ইউনিভার্সিটির প্রথম বর্ষে পড়ি। বাংলা সিনেমার তখন রমরমা সময়। ডিপজল, মেহেদী, মুনমুন, ময়ূরীদের কল্যানে বাংলা সিনেমা লাস ভেগাসের পর্ণ ইন্ডাস্ট্রির সাথে পাল্লা দিয়ে রেসের ঘোড়ার মত ছুটছে। এরকম একসময় আমাদের ব্যাচের পোলাপানের মাথায় ভূত চাপল সময়ের চাহিদা মিটানোর। আমাদের মনে হতে লাগল যে যুগ অনেক এগিয়ে গেছে, তাই সময়ের প্রয়োজনে এসব সিনেমা দেখা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যেমন ভাবনা, তেমন কর্ম সম্পাদন। ইউনিভার্সিটির আশেপাশে বেশকিছু সিনেমা হল আছে, তাই হল বাছাইয়ের জন্যও একটা প্রক্রিয়ার মাঝ দিয়ে যেতে হল।
রাতের খাওয়ার পর বিশাল কাফেলা নিয়ে যাত্রা শুরু হলো সিনেমা হল অভিমুখে। গ্যাং মেম্বার গনণা করে দেখা গেল সংখ্যা ২০ জন। মন্দ না। কিন্তু এতজনের যাতায়াত ব্যবস্হাও বেশ সমস্যাবহুল।বাস নিতে চায় না। কারণ ভাড়া মেরে দেয়ার ভয়। যাই হোক সে সমস্যার সমাধানও হলো।
অনেক কাহিনী করে সিনেমা হলে পৌঁছে দেখা গেল অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের আরও কিছু উৎসাহী দর্শক হাজির। তাদের মারফতে জানা গেল সেদিনের লেট নাইট শোতে চলছে মুনমুন অভিনীত "বিষে ভরা নাগিন"। কঠিন অবস্হা!! পূর্ব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কিছু গ্যাং মেম্বার আমাদের কিছু পোস্টার দেখিয়ে এই সিনেমা দেখার সার্থকতা বর্ণনা করতে লাগল। পোস্টার দেখে ভিরমী খাওয়া আমার জনৈক বন্ধুর মন্তব্য ছিল "দোস্ত, এইটা তো দেখি কাঁঠালের সাথে লিচু ফ্রি!"
যাই হোক শো শুরু হলো। দেখলাম হলে উপস্হিত সবার উদ্দেশ্য বিপথগামী হলেও জাতীয় সংগীতের প্রতি কেউ অশ্রদ্ধা জ্ঞাপন করল না। বলে রাখা ভাল হলের উপস্হিত দর্শকদের বেশিরভাগ মানুষই আমাদের গ্যাং মেম্বার। তাই উপস্হিত নবীন দর্শকদের মাঝে বয়স্করা একটু অস্বস্তিবোধ করছিলেন। যেমন আমার পাশে বসা চাচার মন্তব্য "আইজকা দেখি সব পোলাপান আইছে। এগোর মধ্যে সিনেমা দেখা যাইবো না"। চাচার কথা ভুল ছিল না। সুড়সুড়িমার্কা দৃশ্য এলেই শুরু হয়ে যাচ্ছিল গ্যাংমেম্বারদের হল ফাটানি সিটি, চিৎকার ও হাত তালি। অবস্হা দেখে আর আমার পাশে বসা চাচা মন্তব্য করেন "কোলবালিশ তো দেখা যায়। এইডা কি অবস্হা"। চাচার মন্তব্য শুনে গ্যাংমেম্বাররা অন্ধকারে উত্তর দেয় "কোলবালিশ না দেখতে চাইলে চাচা লেট নাইটের শোতে আইছেন কেন? বাড়িতে চাচীর কাছে যান।" বলাইবাহুল্য উঠতি বয়সের পোলাপানের সাথে চাচা তর্ক করেন না। তাই মন্তব্য চুপচাপ হজম করেন।
সিনেমা শেষ হয় সময় মত। হল থেকে বেরিয়ে আমরা গ্যাংমেম্বাররা হেঁড়ে গলায় "বিষে ভরা নাগিনের" বিষে ভরা গান "সখী তোর অঙ্গ যেন বরিশালের আমড়া, আটি তার মিঠা যেমন, মিঠা তেমন চামড়া" গাইতে গাইতে বাস স্টেশনে আসি। কিন্তু কোন বাসওয়ালা আমাদের নিতে রাজি হয় না। এর মাঝে একগ্রুপ বেঈমানী করে ট্রাক থামিয়ে ট্রাক মারফত ইউনিভার্সিটিতে চলে গেল। অবশেষে রীতিমত রাস্তা বন্ধ করে বাস থামিয়ে ভাংচুরের ভয় দেখিয়ে বাস ড্রাইভারকে রাজি করানো হলো। বলার অপেক্ষা রাখে না বাস ড্রাইভার আদৌ ভাড়া পেয়েছিল নাকি তাতে আমার আজও সন্দেহ আছে।
তবে রাত-বিরাতে গ্যাংমেম্বার পরিবেষ্ঠিত অবস্হায় এইরকম মাস্তি করার স্মৃতি খুব একটা নেই আমার জীবনে।
বেহুদা প্যাঁচাল (বিষয়: বাংলা সিনেমা দর্শন)
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে
তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না
সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন
লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা
ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।
মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না
নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন