somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

দীপু সিদ্দিক
আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশে। সাগর মহাসাগর পেরিয়ে অনেক দুরে এসে শত জটিল গবেষণা করলেও জন্মস্থানের সাথে নিয়তই নাড়ির টান অনুভব করে যাই। আর বাংলাভাষা যে মস্তিস্কের অনেকটা স্থান জুড়ে আছে, তা সহজেই অনুমেয়।

মানুষের প্রথম ঘর: পাহাড়ের গুহা (পর্ব ০৫)

১৮ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মজারব্যাপার হল সর্বপ্রাচীনকালের সেই ১০ লক্ষ বছর আগের উদাহরণ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্তও মানুষের সাথে পাহাড়ের গুহার সম্পর্ক বেশ গভীর। আমাদের কাছে বেশ তথ্যপ্রামাণ আছে যে প্রাগৈতিহাসিক যুগে যখন মানুষের ঘরবাড়ি ছিল না, যখন মানুষের কাছে ধাতু বলে কোন পদার্থ ছিল না, যখন পরিবহণের জন্য কোন চাকার ধারণা ছিল না, কেবল সেই সময়েই মানুষ পাহাড়ের গুহায় বসবাস করত না, বরং বর্তমান সময়ে পৃথিবীজুড়ে মানুষের জয় জয়কার সময়েও মানুষ পাহাড়ের গুহায় বসবাস করছে। বিশেষত যুদ্ধের সময়ে অথবা বিভিন্ন বিপদকালীন সময়ে মানুষ আজও পাহাড়ের গুহায় বসবাস করছে। এসব উদাহরণের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় কোন বিশেষ গোষ্ঠীকে জনবিচ্ছিন্ন করে দিলে বা জীবনের আশংকায় পড়লে মানুষেরা পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেয়। পৃথিবীব্যাপি প্রচুর উদাহরণের মধ্যে কিছু উদাহরণ নিচে দেখাচ্ছি:

রোমান সাম্রাজ্যের চরম মারামারি কাটাকাটির সময়টাতে অনেক মানুষ বর্তমান ফিলিস্তিনের ‘কুমরান’ এলাকার নিকটবর্তী অঞ্চলে মৃতসাগরের (ডেড সি) তীর ধরের পড়ে থাকা ১১টি গুহায় পালিয়ে বেচেছিল। ১৯৪০ থেকে ১৯৫০ সালের সময়ের দিকে এগুলো আবিষ্কার হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ২০০০ বছর এগুলো প্রায় কোনরূপ পরিবর্তন ছাড়াই সংরক্ষিত অবস্থায় পড়েছিল।

বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের আলাবাম্বা’র দে’সটো গুহামালার কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই গুহাগুলোকে আমেরিকার আদিবাসী রেডইন্ডিয়ানরা সমাধীগৃহ হিসেবে ব্যাবহার করে আসছিল। ১৯২০ সালের গোলযোগের সময়টাতে এগুলোকে গুপ্তঘাটি হিসেবে ব্যাবহার করা হয়। একইভাবে সেইন্টলুইসের গুহাগুলোও ছিল পাতাল যোগাযোগের জন্য বহুল ব্যবহৃত গুপ্তস্থান। আবার ১০০০ থেকে ১৩০০ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকার ‘পুয়েবলো’ মানবগোষ্ঠির কথা উল্লেখ করা যায়। পুয়েবলো মানুষেরা ওখানকার খাড়া পাহাড়গুলোর নিচে গর্ত খুড়ে একটি গ্রাম তৈরি করে দীর্ঘদিন বসবাস করে আসছিল।

১৯৭০ এর দিকে ফিলিপাইনের কোতাবাতো’র নিকটে অনেকগুলো পাহাড়ের গুহায় এই এলাকার ‘তাসাদায়’ সম্প্রদায়ের মানুষেরা বসতি স্থাপন করেছিল।

বর্তমানে স্পেনের গ্রানাডা’র নিকটবর্তী ‘সাক্রোমন্তে’ গুহামালায় এই অঞ্চলের ‘গিতানো’ নামক সম্প্রদায়ের প্রায় ৩০০০ মানুষ বসবাস করছে। এই গুহামালার মধ্যে এক কক্ষের ছোট ছোট স্থান থেকে শুরু করে বড় বড় গুহা মিলিয়ে প্রায় ২০০টির মত কক্ষে ‘গিতানো’ মানুষেরা তাদের গির্জা, বিদ্যালয়, গুদামঘর প্রভৃতি সহকারে বসবাস করছে।

মিশৌরি, সিসিলি, কাপাদকিয়া এবং স্পেনের অনেক পরিবারকে দেখা যায় তারা পাহাড়ের গুহার ভেতরে আধুনিক বাড়ি তৈরি করছে অথবা পুরুনো আবাসকে নতুন করে তৈরি করছে। এক্ষেত্রে তুরস্কের ‘কাপাদকিয়া’র কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রাজধানী আঙ্কারা থেকে নিকটবর্তী ও তুরস্কের মধ্যবর্তী অঞ্চল কাপাদকিয়া’র পর্যটনের সৌন্দর্য্য হিসেবে উচু উচু সূঁচালো পাহাড়গুলো খুবই বিখ্যাত। তবে এই পাহাড়গুলোকে ভেতরে ভেতরে কেটে শত শত বছর ধরে মানুষেরা বসবাস করে আসছে। এক একটা পাহাড়ের মধ্যে দোতলা বা তিনতলা পর্যন্ত ভবন করা হয়েছে। দূর থেকে এগুলোকে ছোট ছোট পাখির বাসার মত মনে হলেও বাস্তবিক অর্থে এগুলো সমতলে তৈরি করা চারতলা বা পাঁচতলা ভবন থেকেও বড় ও প্রশস্ত এবং এগুলোর প্রত্যেকটিতেই আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ঘুম, গোসল, পয়:প্রণালি ও বৈঠকখানা রয়েছে। কাপাদকিয়ার এই ঘরগুলো উত্তরাধিকার মালিকানাও স্বীকৃত।

বর্তমান চীনে প্রায় ৩ কোটি (৩০ মিলিয়ন) মানুষ পাহাড়ের গুহায় বসবাস করছে। মজার ব্যাপার হলো চীনের এই ৩ কোটি মানুষ উপরে বর্ণিত মানুষদের মত কষ্ট, জীবনের ভয় বা সৌন্দর্য্যের জন্য বসবাস করছে না। এই গুহাগুলোতে মানুষ বসবাস করছে এই জন্য যে এগুলো শীতের সময়ে বেশ গরম এবং গরমের সময়ে খুব শীতল থাকে। চীনের অনেক বিত্তশালী মানুষের কাছেই রাজধানীর সর্বাধুনিক সুবিধাসম্বলিত সুউচ্চ ভবনের চেয়ে ওসব পাহাড়ের গুহায় থাকাটা আরো বেশি আভিজাত্যের বলে বিবেচিত। (চলবে)।

প্রথম পর্বের লিংক:
Click This Link
দ্বিতীয় পর্বের লিংক:
Click This Link
তৃতীয় পর্বের লিংক:
Click This Link
চতুর্থ পর্বের লিংক:
Click This Link
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×