somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এলোমেলো দিনগুলি :: আমার বৃষ্টিবেলা

৩০ শে মে, ২০০৮ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলায় বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ইচ্ছে হতো । যখন বৃষ্টি হতো তখন আমি হা করে বৃষ্টি পড়ার দিকে চেয়ে থাকতাম.. বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটার সাথে আমার অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হতো । আমি যেন হারিয়ে যেতাম... নিজের মধ্যেই…

দুঃখজনক যে আমাকে শুধু তাকিয়েই থাকতে হতো, বৃষ্টি ভেজার কোন অনুমতি আমার ছিল না ।

বৃষ্টি হলে মেঘ আর বন্যাকে দেখতাম এক দৌড়ে খোলা ঊঠোনটায় চলে যেত... সেখানে ওরা দু'জন হুটোপুটি খেত, হাসতো ইচ্ছেমতো, নাচানাচিও করতো... আর আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওদের আনন্দ দেখতাম ।

বৃষ্টির দিনগুলিতে আমার আব্বা আমাকে কোলে নিয়ে বসে থাকতেন... আমি জানালা দিয়ে বৃষ্টি পড়া দেখতাম, আব্বা আমার এরকম আনমনা ভাব কাটাতে আমাকে আমার সবচেয়ে প্রিয় গল্পটা শোনাতেন... কিন্তু আমার প্রিয় গল্পটাও আমাকে বাইরে তাকিয়ে থাকা থেকে বিরত রাখতে পারতো না । আব্বা মাঝে মাঝে হাল ছেড়ে দিয়ে আমাকে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে হাত দিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা ছুঁতে দিতেন । আমি ওতেই খুব আনন্দিত হতাম... অন্যরকম...

কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ হতো না, আব্বা আমাকে রুমে নিয়ে এসে বসে বসে আমার প্রিয় গল্পটা শোনাতেন... একসময় সত্যি আমি বৃষ্টির কথা ভুলে গিয়ে গল্পটা শুনতাম...

একবার ঈদে দাদু বাড়ি গিয়েছি... হঠাৎ একদিন তুমুল বৃষ্টি শুরু হল... বিদ্যুৎ চমকালো কয়েকবার... মেঘ, বন্যা সহ আমার ফুফাতোভাই-বোনেরা বাইরে চলে গেল... বৃষ্টিতে ভিজতে... আর আমি আব্বার সাথে দাদুর রুমে বসে রইলাম... আমার খুব ইচ্ছা হলো ওদের সাথে যাই... আব্বা গল্প বলা শুরু করলেন, আমার গল্প শোনার কোন ইচ্ছে ছিল না... আমি চিৎকার করে থামিয়ে দিলাম । না! আমি কোন গল্প শুনতে চাই না!!

বাড়ির বাইরে যাওয়ার তিনটা দরজা... আমি যে রুমটায় বসে ছিলাম ওই রুমের সাথে একটা । আব্বা উঠে গিয়ে ভাল করে ছিচকিনিটা আটকিয়ে ড্রইং রুমে চলে গেলেন । আমি বসে রইলাম একা...

যত জোরে বৃষ্টি হতে লাগলো ততই যেন আমি অস্থির হয়ে পড়লাম... নাহ, আমি আজ ভিজবোই...

একটা চেয়ার উঠে শক্ত ছিটকিনিটা খুলে ফেললাম…. বৃষ্টি পড়ার দিকে তাকালাম... বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটা আমাকে যেন ডাকছে... সেন্ডেলটা খুলে ছুঁড়ে দিলাম এককোণায়... আস্তে আস্তে নেমে পড়লাম রাস্তায়...

বৃষ্টির একটা ফোঁটা মাথা দিয়ে আমার শিড়দাঁড়া বেয়ে নেমে গেল । এক অদ্ভুত শিহরণ... আমার ঠোট তির তির করে কেঁপে উঠলো... দাঁতের সাথে দাঁত ঠোকর লাগলো... হ্যাঁ, আমি ভিজছি..... আমার লাল টুকটুকে জামাটাও ভিজে গেছে.... আমি হাঁটছি... হাসছি... ঘুরছি... বৃষ্টিকে আমি স্পর্শ করছি... আমি কাঁপছিও..


সামনে ছিল বিশাল মাঠ । ওখান থেকে আমার ভাই-বোনদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনলাম... আমি ধীরে ধীরে ওদের কাছে পৌঁছে গেলাম । ওরা আমাকে দেখে হঠাৎ নিশ্চুপ হয়ে গেল । মেঘ কাছে এসে বলল, তুই যা, তোর জন্য আমরা কেউ মার খেতে পারবো না । আমি যাচ্ছিলাম না, নদী এসে ধাক্কা দিয়ে বলল, হয় তুই যাবি নয়তো আমরা । আমি ওদেরকে বললাম, আমি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো... কিন্তু এতেও ওরা কেউ রাজি হল না... আমি ঘুরে দাঁড়ালাম... আমি হয়তো কাঁদছি... বৃষ্টির পানি আমার মুখটা বার বার ধুয়ে দিচ্ছিল... আমি আনমনে হাঁটতে লাগলাম... কোথায় যাবো... আমি তাও জানি নাহ...

এলোমেলো ভাবে হাঁটছি... হাঁটতে হাঁটতে ডান পাশে একটা সরু গলিতে চলে গেলাম... ওখানে গিয়ে দেখি একটা টিনের বাড়ি... ওই টিনের একটা জায়গা দিয়ে একসাথে অনেক বৃষ্টির পানি পড়ছে... আমি ওটার নিচে গিয়ে দাঁড়ালাম... নিমিষেই সব ভুলে গেলাম... আমি আনন্দে লাফাতে লাগলাম... মাটিতে ইচ্ছাকৃত পড়ে গেলাম... আবার উঠলাম... চিৎকার করলাম.... বৃষ্টির সাথে কথা বললাম.. অনর্গল... ওই ছোট্ট জায়গাটা যেন আমার জন্য স্বর্গ হয়ে ওঠলো...

আমি প্রচন্ড কাঁপছি... কিন্তু সেটা আমাকে বৃষ্টিতে ভেজা থেকে বিরত রাখতে পারলো না... আমি ভিজলাম... আমার ইচ্ছামতো...

আমি খুব ক্লান্তি অনুভব করছি... চোখ বন্ধ হয়ে এল... হয়তো পড়েও যাচ্ছি... কিন্তু আমি খুশি, আমি সুখী...

সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০০৮ রাত ১০:০২
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×