কতটা এর সত্য? লন্ডনের মত কসমোপলিটান শহরের দোতলা বাসে বসে কথাটা আমার মনে হয়। লাঞ্চ টাইম। অফিস-কর্মীরা বেরিয়েছে খাদ্যের খোঁজে। ঢুঁ মারছে বিভিন্ন ফাস্ট-ফুড শপ বা রেস্টুরেন্টে। ফুটপাতে দ্রুত হাঁটতে থাকা মানুষগুলোকে খেয়াল করি। কতটা বিচ্ছিন্ন দ্্বীপ এরা?
হাঁটার দ্রুততা কি একধরনের অমানবিকতা বা যান্ত্রিকতার প্রকাশ বলে আমরা ধরি? তবে যারা দ্রুত হাঁটছে তাদের অনেকেই একা নয়, পুরুষ বা মেয়ে সঙ্গী রয়েছে তাদের, হতে পারে সহকর্মী বা আরো অন্তরঙ্গ সম্পর্কের কেউ। কাজের ফাঁকে এই ঘন্টাখানেক সময়েও তারা বন্ধুত্ব বা সম্পর্কের জলে আদর্্র হচ্ছে তা দেখতে পাই।
তবে কেউ কেউ একা। একাই হাঁটছে। মানুষ একা হতেই পারে। তা গ্রামে হোক বা শহরে। এই একাকীদের মধ্যে কারো কারো হাতটা কানের কাছে। মুঠোয় ধরা মোবাইল ফোন। এরকম মানুষকেও বিচ্ছিন্ন বলা যায় না। শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে সে যুক্ত আছে অন্য প্রান্তের মানুষের সাথে। হয়তো সে প্রান্তের মানুষটির সাথে তার সম্পর্কটি রোমান্টিক নয়, নেহায়েতই কর্মের। তাতে কি? প্রেম, সংসার বা এধরনের কার্যকারণে যারা যোগাযোগ করে না তাদেরকে কি বিচ্ছিন্ন দ্্বীপ ঘোষণা দেয়া যায়?
কতজন এরকম? আমি সংখ্যাটা গোণার চেষ্টা করি। কয়েকবার পরীক্ষা চালিয়ে নিশ্চিত হই যে, প্রতি পাঁচ জনে একজন মোবাইলে কথা বলছে। অর্থাৎ যারা একা হাঁটছে তাদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনে একজন এই মুহূর্তে মোবাইল ফোনে অন্য কারো সাথে যোগাযোগ করছে। অন্যরা হয়তো কিছুক্ষণ আগে করেছে। কেউ কেউ হয়তো বা কিছুক্ষণ পরে করবে।
নেটওয়ার্কিংকে বেশ গুরুত্বপূর্ণই ভাবা হয় ব্যবসা-বাণিজ্যের দুনিয়ায়। ইনফর্মাল যোগাযোগটাকেও হেলা-ফেলা করে দেখে না কেউ। যদিও বাসের দোতলায় কারো সাথে কথা না চালিয়ে চুপচাপ বাইরের দৃশ্য দেখছি আমি তবুও এই সিদ্ধান্তটিকে আমার অবাস্তব মনে হয় না যে শাহরিক মানুষেরা বিচ্ছিন্ন দ্্বীপ নয়।
তবে এরকম একটা ছবি আমাদের সামনে গেঁথে রাখা আছে। আর ক'বছর পরে যখন পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি মানুষ শহরে বাস করবে তখন সম্ভবত: এরকম কথা কেউ আর তুলবেই না। বরং হয়তো গ্রামকেই বিচ্ছিন্ন একটা স্থলভাগ ভাববে মানুষ।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



