somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন করে নিজেকে চেনা

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রুডলফ। জ্যাকব রুডলফ, নিউ জার্সি হাই স্কুলের ছাত্র। কিছুদিন ধরে সে নিজের সাথে বোঝাপড়া করার চেষ্টা করছে। প্রকাশ করবে নাকি লুকিয়ে রাখবে। কিন্তু কতকাল! আর কতকাল সে এই লুকিয়ে রাখার অভিনয় করবে। এটুকু জীবনে সে এই লুকোচুরির খেলায় ক্লান্ত বোধ করছে। ভালো লাগে না। বোকাদের মত সুইসাইড করে ফেলবে! ধ্যুর। তাতে কারো কিছু আসবে যাবে না। তার মত হাজারো রুডলফ প্রতিদিন মনের কষ্টে নেই হয়ে যাচ্ছে, তাতে সমাজের কখনো নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে বলে শোনা যায় না। আচ্ছা তবে সে কি বলে দেবে মনের কথা। বলে দিলে কি হবে? তার বাবা মা সিনিয়র রুডলফ আর মিসেস রুডলফ কি এটা মেনে নিতে পারবে। তারা কি ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেবে। কথা বন্ধ করে দেবে। ডাস্টবিনের আবর্জনার মত ধাক্কা মেরে নর্দমার পঁচা জলে ছূঁড়ে ফেলে দেবে! আচ্ছা এতদিনের বন্ধুত্বকে কি তারা মূল্যায়ণ করবে না।


আজ নিউ জার্সি স্কুল সেজেছে বর্ণিল সাজে। বার্ষিক পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। গল্পের নায়কদের মত জীবন সিনেমার নায়কেরা পরীক্ষায় সব সাবজেক্টে এ প্লাস পেয়ে পুরষ্কার পায় না। তবে রুডলফ এবার একটা পুরষ্কার পাচ্ছে। স্কুল এসেম্বলির সময় ক্লাস একটর এর জন্য তাকে পুরষ্কার নিতে মঞ্চে ডাকা হলো। সামনে অডিয়েন্সে বসে আছে তার তিনশর বেশী সহপাঠী। সে একেবারে আনস্মার্ট নয়। তবু বুকের মধ্যে কেমন যেন একটা দুরু দুরু ভাব কাজ করছে। হার্টটা কেন এত দ্রুত ব্লাড পাম্পিং শুরু করেছে বুঝতে পারছে না। হার্ট , তার নিজের হার্ট কি মীরজাফরী করে তাকে দূর্বল করে ফেলার চেষ্টা করছে।

পুরষ্কার নেয়ার সময় তার হাত কিছুটা কেঁপে গেলো, থ্যাঙ্কস বলার সময় গলাটাও কাঁপল ঈষৎ। বন্ধুদের উদ্দ্যেশে কিছু বলার জন্য মাইক্রোফোনের সামনে আহবান করলেন উপস্থাপক। থার্ড ব্যাচে পড়া সুদর্শন ইন্ডিয়ান বাঙালী তরুন শুভ্র রয় অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করছে। ইন্ডিয়ানরা বাদামী বর্ণের হলেও তাদের চেহারায় এক অন্যরকম ঔজ্বল্য থাকে। আর রয় এর ঠোঁটের পাশের মেরিলিন মনরো মার্কা তিলটার জন্যই কি তাকে এত আকর্ষনীয় লাগে! কথা বলতে গিয়ে মনে হল তার গলায় কফ জমে আছে। গলা খাঁকারী দিয়ে কফ ছাড়ানোর চেষ্টা করল। মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে গলা খাঁকারী দেয়া বক্তা-দর্শক কারোর জন্যই সুখকর না। সে নার্ভাসনেস ঝেড়ে ফেলল। আজ তার কথা সবাইকে জানিয়ে দেবে।

“অবশ্যই, আমি কিছু নাটক আর নাচের দৃশ্যে অভিনয় করেছি, তার থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমি আমার জীবনের প্রতিটা দিন অভিনয় করে যাচ্ছি। দেখ আমি এমন কিছুর অভিনয় করি যা আমি নই।” দম নিয়ে রুডলফ আবার মুখ খুলল, “ তোমরা আমাকে স্ট্রেইট জ্যাকবের অভিনয় করতে দেখছ, কিন্তু আমি তা নই। আমি এমন একটি বিষয়ের সাথে জড়িত যাকে অনেকেই বলে LGBT”

সাধারনত এই ধরণের বক্তব্য অনুষ্ঠানে দর্শক বক্তার দিকে খুব একটা নজর দেয় না। বরঞ্চ তারা পাশের জনের সাথে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুরে মেতে থাকে। কিন্তু জ্যাকবের এই বক্তব্যে তারা সবাই তার দিকে ফিরে তাকালো। অডিটোরিয়ারের চাপা গুঞ্জন থেমে গেলো। এখন পিনপতন নিরবতা। সবার মনোযোগ এখন জ্যাকবের দিকে। জ্যাকব বলে চলল,

“LGBT এর অর্থ হলো লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডার। পৃথিবীতে মিলিয়নের বেশী টিনেজ আছে যারা মৌখিক আক্রমন ও শারীরিক নির্যাতন এড়াতে প্রতিনিয়ত অভিনয় করে যাচ্ছে, আমিও করছি। কিন্তু আমি এটা আর করতে চাই না। সবশেষে আমি বলতে চাই, আমাকে সাথে নিতে পারো, ছেড়ে যেতে পারো অথবা লাথি মেরে পথ থেকে দূর করে দিতে পারো, তোমাদের যা ইচ্ছা তাই করতে পারো কারণ এখন থেকে আমি যা আমি তারই অভিনয় করব।”

রুডলফ এক নিঃশ্বাসে সব কথা বলে ফেলল। কথা গুলো বলার সময়ে তার গলা এতটুকু কাঁপেনি। ভয় জাগেনি মনে। কিন্তু কথা শেষ হুওয়ার পরে মনের উপর পুরাতন চাপানো ভাবটা ফিরে এলো। সে কি নিতে পারবে এতগুলো মানুষের প্রতিক্রিয়া। দর্শক সারিতে চোখ রাখতে ভয় পাচ্ছিলো। হঠাৎ হাত তালির শব্দে সে মুখ মুলে তাকালো। তার চোখে বিস্ময়। এও কি সম্ভব। তার সকল সহপাঠী দাঁড়িয়ে আছে। সে যখন কান্নাভেজা চোখে স্টেজ থেকে নেমে যাচ্ছে তখনও তার বন্ধুরা হাতে তালি দিয়ে চলেছে।

বাসায় ফিরে শাওয়ার নিলো রুডলফ। এক কাপ ধোঁয়া ওঠা গরম কফিতে ঠোট ছোয়ালো। আজকের কফিটাকে জোশ লাগছে। বাতাসটাকে হাল্কা লাগছে। নিজেকে ফিরে পাওয়ার অন্যরকম এক আনন্দ ভর করেছে তার মনে। রিকি মার্টিনের তুমি আমি গান শুনছে আর সুরের তালে তাল ঠুকছে এমন সময়ে ফোনটা বেজে উঠল মিশন ইম্পসিবলের থিম সংয়ের সুরে। টেক্সট মেজেট। পাঠিয়েছে তার বন্ধু জন। একটা ইউটিউবের লিংক। খুব জরুরী না হলে তো জন এসএমএস করে পাঠাতো না। ফেসবুকে পাঠাত। সে তার প্রিয় ডেল ল্যাপটপ টা ওপেন করে বসল ইজি চেয়ারে। ইউটিউবের স্ট্রিমিং শুরু হতেই সে টাশকি খেলো, এ যে তারই বক্তব্য। আজ যেটা সে স্কুলের অনুষ্ঠানে দিয়েছে। এরি মধ্যে আপলোড হয়ে গেছে ইউটিউবে। আরে একি। আপলোডকারী যে জ্যাকবের বাবা। এ কি করে সম্ভব! সিনিয়র রুডলফ, ছেলের প্রশংসা করে হেডিং এ লিখেছেন, জীবনের অনেক ঘাত প্রতিঘাত থাকে, আমার ছেলে নিজেকে চিনতে পেরেছে, সত্য কথা বলার মানসিকতা তার আছে এজন্য আমি গর্বিত। আমি আমার ছেলের জন্য অবশ্যই গর্বিত।

জন কখনো ছিচকাঁদুনে ছেলে নয়। পোড়া এই জীবনে কম কষ্ট তাকে ভোগ করতে হয়নি। বর্ন আইডেন্টিটির মত সেও তার আইডেন্টিটি নিয়ে ভুগেছে বহুকাল। কিন্তু আজ সে নিজেকে চিনলো নতুন করে। তার বাবার জন্য সেও গর্বিত। চোখের পানি ঝরণা হয়ে ঝরে পড়ল ল্যাপটপের উপর। দরজা খোলার শব্দে সে মুখ ফিরিয়ে দেখল, বাবা-মা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছেন।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×