somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি ফেইক আইডির আত্মহত্যা (২য় পর্ব)

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব পড়া না হলে এখানে ক্লিক করুন
একটি মেয়ে বাসি খাবার টাইপের একটা স্ট্যাটাস দিল আর অমনিই তাতে ছেলেরা হামাগুরি দিয়ে লাইক কমেন্টের জোয়ারে তাকে ভাসিয়ে দিয়েছে। প্রো পিকচারে গিয়ে দেখে ৪০০ বছরের পুরনো তেতুল গাছের পেত্নির মত চেহারা কিন্তু অন্যরা তাতে নাইস ,বিউটিফুল , supporb!!! ইত্যাদি। তেল, মাখানো কমেন্টের বন্যা বইয়ে দিতে এতটুকু কার্পণ্য বোধ করে নি। এবার ফেইক আইডি বুঝতে পারলো ফেবুর দুনিয়াতে মূলত আসলে সুপার হিট কোন প্রজাতিরা তাই আগ-পিছ চিন্তা না করে পরের দিন নিজের ইনফো এমনভাবে চেঞ্জ করলো যাতে সবাই তাকে মেয়ে ভাবে আর প্রো-পিকচারের জায়গায় দিয়ে দিল এনিমেটেড পরীর ছবি যাকে ফেবুতে অনেকেই ‘এঞ্জেল’ নামে চেনেন। এখন আর কি পরদিনে প্রথম স্ট্যাটাসে জাস্ট দুই অক্ষরে লিখলো ‘হাই’ ......। ওহ মাই খোদা ! এরপর তো শুধু হায়! হায়! অবস্থা, লাইকের জোয়ার আর কমেন্টের বাহার । ফেক আইডি তো মহাখুশি কারণ তার আইডি এখন রমরমা চলবে।

ইদানিং ফেক আইডি মাঝে মাঝে চ্যাঁটে online হয়। অনেক আগ্রহের সাথে একদম ১০-১২ জনের সাথে চ্যাঁট হয় তবে সমস্যা একটাই। বাস্তব জগতের চেয়ে এই ভার্চুয়াল জগতে লুচি মানবের উপদ্রব কয়েকগুন বেশী কারণ এখানে অন্ধ বিশ্বাসের প্রবণতাটা আর মর্যাদাটা অনেক। মানুষ এটা চিন্তা করে না বাস্তবতা আর ভার্চুয়াল জগতের মাঝে দূরত্ব আকাশ-পাতাল সম। ভার্চুয়াল জগতের সম্পর্ক গুলো শুধু একটা মরিচিকার মত যাকে দূর থেকে দেখা যায় কিন্তু কখনই কাছে পাওয়া যায় না, স্বচ্ছ আর পাতলা কাচের মত যা ভাঙ্গতে বেশী সময় নেয় না। ঘুমে দেখা দুঃস্বপ্নের চেয়েও ভয়ানক যা হয়ত শরীরের কোন ক্ষতি করতে পারে না, তবে মানুষকে মানসিকভাবে অতি আবেগি দুর্বল করে ফেলে, সবশেষে একটা মানসিক ব্যাধিতে পরিণত হয়। কেও যদি খানিকবারের মত চিন্তা করতো যে তারা যাদেরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে অথবা সম্পর্ক করতে চায় তারা একে অপরের চেয়ে কতই না দূরে, না কেউ কাওকে দেখে , না বেক্তিগতভাবে চেনে, তারপরও অনেকেই চিন্তা করে বসে পৃথিবীতে তো কোন কিছুই অসম্ভব না। অথচ, অনেকেই এটা বোঝে না যে অসম্ভবকে হয়ত সম্ভব করা যায় তবে অবাস্তবকে কখনই বাস্তব করা যায় না।

ফেক আইডির সাথেও এইরকম কিছু ঘটে যায়। দীর্ঘদিন ধরে ফেক আইডি একটা ছেলের সাথে নিয়মিত চ্যাঁট করে আসছে। কারণ, অন্য ছেলেগুলোর চেয়ে এই বেক্তিটি একটু আলাদা আর ভাল স্বভাবের ছিল। আজ এতটা দিন হয়ে গেল কিন্তু ছেলেটি এমন কোন আচরণ করেনি যে ফেক আইডি তার উপর বিরক্তিবোধ করবে। ছেলেটি বেশিরভাগ সময় ফেক আইডিকে তার বিভিন্ন বিষয়ে ভাল ভাল সাজেশন দিতো বলেই ফেক আইডি তার সাথে ভালোভাবে চ্যাঁট করতো। কিন্তু মাঝে মাঝে ছেলেটি তার নিজ দুঃখের কথা ফেক আইডিকে শেয়ার করতো। ধিরে ধিরে তাদের মাঝে অনেক ভাল বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। সময়ের সাথে ছেলেটি ফেক আইডির প্রেমে পড়তে থাকে। আর আভবে একদিন ফেক আইডিকে প্রপোজ করে বসে। কিন্তু ফেক আইডি তো কোন মেয়েই ছিল না, সে কিভাবে প্রপোজাল একসেপ্ট করবে? অনেক কৌশল করে সে ছেলেটাকে বোঝানোর চেষ্টা করলো যে এটা সম্ভব নয়। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যায়, কারণ ছেলেটি ভার্চুয়াল জগতের অদেখা এক মানুষের প্রেমে এতটাই মগ্ন হয়ে ছিল যে তাকে অনেক চেষ্টা করেও বোঝানো সম্ভবপর হয়নি। দিন দিন ছেলেটির অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকল যা তার দৈনিক আবেগ ভরা স্ট্যাটাস দেখে বোঝা যেত। একদিন ছেলেটি একটি ছবি আপলোড করে বসলো যাতে ঐ ছেলের হাতে ফেক আইডির নাম ব্লেড দিয়ে কেটে লেখা হয়েছিল। ফেক আইডি আর উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত আইডি deactivate করে দিল কারণ ঐ ছেলেকে ব্লক দিলে ঠিকই অন্য আইডি থেকে তাকে আবার খুজে নেবে।

প্রায় ২ মাস পর ফেক আইডি আবার ফিরে এলো। ভাবছিল কোন স্ট্যাটাস দেবে কি না কিন্তু তাও দিতে কেমন যেন অস্বস্তি বোধ করছিল। তাই চ্যাট অফলাইন করে ঐ ছেলের খোঁজ নিয়ে দেখল। নাহ! খবর মোটেও ভাল নয়, ফেক আইডি যা জানতে পারলো তার পর থেকে নিজেকে ছোট ভাবা শুরু করলো। কারণ ফেক আইডি যে মুহূর্তে deactivated হয়েছিল ঐ সময় ছেলেটির H.S.C পরীক্ষা চলছিল। ফেক আইডির এভাবে হারিয়ে যাবার কষ্টটা সহ্য করতে না পারায় তার পরীক্ষা গুলো খারাপ হয়। একটি দীর্ঘশ্বাস ...... ফেক আইডি নিজেকে ক্ষমা করতে পারছিল না। মিথ্যার আশ্রয়ে মনকে অন্তর্দাহে দগ্ধ করার চেয়ে সব সত্য কথা ঐ ছেলেটিকে বলে দেয়ার সিধান্ত নেয়। পরদিন ফেক আইডি নিজের সব সত্য মেসেজ আকারে ছেলেটিকে পাঠিয়ে দেয় আর আইডি সাময়িকভাবে deactivate করে দেয়।

মনকে অনেক শান্তনা দেয়া শেষে এক সপ্তাহ পর ফেক আইডি আবার ফিরে আসে। কিন্তু এ কি অবস্থা? চ্যাঁট অনলাইন করার পর ১৫ মিনিট ধরে প্রায় ২০-২৫ জনের গালাগালি মাখা মেসেজ আসতে লাগলো। চ্যাঁট অফ করে একটা স্ট্যাটাস দিল। এখানে তো অবস্থা আরও খারাপ। লাইক তো দুরের কথা, কমেন্টে অকথ্য ভাষায় গালাগাল আর ধিক্কারের জোয়ার। ফেক আইডি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেনা আসলেই কি হল, কেনই বা সবাই তাকে এত অপমান করছে। একে একে খবর নিয়ে দেখল যে গত কয়েকদিন ধরে ঐ ছেলে আর কয়েকজন বন্ধু মিলে ফেক আইডির সব গোপন রহস্য ফেবুর অলিতে গলিতে ছড়িয়ে দেয়। যারা এতদিন ভাবতো এটা মেয়ে তারা সবাই আজ ছেলে জানার পর তাকে ত্যাগ করা শুরু করল,এড়িয়ে চলতে লাগলো।

সব শেষ !!! আসলেই সবকিছুই যেন শেষ ফেক আইডির। অকারনে আইডি খুলে এতগুলো বাজে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হবে সে কখনই কল্পনা করতে পারেনি। যখন নিজেকে ছেলে বলে পরিচয় দিতো তখন কেউ ঠিক মত পাত্তা দেয়নি, আর মেয়ে বলে পরিচয় দেয়ার পর যে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল তার সবই আজ ধূলিসাৎ হল। তাছাড়া ফেক আইডির কারণে একটা ছেলে নির্দিষ্ট কিছু সময় মানুষিক সমস্যায় ভুগে যার ফলে তার জীবনের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা বিফলে যায়।

এতগুলো চাপ, এতগুলো অপমান, নিজের কর্মের প্রতি ঘৃণা, দীর্ঘ সময়ের অপচয় আর ব্যর্থতার জরায় জর্জরিত হওয়া আইডি এসব সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত আইডি নিজেই নিজেকে delete করে দিল যাকে ভারচুয়ালি বলা হয় ‘আত্মহত্যা’।
এর পর ঐ আইডিকে ফেবুর পথেঘাটে আর কোন দিন দেখা যায়নি, না তার অস্তিত্তের সন্ধান কখনো কেউ করতে চেয়ে ছিল। এভাবেই একটি আইডির আত্মহত্যার মধ্যদিয়ে ফেবু নামক ভার্চুয়াল জগত থেকে বিদায় নেয় নাম না জানা ঐ ফেক আইডি।
শেষ পর্যন্ত বাস্তব জগতে ঐ আইডির মালিকের কি হয়েছিল তার সম্পর্কে লেখকের কিছু জানা নেই বলে গল্পের এখানেই ইতি টানতে বাধ্য হলাম।
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×