somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই পথচলা......।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ডাঃ স্যামুয়েল স্যাম এর চেম্বার এর সামনে রোগির ভিড় লেগেই আছে। বলতে গেলে এই অল্প বয়সেই বেশ জমিয়ে ফেলেছে। আর হবেইবা না কেন, মেডিক্যাল এ ছিল অন্যতম মেধাবী, পাশ করতে না করতেই নামকরা হাসপাতালে চাকরী, বছর কয়েক এর ভিতরেই কপালে জুটে গেল পোস্টগ্রাজুয়েশন নামক সোনার হরিণ। দেখতে যতটা না সুদর্শন, ব্যাবহার তার চেয়ে বেশি মধুর। আর রোগীকে নিজের আপন করে নেবার প্রচণ্ড দক্ষতা।

রোজার সাথে স্যাম এর পরিচয়টা কাকাতালিয় ভাবেই। প্রথম যেদিন স্যাম এর সাথে দেখা হয় সেদিন রোজার তলপেটে অসহ্য ব্যথা সাথে বমি এবং বেশ জ্বর। বেশ কিছুদিন থেকেই এই ব্যথা হচ্ছে কিন্তু সামান্য ওষুধেই ভাল হয়ে যেত তাই অতটা গুরুত্ব দিয়ে দেখেনি। কিন্তু এবারের টা এতটাই তীব্র যে, এই মাঝ রাতেই আসতে হয়েছে। আজাকাল তো হঠাত করে সনামধন্য ডাক্তারের সিরিয়াল পাওয়া আর আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়া অনেকটা এক কথা। স্যাম, চেম্বারের শেষ রোগী দেখে বাসায় ফিরবে বলে তৈরি হচ্ছে। তখনই রিসিপশনের মেয়েটা এসে বলল, স্যার একটা ইমারজেঞ্চী রোগী ছিল, যদি দেখে দিতেন। অন্য স্যাররা কেউ নেই।

এই হচ্ছে ডাক্তারি পেশার এক বড় সমস্যা, নিজের যত সমসস্যই থাকুক না কেন, রোগীর সমস্যার কাছে তা তুচ্ছ। স্যাম এর বাসায় ফিরতে এমনিতেই দেরি হয়ে যাচ্ছে। আজ তার বোনের মেয়ের জন্মদিনে যাবার কথা ছিল। ভেবেছিল চেম্বার শেষ করেই যাবে। কিন্তু এর মাঝে এই রোগী, মনে হচ্ছে আজ আর যাওয়া হবে না। পিচ্চিটা হয়ত এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে।

রোজা চাচ্ছিল কোন মহিলা ডাক্তার দেখাতে , কিন্তু এখন সে উপায় নেই। সব সমস্যা শুনে কিছু ওষুধ আর বেসিক কিছু টেস্ট দিয়ে বলল, তিন দিন পর রিপোর্ট নিয়ে আসতে। তিন দিন পর, রোজা কে বেশ হাশিখুশি দেখাচ্ছে, চেহারায় একটা প্রশান্তির ছায়া। তার মানে তার সমসস্যার উন্নতি হয়েছে। রোগীর মুখ দেখে অনেক কিছু বোঝা যায়। স্যাম বলল, আপনার সমসস্যার বেশ পরিবর্তন হয়েছে, তবে পুরোপুরি ভাল হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। চিন্তার/ ভয়ের তেমন কিছু নেই। তবে কালচার রিপোর্ট পেলে আরও ভাল হবে। আপনি বরং কালচার রিপোর্ট নিয়ে আর একবার আসুন।

আজ চেম্বার একটু ফাকা, স্যাম রোজাকে ভাল করে লক্ষ্য করল, কপালের ছোট্ট কালো টিপ, খোলা চুল, দু হাত ভর্তি নীল চুড়ি আর নীল জামায় মনে হচ্ছে রূপকথার কেউ বসে আছে। রোজা বলেই বসল, প্রথম যেদিন আপনাকে দেখলাম ভাবলাম আপনি বোধহয় এই ব্যাথা কমাতে পারবেন না। কিন্তু এখন দেখি………। চলে আসার সময় রোজা বলল, ডাক্তার সাহেব কে যদি মাঝে মাঝে বিরক্ত করতে চলে আসি, তবে কি খুব বেশি রাগ করবেন? স্যাম হাসতে হাসতে বলল, আর যাই করুন, চাই না রোগী হয়ে আসুন। সেদিন বেশ ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন। রোজা মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ডাক্তাররা তো ঈশ্বর, আর ঈশ্বর কি ভয় পান?

এর মাঝে বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। স্যাম ও সবকিছু নিয়ে বেশ ব্যাস্ত সময় পার করছে। হঠাত করে একদিন বেশ সকালে অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন। এত সকালে সাধারনত কেউ ফোন করে না, বিরক্তি নিয়ে ফোন ধরতেই অপর পাশ থেকে বলে উঠল, শুভ সকাল ডাঃ স্যাম। এত সকালে আপনাকে বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। আজ কি আপনার অ্যাপয়েন্টমেণ্ট পাওয়া যাবে? স্যাম বলল, অ্যাপয়েন্টমেণ্ট এর জন্য আপনি হাসপাতালের নাম্বারে যোগাযোগ করুন, বলেই রেখে দিল। হাসপাতালের লোকগুলো কি যে করে, ব্যাক্তিগত নাম্বার রোগীর কাছে দিয়ে রাখে। বেশ বিরক্তিকর ব্যাপার। আজ আবার বলে দিতে হবে ব্যাক্তিগত নাম্বার যেন না দেয়। চেম্বারে গিয়েই তো স্যাম এর চোখ কপালে , রোজা বসে আছে। চোখের কোণে হাসি দিয়ে বলল, ডাক্তারের সিরিয়াল পাওয়া যে এত কষ্টকর তা আগে জানলে নিজেই ডাক্তারি পড়তাম। বলেই হাসতে থাকল। হাসিতে কেমন জানি এক মায়া আছে। আর বড় বিষয় হল, এই মেয়ে যখন হাসে সাথে তার চোখ ও হাসে। স্যাম ভাবল, রোগ ছাড়া কেউ শখ করে ডাক্তারের কাছে আসে না। কিন্তু এই মেয়ে আবার কি সমস্যা নিয়ে আসলো? চেহারা দেখে তো কোন সমস্যা মনে হচ্ছে না। রোজা বলল, অনেকদিন আপনার সাথে দেখা হয় না, তাই ভাবলাম আপনার খোঁজ নিয়ে যায়। সকালে আপনাকে ফোন দিয়েছিলাম, কিন্তু আপনি এমন ভাবেই রেখে দিলেন যে কি বলব। আচ্ছা আপনারা ডাক্তাররা এত রাগী রাগী ভাবে থাকেন কেন বলেন তো? একটু অন্য রকম ভাবে থাকলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যায়? স্যাম এবার সত্যি লজ্জা পেল। বলল আসলে আপনাকে চিনতে পারিনি, আর এতসকালে আমি সাধারনত ঘুম থকে উঠি না। রোজা বলল, আপনাকে বাইরে দেখা করতে বললে তো করতেন না, তাই নিজেই চলে এলাম। এখন বলুন কোথায় ঘুরতে যাবেন? আপনি ঘুরতে বেশ পছদ করেন। স্যাম বলল কিভাবে জানেন? ইচ্ছা করলেই অনেক কিছু জানা যায়। অবশ্য আপনার ব্যাপারে আরও কিছু জানি, যা আপনাকে এই মুহুর্তে বলা যাবে না। বলেই সেই চোখের কোনে রহস্যময় হাসি দিল। রোজা বলল, আজ চেম্বার শেষ করে চলুন বাইরে ডিনার করি, তারপর আপনাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসব। আপনি তো একাই থাকেন। মাঝে মাঝে নাকি আপনাকে নিজে নিজে রান্না করে খেতে হয়। স্যাম তো পুরাই আকাশ থেকে পড়ল, এই মেয়ে এত কিছু কিভাবে জানল?

চেম্বার শেষে দুজনে একটা রুফটপ রেস্টুরেন্ট এ বসল। কিন্তু খাবার খেতে গিয়ে দেখল, সব খাবার বক্স এ আনা হয়েছে এবং সেটা বাসায় রান্না করা। আরও অবাক করা বিষয় হল, স্যাম এর প্রিয় অনেক খাবার এই তালিকায় আছে। কিন্তু রোজা কিভাবে জানল এইগুলো তার প্রিয় খাবার? রোজা বলল, আপনি তো মাঝে মাঝে রান্না করে খান, আজ না হয় আপনার জন্য আমিই রান্না করলাম। যদিও ভাল রান্না করতে পারি না, তবুও চেষ্টা করেছি। খাবার খেতে যেমনই হোক, খারাপ হয়েছে এই কথা বলা যাবে না। বলেই আবার হাসতে থাকল। এই মেয়েকে যতই দেখছি, ততই যেন অবাক হচ্ছি, ততই যেন গভীরে হারাচ্ছি। মেয়েটি যখন হাসে, তখন তার হাল্কা নীল চোখ যেন আরও গভীরতা ধারন করে। সে এক ঘোর লাগা অনুভূতি। এক দূর্নিবার আকর্ষন কাজ করে।

সেদিনের পর থেকে স্যাম এর সাথে রোজার প্রায় দেখা হয়। চেম্বার শেষ করে প্রায় দিন ঘুরতে বের হয়। বুজতে পারে মায়ার জালে হয়ত জড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জাল ছিঁড়ে বের হতে ইচ্ছা করছে না। এই কি তবে ভালবাসা ?
সেদিন রাতে চেম্বার শেষে স্যাম বাসায় যাবে বলে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। বাইরে টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে। হঠাত কোথা থেকে বৈশাখী ঝড়ের মত রোজা এসে হাজির। এসেই বলল, চল হাঁটতে হাঁটতে যাই। স্যাম বলল, তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে, এই রাতের বেলা বৃষ্টির মাঝে হাঁটতে হাঁটতে যাবা? রোজা অনেকটা নাছড়বান্দা, বলল চলই না……।
দুজন হাত ধরে পায়ে পায়ে হেটে যাচ্ছে এই বৃষ্টির রাতে নিয়ন আলো জ্বলা ফুটপথ ধরে। টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে আর রোজার ভেজা শাড়ির আচল লুটিয়ে পড়ছে পথের মাঝে। হাল্কা দমকা হাওয়ায়, শীতল অনুভূতি, কিছুটা কাপন জাগায়। এলো চুল, বৃষ্টির জলে ভিজে অবাধ্য হয়ে লুটিয়ে পড়ছে রোজার মুখের উপর। নিয়ন আলোয় যা ওকে করে তুলছে আরও মায়াবতী।

হাঁটতে হাঁটতে রোজা স্যাম এর হাত নিজের মুঠোয় শক্ত করে ধরে বলল, ডাক্তারের হাত নাকি ঈশ্বরের হাত, আর সেই হাতের স্পর্শ নাকি আশির্বাদ হয়ে আসে? হঠাত মেঘের আলোর ঝলকানিতে স্যাম দেখতে পেল রোজার সেই রহস্যময় হাসি, সেই চোখের কোনে হাসি। ইচ্ছে করছে হাসিটাকে হাতের মুঠোয় ধরে রাখি। স্যাম বলে উঠল, তবে তাই হোক, ঈশ্বরের হাতের স্পর্শেই দূর হোক সকল কুটিলতা। শুভ হোক আগামীর এই পথ চলা।


ছবিঃ গুগল।


উৎসর্গঃ কিছু মানুষ থাকে অনেকের মাঝে ভীষণ একা, সেই ভীষণ একা মানুষের জন্য।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:২৮
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামপন্থী রাজনীতির বয়ান এবং জামাতের গাজওয়াতুল হিন্দ-এর প্রস্তুতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০


গোরা উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ নিজে ব্রাহ্ম হয়েও, ব্রাহ্ম সমাজের আদর্শের বিপরীতে "গোরা" নামে একটি চরিত্র তৈরি করেন। গোরা খুব কট্টরপন্থী হিন্দু যুবক। হিন্দু পরিচয়ে বড় হলেও, আসলে সে আইরিশ পিতা-মাতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তুমি নেই, তাই শূন্য লাগে

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৬

তোমার চলে যাওয়ার পর
ঘরে আর আলো জ্বালাই না,
অন্ধকারে নিজের মতো করে
সবকিছু চিনে নেই।

জানো, আজ সকালে চা বানাতে গিয়ে দেখলাম
চিনি শেষ,
ভাবলাম ঠিক আছে,
মিষ্টি না থাকলেও চা হয়।

রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ
তোমার মতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি

লিখেছেন মুনতাসির, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৯

অনেকেই বলেন, ৫ আগস্টের পর তো কিছুই বদলায়নি। এই কথাটার সূত্র ধরেই এগোনো যায়। ৫ আগস্টের পর আমাদের কোন কোন পরিবর্তন এসেছে, সেটাই আগে দেখা দরকার। হিসাব করে দেখলাম, বলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আদর্শের রাজনীতি না কোটি টাকার হাতছানি...

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:২৫



১. আমি অনেক আগে ব্লগে লিখেছিলাম, বাংলাদেশে ছোট দলগুলো নিষিদ্ধ করা উচিত। উন্নত দেশের মত ২/৩ টিতে থাকাই উত্তম। কারণ, ছোট দলের নেতাদের টকশো-তে গলাবাজি করা ছাড়া আর কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে উড়ে গেল মাদ্রাসার দেয়াল, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৯



ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় একটি মাদ্রাসায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে নারী, শিশুসহ চারজন আহত হয়েছেন।

বিস্ফোরণে মাদ্রাসার একতলা ভবনের পশ্চিম পাশের দুটি কক্ষের দেয়াল উড়ে গেছে। ঘটনাস্থলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×