somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

দীপু সিদ্দিক
আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা বাংলাদেশে। সাগর মহাসাগর পেরিয়ে অনেক দুরে এসে শত জটিল গবেষণা করলেও জন্মস্থানের সাথে নিয়তই নাড়ির টান অনুভব করে যাই। আর বাংলাভাষা যে মস্তিস্কের অনেকটা স্থান জুড়ে আছে, তা সহজেই অনুমেয়।

সাংবাদিক লোকটির অতি ছোট গল্প

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সকালের রোদটা বেড়ে ওঠার সাথে সাথে চিটচিটে আবহাওয়াটা যেন আরো অসহ্য মনে হতে থাকে। ঘন্টাখানেক আগের বৃষ্টিটা চারদিকের পরিবেশটা সতেজ করার পরিবর্তে আরো যেন নোংরা আর দুর্গন্ধময় করে তোলে। চারদিকে কাদার ছড়াছড়ি। অতি সাবধানে পা ফেললেও রেহাই পাওয়ার উপায় নাই। ঢাকা শহরের কর্দমাক্ত রাস্তায় ছোট ছোট গাড়ি, সিএনজি স্কুটার আর রিক্সার ছড়ানো কাদা থেকে কে’ই বা আর রেহাই পায়।

মীরপুর দুই নম্বর থেকে শ্যামলী পর্যন্ত আসতে আসতে নাড়িভুড়ি প্রচন্ড গুলিয়ে আসতে চায়। মনে হয় বমিটা আর আটকাতে পারব না। যারা নিয়মিত ৯ নম্বর বাসে চড়েন তারা বেশ জানেন বাসের মধ্যে কি পরিবেশ হতে পারে। মুরগীর খাচার মত করে বসানো ছোট ছোট আসন। প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চারাই ঠিকমত বসতে পারে না। বড়দের যারা বসেনও, শরীর, হাত-পা বাঁকা করে, ভাঁজ করে অতি কষ্ট করে বসেন। নিয়মিত বসলে হাটুর প্যাটেলায় স্থায়ী ক্ষয় হওয়া খুবই স্বাভাবিক। যাইহোক, ক্লান্ত শরীর নিয়ে ভ্যাবসা গন্ধওয়ালা বাসটার চিটচিটে, তৈলাক্ত আর অতি পুরোনো একটি আসনে অনেকটা তিন ভাঁজ হয়ে বসে শামলী পর্যন্ত আসতেই আমার অবস্থা সারা। সাথে সাথে চারদিকের গন্ধ, রাস্তার দুইপাশে ফেলে রাখা বৃষ্টিতে ভেঁজা পুরোনো ময়লা থেকে আসা উৎকট গন্ধ আর আবদ্ধ বাসের প্রচন্ড ঝাকিতে আমি যেন জানালাটায় মুখ বের করে বমি করেই ফেলি অবস্থা।

ঠিক তখনই দেখি লোকটিকে। আমার পাশের আসনটি খালি হতেই কয়েকজনকে ঠেলে ঠুঁসে ভদ্রলোক আমার পাশে এসে বসে। আশেপাশের কয়েকজন জন কটাক্ষ করে তাকায়। একজন আবার রুক্ষ স্বরে কয়েক কথাও শুনিয়ে দেয়, “আমাদেরও তো বসতে ইচ্ছা করে মিয়া। ভীড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করাতো ভালো কিছু না!”

ভদ্রলোককে তেমন গায়ে মাখায় না। আমার পাশে বসেই আমার দিকে স্মীত হাসে। প্রথমে আমিও মনে মনে কিছুটা বিরক্ত হই। কিন্তু পরক্ষণেই রাগ ভুলে যাই। মার্জিত চেহার সুপুরুষ লোকটা। লোকটার গায়ের সুন্দর সুগন্ধি আমার আশেপাশের উটকো গন্ধটা হাল্কা করে দেয়। হাঠাৎ’ই মনে হতে থাকে জানালা দিয়ে শীতল শুদ্ধ বাতাস পাচ্ছি। ধীরে ধীরে আমার বমি ভাবটা কেটে যায়।

“দেশের যে অবস্থাটা দাড়িয়েছে, তাতে করে মানুষের সাথে রাগারাগি করার কোন মানে হয় না, কি বলেন?” ভদ্রলোক আমাকে মোলায়েম সুরে বলে।

ভদ্রলোকের কথায় যুক্তি আছে। জবাবে বলি, “ঠিকই বলেছেন জনাব। চারদিকে যে সমস্যা, কোথা থেকে কে যে কি ঘটায়, কে’ই বা বলতে পারে।“

“দেশটাতো ইতোমধ্যে রসাতলে গেছেই। তার উপরে আমেরিকা, ইন্ডিয়া, চীনের মত ড্রাগনের দল যে ভাবে আমাদের পেছনে লেগেছে, তাতে তো মনে হয় দেশ ধ্বংস হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।“ লোকটির চেহারায় বিরক্তি আর রাগ।

আমেরিকান, ইন্ডিয়ান, চীনাদের দোষ দিয়ে, মন খারাপ করার কি লাভ, জনাব? “আমরা নিজেরাই কি ভাল থাকতে চাই?” আমি ভদ্রলোককে শান্তনা দেই।

“তাও ঠিক বলেছেন। রাজনীতিবিদরাই সব হারামীর দল। আমাদের কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। দেশটাকে বেচে দিচ্ছে। আর ওদের পোষা কুলাঙ্গারগুলোকে দিয়ে দেশে নানান রকমের অশান্তি করছে।“ ভদ্রলোক গজ গজ করে বলতে থাকে।

“রাজনীতিবিদদের কথা বলি নি জনাব। আমরা সাধারণ মানুষেরাই কি আর আগের মত আছি? পরস্পরের প্রতি আগের মত বিশ্বাস আর আস্থা নিয়ে মেলামেশা করি কি আমরা? খারাপ কাজের কোন সুযোগ কিংবা অন্যকে বঞ্চিত করার কোন সুযোগটা কে’ইবা হাতছাড়া করছে এই দেশের আনাচে কানাচে? হয়ত এই কারণে চারপাশের মানুষদের সাথে থেকেও সবাই একরকম অশান্তির মধ্য আছি।“ আমি লোকটাকে অনেকটা দরদ দেখিয়েই বলি।

লোকটি অবশ্য এসবের কিছুই মানতে চায় না। আমাকে অনেক চেষ্টা নিয়েই আবার বোঝাতে লেগে যায়, “তা ঠিক বলেছেন, তবে রাজনীতিবিদরা আজকে … … ।"

কন্ট্রাক্টর ছেলেটির বয়স ১৮-২০ বছর হবে। চোখ দুটো অসম্ভব রকমের ফোঁলা। উস্কোসুস্কো চুল আর ফোলা ফোলা চেহারা। যে কেউই বলতে পারবে কাল রাতে ছেলেটির ভালো ঘুম হয় নি। কোথায় ঘুমায় ছেলেটা? এই বাসের পাটাতনেই ঘুমায় হয়তো। বাসের পেছন দিকের তাকে ঠাসাঠাসি করে রাখা নোংরা লেপ তোশকগুলো দেখে তাই মনে হয়।

সবার থেকে ভাড়া তুলতে তুলতে আমাদের সারিতে এসে দাড়ায় ছেলেটি। ভাড়া চায়। আমার পাশের ভদ্রলোক ভাড়া দেয় না। ছেলেটার দিকে অনেকটা না তাকিয়েই বলে, “আমি সাংবাদিক”।

কন্ট্রাক্টর ছেলেটি ভদ্রলোকের কথাটা সম্ভবত খেয়াল করেনা। ব্যাস্তভাবে ভীড়ের মধ্যে পাশের সারির থেকে ভাড়া তুলে আবার আমাদের দিকে ফেরে। আমার পাশের ভদ্রলোকের থেকে ভাড়া চায়। ভদ্রলোক যেন কিছুটা বিরক্ত হয়েই বলে, “বললাম না, আমি সাংবাদিক।“
কন্ট্রাক্টর ছেলেটি ক্ষনিক ব্যাস্ততা ভুলে যায়। ভাল করে তাকায় লোকটার দিকে। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে লোকটির দিকে চেয়ে থাকে। তারপর ব্যাস্তভাবে ভাড়া তুলতে সামনের দিকে চলে যায়।

এই সাথে বেশ কৌতক ও কৌতহল বোধ করি আমি। আগ্রহ নিয়ে জানতে চাই, “জনাব কোন পত্রিকায় কাজ করেন?”

“দৈনিক হাঠাৎ আলোর ছটা”

“খুবই নাম করা সংবাদপত্র আপনাদের।"

“তা ঠিকই বলেছেন। তবে বেশি ভালো যাচ্ছে না ইদানিং। দেশের যে অবস্থা। রাজনীতিবিদরা … … ।" লোকটি ক্ষণে ক্ষণে দেশের প্রধান প্রধান সমস্যাগুলো ও সমাধানের পথগুলো সবিস্তারে বলতে থাকে আমাকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন পারাবার: শঠতা ও প্রতারণার উর্বর ভূমি

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪০


অনার্সের শেষ আর মাস্টার্সের শুরু। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পার্শ্বে বাচ্চাদের যে স্কুলটা আছে (রোজ বাড কিন্ডারগার্টেন), সেখানে মাত্র যোগদান করেছি। ইংরেজি-ধর্ম ক্লাশ করাই। কয়েকদিনে বেশ পরিচিতি এসে গেল আমার।

স্কুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×