রুডলফ। জ্যাকব রুডলফ, নিউ জার্সি হাই স্কুলের ছাত্র। কিছুদিন ধরে সে নিজের সাথে বোঝাপড়া করার চেষ্টা করছে। প্রকাশ করবে নাকি লুকিয়ে রাখবে। কিন্তু কতকাল! আর কতকাল সে এই লুকিয়ে রাখার অভিনয় করবে। এটুকু জীবনে সে এই লুকোচুরির খেলায় ক্লান্ত বোধ করছে। ভালো লাগে না। বোকাদের মত সুইসাইড করে ফেলবে! ধ্যুর। তাতে কারো কিছু আসবে যাবে না। তার মত হাজারো রুডলফ প্রতিদিন মনের কষ্টে নেই হয়ে যাচ্ছে, তাতে সমাজের কখনো নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে বলে শোনা যায় না। আচ্ছা তবে সে কি বলে দেবে মনের কথা। বলে দিলে কি হবে? তার বাবা মা সিনিয়র রুডলফ আর মিসেস রুডলফ কি এটা মেনে নিতে পারবে। তারা কি ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেবে। কথা বন্ধ করে দেবে। ডাস্টবিনের আবর্জনার মত ধাক্কা মেরে নর্দমার পঁচা জলে ছূঁড়ে ফেলে দেবে! আচ্ছা এতদিনের বন্ধুত্বকে কি তারা মূল্যায়ণ করবে না।
আজ নিউ জার্সি স্কুল সেজেছে বর্ণিল সাজে। বার্ষিক পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। গল্পের নায়কদের মত জীবন সিনেমার নায়কেরা পরীক্ষায় সব সাবজেক্টে এ প্লাস পেয়ে পুরষ্কার পায় না। তবে রুডলফ এবার একটা পুরষ্কার পাচ্ছে। স্কুল এসেম্বলির সময় ক্লাস একটর এর জন্য তাকে পুরষ্কার নিতে মঞ্চে ডাকা হলো। সামনে অডিয়েন্সে বসে আছে তার তিনশর বেশী সহপাঠী। সে একেবারে আনস্মার্ট নয়। তবু বুকের মধ্যে কেমন যেন একটা দুরু দুরু ভাব কাজ করছে। হার্টটা কেন এত দ্রুত ব্লাড পাম্পিং শুরু করেছে বুঝতে পারছে না। হার্ট , তার নিজের হার্ট কি মীরজাফরী করে তাকে দূর্বল করে ফেলার চেষ্টা করছে।
পুরষ্কার নেয়ার সময় তার হাত কিছুটা কেঁপে গেলো, থ্যাঙ্কস বলার সময় গলাটাও কাঁপল ঈষৎ। বন্ধুদের উদ্দ্যেশে কিছু বলার জন্য মাইক্রোফোনের সামনে আহবান করলেন উপস্থাপক। থার্ড ব্যাচে পড়া সুদর্শন ইন্ডিয়ান বাঙালী তরুন শুভ্র রয় অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করছে। ইন্ডিয়ানরা বাদামী বর্ণের হলেও তাদের চেহারায় এক অন্যরকম ঔজ্বল্য থাকে। আর রয় এর ঠোঁটের পাশের মেরিলিন মনরো মার্কা তিলটার জন্যই কি তাকে এত আকর্ষনীয় লাগে! কথা বলতে গিয়ে মনে হল তার গলায় কফ জমে আছে। গলা খাঁকারী দিয়ে কফ ছাড়ানোর চেষ্টা করল। মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে গলা খাঁকারী দেয়া বক্তা-দর্শক কারোর জন্যই সুখকর না। সে নার্ভাসনেস ঝেড়ে ফেলল। আজ তার কথা সবাইকে জানিয়ে দেবে।
“অবশ্যই, আমি কিছু নাটক আর নাচের দৃশ্যে অভিনয় করেছি, তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমি আমার জীবনের প্রতিটা দিন অভিনয় করে যাচ্ছি। দেখ আমি এমন কিছুর অভিনয় করি যা আমি নই।” দম নিয়ে রুডলফ আবার মুখ খুলল, “ তোমরা আমাকে স্ট্রেইট জ্যাকবের অভিনয় করতে দেখছ, কিন্তু আমি তা নই। আমি এমন একটি বিষয়ের সাথে জড়িত যাকে অনেকেই বলে LGBT”
সাধারনত এই ধরণের বক্তব্য অনুষ্ঠানে দর্শক বক্তার দিকে খুব একটা নজর দেয় না। বরঞ্চ তারা পাশের জনের সাথে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুরে মেতে থাকে। কিন্তু জ্যাকবের এই বক্তব্যে তারা সবাই তার দিকে ফিরে তাকালো। অডিটোরিয়ারের চাপা গুঞ্জন থেমে গেলো। এখন পিনপতন নিরবতা। সবার মনোযোগ এখন জ্যাকবের দিকে। জ্যাকব বলে চলল,
“LGBT এর অর্থ হলো লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার। পৃথিবীতে মিলিয়নের বেশী টিনেজ আছে যারা মৌখিক আক্রমন ও শারীরিক নির্যাতন এড়াতে প্রতিনিয়ত অভিনয় করে যাচ্ছে, আমিও করছি। কিন্তু আমি এটা আর করতে চাই না। সবশেষে আমি বলতে চাই, আমাকে সাথে নিতে পারো, ছেড়ে যেতে পারো অথবা লাথি মেরে পথ থেকে দূর করে দিতে পারো, তোমাদের যা ইচ্ছা তাই করতে পারো কারণ এখন থেকে আমি যা আমি তারই অভিনয় করব।”
রুডলফ এক নিঃশ্বাসে সব কথা বলে ফেলল। কথা গুলো বলার সময়ে তার গলা এতটুকু কাঁপেনি। ভয় জাগেনি মনে। কিন্তু কথা শেষ হুওয়ার পরে মনের উপর পুরাতন চাপানো ভাবটা ফিরে এলো। সে কি নিতে পারবে এতগুলো মানুষের প্রতিক্রিয়া। দর্শক সারিতে চোখ রাখতে ভয় পাচ্ছিলো। হঠাৎ হাত তালির শব্দে সে মুখ মুলে তাকালো। তার চোখে বিস্ময়। এও কি সম্ভব। তার সকল সহপাঠী দাঁড়িয়ে আছে। সে যখন কান্নাভেজা চোখে স্টেজ থেকে নেমে যাচ্ছে তখনও তার বন্ধুরা হাতে তালি দিয়ে চলেছে।
বাসায় ফিরে শাওয়ার নিলো রুডলফ। এক কাপ ধোঁয়া ওঠা গরম কফিতে ঠোট ছোয়ালো। আজকের কফিটাকে জোশ লাগছে। বাতাসটাকে হাল্কা লাগছে। নিজেকে ফিরে পাওয়ার অন্যরকম এক আনন্দ ভর করেছে তার মনে। রিকি মার্টিনের তুমি আমি গান শুনছে আর সুরের তালে তাল ঠুকছে এমন সময়ে ফোনটা বেজে উঠল মিশন ইম্পসিবলের থিম সংয়ের সুরে। টেক্সট মেজেট। পাঠিয়েছে তার বন্ধু জন। একটা ইউটিউবের লিংক। খুব জরুরী না হলে তো জন এসএমএস করে পাঠাতো না। ফেসবুকে পাঠাত। সে তার প্রিয় ডেল ল্যাপটপ টা ওপেন করে বসল ইজি চেয়ারে। ইউটিউবের স্ট্রিমিং শুরু হতেই সে টাশকি খেলো, এ যে তারই বক্তব্য। আজ যেটা সে স্কুলের অনুষ্ঠানে দিয়েছে। এরি মধ্যে আপলোড হয়ে গেছে ইউটিউবে। আরে একি। আপলোডকারী যে জ্যাকবের বাবা। এ কি করে সম্ভব! সিনিয়র রুডলফ, ছেলের প্রশংসা করে হেডিং এ লিখেছেন, জীবনের অনেক ঘাত প্রতিঘাত থাকে, আমার ছেলে নিজেকে চিনতে পেরেছে, সত্য কথা বলার মানসিকতা তার আছে এজন্য আমি গর্বিত। আমি আমার ছেলের জন্য অবশ্যই গর্বিত।
জন কখনো ছিচকাঁদুনে ছেলে নয়। পোড়া এই জীবনে কম কষ্ট তাকে ভোগ করতে হয়নি। বর্ন আইডেন্টিটির মত সেও তার আইডেন্টিটি নিয়ে ভুগেছে বহুকাল। কিন্তু আজ সে নিজেকে চিনলো নতুন করে। তার বাবার জন্য সেও গর্বিত। চোখের পানি ঝরণা হয়ে ঝরে পড়ল ল্যাপটপের উপর। দরজা খোলার শব্দে সে মুখ ফিরিয়ে দেখল, বাবা-মা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছেন।
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ
২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।