somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: কানাই

১৭ ই জুলাই, ২০১১ রাত ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জুলাই ২১, ২০০৬
কল্যানপুর এস-ও-এস ক্লিনিক থেকে একটু সামনে গিয়ে একটা গলির মুখে রিক্সা থামল । দু'জন আরোহী ভাড়া চুকিয়ে হেটে ঢুকল সরু গলিতে । রফিকুল জায়গাটা চেনে বলে আগে আগে থাকল। ময়লা ডোবা পার হয়ে ডান দিকে একটা টিনের গেটে ঢুকে পড়ল তারা । লম্বা একচালা টিনের বস্তি, ভিতর থেকে উচ্চস্বরে বচসার আওয়াজ বের হয়ে আসছে। ধুলামাটিতে খেলতে থাকা হাফপ্যান্টের বাচ্চারা সরে পথ করে করে দেয় । চৌকাঠে পা ছড়িয়ে বাচ্চাকে ঘুম পাড়াচ্ছে এক তরুনী । সে তাদের দিকে ফিরে তাকাল না। তারাও নোংরা ময়লা উপেক্ষা করে একটা হাটতে থাকল। একটা চেক হাফ শার্ট পরা মিন্টু রফিকুলের পিছন পিছন অচেনা জায়গায় এসে পৌঁছল। তারপর অনিচ্ছায় বলল, দোস্ত আমি কইলাম যামু না। জোর কইরা আনলি কেন?
আবে চোপ কানাইয়ের বাচ্চা, রফিকুল জোর খাটায়। কানে উপরে বর্ডার নাই, কইলজারও বর্ডার নাই! পুরুষ মানুষ না মুরগী!

মিন্টু তার জন্মসূত্রে প্রাপ্ত কানটা হাতায়। বিশেষ কোন সমস্যা নেই। কানের উপরের অংশে সবারই সিঙাড়ার মতো মুড়ে দেয়া থাকে। তারটা ফ্ল্যাট। সে নিজে বহুবছর আয়নায় টেরি কেটে চুল আঁচড়ালেও খেয়াল করে নি। চোখে কালি পড়লে দশজন বলে, গালে ব্রন উঠলে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু কানের খুঁতটা কেউ খেয়াল করে না।

মিন্টু কলাবাগানে একটা কম্পিউটার সেলস ফার্মে এ কাজ করে। সহকর্মী জোয়ারদার সাহেব একই রূম বসেন। তিনি একদিন বলছিলেন, মিসবাহুল সাহেব, একটা ফোন এসেছিল আড়াইটার দিকে। কানাই নামে কাউকে চাচ্ছিল। আপনার নাম কি কানাই? মিন্টু তখন বন্ধুদের আক্কেলজ্ঞানে বিরক্ত হয়ে জ্বি বলেছিল। জোয়ারদার রক্ষণশীল রসিকতায় বলেছিলেন, আপনি কি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন নাকি? তখনও তার কানের দিকে তিনি তাকান নি।

এভাবেই মিন্টুর বুঝতে বাকি থাকে নি তার কানকে টার্গেট করে বাটে ফেলা আসলে ঘনিষ্ট বন্ধুদের ফাজলামোর । অবশ্য জোয়ারদার সাহেব লোকটা খুঁত খোঁজার মানুষ না। তাকে স্ট্যান্ডার্ড ধরা ঠিক হবে না। সময় মত অফিসে আসা, চেয়ারে টাওয়েল বিছিয়ে বসা, আজানে টেবিলের কোন নামাজ পড়া। খুব সরল মানুষ। এ ধরনের নিয়মানুবর্তী মানুষ বউ পাগল হয়। তিনিও তাই। মাদারটেকে একটা বাড়ি তুলেছেন স্ত্রীর নামে । নাম শর্বরী নিকুঞ্জ । লাঞ্চ টাইমে টিফিন ক্যারিয়ারে খুলে খেতে বসে মিন্টুকে ডাকেন। ধোয়া প্লেটে হলুদ বরবটি বা মাঝের ঝোল ঢালতে ঢালতে বলবেন আওয়ামী লীগ বিএনপি দিয়ে কিছু হবে না। আর তার পরই এই দুর্মুল্যের বাজারে টিকে থাকার জন্য তার মিসেসের দক্ষতার প্রশংসা করবেন।

অন্যের বউয়ের রান্না বান্না শাড়ী কেনার গল্প শোনার ধৈর্য সবার থাকে না। মিন্টু এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে পার করে। একদিন অফিসের আরেক সহকর্মী নিরু আপার কাছে মিন্টু জেনেছিল তারা আসলেই সুখী দম্পতি। বিয়ে হয়েছে এক যুগের বেশী । যদিও সন্তান না থাকার একটা কষ্ট রয়েছে। নিরু আপা বিজ্ঞের মত বলেছিল, ছত্রিশ পার হলে বাচ্চা হওয়া টাফ। জোয়ারদার সাহেব ধর্মভীরু, একে আল্লার পরীক্ষা বলে মেনে নিয়েছেন।

রফিকুল তাকে নামে আবারও ডাকল, কানাই, আমরা আইসা গেছি। তুই চুপ থাকবি, আমি যা করার করুম। এখান থেকে একচালা বস্তি শেষ, সারি সারি দালান । তাদেরই যত্নহীন একটি বাড়িতে কিছু বিস্ময় দেখাতে এনেছে রফিকুল। পরিবেশটা ভুতুড়ে। দিন দুপুর অথচ নিচতলায় লাল ফিলামেন্টের বাতি জ্বলছে। চুনকাম নেই, পলেস্তার ওঠানো । সাদা অবশিষ্ট চুনার উপর এখানে ওখানে আলকাতরার মতো দাগ বসে গেছে।

দোতলায় উঠতেই একটা কলাপসিবল গেট এস পথ রূদ্ধ করল । কলিংবেল বাজাতেই ভিতর থেকে বল প্রিন্টের ম্যাক্সিগায়ে একটা অল্প বয়সী ফর্সা মেয়ে এল। রফিকুলকে চিনতে পেরে গেট খুলে দিয়ে ড্রইং রুমে বসতে দিল। ভিতরটা বেশ ফিটফাট, মেঝে মোজাইকের মেঝে তে গোল কার্পেট। অবশ্য অভিজাত ড্রইংরূমের মত করতে চাইলেও গোলাপ ফুলের বড় একটা পোস্টার তাকে গেঁয়ো করে দিচ্ছে। চামড়ার সোফার পিছনে বেমানান ভাবে একটা কাবা শরীফের ছবি।

জানালাগুলো ভারী পর্দা দিয়ে ঢাকা, বাইরে থেকে ভিতরটা দেখার উপায় নেই। ইঁদুরের মলের স্তুপে আতরের গন্ধ ছড়ালে যেমন লাগে তেমনি গন্ধ ছড়িয়ে আছে ঘরে। পাঁচ মিনিট পর, সাদা শাড়ীতে খর্বাকৃতি এক বুড়ি এল। রফিকুল উঠে গিয়ে কথা বলল, মৃদু কণ্ঠে মহিলাটি শক্ত চোয়ালে বলল, উনারে কি আগে দেখছি? না মনে হয়। পুলিশ-সাম্বাদিক আনেন নাই তো?

রফিকুল ইসারায় বোঝালো, না। জবাবে মহিলাটি বলল,
কাল অনেক রাইত পর্যন্ত একটা মালদার পার্টি উঠছিল তো - পেরাইভেট ব্যাঙ্কের অফিসার এরা। এখন সবাই ঘুমাইতাছে, রাইতের আগে কাজ কাম সব বন্ধ।
রেইট বেশি দিলে হইব?
কত বেশী? ইঙ্গিত বুঝে বৃদ্ধা সম্মতি দিল, আইচ্ছা দেখি কেউরে রাজি করান যায় নাকি। বুড়ির মতলব পরিষ্কার হল এবং সে ঠাটারী বাজারের মাছের ব্যবসায়ীর মত দু-আঙুল কচলে ইঙ্গিত করল, অগ্রিম লাগব কইলাম।

রফিকুল আগে দেখা একটা মেয়ের নাম বলল যাকে পেলে দাম বেশী দিতে রাজি। তারপর ফিস ফিস করে কিছু আলাপ করল যা মিন্টু শুনতে পেল না। কিন্তু মনে হল শর্তানুসারেই সব হবে।

মিন্টু মাথা নত করে বসে থাকল একা । সে উপর্যুপরি প্রেমে ব্যর্থ এক যুবক। প্রথম বার সরলতার সুযোগে ঘনিষ্ট এক বন্ধুর ছোট বোন তার সঙ্গে দেড় বছর প্রেমের তামাশা করেছে। আর সেই ক্ষত সেরে উঠতে না উঠতেই লুনার সঙ্গে পরিচয়। মেয়েটি খালাতো ভাইয়ের শ্বশুরপক্ষের আত্মীয়। লুনা রুচিশীল বড় ঘরের শিক্ষিত মেয়ে আর তাকে অবিশ্বাস করার কারণ ছিল না। তারা দুজন ঘনিষ্ট হয়, এর এক অন্যের প্রেমে পড়ে।

রাতের পর রাত জেগে লুনার মিসকলের জবাবে মিন্টুই ফোন করেছে, তার নতুন চাকরীর বেতনের সব টাকা খরচ করেছে মেয়েটির জন্য। ছেলে হিসেবে মিন্টুর কিছু আদর্শ ছিল । সে ছিল কনজারভেটিভ মানুষ, যে বিয়ের আগে সম্পর্ক পছন্দ করতো না। সখ করে হলেও সিগেরেট-মদ ছুঁয়ে দেখে নি। সন্ধ্যার পর আড্ডায় সময় নষ্ট করা ছাড়া তার আর কোন বদ অভ্যেস ছিল না।

আড্ডায় স্থানীয় ব্যবসায়ী যুবকেরাও আসত । রফিকুল তাদের একজন। রফিকুলের মতো নিচুজাতের ছেলেদের সঙ্গে মিন্টু মিশবে না এটাই স্বাভাবিক।

সপ্তাহ দুই আগে মিন্টুর জীবনে জঘন্যতম অঘটন ঘটে। দৃশ্যটা এমন যে তার বিশ্বাস হয় নি। এক ছুটির দিন দুপুরে টিকাতলীর এক মেসে যেতে হয়েছিল জনৈক বন্ধুর কাছ থেকে পাওনা টাকার জন্য। সেখানে মেসের অন্য একটি রুম থেকে অপরিচিত এক ছেলের হাত ধরে লুনাকে বেরিয়ে আসতে মিন্টু বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিল। প্রথমে চোখে চোখ পড়তেই লুনা তাকে চিনতে পারে নি এমন অভিনয় করল। সঙ্গীর সঙ্গে বাক্যালাপের ভঙ্গীতে দ্রুত রিক্সায় উঠল। মিন্টু ফোন করলে ওপাশ থেকে কেটে দেয়া হল, রাতে ফোন বন্ধ পাওয়া গেল।

হতভম্ব মিন্টুর তখন মনে হল তার শরীরে কেউ পেট্রোল জ্বেলে আগুন দিয়েছে। বাথরুমে গিয়ে সে কাঁদল। তার মনে হচ্ছিল মেয়েরা তাকে থুতুতে ভেসে থাকা কীটের মত অবজ্ঞায় ফেলে যায়।

রফিকুল শেয়ানা লোক। সে বুঝতে পারল মিন্টুর মন খারাপ। সে তাকে তার দোকানে ডেকে অনেক কথা বলল। বলল এটাই জীবন। তার ভাষায় "দুইন্যাতে ভদ্র মাইনষের ভাত নাই"। "শইল ছাড়া পিরিতিরে মাইয়ারা কানা পয়সার দাম দেয় না"। "শইলে না আটকাইলে মাইয়ারা ভেড়া বানায়া আসমানে উড়াল দেয়"। রফিকুল আরও উদাহরণ দেয় ভদ্র মানুষেরা বউয়ের পিছন ঘুরে ঘুরে কাঁদে, আর চরিত্রহীনদের জন্যই রূপসীরা চোখের জল ফেলে। রফিকুল তাকে জীবন উপভোগ করার বুদ্ধি দেয়। "পয়সা দিয়া যারে কিনন যায় তারে হুদা পিরিতে বান্ধনের কি দরকার"।

এরকম অশিক্ষিত কু যুক্তিগুলো দু:সময়ে মিন্টুর এমনই পছন্দ হল যে সে জীবনে যা করতে ঘৃণা করতো তাতেই রাজী হল।

**
বুড়ি ও রফিকুল উপর তলা থেকে দেখে ফিরে এল। সর্দারনী বয়স হলেও কানে বড় বড় সোনার রিঙ, বলীরেখায় আবৃত চোখে সুরমা, হাতে নেল পলিশ। সে মিন্টুর উল্টোদিকের চেয়ারে বসল। রফিকুল আহ্লাদে ডগমগ হয়ে মিন্টুর পাশে বসে বলল, যা দিমু সুতানলী সাপের মতন ধার, ডরাবি না তো!

রফিকুল স্থুল ইঙ্গিতে মেয়েলি বিষয়ে তার দক্ষতা গর্ব করে বোঝাতে চায়। ক্যাশটাকা বুঝে পাবার পর সর্দারনী বৃদ্ধা খুন খুনে গলায় বলল, ডরাইব ক্যা? খালার বাড়ি আইছে না। মাউতাইলের ফেলাটে থাকনের সময় সকাল বিকাল কত্ত ইস্টুডেন আইছে।

ভুল ভাঙাতে রফিকুল বলল, কি যে কন খালা, এ দেখতে পোলাপান, এ আমগো চায়া কিন্তু উপরের লেভেলের । শামসুল ইসলাম নাম, বিরাট আটিস । ইণ্ডিয়া থন টের্নিং পাওয়া। সিনেমার বড় সাইনবোড লেখা দেখছেন না কাকরাইলে অপুবিশ্বাস-সাকিবখানের এগুলান তার আঁকা। রফিকুল আগেই বলেছিল দু নম্বরী জায়গায় মনের কথা কম বলতে হয় না। কখনো যোগাযোগের ঠিকানা দিতে হয় না। আর সত্যি বললে পুলিশী কেসে পড়ার চান্স থাকে। আর্টিস্টদের প্রতি সবারই একটা সফ্টকর্ণার থাকে। হয়তো এজন্য তাকে আর্টিস্ট বলে পরিচয় করাল। সে মনে মনে তার নতুন নামটা মুখস্ত করল।

উপর তলায় এসে মিনারা, মিনারা বলে ডাকল সর্দারনী।

করিডোরে বরাবর পাঁচ ছয়টি ছোট কক্ষ। প্রথমটিই তার ঘর। লঞ্চের কেবিনের মতো তাদের দরজা। সবগুলোই বন্ধ । একটা থমথমে পরিবেশ। দরজায় দাঁড়িয়ে সে ফেরত আসতে গিয়ে পারল না।

অন্ধকারের গুহায় বাদুর উড়ে যাবার মত শির শির করে উঠল শরীর । এমন সময় ভিতরের মেয়েটা উঠে এস দরজা খুলল। মৃদুকণ্ঠে ডাকল, আসেন সার। বুড়ি নিঃশব্দে চলে গেল। রফিকুল যাবার আগে বলে গেল যাতে সন্ধ্যায় তার দোকানে দেখা করে।

মিন্টু মেয়েটির দিকে তাকানোর আগ্রহ পেল না। মেয়েটি তাকে স্যার ডাকার কারণ সম্ভবত: সর্দারনীর নির্দেশ।

মিন্টু অনুভব করল এই মাত্র চরিত্রহীনদের খাতায় তার নাম লেখা হল । এ জন্য তার আফসোস নেই। ভাল থেকে দেখেছে সে। লুনারা যদি ভাল থাকে, চরিত্রবতী থাকে, সংসার করে,সতী নারী বলে সম্মানিত হয় সবার কাছে। তবে সে নষ্ট হলেই বা কি?

পানির তেষ্টা পেল তার। চাইলে সে পানি পাবে। কিন্তু এই মেয়ের হাতে পানি খেতে ইচ্ছে হল না। ঢোকার সময় দরজা ইচ্ছে করে হা রাখল ।আলো কম ঘরে, তবে নিচ তলার চাইতে ধোয়া মোছা। আলনায় শাড়ী জামা গোছানো। খাটের পাশে টেবিল আছে। একটা দুটো ম্যাগাজিনও আছে। মিন্টু খাটে না বসে টেবিল সংলগ্ন কাঠের চেয়ারে বসল।

এখানে ওখানে দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। মিনারারা নানান ভাবে এসব জায়গায় আসে। তারপর সর্দারনীরা তাদের ব্যবহার করে। এসব মেয়ে পুরনো দিনের কৃতদাসীর মতই। মিন্টুর ভিতরের ভাল মনটা জেগে উঠল। তার মনে হতে লাগল। বাজারে ঝোলানো গরুর পায়ার মত মৃত অনুভূতিহীন ভোগের মত এ সব নিষিদ্ধ জীব। এরা মেয়ের প্রতি নিধি না। সভ্য জগতের স্বচ্ছল খেলুড়ে মেয়েদের অন্যায়ের প্রতিশোধ ওদের ওপরে নেয়া যায় না।রফিকুলদের পরামর্শে সে কিছুই পাবে না।

মিন্টুর ভেতর কিছু কুসংসস্কারাচ্ছন্ন ভাব আছে। যদি কখনো বাস ড্রাইভার সিগনালে পড়ে, তাহলে ভাবে দিনটা কুফা। সে বন্ধু স্বজন পথিক সবার থেকে অবিশ্বাস পেয়ে, সকালে রাশিফলে দেখে নেয়। দিনটি বিশেষ শুভ, রোমাঞ্চ শুভ,নতুন কিছু পেতে পারেন - এসব তার মনে পড়ল। আজ রাশিফলে কিছু মিলছে না। শুধু "নতুন কিছুর" কথাটাই ভুল নাও হতে পারে। সে হয়তো নতুন কিছু জানবে আজ। সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহে এসব জায়গায় আসে। শিল্পীরাও দেহ-ড্রইং শেখার জন্য এসব জায়গায় ঈজেল নিয়ে রাত কাটায়। তাতে তারা খারাপ হয় না। মিন্টু একটা যুক্তি পেল এতক্ষণে - নিজে ঠিক থাকলে সব ঠিক আর, একটা অভিজ্ঞতা হবার জন্য মদে চুমুক দিয়ে ফেললে মাতাল বলা যায় না।

কৌতুহলের মেঘ এসে কড়া পাপবোধ ঢেকে দিল।

এবার সে মিনারার দিকে তাকাল। মানুষ দেখলে কি তার পেশা বোঝা যায়? সাদা কাল ছাপার সুতী শাড়ি পরে মেয়েটা বসে আছে। ছবিতে দেখা সস্তা মেকাপের পরীদের মতো না সে। রুচিশীল পরিবারের কেউ এখানে আসতে যাবে কেন? হাতে কাচের চুড়ি, সদ্য স্নান নিয়েছে। চোখগুলো তার গভীর কাল। ব্রীড়াবতী মেয়েদের মতো দেয়ালের দিকে চেয়ে বসে আছে । এরকম মেয়েরা লাজুক হয় কি করে? নিশ্চয়ই অভিনয়, মেয়েদের অভিনয় ভগবানের ধরার সাধ্য নেই। আবার পেণ্ডুলামের মতো ভাবনা উল্টো পথে চলল। লুনার অবিশ্বাসী চেহারাটা মিনারার মধ্যে প্রতিস্থাপিত হল। ঘৃণায় ছিটকে পড়ল মিন্টু।
ও যে নতুন খদ্দের মেয়েটি তা বুঝতে পারল।
মিন্টু বলল, শোন মেয়ে, আমি তোমাকে কিছু করব না। তবে এসেছি যখন তোমাদের সম্মন্ধে জানার আগ্রহ অনেক, কেন এখানে এসে পড়ে থাক? তোমাদের দুঃখের অভিজ্ঞতা শুনে চলে যাব

মেয়েটির চোখ নিমেষে রঙ পাল্টাল। সে অপমানিত হয়ে বলল, আপনে কে গো? ফেরেস্তা না সাম্বাদিক? শইলের দাম দিসেন, শইল নিয়া খ্যান্ত দেন। অচিনের কাছে বুকের কষ্ট বেচন আমাগো নিষেধ।

মিন্টু হঠাৎ অপ্রস্তুত হয়ে বলল, আমি সাধারণ মানুষ। তবে এই নোংরা পেশা পছন্দ করি না। একটা মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাবার পর জিদ করে এখানে আসলাম। এখন জিদ কেটে গেছে।
মিনারা শুনে তীর্যক ভাবে হেসে বলল
-ও তাই বলেন, এই যুগের দেবদাস আপনে! মন জুড়ানোর জন্য বোম্বাইয়ের মাধুরী খুঁজতে আসছেন। ব্যাটামাইনষের কষ্ট জুড়ানোই আমগো ধর্ম। তবে শোনেন, যে আমারে এইখানে টাইনা আনল, যে শারমিনারা রে মিনারা বানাইল সে আমার জানের জান, বিবাহিত সোয়ামী।
মিন্টু বলল, তুমি মনে হচ্ছে শিক্ষিত কেউ।
এত বুঝলে পার তবে ভাল সমাজে ফিরা যাইতে পার না?
-না, পারি না। ভালা হওন অত সোজা থাকলে কে এই খানে পইড়া থাকে। মাইয়াগো শইল ব্যালট পেপার, আর দাগ লাগলে ভোটের কালির মতন আর উঠে না। একবার ঘর থাইকা বাইরে গেলে তারে কেউ কি জায়গা দেয়? তারপর থেমে বলল, দেখতে দেখতে এইটারেই জীবন মানছি। পরথম যেই খালার কাছে আমারে বেচছিল সে মাইর ধর করছে। পয়সা দিত না। এই সর্দারনী খানা পিনা আর হাতখরচ দেয়। জোরজবরদস্তি করে না।
মিন্টু বলল, আমি রিয়েলি সরি
শারমিনারা সরি শব্দটার অর্থ বুঝল কি না নিশ্চিত নয়। সে বলে চলল,
আপনি ভাল ঘরের বেটা মনে হয়। এই খানে পয়সা দিয়া মানুষ কি কাণ্ড করে আপনার ধারণাও হবে না।
বলেই মিনারা তার শাড়ীতে ঢাকা বাম বাহু উন্মুক্ত করল। ফর্সা বাহুতে বড় আধুলির মত জায়গা ফুলে চাকা চাকা। কামড়ানো দাগ। কেউ যেন কামড়ে তুলে নিতে চেয়েছিল একখণ্ড মাংস।
এ কী? মানুষ না রাক্ষস - মিন্টু চমকে উঠে বলল।
হা হা হা - রাক্ষস না! আপনের মতনই একজন। সব ভালমানুষেরে দেখা আছে। বাস ডেরাইভার থাইকা নামকরা সরকারী অফিসার। এমএ বিএ পাশও। আড়ালে গেলে পুরুষেরা সবাই রাক্ষস।

মিন্টু কথা এড়াতে বলল, থাক, তোমরা কি কারো সঙ্গে বাইরেও যাও? অপিস আদালত উৎসবে?
-কেন? নিবার চান? শারমিনারা মুচকি হাসল। অন্যেরা যায়। আমি যাই না। চিনা জানা পার্টি থাকলে সর্দারনীর মানা করে না। গেলে অবশ্য বেশী লাভ উঠে।
তুমি যাও না কেন?
এমনি যাই না। অত পয়সা দিয়া কি করুম? আর খোলা আসমান দেখতে ডর লাগে। পুরান দিন মনে হয়। দেখেন না জানলা বন্ধই রাখি।
-তোমার আর কেউ নাই? ভাই বোন?
-আছে। কিন্তু আমি তাগোর কাছে আমি মরা।

মিন্টুর মনে হল এই মেয়েটি তার মতই কেউ। সে বলল, তোমারে দেখার পর আমার কষ্টটা কমে গেছে। মনে হচ্ছে এই অচেনা দুনিয়াতে বন্ধু পেলাম, যার সব থাইকা কেউ নাই। মনে কর আমি তোমার বন্ধু একজন।
- না, আমি কেউর বন্ধু না, মেয়েটি প্রতিবাদ করে উঠল। দু মিনিটের আবেগে বন্ধু হয় না। আর বন্ধু হওন আমগো নিয়মে নিষেধ। পুরুষ আসব যাইব কিন্তু মায়ায় বানলে আমগো না খায়া থাকতে হয়।

ক্রেতাখদ্দেরের সম্পর্কটা ক্রমেই সহজ হয়ে আসে। নিচে বৃদ্ধা সর্দারনী সম্ভবতঃ ঘড়ির কাঁটা গুনছে। পাশের ঘর থেকে মৃদু পদশব্দে কেউ বের হয়ে গেল। হিহি শব্দ হল। শারমিনারা চুল ঠিক করল। পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিতেই মিন্টু ঢক ঢক করে পানি খেয়ে নিল। দেয়ালে ঝোলানো আয়নাটা নড়ে উঠল। দরজা নিজে নিজেই ভিড়ে গেল। মিন্টু আঢ়স্টতা কাটিয়ে শারমিনারার কথা মনযোগ দিয়ে শুনতে থাকল।


শারমিনারা মিন্টুর কথা বিশ্বাস করল, তারপর বলল, এই আন্ধার জগতে আসনের পর আপনের মত এমন মানুষ বহুদিন দেখি নাই।
মিন্টু খুশী হয়ে বলল, আমি তোমার সর্দারনীর সঙ্গ কথা বলে আমি যদি তোমারে দূরে কোন জায়গায় নিতে চাই - তুমি যাবা?
মেয়েটি সন্দেহ নিয়ে বলল, নিয়া কি করবেন? , এইরকম আলাপ করতে করতে পয়সা নষ্ট করবেন?
মিন্টু মেয়েটির কথায় পরাজিত হয়ে বলল, হ্যা,
তখন মিনারা বলল, তাই যদি হয়, না, যামু না। আমি কেউর দয়া চাই না।

সময় শেষ হয়ে আসে। মিন্টু তার ঘড়ির বেল্ট ঠিক করে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মেয়েটা তাকে বিদায় দেবার জন্য এগিয়ে এসে বলল, আপনারে অন্য রকম লাগল বইলা একটা কথা কই। এইখানে যদি কোনদিন আসেন, ইচ্ছা হইলে দেখা কইরেন । পয়সা না থাকলেও ভাইবেন না। আর যদি সত্যই মনে চায়, ডাকলে আমি আপনার সঙ্গে বাইরে যাইতে পারি ।

রাস্তায় নেমে ধূলোর শহরটাকে কাগজের মত বিস্বাদ লাগল মিন্টুর। রফিকুলের ওখানে যেতে ইচ্ছে হল না। একটা রিক্সা নিয়ে একা অনেকক্ষণ ঘুরে বেড়াল। রফিকুল মিন্টুর অপেক্ষায় থেকে অনেকবার মোবাইলে ফোন করল। রিং বাজল কিন্তু কেউ ধরল না।

**
রফিকুলের দোকানের পিছনে প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাসের আড্ডা বসে। মিন্টুকে সেখানে ধরে নিয়ে যাওয়া হল। চা সিঙ্গারা আসল, বিড়ির ধোঁয়াও ছেয়ে গেল চারদিক। স্পেকট্রাম চলল। রফিকুল অবশ্য গতকালের ঘটনাটা কাউকে বলল না। কিছুক্ষণ পর মোবাইল বেজে উঠল মিন্টুর
ও প্রান্ত থেকে জোয়ারদার সাহেব বলল, কে, মিসবাহুল সাহেব ?
-জী, জোয়ারদার ভাই - ফোনের স্ক্রীনে চেয়ে মিন্টু জবাব দেয়
-আপনে তো গত দুই সপ্তাহ ধরে অফিসের আসেন না কেন? প্রাইভেট জব, বোঝেন না? এমডি সাহেব ডেকে জিজ্ঞেস করে প্রায়ই, আমি মিথ্যা বলে দিলাম টাইফয়েড। আর মোবাইল বন্ধ রাখেন কেন?

কালকেই জয়েন করেন নাইলে একটা ডাক্তারী সার্টিফিকেট সহ এপ্লিকেশন পাঠায়ে দেন কেউরে দিয়া।
মিন্টু চুপ থাকল। জোয়ারদার সাহেব বলল,
-আরে আমি তো জানি, খবর কানে আসছে । জোয়ান বয়স, এগুলা হবেই । এরকম ইমোশনাল হইলে হবে। রাতে আমার বাড়িতে আইসা খাবেন। বাসাটা চিনবেন তো? আপনের ভাবী মুড়িঘন্ট রান্না করছে। ঐটা খাইলে দুনিয়ার সব কষ্ট দুর হয়ে যাবে।

মিন্টু না বলতে পারল না। ব্যর্থতার ক্ষতটা কমে এসেছে, লুনার কথা সরে তার মাথায় সূর্যবিহীন কক্ষে রমনীর সঙ্গে আলাপচারিতার দৃশ্যগুলো ঘুরছিল।

*
এক রাতের ভেতর মিন্টুর বয়স বেড়ে গেল দশ বছর। লুনাকে মনে হল স্বার্থপর। তার জন্য যা ঘটে গেছে সব ঝেড়ে ফেলল। শারমিনাকে বাইরের পৃথিবীটা দেখাতে তার ইচ্ছেটা প্রবল হল। কিন্তু ওখানে যাবে কি যাবে না এই সঙ্কোচ কাজ করছিল। এখন সেটা নেই।

পরের সপ্তাহে সে বেসরকারী পর্যটন সংস্থায় গিয়ে সহজেই রাঙামাটি কটেজে বুকিং পেল। বুকিং নেয়া সময় তাকে তার সঙ্গীর পরিচয় জিজ্ঞেস করতেই মে বলে ফেলল তার স্ত্রী জিনাত। বলতে গলাও কাঁপল না। যে কেউ দেখে ফেলতে পারত। দেখলে দেখুক তাতে কী। সে নিজের ইনকামে চলে। খবর প্রকাশ্যে গেলে অনেক কিছু হতে পারে। হোক।

তার মনে হল দিনটা তার ভালই যাবে। বসে বসে ভাবল, সময় মতো বাস রাঙামাটি পৌছেছে। বাসের জানলার সীটে বসে মেয়েটি উপভোগ করছে । পাহাড়ী পথ দেখে বন্ধ কারাগারের জামিন ভুলে অকারণে হাসিতে ঢলে পড়ছে সে। অস্তাচলের সূর্যের দিকে চেয়ে সে বলছে, আপনার এই ঋণ আমি ভুলব না।

লেকে নৌকা চড়তে মিন্টুর খুব পছন্দ। ওখানেও নিয়ে যাবে সে মিনারাকে। ইকোট্যুরিজমের আবহ তৈরী করতে কটেজে মোমবাতি জ্বেলে দিয়ে যায় ম্যানেজার। কল্পনায় সে দেখতে পেল রাতে রান্নার আয়োজন হয়েছে মাছ ভাত। মিনারা নিজ থেকে অনেক কথা বলেছে। বলেছে তার শৈশবের কথা। ঘরের মেয়ের মতই সে আপন হয়ে যাচ্ছে। আর অপরূপ। অবশ্য মোমের আলোয় সব মেয়েকেই অপরূপ মনে হয়।

রফিকুলকে না জানিয়ে সে সর্দার মহিলার সঙ্গে কথা বলতে গেল । সর্দার মহিলাটি সব শুনে শক্ত গলায় অস্বীকার করে বলল মিনারাকে বাইরে যেতে দেয়া সম্ভব না । মেয়েটাকে অনেক পয়সা দিয়ে কিনতে হয়েছে তাই রিস্ক নেয়া সম্ভব না। চাইলে অন্য কাউকে নিতে পারে।

********
জানুয়ারী ৪, ২০০৭

এর ভেতর অনেকগুলো ঘটনা ঘটে গেছে। সে স্থির হয়ে এসেছে, নিয়মিত অফিস করছে। তাদের কোম্পানী এয়ারফোর্সের বিশাল কনট্রাক্ট পেয়েছে। অফিসে সে মিডটার্ম ইনক্রিমেন্ট পেয়েছে ভাল কাজের জন্য। বারিধারায় একটা নতুন অফিস খুলেছে সেখানে মেসবাহুল ওরফে মিন্টুকে প্রোমোশন দিয়ে বদলী করা হবে ।

লুনার বিয়ে হয়ে গেছে গত মাসে। সে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রফিকুলের দোকানে আগুন লেগেছিল। সে নতুন দোকান দিয়েছে কাছেই । ব্যস্ত হয়ে যাওয়ায় আড্ডায় যাওয়া হয় না।

তার সঙ্গে প্রায় মাসখানেক পর গতকাল তার সঙ্গে দেখা হল পল্টনে। সকালে শীত পড়েছিল। কুয়াসার ভেতর মিঠুন স্টাইলে মাফলার জড়িয়ে হাটছিল। কস্তুরীর সামনে তাকে দেখে চিৎকার করে ডাকল তাকে, ঐ কানাই - কানাই - কতক্ষণ ধইরা ডাকতাছি। কানের বর্ডার নাই, এখন কি ভিতরের নাড়ী ভুড়ি হজম করছস নাকি? কাছে এস চতুর ভঙ্গীতে বলল, তুই বড় পাকনা হইছস মনে হয়। ভাবছস, আমি জানি না।
-কি জানাই নাই? মিন্টু লুকাতে গিয়ে না জানার ভান করে।
-কি আর, হেই জাগায়ে রেগুলার যাওয়া আসা করতি শুনলাম। ভদ্র পোলার এই দশা। জাগায় অজাগায় প্রেম খুইজা পায়।
-আরে ধুর..
-আব্বে কানা, আমারে কইলে কি হইতো? তোরে এর চায়া ডবল ভালা জিনিস দিতাম।
মিন্টু চুপ করে থাকল। দু মাস আগ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহেই মিনারার সঙ্গে দেখা করতে যেত।
-যাউকগা, তোর বুঝ তুই বুঝস। ভদ্র মানুষ নিয়া কইলাম টেনশন। বিয়াসাদী কইরা জিন্দেগী বরবাদ কইরা ফালাইস না যেন।

এসব কথা বলে, রফিকুল চাকুরীর অবস্থা জিজ্ঞেস করে তাড়া আছে বলে কুয়াসায় মিলিয়ে গেল।

**********
জানুয়ারী ৯, ২০০৭

ক্রমাগত হরতাল অবরোধের কারণে সেই নিষিদ্ধ বাড়িতে লোকজনের আনাগোনা কমে গেছে । আর্থিক মন্দার কারণে সর্দার বুড়ি এখন সামান্যতেই হৈ চৈ করে। খারাপ ব্যবহার করে।

এদিকে মিনারা এক সপ্তাহ ধরে অসুস্থ । আশে পাশের ঘরের বাসিন্দা ৫/৬টা মেয়ে তার সেবা সুশ্রুষা করছে। পুষ্প নামে পনের বছরের একটা নতুন মেয়ে এসেছে । এই খারাপ বাজারেও মেয়েটির সুসময় যাচ্ছে। সকাল বিকাল তার বাঁধা খদ্দের আসে। সদা হাসি খুশী বালিকা মিনারার মাথায় শরিষার তেল মালিশ করে দিচ্ছে। এই ছোট পৃথিবীতে এই মানুষগুলোই প্রকৃত বন্ধু, সংসার আর সমাজ।

***
জানুয়ারী ১৫, ২০০৭
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিপদ জনক দিকে মোড় নিচ্ছে। মোড়ে মোড়ে র্যাব বিডিআর প্রহরা বসেছে। ফেনসিডিলের উদ্ধার করার জন্য কল্যানপুর বস্তি রেইড হয়েছে। বখাটে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভাসমান পতিতাদের ছবি উঠছে পত্রিকাতে। রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কোন নারীর সম্পর্ক নিয়ে ব্যাপক হৈ চৈ হয়েছে।

মিন্টু উদ্বিগ্ন অবস্থায় ছুটির দিন দুপুরে সেই বাড়িতে গেল। কলাপসিবল গেটে গিয়ে দেখল বাড়িতে কেউ নেই। দরজা খোলা, ভিতরে কেউ নেই। ভোজবাজীর মতো মিলিয়ে গেছে সব।
একটা টুলেট সাইনবোর্ড ঝুলছে বড় করে। হয়তো পুলিশের ভয়ে তারা পালিয়েছে কোথাও।

নিচে এসে জিজ্ঞেস করল কেউই বলতে পারল না কিছু।

***
ডিসেম্বর ১৮, ২০০৮
বারিধারা অফিসে যাওয়ার পর ব্যবসা বাড়ার তুলনায় মিন্টুর বেতন খুব একটা বাড়ে নি। পুরনোর অনেকেই চলে গেছে অন্যত্র। সে জায়গায় নতুন মুখ এসেছে। পুরনোদের মধ্যে একমাত্র জোয়ারদার সাহেব আছেন। তিনি আগের ব্রাঞ্চেই। মুখোমুখি দেখা সাক্ষাৎ হয় কম। যা কথা হয় ফোনে। তিনি আগের মতই আছেন। আর একটা মেয়েকে এডপ্ট করে তাদের সংসারের শূণ্যস্থান পূর্ণ করেছেন।

বিজয় দিবসের ছুটির পর মঙ্গলবার দিন জোয়ারদার সাহেব একটা কাজে এসেছিলেন। যাবার আগে মিন্টুকে বললেন , মিসবাহুল সাহেব, বাসায় জায়গা কম জানেন। বলে সবাইকে বলতে পারি না। মেয়েটাকে আনার পর অনেক দিন আপনার ভাবী দাওয়াত দিতে চান। বাড়ির কনস্ট্রাকশন শেষ করেছি, মিলাদ আর দোয়া পড়ানো হবে, আপনি কাল সন্ধ্যায় অবশ্যই আসবেন।

এর পরদিন সন্ধ্যায় মাদারটেকে এসে মিন্টুর চিনতে কষ্টই হল। মাত্র দেড় বছরে রাস্তাঘাটের পরিবর্তন হয়েছে । বাড়িটা রাস্তার ঠিক পাশেই। কড়া নাড়তেই জোয়ারদার সাহেব দরজা খুলে দিলেন। ভাবী কোলে দেড় বছরের জাকিয়াকে নিয়ে স্মিত হাস্যে স্বাগত জানালেন । এডপ্ট করা মেয়েটিকে এই প্রথম দেখল মিন্টু। ভারী মিষ্টি তার চেহারা। স্বাভাবিক ভাবেই খুব আদর অনুভব করল। হাত বাড়াতেই জাকিয়াকে উঠে এল, তারপর তার জামায় কচি মুখ ঘষে দিল। মিন্টু এসে পড়েছিল বেশ আগেই। লোকজন বাড়তে থাকলে মেয়েটাকে নিয়ে জোয়ারদার সাহেবের স্ত্রী ভিতরে চলে গেলেন।

অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে ন'টা বাজল। পারিবারিক একটা সমস্যা নিয়ে মিন্টু ভাবছিল কিছু একটা। সবাই যখন চলে আসছিল বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে মিসেস জোয়ারদার দাড়িয়ে ছিল গেটে। শিশুটি তার দিকে চেয়ে ছিল অপলক। স্ট্রিট ল্যাম্পের মৃদু আলোয় হয়তো মনের ভুলেই একবার তার মনে হল, ওর মতই শিশুটির কানের উপরে কোন ভাঁজ নেই। একদম প্লেন।

----
ড্রাফট ১.৪ / দ্রুত ড্রাফট
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১১ রাত ৩:০৫
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×