আগেই এ সিদ্ধান-
নেয়া উচিত ছিল
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
শিক্ষাবিদ, লেখক
সিইসির আগেই এ ধরনের সিদ্ধান- নেয়া উচিত ছিল। তাহলে এত অচলাবস্থার সৃষ্টি হতো না, সঙ্কটও ঘনীভূত হতো না। সিইসির একগুঁয়েমিই ছিল এর বড় কারণ। এজন্য রাজপথে অনেক প্রাণহানি হল, অর্থনৈতিক ক্ষতিও কম হল না। সিইসি শুভবুদ্ধির পরিচয় দিলে এসব ঘটত না। রাষ্ট্রপতিও অনেক সময় নিয়েছেন উপযুক্ত উদ্যোগ নিতে। এটা যে শেষ পর্যন- করতেই হবে, সেটা তার বোঝা উচিত ছিল। কারণ সিইসির ব্যাপারে অনাস্থা ছিল প্রায় সবার। বাংলাদেশের রাজনীতিতে যাদের মতামত গুরুত্ব পায়, সেই বিদেশীরাও আগে থেকেই তার ব্যাপারে আপত্তি জানাচ্ছিলেন। আমি মনে করি, সিইসি প্রশ্নে বেশি কালক্ষেপণ করা হয়েছে। অথচ সময় এখন খুবই মূল্যবান। রাষ্ট্রপতি নিজে প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার ব্যাপারে কিন' দ্রুতই সিদ্ধান- নিয়েছেন। তার উচিত ছিল নির্বাচন কমিশন সংস্কারেও দ্রুত উদ্যোগী হওয়া।
সবার জন্যই ভালো খবর
জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী
সাবেক উপদেষ্টা
শেষ পর্যন- যে সিইসি এমএ আজিজের সুবুদ্ধি হল এবং তিনি বিদায় নিলেন_ এটা সবার জন্যই একটি ভালো খবর। আমার মনে হয়, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে একটি বড় বাধা অপসৃত হল। আরও কিছু বাধা অবশ্য থাকবে। তবে এ মুহূর্তে এটাই ছিল বড় বাধা। তার বিদায় কাঙ্ক্ষিত হলেও সেটা ঘটতে অনেক দেরি হয়েছে। অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। তারপরও সিইসির বিদায় নেয়ার খবর স্বস-ির।
নতুন সিইসি নিয়ে যেন
বিতর্ক না হয়
এম মুজিবুল হক
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিইসি ছুটিতে যাওয়ার যে সিদ্ধান- নিয়েছেন, তা সুষ্ঠুভাবে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম করবে। কারণ চারদলীয় জোট ছাড়া প্রায় সবাই তার অধীনে নির্বাচন করতে চাইছিল না। এখন প্রশ্ন হল, সিইসির দায়িত্ব কে পালন করবেন। অন্য তিন কমিশনারের কাউকে ভারপ্রাপ্ত সিইসি নিয়োগ করা যাবে কিনা এবং সেটা বিশেষ করে আন্দোলনরত দলগুলো মেনে নেবে কিনা। কারণ অন্যদের ব্যাপারেও তাদের আপত্তি রয়েছে। সিইসি ছুটিতে থাকাকালে বাইরে থেকে কাউকে নির্বাচন অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য আনা যাবে কিনা, সেটা আইনজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি অবশ্য পারেন অধ্যাদেশ জারি করে আইনগত অস্পষ্টতা থাকলে তা দূর করতে। সে ক্ষেত্রেও দেখতে হবে সাংবিধানিক কোন বাধা রয়েছে কিনা। সিইসির পথ কুসুমাস-ীর্ণ নয়, এটা বারবারই দেখা যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সবারই এটা বোঝার কথা। এখন যাই করা হোক, আলোচনার ভিত্তিতে করা উচিত। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রপতি যেভাবে এ দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, তা নিয়ে বিতর্ক এখনও চলছে। নতুন সিইসি নিয়ে যেন আবার কোন বিতর্কের সৃষ্টি না হয়।
ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠান বড়
মোজাফফর আহমদ
অর্থনীতিবিদ
আমরা তো বহুদিন থেকেই নির্বাচন কমিশনসহ গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের কথা বলে আসছি। বিতর্কিত সিইসির ব্যাপারে সিদ্ধান-ও হল অনেক দেরিতে। আজিজ সাহেবকে সরানোর ব্যাপারে যারা উদ্যোগী, তারা নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে তেমন কিছু বলছেন না। তারা অতঃপর এদিকে দৃষ্টি দেবেন বলে আমি আশা করছি। নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার না হওয়ায় কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, এমএ আজিজ হচ্ছেন তারই জলজ্যান- প্রমাণ। তার চলে যাওয়ার পরও কিন' সমস্যা রয়ে যাচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচনী বিধিবিধানের সংস্কার এখন খুব জরুরি। সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজনের তরফ থেকে আমরা এ নিয়ে বেশ কিছু সেমিনার করেছি, প্রস-াব রেখেছি। রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে গিয়ে সেসব প্রস-াব তুলে ধরার জন্য আমরা সময় চেয়েছিলাম। তিনি সময় এখনও দেননি। বর্তমান সঙ্কটে এ কথাই আমি জোর দিয়ে বলব যে, ব্যক্তির চেয়ে প্রতিষ্ঠান বড়। আমাদের ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে থাকলে চলবে না, প্রতিষ্ঠান ও বিধি-ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে।
তার বিরুদ্ধে মামলা
হওয়া উচিত
এম হাফিজউদ্দিন খান
সাবেক উপদেষ্টা
সিইসি এমএ আজিজের বিদায়ই ছিল কাঙ্ক্ষিত। রাজনৈতিক দলগুলোরও আগে থেকে আমরা বলেছি, তিনি গ্রহণযোগ্য নন। শুরু থেকে প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপেই তিনি বিতর্কিত হয়েছেন। সুনির্দিষ্ট আইনও ভঙ্গ করেছেন। হাইকোর্টে হেরে যাওয়ার পরও ভোটার তালিকা প্রণয়নে তার একক কার্যক্রম বন্ধ করেননি। রাষ্ট্রের 64 কোটি টাকা তিনি অপচয় করেছেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত। পরেও ভোটার তালিকা তৈরিতে অনেক অনিয়ম করা হয়েছে। অনেকেরই নাম তালিকায় ওঠেনি। সিইসির তৈরি ভোটার তালিকা কারও কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। খসড়া তালিকা প্রকাশ না করেই তিনি তা ছাপাখানায় দিয়েছেন। এখন মুদ্রণকারীরাই বলছেন, তাতে অনেক ভুল। এ ভুলে ভরা ভোটার তালিকায় গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে কিভাবে? ভোটার তালিকা সংশোধনের প্রয়োজন রয়েই গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিনামূল্যে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স দিতে চাইলেও সিইসি তা গ্রহণ করেননি। আমার মনে হয়, তিনি স্বচ্ছ নির্বাচন চাননি। চাইলে এসব করতেন না। প্রাথর্ীদের জন্য প্রযোজ্য যে 8 দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন হাইকোর্ট, সেটাও তিনি লুফে নেননি। বরং বললেন_ এ নির্দেশনা বাধ্যতামূলক নয়। মনে হয়েছে, কারও ইঙ্গিতেই তিনি এসব করছেন। এ অবস্থায় তার চলে যাওয়াটাই ছিল কাম্য। এক্ষেত্রে বরং দেরি হয়েছে। তাকে কেন্দ্র করে সমাজে বেড়েছে অস্থিরতা ও বিভক্তি। এরশাদও বলেছেন, 'বিশ্ববেহায়া' হিসেবে সিইসি তাকেও ছাড়িয়ে গেছেন। যাহোক, গোটা নির্বাচন কমিশনই এখন পুনর্গঠন করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে হতে হবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। কমিশন গ্রহণযোগ্য না হলে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে না। একথা কিন' আমরাও বলছিলাম। তবে কাজ হল তখনই, যখন কয়েকজন প্রভাবশালী রাষ্ট্রদূত একযোগে কথাটি বললেন।
আলো এলো বড় দেরিতে
হাসান আজিজুল হক
কথাসাহিত্যিক
কৃত্রিমভাবে হলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা ভয়ানক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। আমি কৃত্রিম সংকট বলতে এই বোঝাচ্ছি_ বাংলাদেশের জনগণ এমন কোন অপরাধ করেনি, যাতে ক্ষমতার রাজনীতি এমন কুৎসিত অমোচনীয় সংকটের জালে জড়িয়ে পড়বে। এ সংকট রাজনীতিরই বটে_ দেশ বা জনগণের নয়। বলতেই হবে, ক্ষমতায় টিকে থাকার ও ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য একটা মরিয়া দুনর্ীতির জাল গত পাঁচ বছর ধরে বিছানো হয়েছিল। জাল ছিন্ন করার জন্য ক্ষমতাই আবার মূল লক্ষ্য ছিল। কিন' পরিস্থিতি সহ্যের বাইরে চলে যাওয়ায় শেষ পর্যন- জনগণ দুনর্ীতি ও কারচুপিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের এই অপচেষ্টা রুখে দাঁড়িয়েছে। আমার কাছে এটা সামান্য স্বস-িদায়ক মনে হচ্ছে। সুড়ঙ্গের শেষে যে আলো দেখা যাচ্ছে তা বড়ই দেরিতে এবং আলো পর্যন- পেঁৗছানোর পর বাকি পথটা আলোকিত থাকবে না আবার অন্ধকারে ঢাকা পড়বে_ এখন সেটাই দেখার বিষয়।
উপদেষ্টাদের অভিনন্দন জানাই
মাহবুব উল আলম চৌধুরী
ভাষাসৈনিক, লেখক
সিইসি এমএ আজিজ একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। শুধু 14 দল নয়, অন্যান্য দল-মতের লোকও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসছেন। এমএ আজিজ দলীয় ব্যক্তি এবং তার কার্যকলাপও বিতর্কিত। ভোটার তালিকা প্রণয়নে তার একগুঁয়েমি এবং অনিয়মের কথা সবার জানা। তার অন্যান্য কাজও জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এমএ আজিজের গোঁয়াতর্ুমির জন্য দেশ সংঘাতের দিকে চলে গিয়েছিল। রাজপথে অনেককেই প্রাণ দিতে হয়েছে। তার পদত্যাগের দাবি বিদেশী কূটনীতিকরাও সমর্থন করেছেন। তারাও চাইছিলেন তিনি সরে যান। চারদলীয় জোটের প্রতি আনুগত্যের কারণেই হয়তো এমএ আজিজ এই দাবি এতদিন উপেক্ষা করেছেন। যাহোক, দেরিতে হলেও তার সুবুদ্ধির উদয় হয়েছে। আমি বিশেষ করে উপদেষ্টাদের অভিনন্দন জানাব এই সঙ্কট মোচনে তাদের শ্রম, সময় ও মেধা দেয়ার জন্য।
জাতি স্বস-ি ফিরে পেয়েছে
সৈয়দ আবুল মকসুদ
লেখক, সাংবাদিক
বিচারপতি এমএ আজিজ একজন অনুভূতিহীন ও বিচার-বিবেচনাবর্জিত মানুষ। ঘৃণা ও করুণা ছাড়া তার আর কিছু প্রাপ্য নয়। এমন একটি উঁচু ও দায়িত্বপূর্ণ পদে যারা তাকে মনোনীত করেন এবং নিয়োগ দিয়ে বসান, তারাও ক্ষমাহীন অন্যায় করেছেন। উচ্চ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, পরীক্ষিত ও যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষকেই সাধারণত এ জাতীয় সাংবিধানিক পদে নিয়োগ দিতে হয়। গত সরকার হীন স্বার্থপ্রণোদিত হয়েই তাকে ওখানে বসিয়েছিল। তবে অনেক পানি ঘোলা করে নিজে চরম বেইজ্জত হয়ে শেষ পর্যন- যে তিনি জাতিকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান- নিয়েছেন, সেটাই স্বস-ির।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



