somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: দিন বদলের দিচ্ছে হাওয়া, বেতন ফি বৃদ্ধি পাওয়া!

৩০ শে জুলাই, ২০১০ রাত ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন বুঝিনাই, শেখ হাসিনা গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উদ্বোধনের কালে “আমি মনে করি, ডিগ্রী পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক করে দেয়া উচিত। আমরা ডিগ্রী পর্যন্ত সকলের জন্য শিক্ষা অবৈতনিক করে দেব” কথাটির মাধ্যমে আসলে কি বুঝিয়েছিলেন, কিন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন ফি/ভর্তি ফি সহ অন্যান্য ফি বাড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় মনে হয় একটু একটু বুঝতে পারছি, ডিগ্রী বা উচ্চ শিক্ষাকে তিনি ‘অবৈতনিক’(!) করে দেবেন কিন্ত তার মানে এই না যে ভর্তি ফি/সেশন ফি, মানোন্নয়ন ফি, মার্কশিট ফি, নন-কলেজিয়েট ও ডিজ-কলেজিয়েট ফি ইত্যাদি বাড়িয়ে বাড়িয়ে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ এর পরামর্শ মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে “স্বনির্ভর করা” অর্থাত সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কার্যত বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে শিক্ষাকে ক্রমশ বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করার চলমান প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যাবে!! যে শিক্ষা সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী তার এই মহান বাণীটি দিয়েছিলেন তার শ্লোগানটি ছিল এরকম: “দিন বদলের দিচ্ছে হাওয়া, শিক্ষা আমার প্রথম চাওয়া”!

তখন বুঝি নাই, বেতন ফি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর প্রক্টরিয়াল বডি চড়াও হওয়ার পর কেন উল্টো আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শিক্ষক লাঞ্চনার অভিযোগ তোলা হলো! নজির বিহীন দ্রুততার সাথে রাতারাতি শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক ডেকে, শিক্ষক লাঞ্চণার অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী সুজন কান্তি দে’কে কোন প্রকার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দান ব্যাতিরেকেই দুই বছরের বহিষ্কারাদেশ প্রদান এবং আরো পাঁচজন শিক্ষার্থীকে ‘কেন শাস্তি দেয়া হবে না’ তার কারণ দর্শাও নোটিশ পাঠানোর তামাশার পর এখন বোধহয় পোদ্দারিটা বুঝতে পারছি। আহা! ছাত্রলীগ-ছাত্রদল-ছাত্রশিবির এদের মারামারি কাটাকাটি, টেন্ডার বাজি, চরদখলের মতো হলদখল ইত্যাদি সুকর্মগুলোকে যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এরুপ শৃঙ্খলা ভঙ্গের(!) মতো কোন শাস্তি যোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হতো!

তখন বুঝি নাই, চবি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেনের এই বক্তব্যের গূঢ় অর্থ:'বর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দেওয়া এ কর্মসূচির সঙ্গে আমরা একাত্মতা প্রকাশ করছি'; ছাত্রলীগ চবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা চালিয়ে আরফাত নামের ইতিহাস বিভাগের এক ছাত্রকে ছুরিকাঘাত করার পর হাড়ে হাড়ে বুঝেছি শাসক শ্রেণীর পেটোয়া বাহিনীর একাত্মতা প্রকাশের অর্থ কি! আশা রাখি এরুপ একাত্মতার জন্য ছাত্রলীগের কাছে বাংলার ছাত্র সমাজ চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবে!

তবে আমরা এইটুকু খুব পরিস্কার বুঝি, বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ভাওতার আড়ালে চলছে শিক্ষা সংকোচন, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের সমস্ত প্রক্রিয়া। প্রতিবছরই বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন সেশন শুরু করার সময় এর একটা মহড়া চলে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি সেই মহড়ারই অংশ।


আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেতন ফি বৃদ্ধির কোন প্রকাশ্য সার্কুলার জারি না করলেও শিক্ষার্থীরা এবারের নতুন সেশনে ভর্তি হতে গিয়ে দেখছেন তাদেরকে বিভিন্ন খাতে আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশী বেশী অর্থ দিতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ব্যাংকে পরীক্ষার ফি জমা দিতে গিয়ে বর্ধিত ফি দেখে বেকায়দায় পড়ে যান। এ অবস্থায় ক্ষোভ জমা বাঁধে শিক্ষার্থীদের মাঝে। শিক্ষার্থীদের ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যাচ্ছে বেতন ফি বৃদ্ধির চিত্রটি এরকম:


এছাড়াও বাড়ানো হয়েছে নন-কলেজিয়েট ও ডিজ-কলেজিয়েট ফিও। নন-কলেজিয়েট ফি রাখা হয়েছে এক হাজার টাকা আর ডিজ-কলেজিয়েটের ক্ষেত্রে রাখা হয়েছে ৩ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা। এ তো গেল অনার্সের কথা। মাস্টার্সে গণিত, কলা, ব্যবসায় প্রশাসন, আইন ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের বেতন ও ভর্তি ফি (অনাবাসিক) গত বছর ছিল ২০৩১ টাকা। এ বছর ২৯২০ টাকা। আর আবাসিকদের গত বছর ছিল ২৪৫৫ টাকা। এ বছর তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩৪২০ টাকা।

বিজ্ঞাপণ দিয়ে বদমাইশি
১) অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তুলনা
বাজারে কোন পণ্যের দাম বাড়লে ব্যাবসায়ীরা অযুহাত তোলেন ওমুক জায়গায় দাম বেশী তাই আমাদের এখানেও দাম বাড়তি। একই ভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেতন বাড়ানোর অযুহাত হিসেবে নির্লজ্জের মতো জনগণের পয়সা খরচ করে পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বলেছেন চবি’র তুলনায় নাকি ঢাবি’তে বেতন বেশি। তারা একদিকে বলছেন বেতন ফি বাড়েনি, শুধু শুধু উস্কানি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অস্থিতিশীল করা হচ্ছে আবার অন্যদিকে আমার ঘরে কে-রে, আমি কলা খাই না’র মতো করে বলছেন, চবি’তে বেতন ঢাবি’র চেয়ে কম! বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো, ল্যাব-লাইব্রেরির সুযোগ সুবিধা, শিক্ষার মান, ছাত্র-শিক্ষক সংখ্যা, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে সরকারি অর্থের পরিমাণ ইত্যাদি বিষয় বাদ দিয়ে স্রেফ সংখ্যার বিচারে এভাবে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ফি’র সাথে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন ফি’র তুলনা চলতে পারে কি-না কিংবা আসলেই ঢাবি’তে বেতন-ফি’র পরিমাণটা চাবি’র তুলনায় বেশি কি-না, সেসব প্রশ্ন যদি নাও তুলি, তবু এটুকু অন্তত: বলা যায়, যদি ঢাবি’র বেতন ফি চবি’র চেয়ে বেশি হয়, তাহলে তো, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি সত্যিকার অর্থে ছাত্র কল্যাণ চাইতো তাহলে তো তারা পত্রিকায় বিজ্ঞাপণ দিয়ে ঢাবি’র বেতন ফি কমানোর দাবি তুলতেন, এভাবে বেসরকারি শিক্ষা-ব্যাবসায়ীর মতো ঢাবি’র বেশি তাই আমরাও বাড়াবো দাবী তুলতে পারতেন না।



২)ফি বাড়ানো না বাড়ানো
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উস্কানি দেয়ার অভিযোগ তুললেও বলছেন না যে তারা বেতন বাড়ান নি। তারা বলছেন “এ বিশ্ববিদ্যালয় অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় ফি বৃদ্ধি করে নি”। শিক্ষা ও গবেষেণার দিক দিয়ে অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তারা কোন তুলনা হাজির না করলেও বেতন-ফি বিষয়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তুলনা করতে ব্যাপক আগ্রহী। আজকে তারা অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তুলনা করছেন, কালকে তারা নর্থ-সাউথ, ইস্ট-ওয়েস্ট এর সাথে তুলনা করবেন। বেতন ফি বৃদ্ধি বিষয়ে তারা বিজ্ঞাপন দিয়ে ঘোর প্যাচ খেলার চেষ্টা করলেও বাস্তবতা হলো: “গত ২২ মে বেতন-ফি বাড়ানোর বিষয়টি ফিন্যান্স কমিটির ২৯৮ নম্বর সভায় উত্থাপিত হয় এবং সিন্ডিকেটের ৪৫৯ নম্বর সভায় তা অনুমোদিত হয়। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষ সম্মান শ্রেণীতে ভর্তির সময় বর্ধিত এই বেতন ও ফি দিতে হবে শিক্ষার্থীদের।“(প্রথম আলো, ২৯ জুলাই, ২০১০)

৩) শিক্ষক লাঞ্চনা প্রসঙ্গ
বিজ্ঞাপনটিতে প্রশাসন আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে উচ্ছৃংখলা প্রদর্শনের অভিযোগ তুললেও বাস্তবতা হলো গত সোমবার সকাল ১১ টায় ছাত্র-ছাত্রীরা যখন প্রক্টর অফিসের সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, সন্মানিত প্রক্টররাই সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের মানববন্ধনে বাধা দেন, এমনকি ব্যানার কেড়ে নেয়ার মতো অসভ্যতা করেন, তারপরও ছাত্রছাত্রীরা মানববন্ধন চালিয়ে যেতে থাকলে একপর্যায়ে প্রক্টর চন্দন কুমার পোদ্দার দুই শিক্ষার্থীকে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করেন। বিজ্ঞাপনের এসবের কোন উল্ল্যেখ না করে উল্টো বলা হয়েছে:

“যেসব সন্মানিত শিক্ষক লাঞ্চিত হয়েছেন তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটির এক সভায় একজন উচ্ছৃঙ্খল ছাত্রকে (সুজন কান্তি দে, ২য় বর্ষ, লোক প্রশাসন বিভাগ) ২ বছরের জন্য বহিস্কার করা হয় এবং ৫ জনকে তাদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের জন্য কেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা নেয়া গ্রহন করা হবে না সেজন্য ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হয়।”

অথচ “বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের লাঞ্চিত শিক্ষক আসাদুল হক বিডি নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আমাকে চিনতে পারে নি, তাদের সাথে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছে মাত্র’ ”।


তাহলে ব্যাপারটা কি দাড়ালো গণতান্ত্রিক দেশে ন্যয্য দাবীতে আন্দোলন করা কিংবা ন্যায্য বিষয়ে শিক্ষকের সাথে কথা কাটাকাটি করা কে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চরম উচ্ছৃঙ্খলতা বলে মনে করে, এমনকি কথিত লাঞ্চিত শিক্ষক সেটাকে লাঞ্চণা মনে না করলেও তাকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবার গুটি হিসেবে ব্যাবহ্রত হতে হয়!

৪)পর্ণ ব্যাবসায়ীর মতো ব্ল্যাকমেইল
বিজ্ঞাপনটিতে আন্দোলনকারী শিক্ষাথীদেরকে হুমকী দিয়ে বলা হয়েছে: নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করে উচ্ছৃঙ্খল মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের(ভিডিও চিত্র দ্বারা চিহ্ণিত) পিতামাতা অভিভাবকদের কাছে তাদের সন্তানদের সতর্ক করার জন্য চিঠি দেয়া হচ্ছে”। আহা! বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কি দারুণ ব্ল্যাকমেলের শিক্ষা দিচ্ছে শিক্ষার্থীদেরকে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ মানবন্ধনকে পন্ড করে দিয়ে মিছিল করার পরিস্থিতি তৈরী করলেন তারা, তারপর সে মিছিলের ভিডিও চিত্র ধারণ করে তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ব্ল্যকমেইল করছেন তারা—ঠিক যেমন পর্ণো ব্যাবসায়ীরা কারো দুর্বল মূহূর্তের সুযোগ নিয়ে বিছানায় যায় এবং তারপর সেই বিছানার দৃশ্য ভিডিও করে ভিকটিমকে বারবার ব্ল্যকমেল করে! কি মহান সুকৌশলী এই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ!

আমরা জানতে চাই, জনগণের পয়সা খরচ করে দুই দুটি দিন একাধিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপণ দিয়ে গোটা ছাত্র আন্দোলনের গায়ে কালি ছিটানোর ধৃষ্টতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পেল কোথা থেকে? আমরা বিজ্ঞাপন ছাপানোর প্রতিটি পাই-পয়সার হিসাব ও তার যৌক্তিকতার জবাবদিহিতা দাবি করছি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবাধ বাণিজ্য
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যে কোন লেনদেন ব্যাংক এর মাধ্যমে রশিদ সহকারে করার নিয়ম থাকলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছরই বেতন ও ভর্তি ফি’র বাইরে রশিদ বিহীন উপায়ে নানান খাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে গত জানুয়ারি সেশনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভাগভেদে এই টাকা আদায়ে ছিল রকমফের। কোনো বিভাগ এক হাজার, কোনো বিভাগ দুই হাজার, কোনো বিভাগ তিন হাজার আবার কোনো বিভাগ পাঁচ হাজার টাকা করে আদায় করেছে। অথচ এই অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিপরীতে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়নি কোনো ব্যাংক রসিদ।

চলতি বছর শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে সাড়ে তিন হাজার। এর মধ্যে ইতিহাস বিভাগে প্রথম বর্ষে ১১৯ জন, কম্পিউটার সায়েন্সেস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৬১ জন, আইন অনুষদে ১১৯ জন, ফলিত পদার্থবিদ্যা ইলেকট্রনিকস ও কমিউনিকেশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৪৮ জন শিক্ষার্থীর কাছে থেকে নেওয়া হয়েছে বাড়তি এক হাজার টাকা করে। সে হিসাবে শুধু এ চার বিভাগেই অতিরিক্ত আয় দাঁড়াচ্ছে তিন লাখ ৪৭ হাজার টাকা।

ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজে ৪৮ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাথাপিছু নেওয়া হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা করে। সে হিসাবে শুধু এ ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকার পরিমাণ দুই লাখ ৪০ হাজার। ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মোহাম্মদ রাশেদুন্নবী দাবি করেছিলেন, 'এই টাকা সেমিনার ফি, সিলেবাস প্রকাশসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খাতে নেওয়া হচ্ছে।’ তাহলে এ টাকার বিপরীতে ব্যাংক রসিদ কেন দেওয়া হচ্ছে না_জানতে চাইলে সেই সময় তিনি কোনো ব্যাখ্যা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগে প্রথম বর্ষে ১১৭ জন করে মোট ২৩৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। প্রত্যেকের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি তিন হাজার টাকা করে। ফলে এখানে অতিরিক্ত আয় হচ্ছে সাত লাখ ২০ হাজার টাকা। অর্থনীতি বিভাগে ভর্তীচ্ছু শতাধিক শিক্ষার্র্থীর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে দুই হাজার টাকা করে। লোকপ্রশাসন বিভাগে নেয় হয়েছে মোট ভর্তি ফির সঙ্গে আরো দুই হাজার টাকা বাড়তি।
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ৯৮ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকেও নেওয়া হয় বাড়তি দুই হাজার টাকা করে। ইতিহাস, ইংরেজি, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে নেওয়া হয় মাথাপিছু এক হাজার টাকা করে। নৃবিজ্ঞান বিভাগে নেওয়া হচ্ছে মাথাপিছু এক হাজার ৪৫০ টাকা।

এভাবে হিসাব করে দেখা গেছে, এরই মধ্যে রসিদ ছাড়াই বিভিন্ন বিভাগের আদায়ের পরিমাণ প্রায় ৯০ লাখ টাকা। এইসব ফি আদায়ের যেমন নেই স্বচ্ছতা, তেমনি ব্যয়ের ক্ষেত্রেও নেই জবাবদিহিতা!



দাবী মেনে নিন নইলে লাগাতার অবরোধ চলবেই:
আমরা চবি প্রশাসনের শিক্ষা নিয়ে ব্যাবসা করার এই মনোবৃত্তির তীব্র নিন্দা জানাই। চবি কর্তৃপক্ষ বেতন ফি বাড়ানোর ব্যাপারে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে প্রতিযোগীতার মনোভাব পোষণ করতে যত আগ্রহী, শিক্ষা-গবেষণা খাতে বাজেট বাড়ানোর ব্যাপারে তার সামন্য অংশও নয়। গত অর্থবছরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫ কোটি ১২ লাখ টাকার বাজেটে গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র আট লাখ টাকা আর টেলিফোন বিল বাবদ বরাদ্দ ছিল ৪০ লক্ষ টাকা! আহ! শিক্ষা-গবেষণার কি গুরুত্ব এই বিশ্ববিদ্যালয়ে! আমরা চবি প্রশাসনকে বেতন-ফি বাড়ানোর বাণিজ্যিক ধান্দা পরিত্যাগ করে শিক্ষা-গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর আহবান জানাচ্ছি। আপ্যায়ন খাত, টেলিফোন বিল ইত্যাদি নানান খাতের অপচয় বন্ধ করুণ, শিক্ষা-গবেষণার বাড়তি অর্থের জন্য শিক্ষার্থীদের মাথায় কাঠাল না ভেঙে আপানারা সরকারের কাছে দাবী জানান, সেই দাবী আদায়ের সংগ্রামে ছাত্রসমাজ আপনাদের সাথে থাকবে। কিন্তু তার আগে চবি’র ছাত্রসমাজের নিম্নোক্ত দাবীগুলো মেনে নিন নইলে গত ২৭ জুলাই মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া লাগাতার অবরোধ চলবেই:

১) অবিলম্বে সকল প্রকার বর্ধিত ফি প্রত্যাহার করতে হবে।
২) অনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক উপায়ে বহি:স্কৃত ছাত্র সুজন কান্তি দে’র বহি:স্কার আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।
৩) পাঁচজন শিক্ষার্থীকে দেয়া কারণ দর্শাও নোটিশ প্রত্যাহার করতে হবে এবং সেই সাথে ভিডিও ব্ল্যাকমেইল এবং চিঠিপত্র পাঠানো ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করার পায়তারা বন্ধ করতে হবে।

সূত্র:
১) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাঠানো তথ্য, লেখা ও ছবি
২) গত ২৭ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত নিউএজ, কালের কণ্ঠ, সমকাল, প্রথম আলো, বিডি নিউজ ,আমারদেশ অনলাইন এবং চট্টগ্রামের পত্রিকা দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ।



সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১০ রাত ১:৪৫
২৩টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×