somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ২৬

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৮:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কচ ও দেবযানীর পরস্পর অভিশাপঃ
কিছুদিন পর দেবযানী কচকে দেবপূজার জন্য ফুল আনতে বললেন। ফুল আনতে গিয়ে কচ পুনরায় দৈত্যদের হাতে পড়লেন।


এবার তাকে টুকরো টুকরো করে ঘৃতে ভাজা হল। তারা বিচার করল অন্য কেউ এ মাংস ভক্ষণ করলে তার নিস্তার নেই। কারণ শুক্রের মন্ত্রে কচ বাঁচবে কিন্তু ভক্ষকের প্রাণটি যাবে। শেষ পর্যন্ত সে মাংস সুরাসহ শুক্রকেই খাইয়ে দিল।

এদিকে দেবযানী পুনরায় পিতার কাছে কচের পুষ্প আনতে গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার কথা জানালেন। তিনি আশঙ্কা করলেন দৈত্যরা পুনরায় কচকে হত্যা করেছে।

শুক্রাচার্য কন্যাকে বোঝালেন মৃত জনের জন্য বিলাপ কর না। ব্রহ্মা, ইন্দ্র, চন্দ্র, সূর্য-এদের মৃত্যু হলে তারাও আর বাঁচবে না। দেবযানী বৃথাই মৃত কচের জন্য ক্রন্দন করছেন।
কিন্তু দেবযানী কচকে না দেখতে পেলে মৃত্যুবরণ করবেন জানালেন। কন্যার কথায় শুক্র চিন্তিত হলেন।


ধ্যানে বসে দেখলেন কচ তারই উদরে। তিনি কচকে কি ভাবে তার উদরে গেলেন জানতে চাইলেন। কচ সকল কথা জানালেন। শুক্র চিন্তিত হলেন। কারণ কচকে বাঁচালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আবার কচকে না বাঁচালে তার দ্বারা ব্রাহ্মণ হত্যা হয়।

শেষে শুক্র কচকে বললেন –বৃহস্পতি পুত্র, তুমি সিদ্ধিলাভ করেছ, দেবযানী তোমাকে স্নেহ করে। যদি তুমি কচরূপী ইন্দ্র না হও তবে আমার সঞ্জীবনী বিদ্যা লাভ কর। বৎস, তুমি পুত্ররূপে আমার উদর থেকে নিষ্ক্রান্ত হয়ে আমাকে বাঁচিয়ে দিও, গুরুর নিকট বিদ্যা লাভ করে তোমার যেন ধর্মবুদ্ধি হয়।

তিনি কচকে সঞ্জীবনী মন্ত্র শিক্ষা দিচ্ছেন। কারণ কচ বাঁচলে তার মৃত্যু হবে। কচ পরে সেই মন্ত্রবলে গুরুকে বাঁচাবেন। এভাবে শুক্রের গর্ভে বসে কচ মন্ত্র অধ্যয়ন করলেন। শেষে শুক্র নিজের উদর চিরে শিষ্যকে মন্ত্রের বলে বাঁচালেন এবং নিজ়ে মৃত্যুবরণ করলেন। পরে কচ মন্ত্রের সাহায্যে গুরুকে প্রাণদান করলেন।


প্রাণ পেয়ে শুক্র সুরার উপর রেগে গিয়ে শাপ দিলেন –ব্রাহ্মণ হয়ে যে সুরা পান বা সুরার ঘ্রাণ নেবে সে অধার্মিক ও ব্রহ্মঘাতী হবে। তার ব্রহ্মতেজ নষ্ট হবে। ইহলোকে সে অপূজিত হবে এবং মরলে নরকে যাবে।
পরে শুক্র দৈত্যদের ডেকে বললেন তার শিষ্যকে কেউ হিংসা করবে না-এ বাক্য না শুনলে তার অশেষ দুঃখ আছে।


কচকে তিনি আশির্বাদ করলেন নির্ভয়ে যেখানে খুশি বিচরণ করতে পারবেন। এভাবে শুক্রের কাছে কচ সকল বিদ্যা অধ্যয়ন করলেন। শেষে দেবযানীর কাছে এসে প্রার্থনা করলেন নিজের দেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে।


দেবযানী বিষণ্ণ হলেন। কচকে ডেকে তাকে বিবাহ করতে অনুরোধ করলেন। কচ একথায় বিস্মিত হলেন। কারণ গুরুকন্যা তার কাছে ভগিনীর সমান।

দেবযানী বললেন –তোমাকে আমার ভাল লেগেছে। তাছাড়া আমার জন্যই তুমি বার বার মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এসেছো। এখন আমায় এভাবে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত নয়।


কচ চিন্তিত হলেন। তিনি দেবযানীকে বোঝাতে চাইলেন।
বললেন –দেবযানী, প্রসন্ন হও, তুমি আমার কাছে গুরুরও অধিক। তোমার যেখানে উৎপত্তি, শুক্রাচার্যের সেই দেহের মধ্যে আমিও বাস করেছি। ধর্মত তুমি আমার ভগিনী। অতএব আর ওরূপ কথা বলো না। তোমাদের গৃহে আমি সুখে বাস করেছি, এখন যাবার অনুমতি দাও, আশীর্বাদ করো, সাবধানে আমার গুরুদেবের সেবা করো।

একথা শুনে দেবযানী ক্রোধিত হলেন। তিনি অভিশাপ দিলেন, নারী হয়ে তিনি বারবার অনুরোধ করলেন কচ তাও কথা রাখলেন না। তাই তার পিতার কাছ থেকে কচ যত বিদ্যা শিখেছেন সব নিষ্ফল হবে।
দেবযানীর বাক্যে কচ ব্যাথিত হলেন। বললেন, বিনা অপরাধে তাকে দেবযানী এত বড় অভিশাপ দিলেন। কামে উত্তেজিত হয়ে তিনি কচকে অভিশাপ দিলেন। তাই তাকেও শাপ নিতে হবে।



কচ দেবযানীকে অভিশাপ দিলেন ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ শুক্রের কন্যা হয়ে তাকে ক্ষত্রিয়ের স্ত্রী হতে হবে। দেবযানীর শাপও তার লাগবে। কচ প্রত্যক্ষ ভাবে কোন বিদ্যা প্রয়োগ করতে পারবেন না। তবে তার শিষ্যরা ফলদায়ী হবেন।

এই বলে কচ ইন্দ্রের নগরে উপস্থিত হলেন। কচকে দেখে দেবতারা আনন্দিত হলেন। তার কাছ থেকে দেবযানীর সকল কথা শুনলেন।
নিশঙ্ক হয়ে দেবতারা আবার যুদ্ধে উপনীত হলেন। দেব-দানবের সে যুদ্ধের বর্ণনা অবর্ণনীয়।
..........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ২৫
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৮:০৯
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×