somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইবনে খলদুন এবং তাঁর আল-মুকাদ্দিমা : পর্ব ১

১৪ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কালজয়ী প্রতিভার অধিকারী ইবনে খলেদুন ছিলেন একাধারে ঐতিহাসিক, দার্শনিক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সমাজ বিজ্ঞানী। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ তাঁকে যথাযথভাবেই সমাজ বিজ্ঞানের প্রথম প্রবক্টার মর্যাডা দান করেছেন। তাঁরই অবদানে আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজ বিজ্ঞান যথেষ্ট সমৃদ্ধ হয়েছে। মধ্যযুগে ইবনে খলদুন ইসলামী রাষ্ট্রচিন্তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনয়ন করেন। তাঁর গুরুত্ব কেবল বৈজ্ঞানিক ও বিশ্লেষণী পদ্ধতিতে রাষ্ট্রতত্ত্বের মূল সূত্র আবিষ্কারের জন্যই নয়; সমাজবিজ্ঞানের জন্মদাতা রূপেও বটে।

ইবনে খনদুনের প্রকৃত নাম ওয়ালী উদ্দীন আবু যায়দ আবদুর রহমান ইবনে মোহাম্মদ ইবনে হাসান ইবনে নাযীর ইবনে মোহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম ইবনে আবদুর রহমান খলদুন আল হাজরামী। তিউনিশিয়ার এক সভ্রান্ত আরব-স্পেনিশ বিদ্যানুরাগী পরিবারে ১৩৩২ খ্রি: ২৭ মে জন্ম গ্রহণ করেন। শেষ জীবন তিনি কায়রোতে অতিবাহিত করেন। মিসরের প্রধান বিচারপতির সম্মানিত পদে থাকা অবস্থায় তিনি ১৪০৬ খ্রি: ১৭ মার্চ ইনতিকাল করেন।

তাঁর রচনাবলী:
ছোট বড় ভু গ্রন্থ খলদুন রচনা করেছেন তিনি। তাঁর বিরাট কীর্তি হল ''কিতাবুল ইবার ওয়াদিওয়ান আল মুবতাদা ওয়াল খবর-ই - আইয়াম - আল - ওয়াল আয়ম- ওয়াল কারবার'' নামক ইতিহাস গ্রন্থ। তাঁর এই ইতিহাস গ্রন্থ তিন খণ্ডে বিভক্ত এবং প্রথম খণ্ড আল মুকাদ্দিমা বা উপক্রমণিকাই তাঁর শ্রেষ্ঠ অবদান। ইবনে সিনা ও ইবনে রূশদের রচনাবলীর উপর সংক্ষিপ্ত ভাষ্য ও গ্রীক আরবীয় দর্শনের দার্শনিক সমীক্ষা তাঁর মৌলিক রচনা। এছাড়া ''লুবাব - আল - মুহাস্মালত'' এবং ''শিফা আল - সাইল'' নামক দুটি গ্রন্থে স্কলাস্টিক ধর্মতত্ত্ব ও মরমীবাদে তিনি যে অবদান রেখে যান তাও রীতিমত অসামান্য।

এখন আমি তাঁর বিখ্যাত ''আল- মুকাদ্দিমা'' এর আলোচনা শুরু করছি। আল- মুকাদ্দিমা সরাসরি টেক্সট থেকেই আমি আলোচনা করার চেষ্টা করছি। জানিনা কতটুকু করতে পারছি, তবে চেষ্টা করেছি। আমি ইবনে খলদুনের '' আল- মুকাদ্দিমা'' ধারাবাহিকভাবে ব্লগ পাঠকদের জন্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এটা এত বিশাল একটি গ্রন্থ যে- এক সাথে ালোচনা করাটা যেমন বিরক্তি উৎপাদন করবে তেমনি একসাথে লিপিবদ্ধ করা দুরূহ ব্যাপার। তাই আমি পর্যায়ক্রমে ব্লগে তুলবো।


ইবনে খালদুন
আল মুকাদ্দিমা (১ম খণ্ড)
গোলাম সামদানী কোরায়েশী অনূদিত
প্রকাশ: চৈত্র, ১৩৮৮। জুন , ১৯৮২ (১)
প্রকাশক: আল-কামাল-আবদুল ওহাব
পরিচালক,
প্রকাশনা - বিক্রয় বিভাগ
বাংলা একাডেমী, ঢাকা।

পৃ:৩:
সর্বকালের স্মরণীয় প্রতিভা ওঐতিহাসিক দর্শনের জনক আল্লামা ইবনে খালদুন তিউনিসের এক সভ্রান্ত পরিবারে ৭৩২ হিজরী ১লা রমজান (২৭শে মে, ১৩৩২ খ্রি: ) জন্ম গ্রহণ করেন।
তার পুরো নাম ওয়ালী উদ্দীন আবু যায়দ আবদুর রহমান ইবনে মোহাম্মদ ইবনে হাসান ইবনে নাযীর ইবনে মোহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম ইবনে আবদুর রহমান খলদুন আল হাজরামী। তাঁর মূল নাম আবদুর রহমান এবং তাঁর পিতার নাম মুহাম্মদ। তাঁর পিতামহের নামও ছিল মুহাম্মদ। ইবনে খলেদুন তাঁর পারিবারিক নাম এবং এই নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন। এর মূলে ছিল খালদুন পরিবারের সর্বব্যাপী সুখ্যতি ও প্রতিপত্তি। দীর্ঘ কাল ধরে এ পরিবার স্পেনে ও উত্তর - পশ্চিম আফ্রিকায় উচ্চ রাজকীয় পদে অধিষ্ঠিত হয়ে ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে এ খ্যাতি ও প্রতিপত্তি গড়ে তুলেছিলেন।
তবু এ কথা ঠিক যে, ইবনে খলদুনের পূর্ব পুরুষরা এক সময়ে দক্ষিণ আরবের অধিবাসী ছিলেন এবং তার আল হাজরামী উপাধির মধ্যে সে ইতিহাসের ইংগিত বিদ্যমান। সম্ভবতঃ তাঁর এই বংশগত পরিচয়ের কল্যাণেই তিনি উত্তর- পশ্চিম আফ্রিকার আরব- বেদুইন গোত্র গুলোর উপর অসামান্য প্রভাব বিস্তারের অদিকারী হন।
যদ্দুর জানা যায়, ক্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে স্পেন বিজয়ের সময়ে ইবনে খলদুনের পূর্ব পুরুষ ভাগ্যান্বেষণে স্পেনে গিয়ে উপস্থিত হন। স্পেনীয় ঐতিহাসিক ইবনে হজমের মতে ইবনে খলদুনের এই পূর্ব পুরুষের নাম ছিল ''খালেদ'' এবং এই খালেদ শব্দটিই ''খালেদুন'' উচ্চারিত হয়ে শেষ পর্যন্ত 'খলদুন' এ রূপান্তরিত হয়েছে।


পৃ: ২৫:
বস্তুতঃ যেকোন একজন সাধারণ লেখকের জন্য জীবনের প্রথম ত্রিশ বৎসরে উল্লেখিত রচনাবলীর অধিকারী হওয়া লেখক হিসেবে স্বীকৃতি লাভের জন্য যথেষ্ট ছিলো। অবশ্য ইবনে খলেদুনের অসাধারণ প্রতিভার জন্য এধরণের স্বীকৃতি একান্তই মূল্যহীন। কারণ এর কোনোটিই তাঁর প্রতিভার যথার্থ পরিচয় ভন করে না; কেননা আমরা একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পাব, এসকল রচনার অধিকাংশই পাঠ্যপুস্তক; তাও প্রায় সর্বাংশেই মৌলিকত্ব বর্জিত।
বস্তুত আল মুকাদ্দিমাই তাঁর কালজয়ী প্রতিভার শ্রষ্ঠ নিদর্শন এবং এজন্যই তিনি শুধু ঐতিহাসিক দর্শনের জনক নন, সর্বকালের স্মরণীয় ও বরণীয় মনীষী হিসেবেও স্বীকৃতি লাভ করেছেন।

পৃ:২৬:
অবশ্য আধুনিক সমালোচকেরা ইবনে খলদুনের ইতিহাস সম্পর্কে ভিন্ন দিক থেকে সমালোচনা করেছেন। তঁদের বক্তব্য হলো, ''ইবনে খলদুনের ইতিহাস তাঁর আল মুকাদ্দিমার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বিবেচিত হয়নি। ভূমিকায় তিনি যে নতুন আশাবাদে পাঠককে উজ্জ্বীবিত করেছিলেন, তাঁর ইতিহাসের বিবরণ সে তুলনায় অনেকখানি নিরাশাব্যঞ্জক।''
আল মুকাদ্দিমায় ইবনে খলদুন আরবীয় সম্রাজ্যের ঠিকানা, তার সংস্কৃতি চেতনা ও স্থাপত্য কীর্তি সম্পর্কে যে বাস্তব ও কঠোর মন্তব্য লিপিবদ্ধ করেছেন, এর সত্যতা অস্বীকার করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। তবু এরই ফলে আরবীয় জগত তাঁর প্রতি বিরূপ হয়ে উঠেছিল। মিশরে অবস্থান কালে তাঁর বিরুদ্ধে শত্রুতার যে বিষাক্ত চক্র গড়ে ওঠে, এর মূলে তাঁর এ প্রকার মন্তব্যের বিরূপ প্রতিক্রিয়া অনেকখানি উৎসাহ যুগিয়েছিলো।

পৃ:২৭:
তাঁর মতে, '' কোনো নতুন বিষয়ের উদ্ভাবকের পক্ষে কখনোই তার সামগ্রিক বা প্রায়োগিক সম্পূর্ণতা বিধান করা সম্ভব হয়না; উত্তরসূরীরাই সে দায়িত্ব পালন করে থাকেন।''
আল-মুকাদ্দিমা পৃ: ৩৬
(' হঠাৎ আলোর ঝলকানি লেগে ঝলমল করে চিত্ত')
আল মুকাদ্দিমা আল্লামা ইবনে খলদুনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি। আল- মুকাদ্দিমা বস্তুতঃ মানুষের সভ্যতা সংস্কৃতির ইতিহাসে এক নতুন দৃষ্টি এং েমন এক দৃষ্টি, যার ফলে ইতিহাসের বহু চেনা-জানা-শোনা উপাদান যেমন অচেনা হয়ে যায়, তেমনি বহু অখ্যাত অবজ্ঞাত উপাদানও নতুন পরিচয়ের মর্যাদায় উজ্জ্বল হয়ে উঠে।


ইবনে খলদুনের জীবনকাল ক্রীস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দী। তিনি এসময়ে তাঁর জীবন পরিবেশে যে সীমাবদ্ধতা বিরাজ করছিলো তার প্রভাবেই ইবনে রূশদের বিরোধিতা করেছেন এবং দার্শনিক জীবন চেতনায় তিনি ইমাম গাজ্জালীর সাথে একাত্মতা অনুভব করার দিকে এগিয়ে গেছেন। এরই ফলশ্রুতি হিসেবে তিনি দর্শন ও কিমিয়া শাস্ত্রের অসারতা প্রতিপন্ন করতে সচেষ্ট হয়েছেন। ইতিহাস বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে তিনি যে বাস্তব কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয় দিয়েছেন, তাঁর এই বিশিষ্টতাকে আরো সূদুর প্রসারী করে তুলেছে।
(চলবে)
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×