী প্রহর গুলোর কথা। দু’জনেই বেশী আবেগপ্রবণ ব’লে অভিমানের তীব্রতাও হয়ে উঠতো অসহনীয়। পরীটা বেশী উদার বলেই সব মেনে নিয়ে মান ভাঙ্গাতো আকাশের। ইদানিং আকাশ ও উদার হ’তে শিখেছে।
সেই পরীর জন্মদিন। কিছুই দেবার নেই আকাশের। দিনটা পরীর কাছে স্মরনীয় করে রাখার কোন উপায় ও জানা নেই ওর। শুধু মনে মনে প্রার্থনা করে... আনেক সুখী হও পরী, ভালো থাকো জীবনের শেষ দিনটা পর্যন্ত, পৃথিবীর সব সুখের অনুভূতিগুলো মৃদু হাওয়ার ভেসে এসে মনোরম সুগন্ধীর মত জড়িয়ে রাখুক তোমাকে সারাক্ষণ, সব দুঃখ বেদনার চিহ্ন ভেসে যাক মরূভূমির বুকে লু হাওয়ায় সব মুছে যাওয়ার মত, জীবন সব পূর্ণতা আর মাধুর্য নিয়ে ধরা দিক তোমার মনের অলিন্দে, হাসি আর আনন্দে ভরিয়ে তোলো তোমার স্বপ্নের ছোট্ট ঘর। আমি শুধু দূর থেকে দেখবো আর এমনি ক’রেই জানিয়ে যাবো আমার প্রাণঢালা শুভকামনা। শুধু তোমার মনে একটা ছোট্ট ঝুলবারান্দা রেখো আমার জন্য, আমাদের ছোট্ট মাচাটার জন্য আর আমাদের অগনিত সুখ দুঃখের মুহুর্তগুলোর জন্য। যখন আমার খুব মন খারাপ থাকবে তোমার আগোচরেই আমি ওখানে গিয়ে বসবো। নেড়ে চেড়ে দেখবো স্মৃতিগুলো। তোমার যখন মন খারাপ থাকবে দরোজা খুলে উঁকি দিয়ে যেও একটিবার। পাবে আমাকে সেখানেই।
Pori, Wishing You a Happy Birthday.
The Introduction
More about Pori & Akash
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:৪১