অরণ্যে পাখির চোখে-১ : পাহাড়ের পথে
২৩শে ফেব্র“য়ারি ২০১০। রাত আটটার সময় শেষ রিপোর্টটি লিখছিলাম। প্রধান সম্পাদক রিপোর্টিং সেকশন দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হঠাৎ জানতে চাইলেন রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ির পাহাড়ী-বাঙালী সহিংসতার সংবাদ সংগ্রহে যাওয়ার সাহস কার আছে। ঝোকের বসেই বলে ওঠলাম, আমি যেতে চাই। তবে বিরোধী দলীয় বিটের দায়িত্বে থাকায় প্রথমে তিনি আমাকে পাঠাতে রাজী হলেন না। খোঁজ পড়লো খাগড়াছড়ির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কাজী সোহাগের। তবে ছুটিতে গ্রামের বাড়ি থাকায় রাত নয়টার সময় চিফ রিপোর্টার আমাকেই বেরিয়ে পড়ার নির্দেশ দিলেন। হাতে তিন হাজার টাকা ধরিয়ে দিলে বললেন, নিজের থেকে খরচ করে পরে বিল জমা দিতে। এদিকে পরদিন খাগড়াছড়িতে হরতাল তাই গাড়ি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই ীন। মফস্বল সেকশনে কর্মরত শহীদুল আলম ইমরান আমাকে কানে কানে বললেন, জীবনের ভয়ে খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ইব্রাহিম শেখ এখন ঢাকায় বসেই সংবাদ দিচ্ছেন। শুনেই আতকে ওঠলাম। ইমরানের ফোন পেয়ে ইব্রাহীম খাগড়াছড়ি যেতে দোনামোনা শুরু করলেন। শেষে এলাকায় ফিরতে রাজী হলেন। হাতে মাত্র একঘন্টা সময়। আমি বাসায় ফেরার পথেই ইব্রাহিম জানালেন, রাতের গাড়ির কোন টিকেট পাওয়া যায়নি। ফলে চট্টগ্রাম হয়েই সেখানে যেতে হবে।
অফিস থেকে বেরিয়ে দেশটিভির সিনিয়র রিপোর্টার আতিক রহমান পুর্নিয়াকে ফোন করলাম এমনিতেই। আমাকে অবাক করে পুর্ণিয়া বললেন, কিছুনের মধ্যে তিনিও খাগড়াছড়ি রওনা হচ্ছেন। আমি যাচ্ছি শুনেই নিজের গাড়িতে আমন্ত্রন জানালেন। যথারীতি রাতে দেশটিভি’র গাড়িতে করে খাগড়াছড়ি রওনা হলাম। সঙ্গে দেশটিভির ক্যামেরাম্যান সালাম, প্রডিউসার নাসিব ও একটি মারমা তরুন। গভীর রাতে কুমিল্লা চৌরাস্তার পাশে নাসিবের পছন্দের হোটেলে (দেখতে আল ছালাদিয়া টাইপ তবে খাবারের মান ভাল) মরিচভর্তাসহ নানা সব্জি দিয়ে রাতের খাবার সেরে নিলাম। নাসিব চাইছে তাকে রাঙ্গুনিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাসায় রেখেই আমরা যেন রাঙ্গামাটির পথে খাগড়াছড়ি যাই। তবে আমাদের তিনজনের মতে বারইয়ারহাট দিয়ে খাগড়াছড়ির পথে ঢোকাটাই সহজ এবং বুদ্ধিমানের কাজ। শেষরাতের দিকে ফেনী পৌছেই আমাদের সিদ্ধান্ত পাল্টে গেল, জয় হল নাসিবেরই। নতুন করে সিদ্ধান্ত হল নাসিবের বাসা হয়েই যাব। তখন এফএম রেডিওতে বাজছে শায়ান এর গান ‘এক চোখ বুঝে রেখো না বাঙালী, দুচোখ ভরে দেখ’। আমি তখন ভাবছি, বাঘাইছড়ির ঘটনার সম্ভাব্যতা তা নিয়ে আমাদের বাঙালীদের একচোখা দৃষ্টিভঙ্গির কথা।
ভোরে একে খান গেট দিয়ে ফয়েজলেক হয়ে শহরে ঢুকেই আমরা রাঙ্গুনিয়ার পথ ধরলাম। স্বাভাবিকভাবেই পথে আমি আর নাসিব চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গাগুলোর নানা গুণকীর্তন করছি। কাপ্তাই রোড ধরে নোয়াপাড়ার একটি ফিলিং স্টেশনে গাড়ি থামল আহারপর্বে। ফাঁকে পাশের গ্রাম্য চায়ের দোকানে ঢু মেরে একছড়ি কলা কিনলাম। পাশেই কয়েকটি খেজুর গাছে তখনও ঝুলছে রসভর্তি হাঁড়ি। পূর্নিয়ার আগ্রহ ও আমার অনুরোধেও দোকানদারের চিড়ে ভিজল না। অবশেষে মনকে প্রবোধ দিয়েই যাত্রা বিরতির ইতি। কিছুনের মধ্যেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের গেটে গিয়ে গাড়ি থামল। নাসিব আমাদের বাসায় নিলেন। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিকের ছেলে নাসিবের মধ্যে কিছুটা চাটগেঁয়ে পাগলামো আছে। তার বাবার সঙ্গে সৌজন্যমুলক গল্পের ফাঁকে আমরা সকালের নাস্তাটি সেরে নিলাম। দূর থেকে একঝলক দেখে নিলাম তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও। আধঘন্টা পর গাড়ি স্টার্ট দিতেই আমি বললাম, পাশেই একটি তীর্থস্থান। হ্যাঁ, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২০০ মিটারের মধ্যেই অর্ধেক বাঙালীর প্রিয় নেতা জিয়াউর রহমানের প্রথম কবরস্থান। পূর্ণিয়া আগ্রহ না দেখালেও সালাম দৌড়ের মধ্যেও বেশ মজা করে ঘুরে দেখলেন। এবার আসল গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু।
রাঙ্গুনিয়া থেকে রাউজানের গ্রাম্য পাকা রাস্তা ধরে কিছুনের মধ্যেই আমরা রাঙামাটির রাস্তায় গিয়ে ওঠলাম। কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে রসিকতার রাজা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সংবাদ সংগ্রহ করতে এ রাস্তা মাড়িয়েছি। ফলে পথ পরিচিত। তবে রাঙামাটির রাস্তায় ওঠেই দেখা গেল লোকজনের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ছাপ। একজনের কাছে পথের অবস্থা জানতেই বললেন, রাঙামাটি হয়ে খাগড়াছড়ির রাস্তায় গণ্ডগোল চলছে। যদিও পরে জেনেছি তথ্য সঠিক নয়। ফলে হাটহাজারী হয়ে খাগড়াছড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেই আফসোস করলেন সালাম। তার এক কথা, বিপদের রাস্তায় গেলেই তো ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যাবে। তখনও আমরা জানি না, আসল ঘটনা অন্য রোডে- যেটি খাগড়াছড়ি হয়ে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি গেছে। ফলে আমরা উল্টো শহরের দিকে হাটহাজারী পর্যন্ত ফিরে খাগড়াছড়ির রোডে গিয়ে ওঠলাম। কিছুদূর যেতেই চায়ের তেষ্টা পেল পূর্নিয়ার। তবে চা মুখে দিয়েই তিনজনেরই মুখ বিকৃত। চুমুক দেয়ার আগেই বিল দিয়ে আবার গাড়িতে।
গাড়ি ফটিকছড়ি পেরিয়ে পাইনদং ঢুকতেই রাস্তার দুইপাশে চা বাগান শুরু। আমি আগে ফটিকছড়ির বিবির হাট পর্যন্ত এসেছি। উত্তর চট্টগ্রামের একদা অশান্ত, অর্থ-বিদ্যা এবং হিংস্রতার সমন্বয়ে ঐতিহ্যবাহী এ জনপদের অনেক গ্রামের রাস্তায় আমি হেটেছি। ফলে পাইনদং ঢুকেই আমার কৌতুহলের মাত্রা বাড়তে শুরু করল। রাস্তার দুইপাশে চা ও রাবার বাগান। দেশের অনেক পাহাড়ী পথ ঘুরেছি, বিচিত্র অনুভূতি হয়। আর কোথাও গেলে আমি খাওয়া-দাওয়ার চেয়ে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করি। অনেকে এ নিয়ে বিরক্তও হয়। আর চলতি পথে এক মুহুর্তের জন্যও দুইপাশের দৃশ্য উপভোগ থেকে বঞ্চিত হতে চাই না। পাহাড়ি আকাবাকা পথে মানিকছড়ি ঢুকতেই পাশদিয়ে তীব্রগতিতে একটি বাইক ছুটে গেল। এক উপজাতি তরুণের পেছনে বসছেন দুই কিশোর-কিশোরী। তারা দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যাচ্ছেন। রাস্তাগুলো কেমন সাপের মত একেরপর এক মোচড় খাচ্ছে। সামনের আসনে বসে আমি একের পর এক ছবি তুলছি। গাড়িটানা আর্মি ক্যাম্প পার হওয়ার সময় সৈনিকদের দেখা গেল- সতর্ক অবস্থায়। বড়ইতলী আর তিনটহরি বাজারে পাহাড়ী-বাঙালী দুইপরে মুখেই একধরনের স্পষ্ট উদ্বেগের ছাপ। মানিকছড়ি বাজার পার হয়ে গচ্ছাবিল আর্মি ক্যাম্প পেরিয়ে দুইটি মোড় ঘুরতেই চোখে পড়ল রাস্তায় টহলরত একদল সেনাসদস্য। তাদের দেখেই গাড়ি ধীর করে ফুটেজ নিল সালাম। তারপর হাতিমুড়া পার হতেই জালিয়া পাড়া চৌরাস্তা। এখান থেকে বামদিকের রাস্তাটি রামগড় হয়ে ঢাকা চলে গেছে। ডানদিকের রাস্তাটি গেছে মহালছড়ির দিকে। জালিয়াপাড়ায় মানুষজনের মধ্যে এক ধরনের গুমোড়ভাব দেখে পূর্নিয়া কথা বলার জন্য একটি চায়ের দোকানে ঢুকল। দোকানে বসতেই ঘিরে ধরল বাঙালীরা। তারা টিপ্পিনী কাটতে লাগলো। প্রত্যেকের অভিযোগ সাংবাদিকরা বিদেশী এনজিওদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে পাহাড়ীদের পে লেখে। তারা নামধরে ওয়ার্কার্স পার্টি নেতা মেনন ও কিছু সাংবাদিককে গালাগাল দিচ্ছিল। সালাম ক্যামেরা ওপেন করার আগেই ট্রাইপডে লাথি কষলেন একজন। জুড়ে দিলেন তর্ক। পরে অভদ্র লোকটি নিজেকে গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিতেই সালাম একটা ধমক দিলেন। এই যদি হয় গোয়েন্দার আচরণ!
জালিয়াপাড়ায় আমাদের সঙ্গি হলেন এক পুলিশ সদস্য। তার সঙ্গে গল্প করতে করতে কিছুদুর যেতেই গুইমারা আর্মি রিজিওন। গুইমারা বাজারে দেখা গেল, পাহাড়ী-বাঙালী দুইপই বাজারে কেনাকাটা করছে। তবে সবার চোখে মুখে অস্বস্তির ভাব। গাড়ি মাটিরাঙা আর্মি জোনের সামনে দিয়ে যাবার সময় সৈনিকরা খেয়াল করে দেখলেন, তবে কোন সিগন্যাল দিলেন না। এতন পর্যন্ত বিপরীত দিক থেকে দুই একটি বাইক ছাড়া কোন গাড়ি দেখা যায়নি। মাটিরাঙ্গা বাজার থেকে বামে উত্তর-পশ্চিমদিকে চলে গেছে তবলছড়ি রোড। মাটিরাঙ্গা থেকে অর্ধশত কিলোমিটারেরও বেশি দূর। ওই তবলছড়িতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন আমাদের এক পাড়াতো জেঠা তৈয়ব আলী। যিনি একটি হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে অবস্থান নিয়েছিলেন সেই দূর্গম পাহাড়ে। অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি বিয়েও করেন দু’টি। পরে তবলছড়ি ইউনিয়নের মেম্বারও নির্বাচিত হয়েছিলেন। কয়েক বছর আগে তিনি মারা গেছেন। তার ছেলেরা একসময় যোগাযোগ রাখলেও ইদানিং যোগাযোগ নেই। অথচ আমার ওই জেঠা তার একটি মেয়ে আমাকে বিয়ে দেয়ার জন্য খুব আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। তো খাগড়াছড়ির পাহাড়ী পথে চলতে চলতে পুরোনো দিনের সে সব স্মৃতি ভেসে ওঠেছে। ভাবছি আমার পূর্ব পুরুষদের কথা। যাদের পারিবারিক ব্যবসা ছিল পাহাড়ী বাইরগ্যা (বরাহ) বাঁশের। ফলে আমার বাপ-চাচা-দাদাদের পা পড়েনি এমন কোন পাহাড়ী পাড়া আর ছড়া নেই পার্বত্য চট্টগ্রামে। ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে যাতায়াত করতেন পাহাড়ী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন। দিনেরপর দিন থাকতেন, খেতেন। বাপ-চাচারাও সপ্তাহ-মাস পাহাড়ী পাড়ায় থাকতেন, খেতেন। কি এক সম্প্রতি ছিল। তখন পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনীর যৌবন। কিন্তু বাপ-চাচাদের কাছে শুনিনি তারা চাঁদা চেয়েছে। তাহলে আজকে কেন এত অস্থিরতা? বিষয়টি আমাকে খুব ভাবায়।
মিশন: কাঁসার থালা–বাটি
বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ
কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।