somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অরণ্যে পাখির চোখে-২: চেঙ্গীর বাকে দগ্ধনিকেতন

১৬ ই মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অরণ্যে পাখির চোখে-২: চেঙ্গীর বাকে দগ্ধনিকেতন
খাগড়াছড়ি শহরে ঢোকার মুখেই আপনাকে স্বাগত জানাবে স্রোতস্বিনী চেঙ্গী নদী। নদীর হাতের বামপাশে পর্যটন মোটেল। সামনে এগুতেই চোখে পড়ল আমর্ড পুলিশের সতর্ক অবস্থান। আর বামপাশে অগ্নিদগ্ধ ধ্বংসস্তুপ। অসন্তোষের আগুনে পুড়ে ছারখার শান্তিনিকেতন। গাড়ি থেকেই চোখে পড়ছে পোড়া পাড়ার ধ্বংসস্তুপে মানুষের জটলা। আমরা গাড়ি থামিয়ে সেখানে ছুটে যাই। একটার পর একটা ছবি তুলি মোবাইল ক্যামেরায়। দেখেই বোঝা যায় পরিস্থিতি বেশ ঘোলাটে। এক বাঙালী বৃদ্ধা পুড়ে যাওয়া লাউ ডগার পাশে দাড়িয়ে আমাদের নানা প্রশ্নের জবাব দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেখানে শান্তিনিকেতন নামের পুরে একটি আবাসিক এলাকা পুড়িয়ে দিয়েছে পাহাড়ীরা। এমন সময় হঠাৎ পাশের একটি বাড়ির ধ্বংসস্তপ থেকে একটি পাহাড়ী মহিলার কান্নার শব্দ পেয়ে সেদিকে ছুটে গেলাম। আমাকে দেখেই তার পাশে দাড়ানো অন্য মহিলারা নিজেদের ভাষায় বাঙালীদের গালাগাল শুরু করে। কিছু গালাগালের শব্দ আমার পূর্ব পরিচিত। বুঝতে পেরে খারাপ লাগছিল। আমার জন্ম চট্টগ্রামে আর আমি বাংলাদেশের নাগরিক। ফলে আমার নিরপে থাকা আমার জন্য খুবই কঠিন। কান্নারত মহিলাটির কাছে সমবেদনার সুরে জিজ্ঞাসা করতেই বলেন, বাঙালীরা শেষ মুহুর্তে বিনা উস্কানীতে তার ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। পূর্ণিয়ার তাড়া পেয়ে অদূরে শহরের চেঙ্গি স্কয়ারে ছুটে যাই। সেখানে তখনও সৈন্যভর্তি বেশ কয়েকটি সেনাবাহিনীর ট্রাক দাড়িয়ে আছে। চেঙ্গি স্কয়ারে পার্বত্য আন্দোলনের নেতা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমার মুর্তি। জমিদার পাড়ার এ কোনাটিতে পাহাড়ীদের মালিকানাধীন সনি’র একটি শোরুম লুঠপাট শেষে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে জমিদার পাড়ার এক বয়োবৃদ্ধের সঙ্গে কথা হয়। আমি এমএন লারমার মুর্তির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলি। এরই মধ্যে জানা গেল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী খাগড়াছড়ি আসছেন। অন্যদের মত অদূরে সার্কিট হাউজের পাহাড়ে ছুটলাম। প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু হেলিকপ্টারে বাঘাইছড়ি থেকে খাগড়াছড়িতে নেমেই সোজা চলে গেলেন শান্তিনিকেতনে। তার পিছু পিছু ছুটলাম। তবে তিনি সেখানে এক ধরনের স্বগোক্তি ছাড়া তেমন কোন আশারবাণী শোনালেন না। এরপর তিনি অন্য তিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ছুটলেন আর আমরা গেলাম পর্যটন মোটেলে। এরই মধ্যে স্থানীয় প্রতিনিধি ইব্রাহিম শেখের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ হলে তিনি জানালেন তখনও তিনি ফটিকছড়িতে। খাগড়াছড়ি শহরে পৌছাতে তার আরও কয়েকঘন্টা লাগবে।
পর্যটন হোটেলে আমরা দুইটি রুমে গিয়ে উঠলাম। ল্যাপটপে অগ্নিদগ্ধ শান্তিনিতেকন ও চেংগি মোডের সরজমিন অভিজ্ঞতাগুলো নিউজ আকারে লেখা শুরু হল। প্রাকৃতিক দৃষ্টিনন্দন স্থানে পর্যটনের রুমগুলো পরিচ্ছন্ন হলেও হঠাৎ সন্দেহ চেপে বসলো সালামের ঘাড়ে। এরই মধ্যে একজন ফোনে তাকে জানিয়ে দিয়েছে পর্যটনে থাকাটা আমাদের জন্য নিরাপদ নয়। সঙ্গে সঙ্গেই পর্যটন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন পূর্ণিয়া। আমি যতই বুঝাই তাকে সে আশ্বস্ত হতে পারে না। শেষে তার সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত হল। তবে একঘন্টা অবস্থান বাবদ আমাদের গুনতে হল পুরোদিনের ভাড়া। টিএমএসএস-এর পরিচালনাধীন পর্যটনের তরুণ ম্যানাজার আমাদের কাছ থেকে একরকম জোর করেই পুরো টাকা আদায় করলেন।
পর্যটন ছেড়ে শহরে ঢুকেই ছুটলাম খাবারের খোঁজে। শহরের আলোচিত রেস্টুরেন্ট- সিস্টেম। শহরের দণি-পূর্বপ্রান্তের পানখাইয়া পাড়ার একটি বাড়ির একাংশ জুড়ে এ রেস্টুরেন্ট। বেশ সাজানো গোছানো। অনেকটাই সৌখিন পাহাড়ীর বাড়ির মত। হোটেলের নামকরণ নিয়ে রয়েছে মজার গল্প। আগে ঢাকা থেকে পর্যটকরা খাগড়াছড়ি গিয়ে পাহাড়ী রান্নার স্বাদ পেতে চাইতেন। এভাবেই সিস্টেম রেস্টুরেন্টের মালিক পাহাড়ী তরুণটির সঙ্গে পর্যটকদের ভাব জমে। তরুণটি প্রথমে বলতেন- একটা সিস্টেম করে দেয়া যাবে। এক পর্যায়ে সে নিজেই দোকান দিয়ে বসলেন। রান্না করেন স্বামী-স্ত্রী মিলে, পরিবেশনও করেন নিজে। পর্যটকদের মন মেজাজ আর রুচি বুঝে নেন কয়েক মিনিটেই। সে অনুযায়ী আয়োজন। এভাবেই এক সময় তার রেস্টুরেন্টের নাম হয়ে গেল- সিস্টেম। দুপুরের খাবার শেষে সেখানে বসেই রিপোর্ট রেডি করি। বিকালে সেখান থেকে বেরিয়ে শহরে যাব। হাতে ল্যাপটপ। একজন পাহাড়ী যাত্রী নিয়ে একটি রিক্সা আসতে দেখেই লিভ নেয়ার জন্য ইশারা করি। আমার ধারণা ছিল পাহাড়ীটি আমাকে হয়ত লিভ দেবে। কিন্তু সে আমাকে হতবাক করে বাঙালীর চৌদ্দগোষ্ঠী তুলে গালাগাল দিতে দিতে রিক্সাওয়ালাকে তাড়া দিল। বাধ্য হয়েই আমি হেটে শহরে গেলাম। ইব্রাহীম শেখকে পেয়ে হালে কিছুটা পানি পেলাম। অন্তত অচেনা অস্বস্তিকর মনোভাবটা কেটে যাবে। নিউজের তথ্য-উপাত্ত যোগাড় করে নিজে তৈরী করলেও সৌজন্যতাবশত আমার সঙ্গে ইব্রাহিমের নামটি জুড়ে দিয়ে অফিসে পাঠিয়ে দিলাম।
ইতিমধ্যেই রাতের সঙ্গে কারফিউ ঘনিয়ে এল। ইব্রাহীম আমাকে হোটেলের বদলে তার বাসায় নিয়ে গেল। শহরের কেন্দ্রস্থলে পৌর কার্যালয়ের পাশেই তার বাড়ি। আমি কিছুন পাশের বাড়ির একটি ছেলের সঙ্গে আড্ডা মারলাম উঠোনে বসে। পাহাড়ীদের সমস্যা-সম্ভাবনা ও চলতি অসন্তোষ নিয়ে অনেক আলোচনা হল। রাতে দেখলাম লাঠি হাতে দল বেঁধে পাহারা দিচ্ছে পাড়ার লোকজন। সবার চোখে মুখে একধরনের অনিশ্চয়তার ছাপ। সে অনিশ্চয়তা নিয়েই অভ্যাসবশত গভীর রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×