কবিসত্তার নভোনীল দীর্ঘশ্বাস
সৈ য় দা আ ই রি ন জা মা ন
আকাশলীনা
আকাশলীনা কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ‘কবিতা’ পত্রিকায় আশ্বিন ১৩৪৪ সংখ্যায়। এরপর ‘সাতটি তারার তিমির’ কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা হিসেবে প্রকাশিত হয় অগ্রহায়ণ ১৩৫৫ বঙ্গাব্দে। কাব্যগ্রন্থটির নামকরণ থেকেই বোঝা যায়, এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভ‚মিতে রচিত। চারটি ব্লকে কে আকাশলীনা কবিতাটির অবয়ব বিন্যাস কবিতার পংক্তি সংখ্যা-১৬। আকাশলীনা নামে কবিতাটির নামকরণ করা হলেও প্রথম পংক্তিতে কবি বা কথক ‘সুরঞ্জনা’ নামে একজনকে সম্বোধন করেছেন এবং তাকে যথাস্থানে গিয়ে নির্দিষ্ট একজন যুবকের সঙ্গে কথা বলতে বারণ করেছেন। অসংখ্য তারকা শোভিত অনিন্দ্য সুন্দর রাতে কথক সুরঞ্জনাকে তার কাছে ফিরে আসতে অনুরোধ জানিয়েছেন। সুরঞ্জনা অন্য যুবকের প্রতি অভিনিবিষ্ট হয়ে পড়েছে। মাঠে, ঢেউয়ে, হৃদয়ে কোথাও অর্থাৎ হৃদয়ের আঙ্গিনায় কথক আর তাকে খুঁজে পাচ্ছেন না। নাম না জানা যুবকের সঙ্গে কবির মনোলীনা ক্রমাগত দূর থেকে দূরে সরে গেছে। তৃতীয় ব্লকে কথক জানতে চেয়েছেন ঐ যুবকের সঙ্গে তার কী কথা! কবি প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন সুরঞ্জনাকে, নিজে হয়েছেন আশ্চর্য। কথকের মনে হয়েছে- সুরঞ্জনা যেন মাটিতে লীন আর তার প্রেমিক মৃত্তিকা উৎপন্ন ঘাস। অন্য যুবকের সঙ্গে সুরঞ্জনার এই একান্ততায় কবি বেদনা-বিধুর হয়ে পড়েছেন। তাই যন্ত্রণাক্লিষ্টবোধে জর্জরিত হয়ে তিনি আহাজারি করেন:
সুরঞ্জনা
তোমার হৃদয় আজ ঘাসঃ
বাতাসের ওপারে বাতাস
আকাশের ওপারে আকাশ।
শেষ পর্যন্ত যুবকের সঙ্গে একাকার হয়ে সুরঞ্জনার হৃদয় ঘাসে পরিণত হয়েছে এবং বাতাস ও আকাশের অন্তহীন পথে পাখা মেলেছে। ইতঃপূর্বে আমরা বনলতা সেন নামক অনন্যসাধারণ এক নারীকে কথক বা কবির সমগ্র সত্তার সঙ্গে লীন হয়ে থাকতে দেখেছি।
এই কবিতার পরিপ্রেক্ষিত সম্পর্কে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অশ্বশক্তির অধিনায়ক এডলফ হিটলার এবং তার প্রেমিকা আঙেলিকা রাউবালের কথা মনে পড়ে যায়। মেয়েটিকে হিটলার সত্যিই ভালবেসেছিলেন, তবে তার প্রতি ছিল নানা বিধি-নিষেধ। হিটলারের অমতে মেয়েটি করো সঙ্গে কথা বলতে পারতো না এবং কোথাও যেতে পারতো না। রাউবাল ভিয়েনার একজন আর্টিস্টকে ভালবাসত এবং শেষ পর্যন্ত সে আত্মহত্যা করে। হিটলার যখন নুরেমবার্গ শহর ছেড়ে রায়রট শহরের দিকে যাচ্ছিলেন তখন তিনি মৃত্যু সংবাদ পান। হয়তো মেয়েটির মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব কাজ করছিল। দ্বন্দ্বটি হতে পারে ‘আকর্ষণ-আকর্ষণ-দ্বন্দ্ব’, নয়তো ‘আকর্ষণ-বিকর্ষণ দ্বন্দ্ব’। ‘আকর্ষণ-আকর্ষণ-দ্বন্দ্বে সে সিদ্ধন্তহীনতায় ভুগছে- ভিয়েনার ঐ যুবকের কাছে ফিরে যাবে, না হিটলারের কাছে থেকে যাবে। ‘আকর্ষণ-বিকর্ষণ-দ্বন্দ্ব সে যুবকের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেছে কিন্তু হিটলারের ভয়ে তা প্রকাশ করতে পারেনি। কারণ হিটলারের নৃশংসতা নিশ্চয় রাউবালের অজানা ছিল না। আত্মহত্যার পর মেয়েটির স্মৃতি হিটলারকে দীর্ঘকাল আচ্ছন্ন করে রেখেছিল এবং তিনি অনেকটা বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১২:২৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





