সেদিন বাজার করছিলাম। খুব বেশী কিছুনা। সব মিলিয়ে হবে হয়তো ৩ কেজির মত। হঠাৎ করে বয়স্ক এক লোক হাতে বাজার বহন করার খাঁচি নিয়ে এসে বলল, স্যার বাজারটা রিক্সায় উঠিয়ে দিয়ে আসি? আমার অস্বস্তি লাগতে শুরু করল। এই বয়সের কেউ আমাকে স্যার বলে ডাকলে আমি সহজভাবে নিতে পারিনা। আমি বললাম, না লাগবেনা। কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা, আবারো বললেন, স্যার দিয়ে আসি? যথারীতি আমি আবারো না বললাম। এবার তিনি বললেন, হাতে কোন কাজ নাই, তাই রোজগারও নাই, ১০ টা টাকা দিয়েন রিক্সায় তুলে দিয়ে আসি। আমি কিছুটা বিরক্তি নিয়েই বলি, আপনি কি তুলে দিয়ে আসবেন, দেখতেছেন না হাতে সেরকম কোন বাজার নাই? এটা বলে চলে আসি। রিক্সায় উঠার পর খারাপ লাগা শুরু হয়। বাসায় আসার পরও সেদিন আর মনটা ভালো হয়নি। শুধু মনে হয়েছে, কি হত লোকটাকে ১০ টা টাকা দিলে? জীবনে তো অনেক ভিক্ষুককে ফিরিয়ে দিয়েছি এটা বলে যে, আপনি তো সুস্থ্য মানুষ, ভিক্ষা না করে কাজ করে খান। আর আজকে আমার কাছে একজন কাজ করে টাকা নিতে চাইল আমি তাকেও ফিরিয়ে দিলাম? যাই হোক ধীরে ধীরে সময়ের সাথে খারাপ লাগাটা চলে গেছে। লোকটার চেহারা ঠিক মনে নেই, থাকলে তাকে খুঁজে বের করতাম। আজকে আসলেই খেটে খাওয়া মানুষের কোন কাজ নেই। কিন্তু তাদের জীবন চালাতে হচ্ছে। কারও ঘরে হয়তো চাল শেষ হয়ে গেছে, কারও হয়তো ওষুধ ফুরিয়ে গেছে, কারও বাড়িওয়ালা হয়তো বলে দিয়েছে যে এ মাসের ভাড়া সময়মতো দিতে না পারলে বাসা ছেড়ে দিতে হবে। কারও মা হয়তো বাড়িতে অপেক্ষা করে আছে, ছেলে ঢাকা থেকে টাকা পাঠাবে। কারও হয়তো নবজাতকের খাবার শেষ হয়ে গেছে। কারও মেয়ে হয়তো মাসের শুরুতে বায়না ধরেছিল যে, মাসের শেষদিন মাংস দিয়ে ভাত খাবে। ইত্যাদি ইত্যাদি......
আসলে গরীবের অর্থনীতি জিডিপির প্রবৃদ্ধির উপর নির্ভর করে না। বছর শেষে জিডিপির প্রবৃদ্ধি যতই অর্জিত হোকনা কেন, তাতে এই সকল প্রান্তিক লোকদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়না। তাদের জীবন চলে জীবনের নিয়মে। আর এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলেই, তারা ১০ টাকার সন্ধানে নেমে পড়ে। আর এই কথাটা যাদের বোঝা উচিৎ তারাই বোঝেনা...
সত্যিই, বড়ই বিচিত্র এই দেশ....

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


