আমরা আড্ডা দিচ্ছি, প্রতিদিন যেমন দেই। এবং সপ্তাহে কোন না কোন দিন নতুন কিছু মানুষ আসেই। এবঙ বরাবরের মতো তারা এসেই তাদের আড্ডার ঝুড়ি খুলে দেয়। একটা মানুষ এসেই কি করে কথা শুরো করে দেয় ,আমি প্রথম প্রথম খুব বিস্মিত হতাম।এখন আর হইনা। একটু দেরি হলেও বুঝতে পারলাম। এখানে যেহেতু প্রায় সবাই কথার উপর কথা বলতে পারে তাই তাদের বন্ধু-বান্ধবরা কথার জাহাজ নিয়ে আসবে এটাইতো স্বাভাবিক।এমন কি কথার ট্রেন, ঠেলা গাড়ি এমন কি কথার প্লেন নিয়েও আসতে পারেন। আসাই উচিৎ এবং তাই হয়।
আমাদের এই আড্ডার সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক একজন এ্যাডভোকেট। কেবল নির্বাচন থাকলেই তিনি কোর্টের দিকে যান(শোনা কথা)। শহরের বড় ব্যবসায়িদের তালিকায় তার নাম আছে। এক কালে ছাত্রলীগ করতে। এবং কয়েক বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।
এর মাঝেও আশার কথা হলো তিনি আবার সাস্কৃতিক কাজ কর্মে পৃষ্ঠপোষকতা করেন এবং অনুরাগীও বলা যায়।
আরো এমন অনেক গুন আছে। তবে তার একটা ইসপেশাল(বিষেশ) গুন নিয়েই কথা বলবো।
আড্ডা শেষে হোটেলে গেলাম চা পর্ব অংশগ্রহন করতে। শুধু কি চা-ই খাওয়া যায়? তাও না হয় খাওয়া যেত কিন্তু আজ যিনি আমাদের নিয়ে যাচ্ছেন তিনি যদি আমাদের কেবল চা খেতে দেন তবে ওনার প্রেসটিজ থাকে? আমরাও মেনে নিলাম। অল্প কিছু খেলে যদি একজনে প্রেসটিজ বাঁচে, তবে খাওয়াই ভাল।
নান রুটি, সবজি, এবং যে যা খেতে চায় সবই হলো। এর পরে চা পর্ব। আমরা মোট আটজন। চা এর অর্ডার দেয়া হলো সাতটি একটি চিনি ছাড়া,সাথে একটি খালি কাপ। বিপত্তিটার শুরো এখান থেকেই। আমাদের এ্যাড: সাহেব।আগে প্রচুর চা খেতেন কিন্তু বিদেশি ডাক্তার তাকে চা খেতে নিষেধ করেছেন, তাই অভ্যাস বসত অল্প একটু চিনি ছাড়া চা কাপে ঢেলে খাবেন। এই হচ্ছে পরিকল্পনা। সবই ঠিক ভাবে এগুচ্ছে। সবাই চা খাচ্ছে, তিনিও এক্সটা কাপে অল্প একটু চা ঢেলে খাচ্ছেন।
হঠাৎ আমার মনে হলো। হোটেলে যতবারই এক্সট্রা চায়ের কাপ চাওয়া হয়,সেই কাপটির সাথে কোন পিরিচ দেয়া হয়না। কারনটা কি?
যেই মনে আসা সেই প্রশ্নটা আড্ডার উদ্দেশ্যে ছুড়ে দিলাম। ভুলটা হল এখানেই।
এ্যাড. সাহেবের হাতেই তখন সেই কাপটি। আর যায় কোথায়, ডাকলেন এদিকে এসো। এই কাপের সাথে পিরিচ দাওনি কেন?
হোটেলের ছেলেটি কাচুমাচু করে বলল : সবাইরে এভাবেই দেই।
সবাইরে এভাবে দাও কেন?
সব হোটেলেইতো এভাবে দেয়।
তার পর... বেয়াদব, মুখের উপর কথা বলিস,তুই জানস আমি কে?তুই কি ভেবেছিস আমি টাকা বাঁচানের জন্য ভাগ করে খাই। ফাজিল। ইত্যাদি ইত্যাদি... আবার বলে সবারে এমন করেই দেই।ডাক তোর ম্যানেজাররে।
ম্যানেজার ভরাট কন্ঠের উত্তেজনা পূর্ন গালাগালি সবই শুনছিলেন। কিন্তু আসার সাহস করতে পারেনি(বোধ হয়)। এবার তাকে আসতেই হলো।
এসেই বলল, এই স্যারকে একটা পিরিচ এনে দে। আর কখনো ভুল করবিনা। স্যারেরে পিরিচ দিবি।
ব্যাপারটা নিয়ে যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে আমি কল্পনাও করতে পারিনাই। কিছু ক্ষন হতভম্ব হয়ে ছিলাম। কিন্তু এই " স্যারেরে পিরিচ দিবি" শুনে কেন যেন আবার হাসি চলে আসলো।এই হাসিটা বোধ হয় তার রাগ আরো বেরে গেল।
তিনি এবার ম্যানেজাকে কতক্ষন ধমকিয়ে যেতে থাকলেন।এই হোটেলের মালিক কে? ডাক তারে।
শেষ পর্যন্ত ওনাকে বুঝিয়ে শান্ত করা গেছে এবং বেরিয়ে তার কারে করে বাড়ি চলে গেলেন।
আমি ভাবলাম যাক বেঁচে গেলাম। কিন্তু কপাল খারাপ। এবার সবাই মিলে আমাকে ঝাড়লেন। কথা বলার তো একটা যায়গা লাগে। সব কথা কি সব খালে বলতে হয়। দেখলেন তো পরিস্থিতিটা????
আমিও কাচুমাচু করে বললাম। ভুল হয়ে গেছে। বড় ভুল হয়েগেছে।
এই হোটেলেই আমি নিয়মিত নাস্তা করতাম। কিন্তু এই গঠনার পরে কিচু দিন এই হোটেলে আর যাইনি।
https://chourongi.wordpress.com/