নগরকেন্দ্রিক জীবনে এদেশের একটি ফলের নাম আমরা বহুলভাবে ব্যবহার করে থাকি। তবে অনেকেই চোখে দেখিনি ফলটি। জানি না ফলটির গুণের কথা। ফলটি হচ্ছে 'গাব'। কথায় কথায় গাবের কথা এসে গেলেও এর সম্পর্কে আমরা খুব একটা জানি না। দিনকে দিন হারিয়ে যাচ্ছে গাবগাছ। অথচ গ্রামবাংলায় বর্ষার আকর্ষণীয় ফল হচ্ছে গাব। বড় বড় সবুজ পাতায় ঠাসা গাছটিকে অনেকেই ভূতের বাড়ি বলে থাকে। ধারণাটি মিথ্যা হলেও ভূতের বাড়ি বলার পেছনে রয়েছে যুক্তি। যুক্তিটি হচ্ছে গাবগাছ কুচকুচে কালো। কালো এবং ঝোপালো বলে রাতে অনেকেই গাছটি দেখে ভয় পেত। সেখান থেকেই এসেছে 'গাবগাছে ভূতের বাড়ি'।
প্রায় শত বছর আগে গাছটি এ অঞ্চলে আসে। ধারণা করা হয় গাবগাছের জন্মস্থান মালয়, টেনসেরিস, চীন, সিঙ্গাপুর, জাভা প্রভৃতি শুষ্ক জলবায়ুর দেশে। তবে গাব দেশি ফল হিসেবে বেশি পরিচিত। দেশে গাবের রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার। গাবের ইংরেজি নাম ম্যাগোবটিন (গধহমড়নঃববহ)। বৈজ্ঞানিক নাম উরড়ংঢ়ুৎড়ং উরংপড়ষড়ৎ।
গাবের বৈজ্ঞানিক নামে একে স্বগর্ীয় হিসেবে বলা হয়েছে। এর তামাটে রঙের কচি পাতা দিয়ে বাঁশি বানানো হয়। গ্রীষ্মকালে ছোট ছোট ফুলে গাছ ভরে ওঠে। ফুলের হালকা সুগন্ধ চারদিকে সুবাস ছড়িয়ে দেয়। বর্ষায় ফল পাকে। সুগন্ধযুক্ত পাকা ফল দেখতে ছোট কমলা লেবুর মতো। হালকা হলুদ কখনও লাল রঙের হয়। গাব ফলের শাঁস সুস্বাদু ও পাকা অবস্থায় তাজা খাওয়া যায়। কাঁচা গাব অনেক অঞ্চলে রান্না করে খায়। শুধু মানুষ নয়, বাদুরেরও প্রিয় খাবার এই গাব। পাকা ফলে ঔষধি গুণও কম নয়। পাকা গাবে থাকে 84.6% জলীয় অংশ, 0.5% প্রোটিন, 0.1% চর্বি, 0.2% খনিজ. 14.6% শর্করা, 0.1% ক্যালসিয়াম, 0.02% ফসফরাস, 0.2% লৌহ। প্রতি 100 গ্রাম ফলের মধ্যে 30 ক্যালরি তাপ পাওয়া যায়। শাঁস থেকে স্কোয়াশ ও জেলি হয়।
গাব সম্পর্কে আগেই বলেছি, এর রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার। এই ফলটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় জাল রঙ করার কাজে। এছাড়া গাবের আঠা দিয়ে নৌকার ফাটল মেরামত করা হয়।
দিনে দিনে গাবগাছ হারিয়ে যাচ্ছে। এ ফলটি নিয়ে নেই কোনও গবেষণা। নগর জীবনে তো নয়ই, গ্রামেও এখন গাবগাছের দেখা মেলা ভার। তবে আশার কথা এই, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলগাছ উন্নয়ন প্রকল্পের জার্মপ্লাজম সেন্টারে গবেষণার জন্য গাছ লাগানো হয়েছে। বাংলার ঐতিহ্য ফলটি যেন বিলীন হয়ে না যায় এ প্রত্যাশা সবার।
দুদুমিয়া

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



