পরদিন সকালে ক্যাম্পাসে কৈলাসের এক সহকর্মী প্রফেসর ডেভিড জিজ্ঞেস করলেন, "কৈলাস, তুমি বিবাহিত জীবন নিয়ে কেমন বোধ করো?"
কৈলাস চিন্তিত মুখে বললেন, "ডেভিড, বিয়ে আসলে শ্রোডিঙ্গারের বিড়ালের মতো।"
"কীভাবে?"
"দেখো, বিয়ের আগে তুমি ভাবো তোমার জীবন সিম্পল হবে— হয় খুশি থাকবে, নয়তো দুঃখী। কিন্তু বিয়ের পর দেখবে তুমি একটা বাক্সে বন্দী বিড়ালের মতো— একইসাথে খুশিও আছো, আবার দুঃখীও! সুপারপজিশন অফ স্টেটস!"
ডেভিড হেসে বললেন, "তার মানে?"
"ঠিক ধরেছো! আমি নিজেকে 'শ্রোডিঙ্গারের স্বামী' বলি। আমি একইসাথে 'ভালো স্বামী' এবং 'খারাপ স্বামী'— যতক্ষণ না কেয়া অবজার্ভ করছে ততক্ষণ দুটো অবস্থাই সত্যি। তারপর ওয়েভ ফাংশন কলাপ্স হয়ে আমি শুধু একটা হয়ে যাই— সাধারণত খারাপ স্বামীই হই।"
ডেভিড হাততালি দিয়ে হেসে উঠলেন। "ব্রিলিয়ান্ট অ্যানালজি! শ্রোডিঙ্গারের স্বামী— এটা আমি মনে রাখব!"
সেদিন সন্ধ্যায় কেয়া ফোন করে বললেন, "তুমি ফেরার পথে দুধ আর ডিম কিনে আনবে?"
কৈলাস বললেন, "হবে, তবে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার নীতি অনুসারে—"
কেয়া মাঝখানে কেটে বললেন, "যদি আবার পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে শুরু করো, তাহলে তোমার ডিনার অনিশ্চিত হয়ে যাবে!"
"বুঝলাম! আমি এখনই যাচ্ছি!"
সুপারমার্কেট থেকে ফিরে কৈলাস দরজা খুলতেই কেয়া বললেন, "শুধু দুধ-ডিম? আর কিছু আনোনি?"
কৈলাস ব্যাগ থেকে একটা ছোট প্যাকেট বের করে বললেন,
"তোমার জন্য এটা এনেছি— আমড়া। এখানে তো এগুলো পাওয়া মুশকিল, আজ হঠাৎ পেলাম!"
কেয়া মুচকি হেসে বললেন,
"তুমি জানো আমি আমড়া পছন্দ করি?"
কৈলাস বললেন,
"অবশ্যই। কোয়ান্টাম এন্ট্যাঙ্গেলমেন্ট অনুসারে, আমরা দুজন এন্ট্যাঙ্গেলড পার্টিকেলের মতো— তুমি যদি খুশি হও, আমিও খুশি হই। তোমার স্পিন যদি আপ হয়, আমার স্পিনও আপ হয়, দূরত্ব যতই হোক।"
কেয়া রোমান্টিক হয়ে বললেন,
"এটা এতদিনের মধ্যে তোমার সবচেয়ে মিষ্টি কথা!"
কৈলাস সিরিয়াস হয়ে বললেন, "কিন্তু আসলে কথাটা সত্যি। তুমি আমার জীবনের রেফারেন্স ফ্রেম। তোমার অবস্থান অনুযায়ী সবকিছুর অর্থ পাল্টে যায়।"
কেয়া নরম হয়ে বললেন, "তুমি কখনো কখনো মিষ্টি কথা বলতে পারো।"
"থ্যাংক ইউ। তবে এটা পুরোই রিলেটিভিস্টিক। আমার ফ্রেম থেকে আমি সবসময়ই মিষ্টি কথা বলি। তোমার ফ্রেম থেকে ভিন্ন মনে হতে পারে।"
কেয়া চোখ পাকিয়ে বললেন, "আর তুমি ভাবছো এটা রোমান্টিক?"
"একদম!"
রাতে খাওয়ার টেবিলে কৈলাস বললেন, "জানো কেয়া, আমি আজ ক্লাসে ছাত্রদের ডপলার ইফেক্ট বোঝাতে গিয়ে—"
কেয়া মাঝখানে বললেন, "তুমি নিশ্চয়ই আমাকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করোনি?"
কৈলাস একটু লজ্জা পেয়ে বললেন, "একটু করেছি। বলেছিলাম— যখন আমার স্ত্রী রাগান্বিত হয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসেন, তখন তার গলার স্বরের ফ্রিকোয়েন্সি বেড়ে যায়, শব্দ আরো তীক্ষ্ণ শোনায়। আবার যখন রাগ কমে দূরে চলে যান, ফ্রিকোয়েন্সি কমে, গলার স্বর নরম শোনায়।"
কেয়া হাসতে হাসতে বললেন, "তুমি আমাকে অ্যাম্বুলেন্সের সাথে তুলনা করেছো?"
"না না! খুব সুন্দর উদাহরণ ছিল! সবাই হেসেছিল!"
"আমার খরচে!"
কৈলাস সিরিয়াস হয়ে বললেন, "কিন্তু আসলে কথাটা সত্যি। তুমি আমার কাছে এলে সবকিছু আলাদা মনে হয়— তোমার উপস্থিতি আমার পারসেপশনই বদলে দেয়। এটাও এক ধরনের ডপলার ইফেক্ট— তুমি যত কাছে আসো, আমার হার্টবিটের ফ্রিকোয়েন্সি তত বাড়ে।"
কেয়া মুচকি হেসে বললেন, "এখন কিন্তু রোমান্টিক হয়ে গেছে।"
"সবসময়ই রোমান্টিক ছিল। তুমি বুঝতে পারোনি।"
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:১৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



