গণগ্রেপ্তার ঠেকাতে সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক নবায়নে মরিয়া হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতের মুক্ত নেতারা এখন দৌড়ঝাপ করছেন মন্ত্রী, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গন্তব্যে। মধুর সম্পর্ক গড়তে সরকারও নমনীয়।
এখন হেফাজতের পক্ষ থেকে ''ভুল বোঝাবুঝি'', অতঃপর সংসারী হওয়ার বাসনা নিয়ে চূড়ান্ত একটি বিবৃতি এলেই হলো। তবে হেফাজতি-সরকারি দাম্পত্য নবায়নে দারুণ ভাবনায় পড়েছে দেশীয় গণমাধ্যম।
কয়েক সপ্তাহ ধরে বলাৎকার, মৌখিক কবুল, চুক্তিভিত্তিক বিয়ে আর বনসাই হুজুরের পর্ণোগ্রাফী গল্পগুলো অদৃশ্য সূত্র থেকে হয়তো আর সরবরাহ করা হবেনা, প্রকাশ পাবেনা মিডিয়াতে। এতে হুজুরদের আয়েশী জীবনের সনদ মিললেও টিআরপি র্যাংক হারাবে একাত্তর টিভি সহ টেলিভিশনগুলো। পত্রিকার হাজারো শব্দ লেখার সুযোগ থাকবে না।
২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্ত্বর কেন্দ্রীক হেফাজতীদের তান্ডবের পর যেভাবে মিডিয়াগুলো টিআরপি/সার্কুলেশন বাড়ানোর পর হঠাৎ তাতে ভাটা পড়ে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ শীর্ষ অন্তত আটজন নেতা গ্রেপ্তারের পর গত ১৯ এপ্রিল ধানমন্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসভবনে যান সংগঠনটির কয়েকজন নেতা। এ নিয়ে গণমাধ্যমে লেখালেখি হয় যে, হেফাজত নেতারা মামুনুল হক সহ অন্যান্যদের মুক্তি এবং নতুন করে গ্রেপ্তার-হয়রানি বন্ধে সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে চান। এমনকী ভারত বা মোদী বিরোধী আন্দোলনেও তারা সামনের দিনগুলোয় সামিল হবেন না। যদিও এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরণের স্পষ্টবচন আসেনি।
তবে হেফাজতের নরম সুর বীণার তারের মতো বাজছে। সর্বশেষ ২৩ এপ্রিল ২০২১ হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা মোদীর আগমনের বিরোধিতা করেছি। তবে সেই বিরোধিতা বক্তব্য ও বিবৃতি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিলো। হেফাজত মাঠের কোনও কর্মসূচী দেয়নি। বরং সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই ইস্যুতে আমাদের কোনো কর্মসূচী নেই। বিশেষ করে ২৬ মার্চ দেশের কোথায় হেফাজতে ইসলামের কোনও কর্মসূচী ছিলো না।
''কিন্তু ২৬ তারিখ জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমে সাধারণ মুসল্লিদের সাথে কিছু দুষ্কৃতিকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এতে সাধারণ মুসল্লিদের অনেকেই আহত হয়। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় হাটহাজারী ও বি-বাড়ীয়ায় বিক্ষোভ করে সাধারণ ছাত্র জনতা। এরই পরিপেক্ষিতে হেফাজত দুই দিনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী ঘোষণা করে। ২৭ মার্চ ছিলো বিক্ষোভ সমাবেশ ও ২৮ মার্চ শান্তিপূর্ণ হরতাল, হেফাজত মহাসচিব বলেন।
তিনি বলেন, সরকারের উদ্দেশ্যে আমরা স্পষ্ট বলতে চাই। ২৬ তারিখ আমাদের কর্মসূচী ছিলো না। বাইতুল মোকাররমে যারা বিক্ষোভ করেছে, তাদের সাথে হেফাজতের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং সে ঘটনায় পরিস্থিতি শান্ত করতে ভূমিকা রেখেছে হেফাজত। হাটহাজারীতে যে বিক্ষোভ হয়েছে, সেটাও কেন্দ্র ঘোষিত কোনও কর্মসূচী ছিলো না। সেটা ছিলো ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ। শুক্রবার হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি।
বি. বাড়িয়াসহ কয়েকটি জায়গায় বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে। সে ঘটনার সাথে হেফাজতের হরতাল কর্মসূচী সরাসরি কোনও সম্পর্ক ছিলো না। ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইউনুসিয়া মাদরাসায় হামলা করায় বিক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ মাঠে নেমে আসে, এবং পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
হেফাজত মহাসচিব বলেন, সরকারের কাছে আহবান জানাবো, মাদরাসায় হামলা ও তৌহিদি জনতাকে উস্কানি দেওয়ার পিছনে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করুণ। এ ঘটনার সাথে কোনো তৃতীয় পক্ষ যদি জড়িত থাকে, আপনারা তদন্ত করে বের করুণ। এতে আমরাও সহযোগিতা করবো। তারপরেও অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা সমূহের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। এ ক্ষেত্রে নেতৃবৃন্দের আরো সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিলো বলে আমরা মনে করি। আগামীতে হেফাজতের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা এসব ক্ষেত্রে আরো সতর্ক থাকবে।
তিনি বলেন, সরকারের প্রতি আমাদের আহবান, দেশের শান্তি শৃঙ্খলা আমরাও চাই, আপনারাও চান। আমরা কোনোভাবেই চাই না যে, দেশের মধ্যে অশান্তি তৈরি হোক। তাই আসুন আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কোনও সমস্যা থাকলে তার সমাধান করি।
হেফাজতে ইসলামের এই সমাধানকল্প, অদৃশ্য জায়গায় দৌড়ঝাপ আর সরকারের কিঞ্চিৎ নমণীয়তা বলে দিচ্ছে উভয়ের মধ্যেকার সম্পর্ক জোড়া লাগছে। এতে অবুঝ ছাত্রদের প্রাণহানি, জনসাধারন বা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি নষ্ট হলেও মূলত তার প্রতিকারের দৃশ্য হয়তো আরও কয়েক বছরের জন্য চোখে পড়বে না। যতদিন না আবারও হেফাজত মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।
২০১৩ সালের ৫ মে তান্ডবের অর্ধযুগ ধরে হেফাজতের মামলার তদন্ত কচ্ছপের মতো ঘুমিয়ে থাকে, সানন্দে ঘুরতে থাকেন আসামিরা। এমনকী ২০১৩ সালের হেফাজতী মামলায় যেসব জামায়াতি আসামি হয়েছিলেন তাদেরও এসব মামলা কখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। সরকার বিরোধী আন্দোলন, নাশকতামূলক কর্মকান্ডের বিভিন্ন অভিযোগে জামায়াত নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হলেও হেফাজতের সঙ্গে অংশীদারিত্বমূলক মামলায় তারা আয়েশেই ছিল। এতোগুলো সময়ে মিডিয়াতেও মামলার তদন্ত নিয়ে লেখা হয়নি।
২০১৪ কী ২০১৫ সালের পর প্রকাশ পায়নি, আল্লামা শফী কিভাবে দেশটাকে আফগানিস্তান বানিয়ে খেলাফত শাসন পরিচালনা করবেন। বাবুনগরী চালাবেন রাষ্ট্র। এবার নতুন করে সেসব লোমহর্ষক তথ্য মিডিয়ায় উঠে এসেছে। দূর হ শয়তান হেফাজত-সরকারের সম্পর্ক টিকে থাক ২১০০ সাল পর্যন্ত।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:০৩