somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যমুনা এক্সপ্রেস ও একজন করিমন (কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত)

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
কুঁ ---- আন্ত:নগর যমুনা এক্সপ্রেস গফরগাঁও স্টেশনে থামা মাত্র ছুটে যায় ১০/১২ বছরের একটা ছেলে, "বাইগুন, বাইগুন। রাখবাইন বাইগুন, লাফা বাইগুন"। উদোম গা, পরনে ঢোলা প্যান্ট। এখানকার লাফা বেগুন খুব বিখ্যাত। যাত্রীরা অনেকেই বেগুন কিনে নেয়। তার ছোট বোনটা তখন পানি ভর্তি সিলভারের জগ নিয়ে চিৎকার করেছিল, "ফানি, ফানি.. ফানি খাইবাইন, ফানি"।

গরমে ঠান্ডা পানি বিক্রি ভাল চলে। ভিতর থেকে একজন যাত্রী পয়সা পানি নিয়ে ফেরত দিয়ে বলে, "এই ছেরি গেলাস বালা অইরা খলাস না? ফানিত এইডা কি বাসতাছে?"

গ্লাসটা ভাল করে ধুয়ে সে আরেক গ্লাস বাড়িয়ে দেয়। তিন গ্লাস পানি ঢক ঢক করে খেয়ে ফেলে লোকটার স্ত্রী। পানির মেয়েটা হাত বাড়াতেই মেয়েটাকে ৫০ পয়সা ছুড়ে দেয়।

মেয়েটা সাধারণত যা পায় তাতেই খুশী। কিন্তু তিন গ্লাস পানি খেয়ে ৫০ পয়সা তার কাছে অন্যায় মনে হয়, সে প্রতিবাদ করে বলে, "এইডা কি দিলাইন, তিনডা গেলাস ফানির দাম আডআনা? আফনের কি ইনছাফও নাই?"

ট্রেনের জানালা দিয়ে গলা বের করে ২৫ পয়সার মুদ্রা ছুড়ে দিয়ে লোকটা চিৎকার করে, "এই ছেড়ি, গেলি এইহানতে। এডি কি বিলাতী বুতুলের ফানি? আনচস তো টিউবলেত্তে বইরা। বেশি চিল্লাইলে চাইরানা ফইসাও দিতাম না"।

প্লাটফর্মে হকারদের ভীড় বাড়তে থাকে। আর পানি বিক্রেতা মেয়েটি তার ভেতরে নতুন জানালায় ছুটে যায়। ট্রেন ছেড়ে দেয়ার আগে অস্থির হকারেরা চিৎকার করতে থাকে, "বয়েল ডিম, বয়েল ডিম", "চা গরম, চা গরম", "পান সিগ্রেট পা-ন"।


২.
পাশের জানালায় মাঝ বয়সী এক যাত্রী গরমে ঘামছিল। সিনেমার ম্যাগাজিন দিয়ে পাখা করতে করতে তিনি বললেন "ট্রেনে ছাড়ার কোন নামই নাই। আধাঘন্টা পার হলো। আন্ত:নগর ট্রেন থামবে বড় বড় শহরে। গফরগাঁওেয়ের মত থানা শহরে থামতে যাবে কেন?"।

উল্টোদিকে স্থানীয় এক কলেজ তরুণের কানে বাক্যটা পৌছা মাত্র প্রতিবাদ করলো, "এইডা কিরুম বেঅন্যায় কতা কইলাইন মেয়াসাব? কুন বাফের কলইজা আছে আমগো উরফে দেয়া টেইন যাইবো আর থামাইতো না? হুনুইন, বেহেই গফরগাঁওরে ডরায়। ডাহাইতের দ্যাশ । না থামলে পুলাফান চাক্কায়া টেইন হুতায়ালবো"

৩.

পূর্ব ধলাতে আজ সাপ্তাহিক হাটবার। কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ীরা ছাদে উঠে যাচ্ছে। ছাদে ওঠার জন্য জানালা দিয়ে উঠছে। একজন কলাওয়ালা ঝাঁকা নিয়ে বসে ছিল যে বগীর ছাদে সেখানে লুঙ্গী কাছা দিয়ে আরেকটা তরুণ উঠতে চাইছে। হাতে পলিথিন বস্তায় মোড়ানো পান।

পানওয়ালা ক্রমাগত চেঁচাচ্ছিল, "পাচ্ছুয়াইন, পাচ্ছুয়াইন" । কলাবিক্রেতা না শোনার ভান করে আছে দেখে বললো, "এই মিয়া, কলাডি হেফি নিলে কী অ?",

কলাওয়ালা জবাব দেয়,
-"হেফি কই যাইতাম? তোর হমুন্দিরবাড়ি? চোক নাই? দেহস না যে ঠ্যাঙ লাড়ানির জাগা নাই"।
-"ঐ, শয়তান, মুখ খারাপ হরস ক্যা? চাফাডা গালায়ালাম "।
-"নডীর পুত, কি কইছছ? সিনাত জুর থাকলে আবার ক। উরফে যে উডবার চাস, টিহেট চেঁহাররে পইসা দিসস? ডাকতাম চেঁহাররে? দেখ তোর জেব খলায়া পইসা লয়া যাইব"

অবৈধভাবে পয়সা খেয়ে টিকেট চেকার ছাদে লোক তুলছে। পানওয়ালা চাঁদা ছাড়া ছাদে উঠতে যাবার সুযোগটা হারাতে চায় না। সে মুহুর্তে স্বর পাল্টে বললো,
-"ভাইরে, ভাই, অত ক্ষেপলে কি অয়? ঠাডা রইদ উটছে, মাতাডাও ঠিক নাই। একটু চাপলে বেহেই যাইতারি"

সামান্য মিষ্টি কথায় কলাবিক্রেতা সরে বসে। পানওয়ালা উঠে তার বিড়ির শেষ অংশটা সাধে। কলাওয়ালা ধোঁয়া ছাড়তে ছাঁড়তে সুখটান দিয়ে বলে,
"আফনের বাঁড়ি কই, শিলাশী না শীবগঞ্জ?"
"পাঁচরুহী"
"যাইতাছুইন কুন হানো?"
"ধলা বাজার। এই যে পান। এইডি লয়া যাইতাছি হাডো। বেইচ্যা চাউল কিনাম"


যমুনা এক্সপ্রেসের দেরী করাটা স্টেশনের সবারই জানে । বিলম্বে আসা যাত্রীদেরও যেন তাড়া নেই। স্টেশনের গেট দিয়ে কাল বোরখাবৃত এক মহিলা ঢুকছে। হাত ধরে একটা বাচ্চা মেয়ে হাটছে। মহিলাটির স্বামী তাদের ফেলে দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকলে সে ডাকলো, "এই যে, কুলসুমের বাপ। হুনুইননি? আঁডনের সম লগে যে কেউ আছে মন থাহে না। ছেঁড়িডার পাও বিষ উটছে একটু কুলো লইন"। কুলসুমকে কোলে নিতেই দুরে পাউরুটির ঝাঁকা দেখে মেয়েটা কাঁদতে থাকে, "আব্বাগো, পোয়া লুডি খায়াম"।

পনেরমাইল দুরের বিরুনিয়া গ্রাম থেকে রিক্সায় এসেছে এই পরিবার। রিক্সায় পায়ের কাছে বোঝার উপর কুঁকড়ে বসেছিল শিশুটি। সে ক্ষুধার্ত।

কুলসুমের বাপ "জগন্নাথ বুকস্টলে" এর সামনে ব্যাগগুলো রাখে। মা ও মেয়ে সেটায় বসে পড়ে। পাউরুটি কিনে এনে মেয়ের হাতে দিতেই সে শুনতে পেল, "এ--ই----রফিক্যা--এই---রফিক্যা"। মেয়ের দাঁড়িয়ে দেখলো একসময়ের ঘনিষ্ট বন্ধু হামিদ। বহুদিন পর বন্ধুকে পেয়ে সে ছুটে গিয়ে হাত মেলায়।
"কেলা রে এইডা, আমগোর হামিদ্যা না? অতদিন বাদে আসমানো চান উটছে? বেডা, বড়লুক অয়া গেছস। আমগরে কি ভুলেও তোর মন লয় না?। ঢাহাত যে গেছস বাইচ্যা আসস না মইরা গেসস চিডি দিতে!

গেদুমুন্সীর লগে গতবছর দেহা অইছে। কইছে তুই বলে পাকুন্দিয়াত গেছছ । তোর বলে বেয়া অইছে, আবুদুব অইছে। পাকুন্দিয়ার আইজ্যারে জিগাইছলাম। হে কয় তুই ডাহাতই আসস। কেডা যে হাছা কয় কেডা মিছা কয় বুঝন মুশকিল?"

হামিদ ও রফিক ময়মনসিংহের বিরুনিয়া গ্রামে বড় হয়েছে শৈশব থেকে। হামিদের বাবা বাউন্ডুলে মানুষ। সংসারের খোঁজ নিতেন না। রফিক স্বচ্ছল হলেও হামিদ এক ইস্কুল পড়তো, দুজনের সম্পর্ক ছিল ঘনিষ্ট। করিমুন্নেসা বোরখাবৃত মুখে আড়াআড়ি বসে ছিল। অর্ধস্বচ্ছ পর্দার ভেতর হামিদকে দেখে সে চিনতে পারে, মুখে বয়সের ছাপ পড়েছে কিন্তু লোকটা আগের মতোই। ঘন মোচে পাক ঘরেছে, লম্বা বাবড়ি চুল নেই। বয়সে সব কিছু বদলে যায়।

বয়স না হলেও বদলায়। যেমন এই মানুষটার সঙ্গে তার লুকিয়ে দেখা হতো। হামিদ তাকে একদিন বলেছিল, "করিমন, আইজও তোরে রাইতে খোয়াব দেখছি।”।

করিমন সুন্দরী মেয়ে। গায়ে রং টকটকে ফর্সা। গ্রামে এমন মেয়েদের কিশোরী বয়সেই বিবাহের প্রস্তাব আসে। করিমন ছল রাগ করে বলেছিল, “হ, খালি খোয়াবই দেখবেন। ভাত খাওন লাগতো না?”।
“কি যে কস তুই?” হামিদ বলেছিল, “ঢাহাত এক মামতো ভাই চিডি পাডাইছে। চেনাচুরের ফেক্টরির কাম দিব কইছে। অহন আর পইসা বিষয় অইতো না। আগুন মাস গেলে তোরে বেয়া করাম "

করিমন শাস্তি পেয়ে যায়। হামিদ ছাড়া তার হৃদয়ে দ্বিতীয় কোন পুরুষ জন্ম নেয় নি। সে শুধু সোহাগী গলায় বলেছিল "হামিদ ভাই, আফনে মানুষডা অত ভালা। আমার টেহা-পইসা লাগতো না। ঢাহার সুক লাগতো না। আফনের ঢাহা যাওনের দরহার নাই"। হামিদ করিমনকে বুকে টেনে নিয়ে সজোরে আলিঙ্গন করে বলেছিল, "পাগলী! ঢাহাত গেলেও মাসে মাসে বাইত আয়াম"।

মানুষ বড় অদ্ভুত প্রাণী। সেই হামিদ কাজের খোঁজে ঢাকা শহরে গিয়ে আর ফিরে আসে নি। করিমনের চোখে অনিদ্রার কালি জমে। সে নদীর পাড়ে গিয়ে একলা বসে থাকতো। দিন যায়, মাস যায়। ঢাকায় গিয়ে কী করে তাকে তাকে ভুলে গিয়েছিল হামিদ? পরে শুনতে পেল হামিদ একটা কালাসাবানের ফ্যাক্টরীতে কাজ করে। আর সে সেই ফ্যাক্টরীর মালিকের জামাই হয়েছে।

রফিকেরা গ্রামের বড় গৃহস্ত ঘর। সেখান থেকে করিমনের জন্য পয়গাম পাঠায়। করিমনের কন্যা দায়গ্রস্ত বাবা ভাল প্রস্তাব ফেরায় নি। করিমন এভাবেই রফিকের সংসারে ঢোকে। সন্তান হয়ও। কিন্তু হামিদের জন্য তীব্র ঘৃণাটা তুষের আগুনের মতো জ্বলতেই থাকে।

আগ্নেয়গিরির মতো রাগে ফুঁসছিল করিমন। বোরকার আড়ালে তাকে দেখা যায় নি। সামনের লোকটা ভালবাসার অভিনয় করে, তাকে স্পর্শ করে, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখন সুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে! করিমন তখন এত সরল বালিকা ছিল যে ভুলেও সাতপাঁচ ভাবে নি। লোভী পুরুষেরা যেভাবে সুযোগ পেলে মেয়েদের ছুঁতে চায়, হামিদও প্রেমের নাম করে তার শরীরে স্পর্শের সুখ মিটিয়েছে।
হামিদ ও রফিকের আলাপচারিতা তার কানে আসে।
- "তুই যাইতাছস কুনহানো, রফিক্যা?"
- "বুগলোই । মশাহালি বাজারো। লগে বউ আর ছেঁড়ি। বউরে চিনছস? করিমন বিবি। হের বইনের বেয়া দিসে মশাহালি, জেফত যাইতাছি " তারপর একটু রাগের গলায় বলে, "নডীর একতা এক্সপেসের কুনো খবর নাই। তুই কই থাহস?অহন যাস কই?"

করিমনকে কাল বোরখায় চিনতে পারে নি হামিদ। একটু অবাকই হয়ে যায় । রফিক কাছে ডাকে। করিমন উঠে দাড়ায়। বোরখার মুখ তুলে অনিচ্ছায় একটা সালাম দেয়। একটা ত্রিভুজের মতো দাঁড়িয়ে থাকে তিনজন মানুষ। কুলসুম তখনো পিছনে ব্যাগের উপর বসে রুটি খাচ্ছিলো। মুখে খাবার ভর্তি। রফিক খেয়াল করে বড় পাউরুটির টুকরা তার গলায় আটকে যাচ্ছে। সে দৌড়ে মেয়েটাকে কলের দিকে ছুটতে থাকে।

রফিক আড়াল হওয়া মাত্র হামিদ করিমনকে বললো, "করিমন! তোরে কতদিন বাদে দেকলাম। তোরে দেকলে মন অয় না বেয়া অইছে? ভালা আসস?"

করিমন চুপ করে থাকে। দীর্ঘদিনের জমানো রাগে জবাব দিতে রুচি হয় না”। সে শুধু বললো, "আমি কিরুম আছি আফনে বুজুইন্না? না না বুঝনের ভান হরুইন?"।

রফিক এসে পড়ার আগে মনের ক্ষোভটা প্রকাশ করতে গিয়ে সে বললো, "আফনেরে ভালা মানুষ ভাবছি। আত ধইরা কতা দিলাইন, কইলান চিডি দিবাইন। হের বাদে এরুম চুরের লাহাইন পলায়া গেলাইনগা! শরমও লাগলো না"

হামিদ অপরাধীর মতো মাথা নত করে বললো, "আমি পলাইছি কেডা কইছে?। কেউরে দুষ দেই না। দুষ তো আমার নসীবের। তয় কতাডা কই বেইমান আমি না, বেইমান কেডা জানস? তোর জামাই, রফিক্যা”।
করিমন বিস্মিত হয়ে বললো, “কুলসুমের বাপ!”
বিস্মিত মুখের উপর হামিদ বললো, “হ! তোরে দুই দিন বাদে বাদে চিডি দিছি রফিক্যার নামে। হে জানছে তোর-আমার পিরিতির কতা । যাওনের সমু কইছে চিডি দিলে তোরে ফৌঁচায়া দিবো "

হামিদ আবেগাক্রান্ত হয়ে বলতে থাকে, "ঢাহাত গেয়া, একটা চামার ব্যাডার কারখানাত কাম পাইছলাম। ছুডিও দিছেনা, পইসা দিছে চিফায়া চিফায়া। ছয়ডা মাস ভেইন্যাতে হাইঞ্জালা কাম হরছি কেরে? তোর লাইগ্যা। রাইতে কানছি কার লাইগ্যা, তোর লাইগ্যা”।
চোখে পানি আসে হামিদের। “আমার নসীবরে করিমন। যেদিন বাইত মেলা দেয়াম, ভারইলের মামা খবর দিসে রফিক্যা তোরে ঘরো তুলছে। কীরুম চীটার! কত্তডি চিডি দিসি। হে লেকছে তুই বলে চিডি পড়ছস। কইছে তুই খুব ভালা আসস। তুইও লেইখ্যা দিসস –বেহে ঠিক আছে।"

হামিদের কথা শুনে করিমন আশ্চর্য হয়ে যায়, “কি কইতাছুইন আফনে! আমার মাতাত ডুহে না। কুলসুমের বাপ এই কাম করছে?"

হামিদ বললো, "করিমন রে, ইডা বুজচি ম্যালাদিন বাদে, রফিক্যা গাদ্দারের পুত গাদ্দার - বুজতারলে কি আর অতো হব্বনাশ অয়? যেদিন হুনছি তোরে রফিক্যা বেয়া হরছে, মন লইছিন কুত্তাডারে প্যাহের ভিত্তে গাঁইড়ালাই। দাও দেয়া কুবায়া মাইরালাই। ফরে তোর কতা মনো অইছে। হুনছি তুই ভালা আছস। যেই সংসারে তোর সুক হেইডা ভাঙ্গন আমার পাপ। ভাঙ্গা কলসী আর আর ভাঙা কইলজা জুড়া লাগে না। সংসার ভাঙলেও হেই করিমনরে কি আর ফায়াম কুনুদিন? "

করিমন বিশ্বাস করতে পারেনা, সে এত বড় প্রতারকের সঙ্গে ঘর করেছে। তার স্বপ্নকে তচনচ করে দিয়ে তার কামনা চরিতার্থ করেছে। সময় পার হয়ে গেছে। এতদিন পর তার আর কী করার আছে। তার চোখ ভিজে যেতে চায়। কষ্টটা এড়াতে একটু হাসির অভিনয় করে বলে,
-"হামিদ বাই, আফনে বলে ঢাহাত বেয়া হরছুইন? আবুদুব কয়ডা?"
-"কেলা কয় এইডি? হুড়া মিছ কতা।"

করিমনের চোখের দিকে চেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হামিদ বললো,"করিমনরে, কইলজাডা খুইলা দেহাইলে বুছতি। পুইরা কয়লা অয়া গেছে! রাইত অইলে তোর কতা মন লয়। পেট পুরে "

করিমন সত্যটা না জানলেই ভাল হতো। কেউ দেখার আগে সে আঙুলে চোখ মুছে ফেলে।

এমন সময় রফিক মেয়েটাকে পানি খাইয়ে নিয়ে আসে। হামিদের তাড়া থাকে। সে বললো,
-রফিক্যা, আমার যাওন লাগবো। যমুনা ছাইড়া দিবো। আমার কাম আছে। হাইঞ্জালা ঢাহাত ফিরত যাওন লাগবো।

করিমনের মনটা ভীষণ খারাপ। সে তার স্বামীর দিকে প্রতি চিরতার মতো তিক্ততা অনুভব করে। একবার মনে হয় হামিদ যদি তাকে সত্যিই তাকে এত ভালবাসে রফিকের সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবে কথা সে বলে কী করে? তবে কি হামিদের চিঠির গল্পটা মিথ্যে? তার স্ত্রী সংসারের ঘটনা সে চেপে তার সহানুভুতি তৈরী করতে চাইছে? তার স্বামী রফিককে কখনো তার খারাপ মানুষ মনে হয়নি। আবার মনে হয় হামিদ ও সে দুজন সত্যিই রফিকের বিশ্বাস ঘাতকতার স্বীকার।

যদি সামনা সামনি দুজনেকে প্রশ্ন করা যেত তাহলেই হয়তো উত্তর টা মিলতো । কিন্তু করিমনের জানে তার পক্ষে এসব প্রশ্ন করা অসম্ভব। আর উত্তর জেনেই বা কী হবে?

হামিদ দ্রুত কুলসুমের হাতে একটা লজেন্স কিনে দিয়ে যেতে যেতে করিমনে ও রফিককে বললো, "যাই"

ট্রেনে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কু----- কু----কু--- শব্দ তুলে যমুনা এক্সপ্রেস গফরগাঁও স্টেশন ছেড়ে । ব্যস্ত ছবি মুছে গিয়ে একটা শূণ্য আদিগন্ত রেললাইন ভেসে ওঠে ।

(শেষ)

----------------------------------------------------------------
ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষার রচিত/ শব্দার্থ/অনুবাদ
----------------------------------------------------------------
বাইগুন = বেগুন
লাফা বাইগুন = স্থানীয় বেগুনের প্রজাতি
লিলামী = নিলামী
ফানি = পানি
ফানিত এইডা কি বাসতাছে=পানিতে কি ভাসছে
দিলাইন = দিলেন
আঙ্গো উরফে দেয়া যাইবো=আমাদের উপর দিয়ে যাবে(ট্রেন)
বিলাতী বুতুলের ফানি = মিনারেল ওয়াটার
আনচস তো টিউবলেত্তে বইরা=টিউবওয়েল থেকে ভরে আনা
কইলাইন = বললেন
ডাহাইতের দ্যাশ = ডাকাতের দেশ
তেরিবেড়ি হরলে = তেড়ি বেড়ি করলে
হুতায়ালবো = শুইয়ে ফেলবে
পাচ্ছুয়াইন = পিছনে যান
কলাডি হেফি নিলে কী অ= কলাগুলো ঐদিকে নিলে কী হয়
হমুন্দিবাড়ি=সম্মুন্ধীর বাড়ি (ব্যাঙ্গার্থে)
ঠাডা রইদ উটছে= ভীষণ রোদ উঠেছে
আরেকবার রাও হরলে চাফাডা গালায়ালাম=আরেকবার শব্দ করলে চাপা গালিয়ে দেয়ার হুমকি
সিনাত জুর=বুকে জোর
উরফে যে উডসস=উপরে যে উঠেছো
জেব খলায়া পইসা=পকেট খালি করে পয়সা
ভাইরে একটু ছাপুইন=একটু চাপুন
হুনছুইন=শুনেছেন
ছুডু ছেড়া=ছোট ছেলে
যাইতাছুইন=যাচ্ছেন
এককান ফানের দুহান =একটা পানের দোকান
একটু হুনুইন্নি=একটু শুনেন না
অত চালায়া আঁটুইন্না যে=এত দ্রুত হাটবেন না
দেকতাছুইন্না ছেঁড়ির পাওও বিষ=দেখছেন না মেয়ের পায়ে ব্যথা
মায়া=মা
আঁটতাম ফারিনা=হাঁটতে পারিনা
পোয়া লুডি=পাউরুটি
বেয়া হরসস = বিয়ে করেছিস
আবুদুব অইছে=ছেলেমেয়ে হয়েছে
হাছা কুনডা যে মিছা=কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যে
ঢাহাত = ঢাকায়
শইল্য জুর=শরীরে শক্তি
রিস্কা চালাইতারি=রিক্সা চালাতে পরি
পুজা বহইতারি=বোঝা বহন করতে পারি
আঙ্গর=আমারদের
এইহানোই থাহাম=এখানেই থাকবো
টিক মাইরা =খুব গোপনে
বুগলোই যায়াম=কাছেই যাব
মশাহালি বাজারো
নডীর একতা এক্সপেসের = নটী(গালি)
ভেইন্নালাত্তে=সকাল থেকে
হাইঞ্জালা=সন্ধা
মেলা দেওন লাগবো=রওনা দেওয়া লাগবে
কিরুম আছি আফনে বুজুইন্না=কেমন আছি আপনি বোঝেন না?
আমার আত ধরলাইন=আমার হাত ধরলেন
হের ফরে এরুম চুরের লাহাইন =এরপর চোরের মত..
কেউ আছিন্না=কেউ ছিল না
পেট পুরে=মনে হয়

---
ড্রাফট ৩.০/ আগে প্রকাশিত হয়েছিল। এবার পরিমার্জিত হলো (সাময়িক)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:৩৩
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×