জনৈক ফজলুল বারী দৈনিক জনকন্ঠে গত দু'দিন ধরে অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে লিখছেন। হঠাৎ গতকাল লেখাটি আমার চোখে পড়ল। একটু আগ্রহী হয়ে উঠলাম। আমি নিজে যখন স্টুডেন্ট ছিলাম, তখন দীর্ঘ আড়াই বছর সিডনিতে ছিলাম। আর লেখার বিষয়-বস্তু সিডনিকে কেন্দ্র করে দেখে বেশ আগ্রহ নিয়ে লেখাগুলো পড়ছি।
বারী সাহেব বেশ মজাদার ও ইন্ন্টারেস্টিং তথ্য দিলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত ও ভুল তথ্য উপস্হাপন করেছেন। তিনি সিডনিতে নেমে প্রথম যে জায়গাটায় গেছেন তা হলো কিংসক্রস। কিংসক্রস বিখ্যাত ড্রাগ, প্রস্টিটিউশন ও সস্তা স্ট্রিপ ক্লাবের জন্য। বারী সাহেবের মতে এখানে না গেলে নাকি অস্ট্রেলিয়ার নাইট লাইফ সম্পর্কে আইডিয়া পাওয়া যায় না। কথাটা পড়ে হাসব না কাঁদব বুঝতে পারি নি। নাইট লাইফের স্বাদ পেতে কিংসক্রসে যাওয়ার দরকার নেই। জর্জ স্ট্রিট ও ডার্লিং হারবারে ফ্রাইডে বা সেটারডে নাইটে গেলেই অস্ট্রেলীয় নাইট লাইফের স্বাদ পাওয়া যায়। এজন্য কিংসক্রস যাওয়ার দরকার আছে বলে মনে করি না। কিংসক্রস সম্ভবত শতবছরেরও বেশি পুরানো এলাকা। সেসময় নাবিকদের সস্তা বিনোদন দেয়ার উদ্দেশ্যেই কিংসক্রসের জন্ম।আজকাল এই এলাকাটি ড্রাগ ডিলিঙের জন্যই বিখ্যাত। ভবঘুরে (জাঙ্কি) ও উঠতিবয়সী ড্রাগ অ্যাডিক্টরা মূলত ড্রাগ সংগ্রহের জন্য এখানে আসে।
ইমিগ্রেশন নিয়ে বারী সাহেব আজকের ফিচারে অনেক ফালতু প্যাঁচাল লিখেছেন। অস্ট্রলিয়ায় পড়তে আসতে ইচ্ছুক বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের আইইএলটিএসের স্কোর নাকি সাড়ে চার থাকা লাগবে। আমার জানামতে এই স্কোর সাড়ে পাঁচ না হলে হাইকমিশন ভিসা দেয় না। আইইএলটিএসের দুই লেভেলের অস্ট্রেলীয় রিকোয়্যারমেন্ট আছে। ভালো ইউনিভার্সিটিতে এ্যাডমিশনের জন্য সব ব্যান্ডে ৬ করে পেতে হয়। তবে অনেক ইউনিভার্সিটিতে সাড়ে পাঁচেও চলে। তবে কিছু কলেজে মনে হয় ৫ পেলেই অফার লেটার দিয়ে দেয়। কিন্তু হাইকমিশন সাড়ে পাঁচের কম ওভারঅল স্কোর থাকলে ভিসা দেয় না। এটা আমার জানা হিসাব তিন বছর আগের। দিনকে দিন নিয়ম কঠিন হচ্ছে। তাই আজকাল নিয়ম-কানুন এরচেয়ে কঠিন হতে পারে, কিন্তু সহজ হবার কোন চান্স নেই।
"যারা কাজ করে টিউশন ফি যোগাড় করতে চান তাদের গ্রামের দিকে থাকার চিন্তা করা উচিত। কারন সেসব এলাকায় কৃষিকাজের রোস্টার ঠিকমত মেইনটেইন করা হয় না বলে বলে সেক্ষেত্রে ভিসা বাতিলের ঘটনাও নগণ্য" -- এই মর্মে বারী সাহেব যে উপদেশ দিয়েছেন তাও হাস্যকর বৈকি। আমার তিন বছর প্রবাস জীবনে কখনও শুনিনি যে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট কৃষিকাজ করছে অস্ট্রেলিয়াতে। গ্রামে থাকার যে পরামর্শ উনি দিয়েছেন, সে পরামর্শ উনাকে যে দিয়েছেন, তার বুদ্ধি সম্পর্কে সুস্হ মানুষের মনে প্রশ্নের উদ্দেক হওয়া অস্বাভাবিক নয়। উল্লেখ্য এখানে বেশিরভাগ ইউনিভার্সিটি মূল শহরগুলোতে অবস্হিত।গ্রামাঞ্চলে ইউনিভার্সিটি তো বাদ দিলাম ক্ষেত্রবিশেষে হাইস্কুলও নেই। আমার বস কান্ট্রি সাইডে শৈশব পার করা মানুষ। উনি হাইস্কুলে উঠার পর ২০০ কিমি দূরবর্তী বোর্ডিং স্কুলে হাইস্কুল পাঠ সম্পন্ন করেছিলেন। কারন উনার শহরে সেসময় (১৯৯০ এর শুরুর দিকে) কোন হাইস্কুল ছিল না। ব্যাপারটি বানানো নয়। এখানে অনেক কান্ট্রি টাউনের জনসংখ্যা ২০০ বা ৩০০ জনের মত। তাই সে সব জায়গায় উচ্চশিক্ষার তেমন কোন সুযোগ নেই। উচ্চভিলাসীরা অনেকেই খুব কম বয়সে হোমটাউন ছেড়ে বড় বড় সিটিতে মুভ করে যায়।
আরও কিছু টুকিটাকি ব্যাপার আছে। লিখতে গেলে বিশাল ইতিহাস হয়ে যাবে। আশাকরি বারী সাহেব আগামী দিনগুলোতে একটু রয়ে-সয়ে লিখবেন আর ভুলতথ্য প্রদান না করে সঠিক তথ্য পাঠকদের কাছে তুলে ধরবেন।
বারী সাহেবের কলাম: [wjsK=http://www.dailyjanakantha.com/fn/tml1]
বারী সাহেবের অস্ট্রেলিয়া দর্শন ও দু'টি কথা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
১৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে
তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না
সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন
লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা
ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।
মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না
নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন