somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংবাদিকতা, অন্ধকার জগৎ আর রোমহর্ষক গল্পে ভরা স্কুপ

১৫ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৪:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী বা সাংবাদিকতার সঙ্গে যারা জড়িত তাঁরা অনেকগুলো অ্যাকাডেমিক জার্গনের সঙ্গে পরিচিত। স্কুপ তেমনেই একটি জার্গন। এক্সক্লুসিভ থেকেও গুরুত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ কোন সংবাদের ব্রেকের জন্য ব্যবহার হয়। সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী হওয়ার সুবাদে প্রথম পর্ব দেখেই বুঝতে পেরেছি হংসল মেহতার ‘স্কুপ’হলো সেই স্কুপ।

ভারতের খ্যাতিমান সাংবাদিক জ্যোতির্ময় দের খুনের ঘটনা নিয়ে প্রাক্তন সাংবাদিক জিগনা ভোরার লেখা বই ‘বিহাইন্ড দ্য বারস ইন বাইকুল্লা: মাই ডেজ ইন প্রিজন’-কে অবলম্বনে সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে পরিচালক হংসল মেহতার আলোচিত ওয়েব সিরিজ ‘স্কুপ’। ছয় এপিসোডের স্কুপের প্রত্যেকটি পর্ব এক ঘণ্টার ‍উপরে। তবে দর্শক এক বসাতে দেখতে বাধ্য! এখানেই সিরিজটির অন্যতম অর্জন।

২০০৫ সালে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর ৪ বছরের ছেলের হাত ধরে মুম্বাইতে আসেন জিগনা ভোরা। সেখানেই শুরু হয় তাঁর সাংবাদিক হিসেবে পথ চলা। এশিয়ান এজ সংবাদপত্রে ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন জিগনা। তাঁর ক্যারিয়ারে বড় ব্রেক আসে যখন তিনি অপরাধ জগতের অন্যতম কুখ্যাত নাম ছোটা রাজনের স্ত্রী নিখালজে সুজেটের নিউজ করেন। এভাবেই একাধিক অপরাধী অথবা পুলিশ কর্মীর ‘এক্সক্লুসিভ’নিউজ প্রকাশ করে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে তরতর করে ওপরে উঠছিলেন জিগনা ভোরা। ক্যারিয়ারের সূর্বণ সময়ে থাকলেও জিগনার থেকে সাংবাদিক খ্যাতিতে এগিয়ে ছিলেন মিড ডে পত্রিকার সাংবাদিক জ্যোতির্ময় দে।

তবে জিগনার ক্যারিয়ারের তাল কাটল ২০১১ সালে সাংবাদিক জ্যোতির্ময় দে খুন হওয়ার পর। ততদিনে ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে জিগনা সংবাদ জগতে রীতিমতো আলোচিত এক নাম। নানান কারণে জ্যোতির্ময় হত্যার দায় গিয়ে পড়ল তাঁর ওপর। হত্যকারী সন্দেহে জিগনা ভোরাকে গ্রেফতার করা হয়। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সফল সময়ে গ্রেফতার হন জিগনা। সেই সময় এই ঘটনা গোটা ভারত তোলপাড় করে ফেলেছিল।

সত্য এই ঘটনা অবলম্বনে তৈরি সিরিজটি ইতোমধ্যে দর্শক মহলে বেশ আলোচিত হয়েছে। ওয়েবসিরিজটি রিলিজ হওয়ার পর তরতর করে বাড়ছে আইএমডিবি রেটিং। পাশাপাশি অভিনয় শিল্পীদের মুন্সিয়ানায় মুগ্ধ দর্শক। যেখানে প্রধান চরিত্রে অর্থ্যাৎ জিগনা ভোরার ভূমিকায় ‍অভিনয় করেছেন করিশ্মা তান্না (জাগ্রুতি পাঠক), এশিয়ান এজ সংবাদপত্রে এডিটর হিসেবে মোহাম্মদ জিসান আইয়ুব (ইমরান সিদ্দিকী) আর ‘মিড ডে’ পত্রিকার সাংবাদিক জ্যোতির্ময় দের ভূমিকায় রয়েছেন প্রসেনজিৎ (জয়দেব সেন)।

ক্রাইম রিপোর্টারে হিসেবে জাগ্রুতি পাঠক ও জয়দেব সেনের মধ্যে বেশ প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। যদিও সেক্ষেত্রে জয়দেব সেন অনেকটা এগিয়ে। পেশাগত কারণে দুজনের মধ্যে কিছুটা রেষারেষি ছিলই। যার কারণে জয়দেব সেন খুন হলে ফেঁসে যায় জাগ্রুতি।

প্রত্যেকটা পর্ব এমন জায়গা শেষ হয় যেখান থেকে রহস্যের জালে আটকে পড়বেন দর্শক। টানটান উত্তেজনা নিয়েই শেষ হয় প্রত্যেক পর্ব। ক্রাইম রিপোর্টার হিসেবে জাগ্রুতি পাঠকের ডেডিকেশন ছিলো শিক্ষা নেওয়ার মতো ঘটনা। খুব অল্প সময়ে নিজ যোগ্যতায় ব্যুরো চিফ হয়ে যান জাগ্রুতি। সফলতার সঙ্গে সঙ্গে শত্রু বাড়তে থাকে। ঈর্ষারও পাত্র হন। এশিয়ান এজ সংবাদপত্রে এডিটর ইমরান সিদ্দিকী চরিত্রায়ণ ছিলো বিশ্বাস করার মতো। সাংবাদিকতার প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ, রাজনৈতিক ও মালিক পক্ষের চাপ সত্ত্বেও একজন সত্যিকারের লিডার হিসেবে দেখা গেছে তাঁকে। জাগ্রুতি পাঠক জেলে গেলে সম্পাদক হিসেবে জাগ্রুতির পক্ষাবলম্বন করেন। তবে সরকারি বিজ্ঞাপন কমে যাওয়ায় মালিকপক্ষের চাপে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন ইমরান। তখন ‘নাথিং অ্যান্ড নো ওয়ান ইজ অ্যাভাব দ্য বিজনে ‘ মালিকপক্ষের এমন বক্তব্যে চরম বাস্তবতার রূপায়ন ফুটে ওঠে। এদিকে সম্পাদকের চেয়ারে বসে নতুন সম্পাদক। যিনি জাগ্রুতি জেলে যাওযার পর ব্যুরো চিফ এর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো পরিচালনার একটা ধারণাও এখানে স্পষ্ট বোঝা যায়।

তবে নানা গ্যাঁড়াকলে এরই মধ্যে জাগ্রুতির জেলে কেটে যায় দীর্ঘ সাতটা বছর। রাজনীতি, পুলিশ ও মাফিয়া জগতের সম্মিলিত চক্রান্তে জীবন থেকে হারিয়ে যায় জাগ্রুতির সুন্দর সময়। অবশেষে মুক্তি পায় তবে ভুলতে পারেন না তাঁর জীবনের ঘটে যাওয়া এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। যা ভোলা যায়ও না
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৪:১৬
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×